মনজুর আহমদ
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই বিবাদে সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের পক্ষে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম্পও পিছিয়ে নেই। সুপ্রিম কোর্টের একটি সর্বসম্মত রুলিংকে সরাসরি অবজ্ঞা করে তিনি তার সিদ্ধান্তকেই সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত বলে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। তিনি নিজে যত না বলছেন তার দোসররা বলছেন তার শতগুণ। তার লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া স্টিভ ব্যানন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে স্পষ্টই বলেছেন,
সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি দেশের সার্বিক কল্যাণ সাধনের জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন। তাই দেশের কল্যাণে তার নেওয়া পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই। দেশের সর্বোচ্চ প্রধান হিসেবে যেকোনো ইস্যুতে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। প্রকারান্তরে স্টিভ ব্যানন জানিয়ে দিলেন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালত কোনো আদেশ দিতে পারে না।
কিন্তু আমেরিকার আদালতগুলো প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মতামত দেওয়ার অধিকার রাখে। আমেরিকার সংবিধানে এভাবে একটি ভারসাম্য বা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ রক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে এটাই আমেরিকার গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। অনেক বিষয়েই প্রেসিডেন্টের নির্দেশকে ঠেকিয়ে দেওয়ার বহু দৃষ্টান্ত রেখেছে আদালত। এ ঐতিহ্য এদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত। আদালতের ভয় সবার মধ্যেই কাজ করে। কিন্তু এবার একটি ইস্যুতে মেরিল্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের রায় এবং সেই রায়ের সমর্থনে সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মত রুলিংকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।
ইস্যুটি যে খুব একটা জটিল তাও নয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসী বিতাড়ন কার্যক্রমে এমন একজনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করা হয়েছে যিনি এদেশের বৈধ নাগরিক। কিলমার আব্রেগো গার্সিয়া নামের ২৯ বছর বয়সি এই ব্যক্তি ২০১১ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকলেও তারা এদেশে আশ্রয় পেয়েছিল এই কারণ দেখিয়ে যে তার দেশ এল সালভেডরে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই, তারা গ্যাং সদস্যদের হুমকির মুখে দিনাতিপাত করছে। পরবর্তীকালে কিলমার একজন মার্কিন নাগরিক মহিলাকে বিয়ে করেন এবং তাদের একটি সন্তানও রয়েছে। এতদিন পরে অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযানে ‘আইস’ বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে এল সালভেডরে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে বন্দিদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানোর জন্য কুখ্যাত তেকোলুকা কারাগারে তাকে আটক রাখা হয়েছে।
কিলমার সপরিবারে মেরিল্যান্ডে বসবাস করছিলেন। সেখানে ২০১৯ সালে হোম ডিপো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে থেকে তাকে আরো কয়েকজনের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে একটি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া এবং এল সালভেডরের এমএস-১৩ নামে একটি গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিলমার এ অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেন। এই মামলায় তার ডিপোর্টেশন চাওয়া হলেও বিচারক মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে ডিপোর্টেশন না করতে নির্দেশ দেন এবং তার জামিন মঞ্জুর করেন। জজের এই রায়ের বিরুদ্ধে ‘আইস’ তখন কোনো আপিল করেনি। গত ১২ মার্চ কিলমারকে বাল্টিমোরের আসবাবপত্রের দোকান আইকিয়ার সামনে গাড়ি থেকে আবার আটক করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী-সন্তান তার সঙ্গেই ছিল। তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৫ মার্চ তাকে বিমানযোগে এল সালভেডরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এই ডিপোর্টেশনের কথা জানতে পেরে তার স্ত্রী জেনিফার সুরা হার্নান্ডেজ দ্রুত আদালতের আশ্রয় নেন। মেরিল্যান্ডের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট শুনানির পর তার পক্ষে রায় ঘোষণা করে এবং কিলমারকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেয়। ফোর্থ সার্কিট কোর্ট অব আপিল এই রায় অনুমোদন করে। সরকার লোয়ার কোর্টের এই রায় ভ্যাকেট করার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতির সম্মতিতে গত ১০ এপ্রিল সর্বসম্মতভাবে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে সরকারের বিরুদ্ধে রুলিং প্রদান করে। নয় বিচারপতি নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের এই রুলিং-এ বলা হয়, আমেরিকার নাগরিক কিলমারকে ডিপোর্ট করা বৈধ হয়নি, তাকে অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা হোক।
এই রুলিং নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। প্রসঙ্গত একটি কথা বলে নিই। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা কিন্তু রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত। কোর্টের বর্তমান নয়জন বিচারপতির মধ্যে ছয়জন রিপাবলিকান শিবিরের আর তিনজন ডেমোক্র্যাট। আসলে যে দলের প্রেসিডেন্ট যখন ক্ষমতায় থাকেন তখন তার দলের সমর্থকদের বিচারপতি পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আরেকটি মজার ব্যাপার লক্ষণীয়। কোনো বিচারপতির মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তার পদটি শূন্য হয় না। বিচারপতিদের কার্যকালের কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। নিয়োগের পর থেকে আমৃত্যু তারা নিজেদের পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। একজন বিচারপতির মৃত্যুর সময় যে দলের প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকেন তিনি সুযোগ পেয়ে যান তার দলের সমর্থক কাউকে সেই শূন্য স্থানে বিচারপতি নিয়োগের। বর্তমান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস নিয়োগ পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট বুশের আমলে ২০০৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। তখন থেকে এই প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এই পদে বহাল রয়েছেন। বুশের নিয়োগের কারণে স্বাভাবিকভাবেই তিনি রিপাবলিকান শিবিরের। তখন মারা গিয়েছিলেন পূর্ববর্তী প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি নিয়োগের এই প্রক্রিয়ায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরাই যে বেশি সুযোগ পেয়েছেন তা নিশ্চয় বলার প্রয়োজন করে না। তাদের আমলেই বিচারপতি মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তারা বেশি বিচারপতি নিয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। ফলে সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতির মধ্যে এখন ছয়জনই তাদের। অবশ্য এই নিয়োগের ব্যাপারে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের সমর্থক দলের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিচারপতিদের নিয়োগ কখনো বাধাগ্রস্ত হয় না।
এত কথা এলো শুধু এটুকু বলার জন্য যে, এই বিভক্ত বিচারপতিরা সবাই সর্বসম্মতভাবেই কিলমারকে ফিরিয়ে আনার পক্ষে রুলিং দিয়েছেন। কিন্তু এই রায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মানছেন না। আর আদালতকে এভাবে অবজ্ঞা করার মধ্য দিয়ে তিনি তার ক্ষমতার মুঠিকে জোরদার করার এবং নির্বাহী আদেশকে আদালতের ওপর স্থান দেওয়ার এক নজিরবিহীন খেলায় মেতেছেন। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এই প্রক্রিয়ায় ট্রাম্প দেশে তার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করতে চান, চূড়ান্ত বিচারে যা হবে একটি স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। এই অবস্থায় গণতন্ত্র হয়ে পড়বে বিপন্ন। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে বিরোধে ট্রাম্প কতদূর যাবেন সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি। যদি তিনি এগিয়ে যেতে পারেন তবে তা হবে মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য নিঃসন্দেহে এক অশনিসংকেত।
কিলমারকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ট্রাম্প খুবই নির্লিপ্তভাবে বলেছেন, এল সালভেডর অন্য দেশ, সেখান থেকে আমি কাউকে ফিরিয়ে আনব কেমন করে? তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন তার একান্ত অনুগত এল সালভেডরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে। তিনি বলেছেন, আমেরিকা না চাইলে আমার পক্ষে কেমন করে সম্ভব তাকে আমেরিকায় ফেরত পাঠানো? বুকেলে সম্প্রতি আমেরিকায় এসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তার সহাস্য বদনের ছবি সবার দৃষ্টি কেড়েছে। এল সালভেডরে বসতি গাড়া একজন ফিলিস্তিনি মুসলিম বাবার সন্তান নায়েব বুকেলে হামাসদের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
কিলমারকে আমেরিকায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এখন আমেরিকার একটি জ্বলন্ত ইস্যু হয়ে উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শেষ অব্দি কোথায় গড়ায় তা নিয়ে সবাই শঙ্কিত। এরই মধ্যে উঠে এসেছে আরেকটি গুরুতর বিষয়। অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্প কারাদণ্ড ভোগরত অনেক বন্দিকে আমেরিকার ভূখণ্ডের বাইরে অন্য দেশের কারাগারে স্থানান্তর করতে চান। কারণ, আমেরিকার আইনে কারাভোগরত বন্দিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোতে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু বিদেশের মাটিতে আমেরিকার আইন কার্যকর নয়। যেমন কার্যকর নয় কিউবা ভূখণ্ডের গুয়ান্তোনামো বে’তে। এমনই নিপীড়নমূলক কারাগারের সন্ধান রয়েছে এল সালভেডরে। এখানে অন্তত তিনটি কারাগার আছে যেগুলোতে বন্দি নির্যাতনের ভয়ানক সব ঘটনা ঘটে থাকে। সাম্প্রতিককালে এসব কারাগারের ভেতরের কিছু গোপন ভিডিও বাইরে বেরিয়ে এসেছে যা সবাইকে শিউরে দিয়েছে। এল সালভেডরের কারাগারে আমেরিকার বন্দিদের রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে বছরে ৬ মিলিয়ন ডলার করে প্রদান করছে। এ ব্যাপারে সরকারি এক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ওদেশের কারাগারে পাঠানো হয়েছে আরগুয়া গ্যাংয়ের সদস্যদের।
রাষ্ট্র পরিচালনায় ট্রাম্পের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে পর্যবেক্ষক মহল থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ যদি প্রশাসনিক বিভাগ না মানে, যদি অবজ্ঞা করে, তাহলে আমেরিকার অবস্থা কী দাঁড়াবে?
নিউইয়র্ক, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই বিবাদে সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের পক্ষে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম্পও পিছিয়ে নেই। সুপ্রিম কোর্টের একটি সর্বসম্মত রুলিংকে সরাসরি অবজ্ঞা করে তিনি তার সিদ্ধান্তকেই সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত বলে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। তিনি নিজে যত না বলছেন তার দোসররা বলছেন তার শতগুণ। তার লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া স্টিভ ব্যানন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে স্পষ্টই বলেছেন,
সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি দেশের সার্বিক কল্যাণ সাধনের জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন। তাই দেশের কল্যাণে তার নেওয়া পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই। দেশের সর্বোচ্চ প্রধান হিসেবে যেকোনো ইস্যুতে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। প্রকারান্তরে স্টিভ ব্যানন জানিয়ে দিলেন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালত কোনো আদেশ দিতে পারে না।
কিন্তু আমেরিকার আদালতগুলো প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মতামত দেওয়ার অধিকার রাখে। আমেরিকার সংবিধানে এভাবে একটি ভারসাম্য বা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ রক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে এটাই আমেরিকার গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। অনেক বিষয়েই প্রেসিডেন্টের নির্দেশকে ঠেকিয়ে দেওয়ার বহু দৃষ্টান্ত রেখেছে আদালত। এ ঐতিহ্য এদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত। আদালতের ভয় সবার মধ্যেই কাজ করে। কিন্তু এবার একটি ইস্যুতে মেরিল্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের রায় এবং সেই রায়ের সমর্থনে সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মত রুলিংকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।
ইস্যুটি যে খুব একটা জটিল তাও নয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসী বিতাড়ন কার্যক্রমে এমন একজনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করা হয়েছে যিনি এদেশের বৈধ নাগরিক। কিলমার আব্রেগো গার্সিয়া নামের ২৯ বছর বয়সি এই ব্যক্তি ২০১১ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকলেও তারা এদেশে আশ্রয় পেয়েছিল এই কারণ দেখিয়ে যে তার দেশ এল সালভেডরে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই, তারা গ্যাং সদস্যদের হুমকির মুখে দিনাতিপাত করছে। পরবর্তীকালে কিলমার একজন মার্কিন নাগরিক মহিলাকে বিয়ে করেন এবং তাদের একটি সন্তানও রয়েছে। এতদিন পরে অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযানে ‘আইস’ বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে এল সালভেডরে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে বন্দিদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানোর জন্য কুখ্যাত তেকোলুকা কারাগারে তাকে আটক রাখা হয়েছে।
কিলমার সপরিবারে মেরিল্যান্ডে বসবাস করছিলেন। সেখানে ২০১৯ সালে হোম ডিপো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে থেকে তাকে আরো কয়েকজনের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে একটি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া এবং এল সালভেডরের এমএস-১৩ নামে একটি গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিলমার এ অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেন। এই মামলায় তার ডিপোর্টেশন চাওয়া হলেও বিচারক মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে ডিপোর্টেশন না করতে নির্দেশ দেন এবং তার জামিন মঞ্জুর করেন। জজের এই রায়ের বিরুদ্ধে ‘আইস’ তখন কোনো আপিল করেনি। গত ১২ মার্চ কিলমারকে বাল্টিমোরের আসবাবপত্রের দোকান আইকিয়ার সামনে গাড়ি থেকে আবার আটক করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী-সন্তান তার সঙ্গেই ছিল। তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৫ মার্চ তাকে বিমানযোগে এল সালভেডরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এই ডিপোর্টেশনের কথা জানতে পেরে তার স্ত্রী জেনিফার সুরা হার্নান্ডেজ দ্রুত আদালতের আশ্রয় নেন। মেরিল্যান্ডের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট শুনানির পর তার পক্ষে রায় ঘোষণা করে এবং কিলমারকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেয়। ফোর্থ সার্কিট কোর্ট অব আপিল এই রায় অনুমোদন করে। সরকার লোয়ার কোর্টের এই রায় ভ্যাকেট করার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতির সম্মতিতে গত ১০ এপ্রিল সর্বসম্মতভাবে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে সরকারের বিরুদ্ধে রুলিং প্রদান করে। নয় বিচারপতি নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের এই রুলিং-এ বলা হয়, আমেরিকার নাগরিক কিলমারকে ডিপোর্ট করা বৈধ হয়নি, তাকে অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা হোক।
এই রুলিং নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। প্রসঙ্গত একটি কথা বলে নিই। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা কিন্তু রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত। কোর্টের বর্তমান নয়জন বিচারপতির মধ্যে ছয়জন রিপাবলিকান শিবিরের আর তিনজন ডেমোক্র্যাট। আসলে যে দলের প্রেসিডেন্ট যখন ক্ষমতায় থাকেন তখন তার দলের সমর্থকদের বিচারপতি পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আরেকটি মজার ব্যাপার লক্ষণীয়। কোনো বিচারপতির মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তার পদটি শূন্য হয় না। বিচারপতিদের কার্যকালের কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। নিয়োগের পর থেকে আমৃত্যু তারা নিজেদের পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। একজন বিচারপতির মৃত্যুর সময় যে দলের প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকেন তিনি সুযোগ পেয়ে যান তার দলের সমর্থক কাউকে সেই শূন্য স্থানে বিচারপতি নিয়োগের। বর্তমান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস নিয়োগ পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট বুশের আমলে ২০০৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। তখন থেকে এই প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এই পদে বহাল রয়েছেন। বুশের নিয়োগের কারণে স্বাভাবিকভাবেই তিনি রিপাবলিকান শিবিরের। তখন মারা গিয়েছিলেন পূর্ববর্তী প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি নিয়োগের এই প্রক্রিয়ায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরাই যে বেশি সুযোগ পেয়েছেন তা নিশ্চয় বলার প্রয়োজন করে না। তাদের আমলেই বিচারপতি মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তারা বেশি বিচারপতি নিয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। ফলে সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতির মধ্যে এখন ছয়জনই তাদের। অবশ্য এই নিয়োগের ব্যাপারে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের সমর্থক দলের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিচারপতিদের নিয়োগ কখনো বাধাগ্রস্ত হয় না।
এত কথা এলো শুধু এটুকু বলার জন্য যে, এই বিভক্ত বিচারপতিরা সবাই সর্বসম্মতভাবেই কিলমারকে ফিরিয়ে আনার পক্ষে রুলিং দিয়েছেন। কিন্তু এই রায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মানছেন না। আর আদালতকে এভাবে অবজ্ঞা করার মধ্য দিয়ে তিনি তার ক্ষমতার মুঠিকে জোরদার করার এবং নির্বাহী আদেশকে আদালতের ওপর স্থান দেওয়ার এক নজিরবিহীন খেলায় মেতেছেন। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এই প্রক্রিয়ায় ট্রাম্প দেশে তার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করতে চান, চূড়ান্ত বিচারে যা হবে একটি স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। এই অবস্থায় গণতন্ত্র হয়ে পড়বে বিপন্ন। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে বিরোধে ট্রাম্প কতদূর যাবেন সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি। যদি তিনি এগিয়ে যেতে পারেন তবে তা হবে মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য নিঃসন্দেহে এক অশনিসংকেত।
কিলমারকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ট্রাম্প খুবই নির্লিপ্তভাবে বলেছেন, এল সালভেডর অন্য দেশ, সেখান থেকে আমি কাউকে ফিরিয়ে আনব কেমন করে? তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন তার একান্ত অনুগত এল সালভেডরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে। তিনি বলেছেন, আমেরিকা না চাইলে আমার পক্ষে কেমন করে সম্ভব তাকে আমেরিকায় ফেরত পাঠানো? বুকেলে সম্প্রতি আমেরিকায় এসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তার সহাস্য বদনের ছবি সবার দৃষ্টি কেড়েছে। এল সালভেডরে বসতি গাড়া একজন ফিলিস্তিনি মুসলিম বাবার সন্তান নায়েব বুকেলে হামাসদের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
কিলমারকে আমেরিকায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এখন আমেরিকার একটি জ্বলন্ত ইস্যু হয়ে উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শেষ অব্দি কোথায় গড়ায় তা নিয়ে সবাই শঙ্কিত। এরই মধ্যে উঠে এসেছে আরেকটি গুরুতর বিষয়। অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্প কারাদণ্ড ভোগরত অনেক বন্দিকে আমেরিকার ভূখণ্ডের বাইরে অন্য দেশের কারাগারে স্থানান্তর করতে চান। কারণ, আমেরিকার আইনে কারাভোগরত বন্দিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোতে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু বিদেশের মাটিতে আমেরিকার আইন কার্যকর নয়। যেমন কার্যকর নয় কিউবা ভূখণ্ডের গুয়ান্তোনামো বে’তে। এমনই নিপীড়নমূলক কারাগারের সন্ধান রয়েছে এল সালভেডরে। এখানে অন্তত তিনটি কারাগার আছে যেগুলোতে বন্দি নির্যাতনের ভয়ানক সব ঘটনা ঘটে থাকে। সাম্প্রতিককালে এসব কারাগারের ভেতরের কিছু গোপন ভিডিও বাইরে বেরিয়ে এসেছে যা সবাইকে শিউরে দিয়েছে। এল সালভেডরের কারাগারে আমেরিকার বন্দিদের রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে বছরে ৬ মিলিয়ন ডলার করে প্রদান করছে। এ ব্যাপারে সরকারি এক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ওদেশের কারাগারে পাঠানো হয়েছে আরগুয়া গ্যাংয়ের সদস্যদের।
রাষ্ট্র পরিচালনায় ট্রাম্পের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে পর্যবেক্ষক মহল থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ যদি প্রশাসনিক বিভাগ না মানে, যদি অবজ্ঞা করে, তাহলে আমেরিকার অবস্থা কী দাঁড়াবে?
নিউইয়র্ক, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
ঢাকা শহরের সড়কে অবৈধ অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদ অভিযান নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের দাবি, যানজট নিয়ন্ত্রণ ও সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এসব রিকশার উচ্ছেদ প্রয়োজন।
১২ ঘণ্টা আগেরাখাইনের উত্তাল যুদ্ধের ঢেউ এবার সমুদ্রপথে ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য শুধু মানবিক বা কূটনৈতিক ইস্যু নয়, এটি এক ক্রমবর্ধমান সামরিক নিরাপত্তা হুমকিও। রাখাইন রাজ্য বর্তমানে বার্মিজ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
২০ ঘণ্টা আগেভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের কথিত সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
২০ ঘণ্টা আগেনিউইয়র্কের আসন্ন বইমেলা নিয়ে এখন এক উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ৩৪ বছর ধরে একটানা চলে আসা এই আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলায় এবার ভাঙন ধরেছে। আর কদিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এ বছরের মেলাটি।
২০ ঘণ্টা আগে