সংস্কার হোক পলিটেকনিক শিক্ষা

মো. আশিকুর রহমান
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ১৪
ছবি: সংগৃহীত

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিতে চলমান আন্দোলন আপাতত আংশিকভাবে স্থগিত রয়েছে। ২১ এপ্রিল আইডিইবি’র আহ্বানে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের সাথে শিক্ষার্থীদের আলোচনার মাধ্যমে আশ্বাস পাওয়ার পর আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তনের ঘোষণা আসে। এরপর ২২ এপ্রিল ৬ দফা বাস্তবায়নে ছাত্র প্রতিনিধিসহ ৮ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। অনেকেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়, কারণ দাবিগুলো এখনো পূরণ হয়নি।

অপরদিকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের পাল্টা আন্দোলনও দৃশ্যমান হচ্ছে। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা মূলত সংস্কার চায়, প্রাপ্য চাকরিটুকু চায়, উক্ত ছয় দফার বাস্তবায়ন চায়। বিশেষ করে প্রয়োজন ডিপ্লোমা বা কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন। এখানে সকল প্রকার অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা এবং অকেজো সিস্টেম দূর করতে হবে। পলিটেকনিকগুলো দক্ষ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী তৈরিতে অনেকাংশে ব্যর্থ হচ্ছে। পড়াশোনার মান এবং সামাজিক মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ব্যাপক আকারের সংস্কার আনা প্রয়োজন। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে এ অবস্থা পরিবর্তনের সর্বজন পরামর্শক্রমে টেকসই, উপযুক্ত এবং আধুনিক মনিটরিং সিস্টেম সংযোজন করতে হবে। এখন প্রয়োজন কঠোর এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ। ব্যবহারিক কাজে ল্যাবের যন্ত্রপাতি নিয়মিত সরবরাহ এবং ক্যাম্পাসেই মেরামতের সুযোগ রাখতে হবে। সময় উপযোগী, উপযুক্ত এবং আধুনিক কারিকুলাম নিয়মিত আপডেট করাসহ কর্মক্ষেত্রের রোড ম্যাপ দিতে হবে। খাতায় অনিয়মতান্ত্রিক লিখিত জবাব, সেশনাল সিস্টেম বাদ দিয়ে সত্যিকারের ব্যবহারিক কাজ, প্রজেক্ট এবং গবেষণা ধর্মী কাজে গুরুত্ব দিলে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করবে। প্রয়োজন দক্ষ, পরিশ্রমী এবং যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ। শিক্ষার্থীরা বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নয়। ব্যবহারিক নম্বর প্রদানে অনিয়ম, খাতায় যথাযথ নাম্বার না পাওয়া, মার্কশিটে বিস্তারিত নাম্বার প্রকাশ না করা সহ বিভিন্ন বিষয়াদি সমস্যা সমাধান করতে হবে। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সেবা দান প্রক্রিয়া আধুনিক এবং সহজ করতে হবে। যেমন— উপবৃত্তির কার্যক্রম,ফরম ফিলাপ, ফলাফল প্রকাশসহ ইত্যাদি। একই সাথে নকল এবং অবৈধ উপায়ে পরীক্ষা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। নতুন সেশন থেকে ভর্তি পরীক্ষা চালু করা এবং সেমিস্টারের পরীক্ষাগুলিতে প্রশ্ন পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে কেননা বর্তমান প্রশ্ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে না। বোর্ড প্রশ্ন থেকেই শতকরা ৬০% থেকে ৭০% ভাগ কমন চলে আসে। বাধ্যতামূলকভাবে ৮ম পর্বে সকল শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান হতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট করতে হবে। অবৈধ অ্যাটাচমেন্ট দানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ হতে সকল ডিপার্টমেন্টের জন্য উপযুক্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বশেষ ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক চাকরি অসমতা দূর করে নূন্যতম চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে যে সকল কারিগরি বিষয়ক পদগুলিতে শুধু সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারছে সেখানে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। এছাড়াও বাকি বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনার দরকার রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করে উচ্চশিক্ষা সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে করে উপযুক্ত সংস্কার বাস্তবায়ন করলে ডিপ্লোমা শিক্ষা ঘুরে দাঁড়াবে এবং দেশ ও জাতির উন্নতি হবে। কর্তৃপক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান বারবার আশ্বাস না দিয়ে এবার আমাদের যৌক্তিক দাবি গুলো পূরণ করুন।

বিজ্ঞাপন

লেখক : সদ্য পাস ডিপ্লোমা প্রকৌশলী

ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত