সৈয়দ আবদাল আহমদ
শাওয়ালের চাঁদ রোববার দেখা গেলে সোমবার ঈদ। আর চাঁদ দেখা না গেলে ঈদ হবে পরদিন। কিন্তু এরই মধ্যে রঙিন হয়ে উঠেছে চারপাশ। ছড়িয়ে পড়ছে ঈদের আনন্দ। চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাজবে সাম্যের কবি নজরুলের অমর গান- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ...।’ পাড়ায়-মহল্লায় মসজিদের মাইকে ভেসে আসবে ঈদ মোবারক ধ্বনি। ‘পথে পথে আজ হাঁকিব বন্ধু, ঈদ মোবারক! আসসালাম!’ নজরুলের বর্ণিত উচ্ছ্বাসেই শুরু হবে ঈদের শুভেচ্ছাবিনিময়।
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ভিন্ন এক আমেজে এবার আমাদের ঘরে ঈদ এসেছে।
সারা দেশে ঈদুল ফিতরের আনন্দময় উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। মা-বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে এই উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে কর্মজীবী মানুষের কাফেলা ছুটছে বাড়ির পথে। লম্বা ছুটি পেয়ে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ করতে এক শহর থেকে আরেক শহরে, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাচ্ছে মানুষ।
এই রাজধানী নগরী ঢাকা খালি করে মানুষ যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। কেউ এরই মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেছেন, কেউ বা বাড়ির পথে আছেন। ঈদে কত লোক বাড়ি যান? বাস, ট্রেন, নৌ ও আকাশপথে প্রতিদিনের যাত্রী ধরে মোটামুটি একটি হিসাব পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা ৬০ লাখের কাছাকাছি। নাড়ির টানেই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়া। সত্যিই অনন্য এক উৎসব এই ঈদ।
বাংলাদেশের উৎসবের মধ্যে ঈদের কোনো তুলনা নেই। ঈদের তুলনা শুধু ঈদ। ঈদ স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। ঈদের আনন্দের মতো এমন অপার আনন্দ, এমন প্রাণ উজাড় করা আনন্দ অন্য কোনো উৎসবে পাওয়া যায় না।
সাধারণ অর্থে ঈদ মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু এই ধর্মীয় উৎসবই এখন এত বড় সামাজিক উৎসব হয়ে উঠেছে যে, এটা আমাদের দেশ সম্প্রদায়ের জীবনকে দারুণ আলোড়িত করছে। এই উৎসব এখন আর শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে দেখলে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা ঈদের মাঠে সমবেত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের কয়েকটি মুহূর্ত মাত্র। কিন্তু এই কয়েকটি মুহূর্তের জন্যই যে প্রস্তুতি, যে আয়োজন, যে উৎসাহÑ তার সঙ্গে অন্যকিছুই মেলে না।
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আকাশে চাঁদ উঠবে, সেই চাঁদের জন্য অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করবে, সেই চাঁদ বয়ে আনবে আনন্দের বার্তা। আকাশে শাওয়ালের এক ফালি চাঁদ কখন উঁকি দেবে, সেই যে আকুলতা, চাঁদ আজ উঠবে না কাল উঠবে সেই যে আনন্দময় অনিশ্চয়তা; সেটা এক অপার আনন্দেরই উপলক্ষ। এটাই ঈদের আনন্দ।
ঈদের একটি মাত্র দিন। কিন্তু এই একটি দিনের জন্যই চলে মাসব্যাপী প্রস্তুতি। ঈদের আগে মানুষের মনে ঈদ ছাড়া আর কোনো বিষয় স্থান পায় না। সবকিছু ছাপিয়ে শুধু ঈদকে ঘিরেই থাকে সব চিন্তা, সব কর্ম। ঈদের নেশায় যেন বুঁদ হয়ে যায় সবাই। ঈদ মানে বোনাস পেতে হবে। ঈদ মানে ছেলেমেয়ে, মা-বাবা, বউ-আত্মীয়স্বজনকে পোশাক কিনে দিতে হবে। ঈদ মানে প্রিয়জনকে উপহার দিতে হবে। ঈদ মানে বাড়ি যাওয়া।
ট্রেন-বাস-লঞ্চে ভিড় ঠেলে, ঝক্কি-ঝামেলাা উপেক্ষা করে, ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠে দেশ গ্রামে যাওয়া। ঈদ মানে নতুন নতুন ফ্যাশন। ঈদ মানে নতুন জুতা, নতুন পাঞ্জাবি, নতুন শাড়ি, গহনা আর সালোয়ার-কামিজ ও থ্রি-পিস। ঈদ মানে সেমাই খাওয়া, পোলাও-কোরমা, জর্দা-ফিরনি দিয়ে ভূরিভোজন। ঈদ মানে কোলাকুলি করা, মা-বাবা, মুরব্বিদের সালাম করা। ঈদ মানে ছোটদের ঈদি দেওয়া, শহরময় হইহুল্লোড় করে ঘুরে বেড়ানো। ঈদ মানে পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়াত খাওয়া। ঈদ মানে গরিবের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, ফিতরা আদায় করা ও জাকাত দেওয়া।
ঈদ মানে দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকার ঈদ সংখ্যা পড়া, টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানগুলো দেখা। এমন আনন্দময় উৎসব কি আর আছে? তাই ঈদ উৎসব অনন্য। এই উৎসব জীবনকে নতুন করে রাঙিয়ে দেয়। পরস্পরের সৎ প্রতিবেশী হয়ে ওঠার এক মহান উপলক্ষ ঈদ। শেকড়ের টান বোঝা যায় এই ঈদে। প্রবাসীরা দেশে ফিরতে আকুল হয়, শহরবাসী গ্রামে ফেরার রোমাঞ্চ পায়। একাকী মানুষ বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মেলার জন্য ব্যাকুল হয়। অনেক ভোগান্তি শেষে নিজ গ্রামে, নিজ প্রাঙ্গণে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে স্বর্গসুখ উপভোগ করে। দেশের মানুষ তখন গ্রাম দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়, ভাববিনিময় হয়।
এই ঈদ কেন এত আনন্দের! কারণ সংযমের পর ঈদ আসে। ঈদুল ফিতরকে পেতে হয় এক মাস ধর্মীয় আচারের পর। রমজানের রোজার কৃচ্ছ্র সাধনের পর এই ঈদে তাই স্বার্থপর ভোগের বদলে মিলনের আনন্দই মুখ্য। এই মিলন এক মানুষের সঙ্গে আরেক মানুষের, এক পরিবারের সঙ্গে আরেক পরিবারের, যে বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় না বহুকাল, যে স্বজন আড়ালে ছিলেন বহু দিন, ঈদের পর তার সঙ্গে, তাদের সঙ্গে প্রীতিময় সাক্ষাৎ ঘটে।
ঈদের আনন্দ তাই এক কথায় ইউনিক। ঈদে আমি আমার পাশের মানুষকে, ঘনিষ্ঠ মানুষকে শেয়ার করছি, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। পরস্পরের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিÑ এটাই ঈদের শিক্ষা। অন্য অর্থে ঈদ মানে রিইউনিয়ন বা পুনর্মিলন। পরিবারের সঙ্গে, প্রতিবেশীর সঙ্গে, বন্ধুর সঙ্গে সম্প্রদায়ের সঙ্গে, দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে ঈদের এই পুনর্মিলন। ঈদের এই আনন্দ এক কথায় বলতে গুডফিলিং বা আনন্দদায়ক অনুভূতি।
কেমন করে ঈদ এলো
আমরা জানি, আমাদের মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) হিজরি দ্বিতীয় সনে ঈদের প্রবর্তন করেন। তবে আমাদের দেশে কখন কীভাবে ঈদ উৎসব পালন হয়ে আসছে, তার কোনো সঠিক ইতিহাস নেই। তবে নানা ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিকদের বিবরণ থেকে এ সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তা হচ্ছে, ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে এলেও এ দেশে নামাজ, রোজা ও ঈদ উৎসবের প্রচলন শুরু হয়েছে আরো আগে থেকে।
বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে আসার আগে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ব বাংলায় আসেন। অন্যদিকে আরবীয় এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকরা চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবেই পূর্ব বাংলায় একটি মুসলিম সাংস্কৃতিক রীতি তথা ধর্মীয় প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল। ঈদ উৎসবের সূচনা হয়েছিল তখন থেকে।
অষ্টম শতকের দিকে বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমন ঘটে। ফলে তখন থেকেই সুফি, দরবেশ, আউলিয়া এবং তুর্ক আরব মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে এখানে রোজা, নামাজ, ঈদের সূত্রপাত হয়। এ দেশে রোজা পালনের প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় তাসকিরাতুল সোলহা নামক গ্রন্থে।
আরবের সুফি সাধক উল খিদা হিজরি ৩৪১ সন মোতাবেক ৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে এ দেশে আসেন। বঙ্গদেশে ইসলাম আগমন-পূর্বকালে শাহ সুলতান রুমি নেত্রকোনায় এবং বাবা আদম শহীদ বিক্রমপুরের রামপালে আস্তানা গেড়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তবে এদের মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় রোজা, নামাজ ও ঈদ প্রচলন শুরু হয়, তা পুরোপুরি মনে হয় না।
এরা ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম ধর্মীয় আচার ও উৎসব পালন করতেন বলে ধরে নেওয়া হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম মৌলিক গ্রন্থ ‘বাহারিস্থানই গায়েবি’ গ্রন্থের লেখক মির্জা নাথান ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার ইসলাম খাঁর সঙ্গে ঢাকায় আসেন। ওই গ্রন্থে মির্জা নাথান ঈদ উৎসবের কিছু বিবরণ দিয়েছেন।
সপ্তদশ শতকের গোড়ায় ঢাকা ও তার পাশের অঞ্চলে আরবি শাবান মাসের ২২ তারিখ থেকেই রোজার আয়োজন শুরু হতো। এ সময় থেকে মসজিদ সংস্কার ও আবাসিক গৃহাদি পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলত। বাড়ির কর্ত্রী পানি ঠান্ডা রাখার জন্য নতুন সুরি কিনতেন। ইফতারের সময় ঠান্ডা পানি পান করা হতো, ইফতারসামগ্রী তৈরি করার জন্য গোলাপজল, কেওড়া ও তোকমা ব্যবহার করা হতো। মুঘল ও পাঠান আমলে ঢাকায় পঞ্চায়েতি চৌকিদারের মাধ্যমে মহল্লায় ডেকে সাহরি খাওয়ানোর প্রচলন ছিল।
পরে ঢাকায় নওয়াব খাজা আহসান উল্লাহর আমলে বিভিন্ন পঞ্চায়েত থেকে কাসিদা দল বের হওয়া শুরু হয়। ১৭০৪-২৫ সালে মুর্শিদ কুলি খান ঈদের দিনে ঢাকার দুর্গ থেকে ধানমন্ডির ঈদগাহ ময়দান পর্যন্ত একক্রোশ পথে প্রচুর টাকাকড়ি ছড়িয়ে দিতেন। ধানমন্ডির এই ঈদগাহ সবচেয়ে প্রাচীন ঈদের ময়দান। নওয়াবের সহযাত্রী হয়ে ওমরাহ, রাজকর্মচারী এবং মুসলমান জনসাধারণ শোভাযাত্রা করে ঈদের মাঠে যেতেন নামাজ পড়তে। ঢাকা শহরে ওই সময়কালে ঈদ উদযাপন ও ইদের মিছিলের আঁকা ছবি জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
ঈদের আলোচিত চরিত্র সেমাই পাঞ্জাবি
পায়জামা-পাঞ্জাবি ও সেমাইকে ঘিরেই ঈদুল ফিতরের সব আনন্দ। অন্য অর্থে ঈদুল ফিতরের আলোচিত চরিত্র হলো সেমাই ও পাঞ্জাবি। সেমাই ছাড়া ঈদুল ফিতর জমে না। এমন বাড়ি নেই যেখানে ঈদের দিন সেমাই রান্না হয় না। ঈদের দু-তিনদিন আগে সেমাই কেনেন সবাই। এটা ঈদের শেষ কেনাকাটা হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটা। কত ধরনের যে সেমাই আছে বাজারে! বগুড়ার লাচ্ছা সেমাই কত যে বিক্রি হয়! সেমাই খাওয়ার বাংলাদেশি সংস্কৃতি এখন অন্তত ৪০টি দেশে দেখা যায়।
তেমনি ঈদে পুরুষের পোশাকের ক্ষেত্রে পায়জামা-পাঞ্জাবি অপরিহার্য। পোশাকের ৮০ শতাংশই পায়জামা-পাঞ্জাবি। কত পাঞ্জাবি বিক্রি হয় বাংলাদেশে—এর সঠিক হিসাব না থাকলেও দোকান মালিক সমিতির এক হিসাবে বলা হয়েছে, অন্তত তিন কোটি পাঞ্জাবি বিক্রি হয় এই ঈদে। নানা রঙ ও কারুকাজের পাঞ্জাবি রয়েছে বাজারে। সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। পত্রিকায় খবর বের হয়েছে, গুলশানে পাঁচ লাখ টাকা দামের পাঞ্জাবিও দোকানে এসেছে।
এরপর ঈদে বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, ছোট বাচ্চাদের ফ্রক আর গৃহিণীদের শাড়ি।
দোকান মালিক সমিতির হিসাবে বলা হয়েছে, এবার ঈদের বাজার প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার। মানুষ মনের আনন্দে এবার কেনাকাটা করছেন। দোকানিরাও ভালো ব্যবসা হওয়ায় খুব খুশি। মার্কেটগুলো অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে জমজমাট।
ঈদে অনন্য ভূমিকায় নারী
ঈদ উৎসবে নারীর ভূমিকা অনন্য। কী শহর, কী গ্রামÑ ঈদ আয়োজন সামনে রেখে নারীকে ব্যস্ত থাকতে হয়। রমজান মাসব্যাপী নারীকে ব্যস্ত থাকতে হয় নানা রান্নাবান্না, কেনাকাটা ও সেলাই ফোঁড়াইয়ে। রোজার ১৫ দিন যাওয়ার পর থেকেই গ্রামের বধূরা নানা রকম নকশি পিঠা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শবেকদরের রাতে মেয়েরা মেহেদি এনে তা বেটে হাত রাঙিয়ে দেওয়ার কাজটি করেন। ঈদের সকালে ঈদ জামাতে যাওয়ার আগে পুরুষরা সেমাই, জর্দা, পায়েস-ফিরনি জাতীয় হাতে তৈরি মিষ্টি খেয়ে যায়।
নারীকে এই আয়োজনটি রাতেই সেরে রাখতে হয়। ঈদ সংস্কৃতির পুরোটার সঙ্গেই নারীকে জড়িত থাকতে হয়। সৈয়দ মুজতবা আলী তার আত্মজীবনীতে ঈদে মায়ের ব্যস্ততা সম্পর্কে লেখেন, ‘শীতের দিনে রোজা শুরু হয়েছে। সমস্ত দিনের কর্মসূচি পাল্টিয়েছে। মা খুব ভোরে উঠে আমাদের খাইয়ে-দাইয়ে রোদে বসেছেন। আমরা সকলে শিউলি ফুলের পাপড়ি ছাড়িয়ে পাল বোঁটা একত্র করছি। মা পাশে বসে সেমাই তৈরি করছেন। সেমাই ডালার ওপর রেখে মা রৌদ্রে শুকাতে দিলেন। শিউলির বোঁটাও রৌদ্রে দিলেন।
তারপর মা কাপড় কেটে পায়জামার মাপ নিলেন... সঙ্গে আমাদের জামার মাপও। প্রথম রোজা থেকে চলল নিত্য ঈদের প্রস্তুতি। ১৯১৮ সালের কথা বলছি। ঈদের দিন মা রাঁধবেন কোরমা-পোলাও। আর জর্দাতে দেবেন ওই শিউলি ফুলের বোঁটার রঙ, তাতে জর্দার শুধু যে রঙ খোলতাই হবে, তা নয়, চমৎকার ঘ্রাণও বের হবে।
আর সেমাই তৈরি হবে, যে সেমাই মা নিজের হাতে মাসভর করেছেন; আমাদের গায়ে উঠবে মার নিজের হাতের সেলাই করা জামা-পায়জামা। মাকে নিয়ে ঈদ আর ঈদের খুশির সব আয়োজনে রয়েছে মায়ের হাতের স্নেহের পরশ।’ স্বামী-সন্তান, পরিবারের সবার জন্য এভাবেই ঈদে একজন নারী বা মা-বোনরা এমন ভূমিকা নেন। এ জন্যই ঈদ এত আকর্ষণীয়।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ
শাওয়ালের চাঁদ রোববার দেখা গেলে সোমবার ঈদ। আর চাঁদ দেখা না গেলে ঈদ হবে পরদিন। কিন্তু এরই মধ্যে রঙিন হয়ে উঠেছে চারপাশ। ছড়িয়ে পড়ছে ঈদের আনন্দ। চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাজবে সাম্যের কবি নজরুলের অমর গান- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ...।’ পাড়ায়-মহল্লায় মসজিদের মাইকে ভেসে আসবে ঈদ মোবারক ধ্বনি। ‘পথে পথে আজ হাঁকিব বন্ধু, ঈদ মোবারক! আসসালাম!’ নজরুলের বর্ণিত উচ্ছ্বাসেই শুরু হবে ঈদের শুভেচ্ছাবিনিময়।
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ভিন্ন এক আমেজে এবার আমাদের ঘরে ঈদ এসেছে।
সারা দেশে ঈদুল ফিতরের আনন্দময় উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। মা-বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে এই উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে কর্মজীবী মানুষের কাফেলা ছুটছে বাড়ির পথে। লম্বা ছুটি পেয়ে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ করতে এক শহর থেকে আরেক শহরে, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাচ্ছে মানুষ।
এই রাজধানী নগরী ঢাকা খালি করে মানুষ যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। কেউ এরই মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেছেন, কেউ বা বাড়ির পথে আছেন। ঈদে কত লোক বাড়ি যান? বাস, ট্রেন, নৌ ও আকাশপথে প্রতিদিনের যাত্রী ধরে মোটামুটি একটি হিসাব পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা ৬০ লাখের কাছাকাছি। নাড়ির টানেই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়া। সত্যিই অনন্য এক উৎসব এই ঈদ।
বাংলাদেশের উৎসবের মধ্যে ঈদের কোনো তুলনা নেই। ঈদের তুলনা শুধু ঈদ। ঈদ স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। ঈদের আনন্দের মতো এমন অপার আনন্দ, এমন প্রাণ উজাড় করা আনন্দ অন্য কোনো উৎসবে পাওয়া যায় না।
সাধারণ অর্থে ঈদ মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু এই ধর্মীয় উৎসবই এখন এত বড় সামাজিক উৎসব হয়ে উঠেছে যে, এটা আমাদের দেশ সম্প্রদায়ের জীবনকে দারুণ আলোড়িত করছে। এই উৎসব এখন আর শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে দেখলে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা ঈদের মাঠে সমবেত হয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের কয়েকটি মুহূর্ত মাত্র। কিন্তু এই কয়েকটি মুহূর্তের জন্যই যে প্রস্তুতি, যে আয়োজন, যে উৎসাহÑ তার সঙ্গে অন্যকিছুই মেলে না।
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আকাশে চাঁদ উঠবে, সেই চাঁদের জন্য অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করবে, সেই চাঁদ বয়ে আনবে আনন্দের বার্তা। আকাশে শাওয়ালের এক ফালি চাঁদ কখন উঁকি দেবে, সেই যে আকুলতা, চাঁদ আজ উঠবে না কাল উঠবে সেই যে আনন্দময় অনিশ্চয়তা; সেটা এক অপার আনন্দেরই উপলক্ষ। এটাই ঈদের আনন্দ।
ঈদের একটি মাত্র দিন। কিন্তু এই একটি দিনের জন্যই চলে মাসব্যাপী প্রস্তুতি। ঈদের আগে মানুষের মনে ঈদ ছাড়া আর কোনো বিষয় স্থান পায় না। সবকিছু ছাপিয়ে শুধু ঈদকে ঘিরেই থাকে সব চিন্তা, সব কর্ম। ঈদের নেশায় যেন বুঁদ হয়ে যায় সবাই। ঈদ মানে বোনাস পেতে হবে। ঈদ মানে ছেলেমেয়ে, মা-বাবা, বউ-আত্মীয়স্বজনকে পোশাক কিনে দিতে হবে। ঈদ মানে প্রিয়জনকে উপহার দিতে হবে। ঈদ মানে বাড়ি যাওয়া।
ট্রেন-বাস-লঞ্চে ভিড় ঠেলে, ঝক্কি-ঝামেলাা উপেক্ষা করে, ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠে দেশ গ্রামে যাওয়া। ঈদ মানে নতুন নতুন ফ্যাশন। ঈদ মানে নতুন জুতা, নতুন পাঞ্জাবি, নতুন শাড়ি, গহনা আর সালোয়ার-কামিজ ও থ্রি-পিস। ঈদ মানে সেমাই খাওয়া, পোলাও-কোরমা, জর্দা-ফিরনি দিয়ে ভূরিভোজন। ঈদ মানে কোলাকুলি করা, মা-বাবা, মুরব্বিদের সালাম করা। ঈদ মানে ছোটদের ঈদি দেওয়া, শহরময় হইহুল্লোড় করে ঘুরে বেড়ানো। ঈদ মানে পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়াত খাওয়া। ঈদ মানে গরিবের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, ফিতরা আদায় করা ও জাকাত দেওয়া।
ঈদ মানে দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকার ঈদ সংখ্যা পড়া, টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানগুলো দেখা। এমন আনন্দময় উৎসব কি আর আছে? তাই ঈদ উৎসব অনন্য। এই উৎসব জীবনকে নতুন করে রাঙিয়ে দেয়। পরস্পরের সৎ প্রতিবেশী হয়ে ওঠার এক মহান উপলক্ষ ঈদ। শেকড়ের টান বোঝা যায় এই ঈদে। প্রবাসীরা দেশে ফিরতে আকুল হয়, শহরবাসী গ্রামে ফেরার রোমাঞ্চ পায়। একাকী মানুষ বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মেলার জন্য ব্যাকুল হয়। অনেক ভোগান্তি শেষে নিজ গ্রামে, নিজ প্রাঙ্গণে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে স্বর্গসুখ উপভোগ করে। দেশের মানুষ তখন গ্রাম দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়, ভাববিনিময় হয়।
এই ঈদ কেন এত আনন্দের! কারণ সংযমের পর ঈদ আসে। ঈদুল ফিতরকে পেতে হয় এক মাস ধর্মীয় আচারের পর। রমজানের রোজার কৃচ্ছ্র সাধনের পর এই ঈদে তাই স্বার্থপর ভোগের বদলে মিলনের আনন্দই মুখ্য। এই মিলন এক মানুষের সঙ্গে আরেক মানুষের, এক পরিবারের সঙ্গে আরেক পরিবারের, যে বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় না বহুকাল, যে স্বজন আড়ালে ছিলেন বহু দিন, ঈদের পর তার সঙ্গে, তাদের সঙ্গে প্রীতিময় সাক্ষাৎ ঘটে।
ঈদের আনন্দ তাই এক কথায় ইউনিক। ঈদে আমি আমার পাশের মানুষকে, ঘনিষ্ঠ মানুষকে শেয়ার করছি, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। পরস্পরের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিÑ এটাই ঈদের শিক্ষা। অন্য অর্থে ঈদ মানে রিইউনিয়ন বা পুনর্মিলন। পরিবারের সঙ্গে, প্রতিবেশীর সঙ্গে, বন্ধুর সঙ্গে সম্প্রদায়ের সঙ্গে, দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে ঈদের এই পুনর্মিলন। ঈদের এই আনন্দ এক কথায় বলতে গুডফিলিং বা আনন্দদায়ক অনুভূতি।
কেমন করে ঈদ এলো
আমরা জানি, আমাদের মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) হিজরি দ্বিতীয় সনে ঈদের প্রবর্তন করেন। তবে আমাদের দেশে কখন কীভাবে ঈদ উৎসব পালন হয়ে আসছে, তার কোনো সঠিক ইতিহাস নেই। তবে নানা ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিকদের বিবরণ থেকে এ সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তা হচ্ছে, ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে এলেও এ দেশে নামাজ, রোজা ও ঈদ উৎসবের প্রচলন শুরু হয়েছে আরো আগে থেকে।
বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে আসার আগে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ব বাংলায় আসেন। অন্যদিকে আরবীয় এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকরা চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবেই পূর্ব বাংলায় একটি মুসলিম সাংস্কৃতিক রীতি তথা ধর্মীয় প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল। ঈদ উৎসবের সূচনা হয়েছিল তখন থেকে।
অষ্টম শতকের দিকে বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমন ঘটে। ফলে তখন থেকেই সুফি, দরবেশ, আউলিয়া এবং তুর্ক আরব মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে এখানে রোজা, নামাজ, ঈদের সূত্রপাত হয়। এ দেশে রোজা পালনের প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় তাসকিরাতুল সোলহা নামক গ্রন্থে।
আরবের সুফি সাধক উল খিদা হিজরি ৩৪১ সন মোতাবেক ৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে এ দেশে আসেন। বঙ্গদেশে ইসলাম আগমন-পূর্বকালে শাহ সুলতান রুমি নেত্রকোনায় এবং বাবা আদম শহীদ বিক্রমপুরের রামপালে আস্তানা গেড়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তবে এদের মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় রোজা, নামাজ ও ঈদ প্রচলন শুরু হয়, তা পুরোপুরি মনে হয় না।
এরা ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম ধর্মীয় আচার ও উৎসব পালন করতেন বলে ধরে নেওয়া হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম মৌলিক গ্রন্থ ‘বাহারিস্থানই গায়েবি’ গ্রন্থের লেখক মির্জা নাথান ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার ইসলাম খাঁর সঙ্গে ঢাকায় আসেন। ওই গ্রন্থে মির্জা নাথান ঈদ উৎসবের কিছু বিবরণ দিয়েছেন।
সপ্তদশ শতকের গোড়ায় ঢাকা ও তার পাশের অঞ্চলে আরবি শাবান মাসের ২২ তারিখ থেকেই রোজার আয়োজন শুরু হতো। এ সময় থেকে মসজিদ সংস্কার ও আবাসিক গৃহাদি পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলত। বাড়ির কর্ত্রী পানি ঠান্ডা রাখার জন্য নতুন সুরি কিনতেন। ইফতারের সময় ঠান্ডা পানি পান করা হতো, ইফতারসামগ্রী তৈরি করার জন্য গোলাপজল, কেওড়া ও তোকমা ব্যবহার করা হতো। মুঘল ও পাঠান আমলে ঢাকায় পঞ্চায়েতি চৌকিদারের মাধ্যমে মহল্লায় ডেকে সাহরি খাওয়ানোর প্রচলন ছিল।
পরে ঢাকায় নওয়াব খাজা আহসান উল্লাহর আমলে বিভিন্ন পঞ্চায়েত থেকে কাসিদা দল বের হওয়া শুরু হয়। ১৭০৪-২৫ সালে মুর্শিদ কুলি খান ঈদের দিনে ঢাকার দুর্গ থেকে ধানমন্ডির ঈদগাহ ময়দান পর্যন্ত একক্রোশ পথে প্রচুর টাকাকড়ি ছড়িয়ে দিতেন। ধানমন্ডির এই ঈদগাহ সবচেয়ে প্রাচীন ঈদের ময়দান। নওয়াবের সহযাত্রী হয়ে ওমরাহ, রাজকর্মচারী এবং মুসলমান জনসাধারণ শোভাযাত্রা করে ঈদের মাঠে যেতেন নামাজ পড়তে। ঢাকা শহরে ওই সময়কালে ঈদ উদযাপন ও ইদের মিছিলের আঁকা ছবি জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
ঈদের আলোচিত চরিত্র সেমাই পাঞ্জাবি
পায়জামা-পাঞ্জাবি ও সেমাইকে ঘিরেই ঈদুল ফিতরের সব আনন্দ। অন্য অর্থে ঈদুল ফিতরের আলোচিত চরিত্র হলো সেমাই ও পাঞ্জাবি। সেমাই ছাড়া ঈদুল ফিতর জমে না। এমন বাড়ি নেই যেখানে ঈদের দিন সেমাই রান্না হয় না। ঈদের দু-তিনদিন আগে সেমাই কেনেন সবাই। এটা ঈদের শেষ কেনাকাটা হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটা। কত ধরনের যে সেমাই আছে বাজারে! বগুড়ার লাচ্ছা সেমাই কত যে বিক্রি হয়! সেমাই খাওয়ার বাংলাদেশি সংস্কৃতি এখন অন্তত ৪০টি দেশে দেখা যায়।
তেমনি ঈদে পুরুষের পোশাকের ক্ষেত্রে পায়জামা-পাঞ্জাবি অপরিহার্য। পোশাকের ৮০ শতাংশই পায়জামা-পাঞ্জাবি। কত পাঞ্জাবি বিক্রি হয় বাংলাদেশে—এর সঠিক হিসাব না থাকলেও দোকান মালিক সমিতির এক হিসাবে বলা হয়েছে, অন্তত তিন কোটি পাঞ্জাবি বিক্রি হয় এই ঈদে। নানা রঙ ও কারুকাজের পাঞ্জাবি রয়েছে বাজারে। সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। পত্রিকায় খবর বের হয়েছে, গুলশানে পাঁচ লাখ টাকা দামের পাঞ্জাবিও দোকানে এসেছে।
এরপর ঈদে বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, ছোট বাচ্চাদের ফ্রক আর গৃহিণীদের শাড়ি।
দোকান মালিক সমিতির হিসাবে বলা হয়েছে, এবার ঈদের বাজার প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার। মানুষ মনের আনন্দে এবার কেনাকাটা করছেন। দোকানিরাও ভালো ব্যবসা হওয়ায় খুব খুশি। মার্কেটগুলো অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে জমজমাট।
ঈদে অনন্য ভূমিকায় নারী
ঈদ উৎসবে নারীর ভূমিকা অনন্য। কী শহর, কী গ্রামÑ ঈদ আয়োজন সামনে রেখে নারীকে ব্যস্ত থাকতে হয়। রমজান মাসব্যাপী নারীকে ব্যস্ত থাকতে হয় নানা রান্নাবান্না, কেনাকাটা ও সেলাই ফোঁড়াইয়ে। রোজার ১৫ দিন যাওয়ার পর থেকেই গ্রামের বধূরা নানা রকম নকশি পিঠা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শবেকদরের রাতে মেয়েরা মেহেদি এনে তা বেটে হাত রাঙিয়ে দেওয়ার কাজটি করেন। ঈদের সকালে ঈদ জামাতে যাওয়ার আগে পুরুষরা সেমাই, জর্দা, পায়েস-ফিরনি জাতীয় হাতে তৈরি মিষ্টি খেয়ে যায়।
নারীকে এই আয়োজনটি রাতেই সেরে রাখতে হয়। ঈদ সংস্কৃতির পুরোটার সঙ্গেই নারীকে জড়িত থাকতে হয়। সৈয়দ মুজতবা আলী তার আত্মজীবনীতে ঈদে মায়ের ব্যস্ততা সম্পর্কে লেখেন, ‘শীতের দিনে রোজা শুরু হয়েছে। সমস্ত দিনের কর্মসূচি পাল্টিয়েছে। মা খুব ভোরে উঠে আমাদের খাইয়ে-দাইয়ে রোদে বসেছেন। আমরা সকলে শিউলি ফুলের পাপড়ি ছাড়িয়ে পাল বোঁটা একত্র করছি। মা পাশে বসে সেমাই তৈরি করছেন। সেমাই ডালার ওপর রেখে মা রৌদ্রে শুকাতে দিলেন। শিউলির বোঁটাও রৌদ্রে দিলেন।
তারপর মা কাপড় কেটে পায়জামার মাপ নিলেন... সঙ্গে আমাদের জামার মাপও। প্রথম রোজা থেকে চলল নিত্য ঈদের প্রস্তুতি। ১৯১৮ সালের কথা বলছি। ঈদের দিন মা রাঁধবেন কোরমা-পোলাও। আর জর্দাতে দেবেন ওই শিউলি ফুলের বোঁটার রঙ, তাতে জর্দার শুধু যে রঙ খোলতাই হবে, তা নয়, চমৎকার ঘ্রাণও বের হবে।
আর সেমাই তৈরি হবে, যে সেমাই মা নিজের হাতে মাসভর করেছেন; আমাদের গায়ে উঠবে মার নিজের হাতের সেলাই করা জামা-পায়জামা। মাকে নিয়ে ঈদ আর ঈদের খুশির সব আয়োজনে রয়েছে মায়ের হাতের স্নেহের পরশ।’ স্বামী-সন্তান, পরিবারের সবার জন্য এভাবেই ঈদে একজন নারী বা মা-বোনরা এমন ভূমিকা নেন। এ জন্যই ঈদ এত আকর্ষণীয়।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৩ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৩ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে