
মোহাম্মদ আবু রোম্মান

আরব বিশ্বের অনেক দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি বিকল্প চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে ইসলামপন্থি রাজনীতি বা রাজনৈতিক ইসলাম, যে দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মতামত প্রকাশের প্রাথমিক উৎস হিসেবে কাজ করছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ, জীবনযাত্রার অবস্থা প্রত্যাখ্যান এবং তাদের রাজনৈতিক বিকল্প খোঁজার প্রধান পথ হয়ে উঠেছে এই ইসলামি আন্দোলন।
আরব দেশগুলোর শাসকরা কয়েক দশক ধরেই এই আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটি এখনো শেষ হয়ে যায়নি কেন? এই আন্দোলনকে ধ্বংস বা এটিকে প্রতিস্থাপন করার জন্য কি সব ধরনের পন্থাই বেছে নেওয়া হয়নি এতদিন? কঠোর দমননীতি অনুসরণ, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার, রাজনৈতিক নানা খেলার আশ্রয় নেওয়াসহ সবকিছু করেও কেন রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানকে থামানো যায়নি?
ঐতিহাসিকভাবে এই ইসলামি আন্দোলনকে নির্মূল করতে গিয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে আরব দেশগুলোকে। কয়েক দশক ধরেই এই অঞ্চলের দেশগুলোর সরকারের সামনে রাজনৈতিক ইসলাম অব্যাহতভাবে প্রধান বৈরী শক্তি হিসেবে বিরাজ করেছে। সংগত কারণেই তাদের সামনে বড় প্রশ্ন—কেন এই প্রতিপক্ষ অদৃশ্য হতে অস্বীকার করছে?
রাজনৈতিক ইসলাম বা এই আন্দোলনকে পরাজিত বা নির্মূল করতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় নতুন বিকল্প সামনে আনার জন্য এসব দেশের সরকারগুলো সব ধরনের চেষ্টা করেছে। এজন্য বল প্রয়োগ থেকে শুরু করে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করাসহ যত পদ্ধতি আছে তার সবই প্রয়োগ করা হয়েছে। সামরিক কিংবা রাজনৈতিক উদ্যোগও বাদ যায়নি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে সব চেষ্টাই।
রাজনৈতিক ইসলামের এই আন্দোলন পশ্চিমাদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ইসরাইল এটাকে তাদের অস্তিত্বের জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখে। ইসরাইল মনে করে আরব দেশগুলোর চেয়েও এই ইসলামি আন্দোলন তাদেও জন্য অনেক বেশি বিপজ্জনক। কিন্তু এত সরকারি নিপীড়নের মধ্যেও এই আন্দোলনের টিকে থাকা ও বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে গোপন রহস্য কী?
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে আরব বসন্তের পর পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে অনেক গবেষক ও বিশেষজ্ঞ বারবার এ কথা বলেছেন যে, রাজনৈতিক ইসলামের অস্তিত্ব শেষ পর্যন্ত টিকবে না, বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু তারা পরিস্থিতিকে ভুলভাবে বুঝেছেন এবং ভুলভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, যে কারণে তারা এই আন্দোলন সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা উপস্থাপন করেছেন।
রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতিটি পর্যায়েই রাজনৈতিক ইসলাম বারবার হোঁচট খেয়ে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ইসলামপন্থিরা নতুন কৌশল, দৃষ্টিভঙ্গি ও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে ফিরে এসেছে দৃশ্যপটে। আর এটাই গবেষক-বিশ্লেষকদের এই আন্দোলন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। তারা ভালো করে জানার চেষ্টা করেছেন রাজনৈতিক ইসলামের ধারা, এর উৎপত্তি ও বৃহত্তর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে।

আরব শাসকরা যখন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইসলামি শক্তিকে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করেছে, তা সেটা ভোটের মাধ্যমে দুর্বল করা হোক বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার মাধ্যমেই হোক, তখন ইসলামি আন্দোলনগুলোর সশস্ত্র শাখা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তখন তাদের একমাত্র বিশ্বাস এটাই ছিল যে, অস্ত্র ও বিপ্লবই হচ্ছে এই স্থিতাবস্থাকে মোকাবিলা করার একমাত্র পথ। ইসলামিক স্টেট বা আইএস যখন সাময়িকভাবে পিছু হটল, তখন হামাস সামনে এগিয়ে এলো এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মাধমে কাঁপিয়ে দিল ইসরাইল ও পুরো বিশ্বকে।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের ফিলিস্তিনি গণহত্যা নিয়ে আরব দেশগুলো যখন মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল, এর প্রতিবাদে সেই সময়ে নতুন কিছু ইসলামি সংগঠনের অভ্যুদয় ঘটে দৃশ্যপটে, যার প্রমাণ দেখা গেছে অতীতেও। সাম্প্রতিক সময়ে এর সর্বশেষ উদাহরণ দেখা গেল সিরিয়ায় হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামি সংগঠনের বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে।
ইসলামপন্থিরা যে কেবলই স্থানীয় একটি সংগঠন বা শক্তি তা ভাবলে ভুল হবে, তারা তাৎপর্যপূর্ণভাবেই আঞ্চলিক শক্তি হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে এরই মধ্যে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও তারা নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছে ভালোভাবেই। এই অঞ্চলে তুরস্কের ভূমিকার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এইচটিএস। অন্যদিকে ইরানের সমর্থনপুষ্ট হয়ে কাজ করছে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও গাজার হামাস। তুরস্কের সঙ্গেও অবশ্য হামাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আরব বসন্ত ও প্রতিবিপ্লবের প্রায় দেড় দশক পরেও ইসলামপন্থিরা যেমন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, তেমনিভাবে তারা পিছুও হটেনি।
আরব রাষ্ট্রগুলোয় বর্তমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইসলামি আন্দোলনগুলোর আবেগপূর্ণ বক্তব্য ও ধর্মীয় আবেদন এক ধরনের ধর্মীয় মুক্তি সংগ্রামের রূপ নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হয়েছে। এটা এ কারণে হয়নি যে, তারা খুবই শক্তিশালী, এমনকি তারা বর্তমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে কোনো নির্ভরযোগ্য সমাধানও তুলে ধরতে পারেনি। বরং ইসলামি আন্দোলনগুলো আরব শাসকদের রাজনৈতিক বৈধতার দিক থেকে যে রাষ্ট্রীয় সংকট তৈরি হয়েছে, সেটার প্রতিই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে তারা।
এ মুহূর্তে ইসলামপন্থিরাই আরব বিশ্বের ক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠীর কাছে বিকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এসব দেশের সরকারগুলো নিরাপত্তার নামে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে হরণ করেছে এবং আরব জনগণকে কোণঠাসা ও অবদমিত করে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। অথচ তারা অর্থনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য কোনো বিকল্প তুলে ধরতে পারেনি।
ইসরাইলের গণহত্যার মুখে গাজার ফিলিস্তিনিদের সামনে কোনো কিছুই তুলে ধরতে পারেনি আরব বিশ্বের সরকারগুলো। অথচ এসব দেশের সরকার শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন ও আধুনিক সমরাস্ত্র কেনার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। আর এসব করতে গিয়ে তারা নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ ও স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছে।
একইসঙ্গে তারা ইসলামপন্থিদের দানব হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু নতুন প্রজন্ম এখন আর সরকারের এসব কথায় কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। কারণ সরকারের নানা ব্যর্থতার মাশুল দিতে হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকেই। সংগত কারণেই তারা তাদের দেশের বর্তমান অবস্থাকে পরিবর্তনের বিকল্প হিসেবে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
‘ধর্ম হলো জনগণের জন্য আফিম’ Ñ কার্ল মার্ক্সের এই বিখ্যাত উক্তির বিপরীতে দাঁড়িয়ে ইসলামি আন্দোলনগুলো ধর্মীয় ও আবেগপ্রবণ বার্তা কাজে লাগিয়ে জনগণের মধ্যে মুক্তির আদর্শ ও এক ধরনের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আরব শাসকরা যত দিন পর্যন্ত গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এবং একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার বাস্তবসম্মত বিকল্প দিতে ব্যর্থ হবে, তত দিন ইসলামপন্থিদের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
অন্যদিকে উদার ও বামপন্থি রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখনো ইসলামপন্থিদের জনপ্রিয় বিকল্প হিসেবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে ইসলামপন্থিরাই গত কয়েক দশক ধরে আরব বিশ্বের অনেক দেশে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করেছে অনেকটাই।
আরব ও ইসলামি বিশ্বের দেশগুলোয় রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক কী হবে, তা নিয়ে এখনো সুস্পষ্ট কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে এ ধরনের অস্পষ্টতা ইসলামপন্থি আন্দোলনগুলোর জন্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করছে। এর কারণ হচ্ছে, তারা ধর্মের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনগুলোর বিরোধিতা করতে পারছে।
এই পরিস্থিতি বর্তমান সময়ের জন্যও প্রাসঙ্গিক। কারণ বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, আরব সমাজে এখনো ধর্মেও অনেক বেশি প্রভাব আছে। বিগত কয়েক দশকে আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলেও তা শাসক গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া নীতি অনুসরণের কারণে অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়।
সেন্টার অব মিডল ইস্ট স্টাডিজের পরিচালক নাদের হাশেমি তার ইসলাম, সেক্যুলারিজম অ্যান্ড লিবারেল ডেমোক্রেসি বইয়ে লিখেছেন, ইসলামপন্থিদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা, তাদের কোণঠাসা করে প্রান্তিক অবস্থনে ঠেলে দেওয়া, আটক করা বা নির্বাসনে পাঠানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ইসলামকে মোকাবিলা করা মোটেই সম্ভব হবে না।
বরং রাজনৈতিক ইসলামকে মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত করার মাধ্যমেই কেবল এটাকে মোকাবিলা করা যাবে। সেটাই হবে উপযুক্ত পন্থা। রাজনৈতিক ইসলাম বা ইসলামি আন্দোলনগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে তাদের সমাজের ভেতরে রেখে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়াই হবে উপযুক্ত পদক্ষেপ। এর ফলে তারা গণতন্ত্র, বাস্তবতা ও বিভিন্ন মতবাদ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবে এবং সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে আগ্রহী হবে।
অনেক আরব দেশ ইসলামপন্থিদের প্রভাব কমাতে ধর্মীয় ক্ষেত্রকে পুনর্বিন্যাস করার বা নতুনভাবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ধর্মীয় ক্ষেত্রে ইসলামপন্থিদের প্রভাব কমাতে আইনের আওতায় থেকে ধর্মীয় বিধান বা ফতোয়া জারি, মসজিদে খুতবা দিয়ে জনগণকে প্রভাবিত করা এবং ধর্মীয় নির্দেশনা প্রদানের এখতিয়ার বা নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে থাকার পদক্ষেপ নিয়েছে। মিসরের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাইফ এল-দিন আবদেল ফাত্তাহ এই নীতিকে অভিহিত করেছেন ‘ধর্মের জাতীয়করণ’ হিসেবে।
কয়েকটি আরব দেশের সরকার বিগত কয়েক দশক ধরে অনাদরে পড়ে থাকা সরকারি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে এসব প্রতিষ্ঠান আরব সমাজে ধর্মীয় বিষয় পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে কিছু দেশ আবার রাজনৈতিক ইসলামের বিকল্প হিসেবে ‘সুফি ইসলাম’কে সামনে নিয়ে আসার কথাও চিন্তা করছে। কারণ সুফি ইসলাম রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আধ্যাত্মিকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এসব নীতির অধিকাংশই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বরং রাজনৈতিক ইসলামই এখনো আরব বিশ্বের সরকারগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দিন দিন আরও শক্তি সঞ্চয় করছে।
মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ : মোতালেব জামালী
এমবি

আরব বিশ্বের অনেক দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি বিকল্প চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে ইসলামপন্থি রাজনীতি বা রাজনৈতিক ইসলাম, যে দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মতামত প্রকাশের প্রাথমিক উৎস হিসেবে কাজ করছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ, জীবনযাত্রার অবস্থা প্রত্যাখ্যান এবং তাদের রাজনৈতিক বিকল্প খোঁজার প্রধান পথ হয়ে উঠেছে এই ইসলামি আন্দোলন।
আরব দেশগুলোর শাসকরা কয়েক দশক ধরেই এই আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটি এখনো শেষ হয়ে যায়নি কেন? এই আন্দোলনকে ধ্বংস বা এটিকে প্রতিস্থাপন করার জন্য কি সব ধরনের পন্থাই বেছে নেওয়া হয়নি এতদিন? কঠোর দমননীতি অনুসরণ, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার, রাজনৈতিক নানা খেলার আশ্রয় নেওয়াসহ সবকিছু করেও কেন রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানকে থামানো যায়নি?
ঐতিহাসিকভাবে এই ইসলামি আন্দোলনকে নির্মূল করতে গিয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে আরব দেশগুলোকে। কয়েক দশক ধরেই এই অঞ্চলের দেশগুলোর সরকারের সামনে রাজনৈতিক ইসলাম অব্যাহতভাবে প্রধান বৈরী শক্তি হিসেবে বিরাজ করেছে। সংগত কারণেই তাদের সামনে বড় প্রশ্ন—কেন এই প্রতিপক্ষ অদৃশ্য হতে অস্বীকার করছে?
রাজনৈতিক ইসলাম বা এই আন্দোলনকে পরাজিত বা নির্মূল করতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় নতুন বিকল্প সামনে আনার জন্য এসব দেশের সরকারগুলো সব ধরনের চেষ্টা করেছে। এজন্য বল প্রয়োগ থেকে শুরু করে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করাসহ যত পদ্ধতি আছে তার সবই প্রয়োগ করা হয়েছে। সামরিক কিংবা রাজনৈতিক উদ্যোগও বাদ যায়নি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে সব চেষ্টাই।
রাজনৈতিক ইসলামের এই আন্দোলন পশ্চিমাদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ইসরাইল এটাকে তাদের অস্তিত্বের জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখে। ইসরাইল মনে করে আরব দেশগুলোর চেয়েও এই ইসলামি আন্দোলন তাদেও জন্য অনেক বেশি বিপজ্জনক। কিন্তু এত সরকারি নিপীড়নের মধ্যেও এই আন্দোলনের টিকে থাকা ও বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে গোপন রহস্য কী?
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে আরব বসন্তের পর পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে অনেক গবেষক ও বিশেষজ্ঞ বারবার এ কথা বলেছেন যে, রাজনৈতিক ইসলামের অস্তিত্ব শেষ পর্যন্ত টিকবে না, বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু তারা পরিস্থিতিকে ভুলভাবে বুঝেছেন এবং ভুলভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, যে কারণে তারা এই আন্দোলন সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা উপস্থাপন করেছেন।
রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতিটি পর্যায়েই রাজনৈতিক ইসলাম বারবার হোঁচট খেয়ে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ইসলামপন্থিরা নতুন কৌশল, দৃষ্টিভঙ্গি ও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে ফিরে এসেছে দৃশ্যপটে। আর এটাই গবেষক-বিশ্লেষকদের এই আন্দোলন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। তারা ভালো করে জানার চেষ্টা করেছেন রাজনৈতিক ইসলামের ধারা, এর উৎপত্তি ও বৃহত্তর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে।

আরব শাসকরা যখন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইসলামি শক্তিকে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করেছে, তা সেটা ভোটের মাধ্যমে দুর্বল করা হোক বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার মাধ্যমেই হোক, তখন ইসলামি আন্দোলনগুলোর সশস্ত্র শাখা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তখন তাদের একমাত্র বিশ্বাস এটাই ছিল যে, অস্ত্র ও বিপ্লবই হচ্ছে এই স্থিতাবস্থাকে মোকাবিলা করার একমাত্র পথ। ইসলামিক স্টেট বা আইএস যখন সাময়িকভাবে পিছু হটল, তখন হামাস সামনে এগিয়ে এলো এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মাধমে কাঁপিয়ে দিল ইসরাইল ও পুরো বিশ্বকে।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের ফিলিস্তিনি গণহত্যা নিয়ে আরব দেশগুলো যখন মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল, এর প্রতিবাদে সেই সময়ে নতুন কিছু ইসলামি সংগঠনের অভ্যুদয় ঘটে দৃশ্যপটে, যার প্রমাণ দেখা গেছে অতীতেও। সাম্প্রতিক সময়ে এর সর্বশেষ উদাহরণ দেখা গেল সিরিয়ায় হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামি সংগঠনের বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে।
ইসলামপন্থিরা যে কেবলই স্থানীয় একটি সংগঠন বা শক্তি তা ভাবলে ভুল হবে, তারা তাৎপর্যপূর্ণভাবেই আঞ্চলিক শক্তি হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে এরই মধ্যে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও তারা নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছে ভালোভাবেই। এই অঞ্চলে তুরস্কের ভূমিকার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এইচটিএস। অন্যদিকে ইরানের সমর্থনপুষ্ট হয়ে কাজ করছে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও গাজার হামাস। তুরস্কের সঙ্গেও অবশ্য হামাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আরব বসন্ত ও প্রতিবিপ্লবের প্রায় দেড় দশক পরেও ইসলামপন্থিরা যেমন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, তেমনিভাবে তারা পিছুও হটেনি।
আরব রাষ্ট্রগুলোয় বর্তমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইসলামি আন্দোলনগুলোর আবেগপূর্ণ বক্তব্য ও ধর্মীয় আবেদন এক ধরনের ধর্মীয় মুক্তি সংগ্রামের রূপ নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হয়েছে। এটা এ কারণে হয়নি যে, তারা খুবই শক্তিশালী, এমনকি তারা বর্তমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে কোনো নির্ভরযোগ্য সমাধানও তুলে ধরতে পারেনি। বরং ইসলামি আন্দোলনগুলো আরব শাসকদের রাজনৈতিক বৈধতার দিক থেকে যে রাষ্ট্রীয় সংকট তৈরি হয়েছে, সেটার প্রতিই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে তারা।
এ মুহূর্তে ইসলামপন্থিরাই আরব বিশ্বের ক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠীর কাছে বিকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এসব দেশের সরকারগুলো নিরাপত্তার নামে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে হরণ করেছে এবং আরব জনগণকে কোণঠাসা ও অবদমিত করে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। অথচ তারা অর্থনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য কোনো বিকল্প তুলে ধরতে পারেনি।
ইসরাইলের গণহত্যার মুখে গাজার ফিলিস্তিনিদের সামনে কোনো কিছুই তুলে ধরতে পারেনি আরব বিশ্বের সরকারগুলো। অথচ এসব দেশের সরকার শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন ও আধুনিক সমরাস্ত্র কেনার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। আর এসব করতে গিয়ে তারা নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ ও স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছে।
একইসঙ্গে তারা ইসলামপন্থিদের দানব হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু নতুন প্রজন্ম এখন আর সরকারের এসব কথায় কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। কারণ সরকারের নানা ব্যর্থতার মাশুল দিতে হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকেই। সংগত কারণেই তারা তাদের দেশের বর্তমান অবস্থাকে পরিবর্তনের বিকল্প হিসেবে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
‘ধর্ম হলো জনগণের জন্য আফিম’ Ñ কার্ল মার্ক্সের এই বিখ্যাত উক্তির বিপরীতে দাঁড়িয়ে ইসলামি আন্দোলনগুলো ধর্মীয় ও আবেগপ্রবণ বার্তা কাজে লাগিয়ে জনগণের মধ্যে মুক্তির আদর্শ ও এক ধরনের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আরব শাসকরা যত দিন পর্যন্ত গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এবং একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার বাস্তবসম্মত বিকল্প দিতে ব্যর্থ হবে, তত দিন ইসলামপন্থিদের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
অন্যদিকে উদার ও বামপন্থি রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখনো ইসলামপন্থিদের জনপ্রিয় বিকল্প হিসেবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে ইসলামপন্থিরাই গত কয়েক দশক ধরে আরব বিশ্বের অনেক দেশে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করেছে অনেকটাই।
আরব ও ইসলামি বিশ্বের দেশগুলোয় রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক কী হবে, তা নিয়ে এখনো সুস্পষ্ট কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে এ ধরনের অস্পষ্টতা ইসলামপন্থি আন্দোলনগুলোর জন্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করছে। এর কারণ হচ্ছে, তারা ধর্মের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনগুলোর বিরোধিতা করতে পারছে।
এই পরিস্থিতি বর্তমান সময়ের জন্যও প্রাসঙ্গিক। কারণ বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, আরব সমাজে এখনো ধর্মেও অনেক বেশি প্রভাব আছে। বিগত কয়েক দশকে আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলেও তা শাসক গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া নীতি অনুসরণের কারণে অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়।
সেন্টার অব মিডল ইস্ট স্টাডিজের পরিচালক নাদের হাশেমি তার ইসলাম, সেক্যুলারিজম অ্যান্ড লিবারেল ডেমোক্রেসি বইয়ে লিখেছেন, ইসলামপন্থিদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা, তাদের কোণঠাসা করে প্রান্তিক অবস্থনে ঠেলে দেওয়া, আটক করা বা নির্বাসনে পাঠানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ইসলামকে মোকাবিলা করা মোটেই সম্ভব হবে না।
বরং রাজনৈতিক ইসলামকে মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত করার মাধ্যমেই কেবল এটাকে মোকাবিলা করা যাবে। সেটাই হবে উপযুক্ত পন্থা। রাজনৈতিক ইসলাম বা ইসলামি আন্দোলনগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে তাদের সমাজের ভেতরে রেখে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়াই হবে উপযুক্ত পদক্ষেপ। এর ফলে তারা গণতন্ত্র, বাস্তবতা ও বিভিন্ন মতবাদ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবে এবং সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে আগ্রহী হবে।
অনেক আরব দেশ ইসলামপন্থিদের প্রভাব কমাতে ধর্মীয় ক্ষেত্রকে পুনর্বিন্যাস করার বা নতুনভাবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ধর্মীয় ক্ষেত্রে ইসলামপন্থিদের প্রভাব কমাতে আইনের আওতায় থেকে ধর্মীয় বিধান বা ফতোয়া জারি, মসজিদে খুতবা দিয়ে জনগণকে প্রভাবিত করা এবং ধর্মীয় নির্দেশনা প্রদানের এখতিয়ার বা নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে থাকার পদক্ষেপ নিয়েছে। মিসরের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাইফ এল-দিন আবদেল ফাত্তাহ এই নীতিকে অভিহিত করেছেন ‘ধর্মের জাতীয়করণ’ হিসেবে।
কয়েকটি আরব দেশের সরকার বিগত কয়েক দশক ধরে অনাদরে পড়ে থাকা সরকারি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে এসব প্রতিষ্ঠান আরব সমাজে ধর্মীয় বিষয় পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে কিছু দেশ আবার রাজনৈতিক ইসলামের বিকল্প হিসেবে ‘সুফি ইসলাম’কে সামনে নিয়ে আসার কথাও চিন্তা করছে। কারণ সুফি ইসলাম রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আধ্যাত্মিকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এসব নীতির অধিকাংশই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। বরং রাজনৈতিক ইসলামই এখনো আরব বিশ্বের সরকারগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দিন দিন আরও শক্তি সঞ্চয় করছে।
মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ : মোতালেব জামালী
এমবি

এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৮ ঘণ্টা আগে
‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৮ ঘণ্টা আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৮ ঘণ্টা আগে
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে