সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ
মুহাম্মদ তালহা
১০ মাস পার হতে চলল ইন্টারিম সরকারের। সচিবালয়সহ সরকারি সিভিল সার্ভিস ও নানা বিভাগে অসংখ্য রদবদল হলেও জনপ্রশাসন বিভাগসহ স্বায়ত্তশাসিত অন্যান্য সরকারি ডিপার্টমেন্টে এখনো গতিশীলতা আসেনি। ফলে অনেকটা স্থবির হয়েই চলছিল সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কাজ। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তীতে প্রশাসনে বড় কোনো শুদ্ধি অভিযান না চালানোয় পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলাতন্ত্রকে অনেকটা অক্ষত রেখেই কাজ চালিয়েছে সরকার। ১০ মাস পর এসে অবশেষে অনেকটা বাধ্য হয়েই হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর সে লক্ষ্যেই সম্প্রতি পাস করা হয় নতুন সরকারি চাকরি আইনের খসড়া (সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ)। এ ছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় এনবিআরকে বিলুপ্ত করে নীতি বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
উল্লিখিত দুটো প্রস্তাবনার ব্যাপারেই সচিবালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছে। যার ফলে দুটো বিভাগেই কর্মবিরতি চলছিল কদিন ধরেই। আপাত সমাধান হিসেবে গত রোববার এনবিআরের সংস্কারকে জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করলেও সরকারি চাকরির সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়ার ব্যাপারে সরকার এখনো এর নীতি অপরিবর্তনীয়ই রেখেছে। আর সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দ্বিমত প্রকাশ ও কর্মবিরতি কর্মসূচি চালু রেখেছেন। অভ্যুত্থানের সরকার তথা প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে সরকারের নয়া আইনের বিরুদ্ধে একসঙ্গে সম্মিলিত দ্বিমত ও কর্মসূচিকে অনেকে সিভিল সার্ভিস ক্যু বলেও সম্বোধন করেছেন। বিশেষ করে অভ্যুত্থানের বিভিন্ন দল-মতের ছাত্রনেতা ও অ্যাকটিভিস্টরা সচিবালয়ে শুদ্ধিকরণ অভিযানের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। এই অগ্নিগর্ভ সময়ের বাস্তবতায় দেশের আমলাতন্ত্র ও সরকারের মধ্যের এই মুখোমুখি জটিলতা চিহ্নিত করাকে জরুরি বলেই মনে হচ্ছে। এটাকে দুভাবে যাচাই করা যায়, একটি হলো থিওরিটিক্যাল বাস্তবতা, অন্যটি আইনের প্রয়োগিক বাস্তবতা।
আমলাতান্ত্রিক এই রিজিডিটিকে আধুনিক ম্যানেজমেন্ট থিওরির পুরোধা বলে খ্যাত Peter Drucker-এর একটি মত দ্বারা সহজেই ব্যাখ্যাযোগ্য। তিনি তার Age of Discontinuity : Guideline to Our Changing Society বইতে বলেনÑ‘Bureaucracies are inherently conservative. They preserve yesterday. They resist change’. অর্থ হলো-‘উত্তরাধিকার সূত্রেই আমলাতন্ত্র রক্ষণশীল। তারা গতকালকে সংরক্ষণ করে। তারা পরিবর্তনকে প্রতিরোধ করে।’ এটি একটি স্বাভাবিক আমলাতন্ত্রের বাস্তবতা ও জটিলতাকে সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন Drucker। কিন্তু সেই আমলাতন্ত্র যদি হয় ১৫ বছর ধরে চলা ফ্যাসিজমকে সর্বতোভাবে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে শক্ত ভূমিকা পালন করে, তবে তারা আরো শক্তিশালীভাবে গতকাল তথা ফ্যাসিবাদী অভ্যাস, ভ্যালু ও আচারকে সংরক্ষণ করবেÑসেটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের একযোগে ব্যবহার করেই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক মানবাধিকার, বিচারিধাকার, শিক্ষার অধিকার, ব্যবসার অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ১৫ বছর ধরে। রাষ্ট্রের প্রতিটি খাতকে আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থিত একটি সংঘবদ্ধ দুষ্টচক্রের লুটপাটের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল এসব অতি-উৎসাহী কর্মকর্তাদের সহযোগিতাতেই। সুতরাং অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তনশীল রাষ্ট্রের সংস্কারকে তারা যেকোনো ফর্মে প্রতিরোধ করবে, সেটিও একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। এ ক্ষেত্রে মূলত ১০ মাস পরও সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারা সরকারি ব্যর্থতাকে বড় দায়ভার দেওয়া যায়।
সরকার নানা সংস্কার কমিশন করে সংস্কার প্রস্তাব করছে; কিন্তু বিগত শাসনামল, যেটাকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে সাব্যস্ত করছে সব রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি, কিন্তু তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ তাদের অপরাধ, তাদের সহযোগীদের যাচাই-বাছাই ও তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সমাজে রিকনসিলিয়েশনের জন্য তেমন কোনো ভূমিকাই পালন করতে পারেনি। জুলাই প্রোক্লেমেশন তার একটি প্রথম ধাপ হতে পারত। অথচ যে জুলাই অভ্যুত্থান রাষ্ট্র ও সমাজকে নবরূপে জাগরূক হওয়ার সুযোগ তৈরি করল, সেই জুলাইকে সাংবিধানিকীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের হাতিয়ার জুলাই ঘোষণা করতে পারেনি সরকার। ডিসেম্বরের শেষদিকে তোড়জোড় করেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও ফরমালিটি না থাকায় বিএনপির বাধায় পড়ে আর জুলাই ঘোষণা হয়নি। পদচ্যুত সরকারি দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সময় আবার এক মাসের সময় চেয়েছে সরকার। দেখার বিষয়, এবার তারা সফলতায় পৌঁছাতে পারে কি না। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যা-পরবর্তী সময় অন্যান্য দেশ যেমন রুয়ান্ডা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হয়নি। যেটি মূলত ফ্যাসিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের সহযোগী, এলাকাভিত্তিক ফ্যাসিবাদের কোলাবরেটর, রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগীসহ নানা ধরনের অপরাধকে চিহ্নিত করে তাদের বিচারের প্রস্তাবনা দেওয়া এবং গত ১৫ বছরের সহযোগী এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ ২.০০-তে নতুন করে রিকনসাইল করার উপায় ও সুযোগ করে দিত। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের লীগকে ফিরিয়ে আনার মতো অভিযোগ বা আজকের সচিবালয়ের মতো পরিস্থিতি হয়তো তৈরি নাও হতে পারত।
এ ছাড়া চাকরি সংশোধনী অধ্যাদেশের খসড়ার প্রস্তাবনার প্রায়োগিক দিক নিয়েও বেশ কিছু আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রথমত, খসড়ায় শাস্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা ‘অনানুগত্য এবং শৃঙ্খলাভঙ্গকারী’ কাজগুলোকে উল্লেখ করা বা ডিফাইন করে দেওয়া হয়নি, যা বাংলাদেশের মতো মাস্টার-স্লেভ সম্পর্কের কলোনিয়াল ক্যাডার সার্ভিসে অপব্যবহার হবে, তা বলাই বাহুল্য। এ ছাড়া ব্যক্তিগত রাগ-বিরাগের শিকার হয়েও এই অস্পষ্ট টার্ম দ্বারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার অধীনদের ওপর অবিচার করতে পারেন। কোনো সরকারি আইনকে অবিচারের হাতিয়ার করার যে পুরোনো স্বৈরাচারী প্রচেষ্টা, তার বিরুদ্ধে সবসময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে এ বিষয় দুটোকে নির্দিষ্ট ধারা ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা ডিফাইন করে দেওয়ার ব্যাপারে ভাবতে পারে সরকার।
দ্বিতীয়ত, একই সঙ্গে দণ্ড দেওয়ার আলাপ হয়েছে কিন্তু কোনো তদন্ত বা তদন্তের উপায় বাতলে দেওয়া হয়নি, যা নিঃসন্দেহে এই খসড়ার একটি অস্পষ্টতা। একই সঙ্গে দেশীয় তদন্তে যে সবসময় ক্ষমতাবানের কোর্টেই রায় যায়, এই বিষয়টি জনপ্রশাসন বিভাগ কিংবা নির্দিষ্ট ক্যাডার সার্ভিস বা স্বায়ত্তশাসিত বিভাগগুলো কীভাবে ডিল করবে, তার চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সের পথপরিক্রমাও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হবে, যা নিতান্তই কম বলে মনে হয়। এতে ন্যায়বিচার না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যায়। আপিলের জন্য এক মাস সময় দেওয়া হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সময়টি অপ্রতুলই মনে হয়।
চতুর্থত, এই খসড়াটি সম্ভবত তৈরি করা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে; কিন্তু এটি কার্যকর হবে প্রায় ২৬টি ক্যাডার সার্ভিসসহ সব সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত বিভাগগুলো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে বলা চলে, ফ্যাসিস্ট সময় থেকে প্রচলিত অ্যাডমিন ক্যাডারের আধিপত্যই বরং আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত হলো। এই খসড়া প্রণয়নের সময় অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় করা হয়েছে কি না, সেটি যেমন প্রশ্নের দাবি রাখে, তেমনি কাউকে শাস্তি দেওয়া কিংবা আপিলের বাস্তবতা নিয়ে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে এই আইন যে বৈষম্যমূলক হিসেবে ব্যবহার হবে না, সেসব শর্তযুক্ত ধারাও এই খসড়াটিকে পরিষ্কার করতে হবে।
সুতরাং ন্যায়বিচার ও সচিবালয়ের স্থিতিশীলতার স্বার্থে এই চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া সংশোধন জরুরিই বলা যায়। এ ছাড়া ভবিষ্যতে অন্য যেকোনো সেক্টরে এমন অস্থিতিশীলতা রুখতে অতিসত্বর ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করাও জরুরি।
১০ মাস পার হতে চলল ইন্টারিম সরকারের। সচিবালয়সহ সরকারি সিভিল সার্ভিস ও নানা বিভাগে অসংখ্য রদবদল হলেও জনপ্রশাসন বিভাগসহ স্বায়ত্তশাসিত অন্যান্য সরকারি ডিপার্টমেন্টে এখনো গতিশীলতা আসেনি। ফলে অনেকটা স্থবির হয়েই চলছিল সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কাজ। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তীতে প্রশাসনে বড় কোনো শুদ্ধি অভিযান না চালানোয় পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলাতন্ত্রকে অনেকটা অক্ষত রেখেই কাজ চালিয়েছে সরকার। ১০ মাস পর এসে অবশেষে অনেকটা বাধ্য হয়েই হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর সে লক্ষ্যেই সম্প্রতি পাস করা হয় নতুন সরকারি চাকরি আইনের খসড়া (সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ)। এ ছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় এনবিআরকে বিলুপ্ত করে নীতি বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
উল্লিখিত দুটো প্রস্তাবনার ব্যাপারেই সচিবালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছে। যার ফলে দুটো বিভাগেই কর্মবিরতি চলছিল কদিন ধরেই। আপাত সমাধান হিসেবে গত রোববার এনবিআরের সংস্কারকে জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করলেও সরকারি চাকরির সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়ার ব্যাপারে সরকার এখনো এর নীতি অপরিবর্তনীয়ই রেখেছে। আর সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দ্বিমত প্রকাশ ও কর্মবিরতি কর্মসূচি চালু রেখেছেন। অভ্যুত্থানের সরকার তথা প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে সরকারের নয়া আইনের বিরুদ্ধে একসঙ্গে সম্মিলিত দ্বিমত ও কর্মসূচিকে অনেকে সিভিল সার্ভিস ক্যু বলেও সম্বোধন করেছেন। বিশেষ করে অভ্যুত্থানের বিভিন্ন দল-মতের ছাত্রনেতা ও অ্যাকটিভিস্টরা সচিবালয়ে শুদ্ধিকরণ অভিযানের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। এই অগ্নিগর্ভ সময়ের বাস্তবতায় দেশের আমলাতন্ত্র ও সরকারের মধ্যের এই মুখোমুখি জটিলতা চিহ্নিত করাকে জরুরি বলেই মনে হচ্ছে। এটাকে দুভাবে যাচাই করা যায়, একটি হলো থিওরিটিক্যাল বাস্তবতা, অন্যটি আইনের প্রয়োগিক বাস্তবতা।
আমলাতান্ত্রিক এই রিজিডিটিকে আধুনিক ম্যানেজমেন্ট থিওরির পুরোধা বলে খ্যাত Peter Drucker-এর একটি মত দ্বারা সহজেই ব্যাখ্যাযোগ্য। তিনি তার Age of Discontinuity : Guideline to Our Changing Society বইতে বলেনÑ‘Bureaucracies are inherently conservative. They preserve yesterday. They resist change’. অর্থ হলো-‘উত্তরাধিকার সূত্রেই আমলাতন্ত্র রক্ষণশীল। তারা গতকালকে সংরক্ষণ করে। তারা পরিবর্তনকে প্রতিরোধ করে।’ এটি একটি স্বাভাবিক আমলাতন্ত্রের বাস্তবতা ও জটিলতাকে সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন Drucker। কিন্তু সেই আমলাতন্ত্র যদি হয় ১৫ বছর ধরে চলা ফ্যাসিজমকে সর্বতোভাবে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে শক্ত ভূমিকা পালন করে, তবে তারা আরো শক্তিশালীভাবে গতকাল তথা ফ্যাসিবাদী অভ্যাস, ভ্যালু ও আচারকে সংরক্ষণ করবেÑসেটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের একযোগে ব্যবহার করেই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক মানবাধিকার, বিচারিধাকার, শিক্ষার অধিকার, ব্যবসার অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ১৫ বছর ধরে। রাষ্ট্রের প্রতিটি খাতকে আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থিত একটি সংঘবদ্ধ দুষ্টচক্রের লুটপাটের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল এসব অতি-উৎসাহী কর্মকর্তাদের সহযোগিতাতেই। সুতরাং অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তনশীল রাষ্ট্রের সংস্কারকে তারা যেকোনো ফর্মে প্রতিরোধ করবে, সেটিও একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। এ ক্ষেত্রে মূলত ১০ মাস পরও সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারা সরকারি ব্যর্থতাকে বড় দায়ভার দেওয়া যায়।
সরকার নানা সংস্কার কমিশন করে সংস্কার প্রস্তাব করছে; কিন্তু বিগত শাসনামল, যেটাকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে সাব্যস্ত করছে সব রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি, কিন্তু তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ তাদের অপরাধ, তাদের সহযোগীদের যাচাই-বাছাই ও তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সমাজে রিকনসিলিয়েশনের জন্য তেমন কোনো ভূমিকাই পালন করতে পারেনি। জুলাই প্রোক্লেমেশন তার একটি প্রথম ধাপ হতে পারত। অথচ যে জুলাই অভ্যুত্থান রাষ্ট্র ও সমাজকে নবরূপে জাগরূক হওয়ার সুযোগ তৈরি করল, সেই জুলাইকে সাংবিধানিকীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের হাতিয়ার জুলাই ঘোষণা করতে পারেনি সরকার। ডিসেম্বরের শেষদিকে তোড়জোড় করেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও ফরমালিটি না থাকায় বিএনপির বাধায় পড়ে আর জুলাই ঘোষণা হয়নি। পদচ্যুত সরকারি দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সময় আবার এক মাসের সময় চেয়েছে সরকার। দেখার বিষয়, এবার তারা সফলতায় পৌঁছাতে পারে কি না। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যা-পরবর্তী সময় অন্যান্য দেশ যেমন রুয়ান্ডা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হয়নি। যেটি মূলত ফ্যাসিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের সহযোগী, এলাকাভিত্তিক ফ্যাসিবাদের কোলাবরেটর, রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগীসহ নানা ধরনের অপরাধকে চিহ্নিত করে তাদের বিচারের প্রস্তাবনা দেওয়া এবং গত ১৫ বছরের সহযোগী এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ ২.০০-তে নতুন করে রিকনসাইল করার উপায় ও সুযোগ করে দিত। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের লীগকে ফিরিয়ে আনার মতো অভিযোগ বা আজকের সচিবালয়ের মতো পরিস্থিতি হয়তো তৈরি নাও হতে পারত।
এ ছাড়া চাকরি সংশোধনী অধ্যাদেশের খসড়ার প্রস্তাবনার প্রায়োগিক দিক নিয়েও বেশ কিছু আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রথমত, খসড়ায় শাস্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা ‘অনানুগত্য এবং শৃঙ্খলাভঙ্গকারী’ কাজগুলোকে উল্লেখ করা বা ডিফাইন করে দেওয়া হয়নি, যা বাংলাদেশের মতো মাস্টার-স্লেভ সম্পর্কের কলোনিয়াল ক্যাডার সার্ভিসে অপব্যবহার হবে, তা বলাই বাহুল্য। এ ছাড়া ব্যক্তিগত রাগ-বিরাগের শিকার হয়েও এই অস্পষ্ট টার্ম দ্বারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার অধীনদের ওপর অবিচার করতে পারেন। কোনো সরকারি আইনকে অবিচারের হাতিয়ার করার যে পুরোনো স্বৈরাচারী প্রচেষ্টা, তার বিরুদ্ধে সবসময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে এ বিষয় দুটোকে নির্দিষ্ট ধারা ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা ডিফাইন করে দেওয়ার ব্যাপারে ভাবতে পারে সরকার।
দ্বিতীয়ত, একই সঙ্গে দণ্ড দেওয়ার আলাপ হয়েছে কিন্তু কোনো তদন্ত বা তদন্তের উপায় বাতলে দেওয়া হয়নি, যা নিঃসন্দেহে এই খসড়ার একটি অস্পষ্টতা। একই সঙ্গে দেশীয় তদন্তে যে সবসময় ক্ষমতাবানের কোর্টেই রায় যায়, এই বিষয়টি জনপ্রশাসন বিভাগ কিংবা নির্দিষ্ট ক্যাডার সার্ভিস বা স্বায়ত্তশাসিত বিভাগগুলো কীভাবে ডিল করবে, তার চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সের পথপরিক্রমাও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হবে, যা নিতান্তই কম বলে মনে হয়। এতে ন্যায়বিচার না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যায়। আপিলের জন্য এক মাস সময় দেওয়া হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সময়টি অপ্রতুলই মনে হয়।
চতুর্থত, এই খসড়াটি সম্ভবত তৈরি করা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে; কিন্তু এটি কার্যকর হবে প্রায় ২৬টি ক্যাডার সার্ভিসসহ সব সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত বিভাগগুলো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে বলা চলে, ফ্যাসিস্ট সময় থেকে প্রচলিত অ্যাডমিন ক্যাডারের আধিপত্যই বরং আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত হলো। এই খসড়া প্রণয়নের সময় অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় করা হয়েছে কি না, সেটি যেমন প্রশ্নের দাবি রাখে, তেমনি কাউকে শাস্তি দেওয়া কিংবা আপিলের বাস্তবতা নিয়ে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে এই আইন যে বৈষম্যমূলক হিসেবে ব্যবহার হবে না, সেসব শর্তযুক্ত ধারাও এই খসড়াটিকে পরিষ্কার করতে হবে।
সুতরাং ন্যায়বিচার ও সচিবালয়ের স্থিতিশীলতার স্বার্থে এই চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া সংশোধন জরুরিই বলা যায়। এ ছাড়া ভবিষ্যতে অন্য যেকোনো সেক্টরে এমন অস্থিতিশীলতা রুখতে অতিসত্বর ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করাও জরুরি।
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৩ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৩ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে