• facebook
  • fb_group
  • twitter
  • tiktok
  • whatsapp
  • pinterest
  • youtube
  • linkedin
  • instagram
  • google
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ
জাতীয়
রাজনীতি
বাণিজ্য
সারা দেশ
বিশ্ব
খেলা
আইন-আদালত
ধর্ম ও ইসলাম
বিনোদন
ফিচার
আমার দেশ পরিবার
ইপেপার
আমার দেশযোগাযোগশর্তাবলি ও নীতিমালাগোপনীয়তা নীতিডিএমসিএ
facebookfb_grouptwittertiktokwhatsapppinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
স্বত্ব: ©️ আমার দেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক, মাহমুদুর রহমান 
মাহমুদুর রহমান কর্তৃক ঢাকা ট্রেড সেন্টার (৮ম ফ্লোর), ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫ থেকে প্রকাশিত এবং আমার দেশ পাবলিকেশন লিমিটেড প্রেস, ৪৪৬/সি ও ৪৪৬/ডি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্য বিভাগ: ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।ফোন: ০২-৫৫০১২২৫০। ই-মেইল: info@dailyamardesh.comবার্তা: ফোন: ০৯৬৬৬-৭৪৭৪০০। ই-মেইল: news@dailyamardesh.comবিজ্ঞাপন: ফোন: +৮৮০-১৭১৫-০২৫৪৩৪ । ই-মেইল: ad@dailyamardesh.comসার্কুলেশন: ফোন: +৮৮০-০১৮১৯-৮৭৮৬৮৭ । ই-মেইল: circulation@dailyamardesh.com
ওয়েব মেইল
কনভার্টারআর্কাইভবিজ্ঞাপনসাইটম্যাপ
> মতামত

জেন-জি বিক্ষোভ ও বৈশ্বিক বাঁকবদল

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৫২
logo
জেন-জি বিক্ষোভ ও বৈশ্বিক বাঁকবদল

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৫২

বিক্ষোভ, প্রতিবাদ আর বিপ্লবের মাতাল হাওয়া ২০২৫ সালকে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ যুগসন্ধিক্ষণে এনে দাঁড় করিয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক অসমতা এবং অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে নতুন এক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জেন-জির উত্থান। তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে বহুমাত্রিকভাবে ব্যবহার করে নতুন পৃথিবী গড়ার প্রয়াসে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের ধারাবাহিকতায় নেপাল, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনস উত্তাল হয়েছে। এ যেন নতুন করে আরব বসন্তের লু হাওয়া বইতে শুরু করেছে এশিয়া ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে। তবে এই দেশগুলোর প্রতিবাদ কেবল স্থানীয় অস্থিরতার প্রকাশ নয়, এখানে একটি বৈশ্বিক আন্দোলনের লক্ষণ সুস্পষ্ট। সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটি প্রজন্ম তার নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে সৃষ্ট বিপর্যয়কে শুধরে নেওয়ার জন্য ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে।

স্বাভাবিক দৃষ্টিতে প্রতিবাদ মনে হলেও জেন-জির এই প্রতিবাদগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি গভীর চেতনা। বিশ্বব্যাপী সমতা, ন্যায্যতা ও শাসনব্যবস্থার সংস্কারের প্রতি তাদের অঙ্গীকার। এরা যেভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করে তাদের শক্তিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, তা দেশের রাজনৈতিক সীমান্ত পেরিয়ে অন্য অনেককে অনুপ্রাণিত করার সক্ষমতা দেখিয়েছে। তারা সমতার দাবিকে শুধু নিজ দেশে সীমাবদ্ধ রাখছে না, বরং পৃথিবীজুড়ে একটি বৈশ্বিক সংহতির সৃষ্টি করছে। মানবাধিকার, জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের নিবেদিত মনোভাব প্রকাশ থেকে অনুমান করা যাচ্ছে বৈশ্বিক রাজনীতির পট পরিবর্তনের। কারণ জেন-জির প্রতিবাদ শুধু প্রতিবাদ নয়, এটি এক নতুন চিন্তার সঞ্চার, এক নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনকে এই আন্দোলনের সূচনাবিন্দু বলা যেতে পারে। তবে শ্রীলঙ্কায় গণবিদ্রোহের কথাটাও এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তারপর ২০২৫ সাল বিশ্বরাজনীতিতে নিয়ে এসেছে এক প্রতিবাদের ঘূর্ণিঝড়। এরই মধ্যে ইতিহাসে ‘প্রতিবাদ বছরের’ নামে খ্যাত এই বছরে নাইরোবি থেকে কাঠমান্ডু পর্যন্ত জেন-জির নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্মৃতিচারণের গালগল্প আর ইতিহাসের পাঠে অনাগ্রহী প্রজন্মটি হয়ে উঠেছে নতুন আরেক ইতিহাসের রচয়িতা।

অর্থনৈতিক পতন, মহামারি ও জলবায়ু সংকটে ক্ষতবিক্ষত এক পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া এই ডিজিটাল নেটিভদের বয়স এখন প্রায় ১৩ থেকে ২৮ বছর। এখন তারা মিম কিংবা ভাইরাল চ্যালেঞ্জে তৃপ্ত না হয়ে দুর্নিবার আন্দোলনে ভেঙে ফেলছে দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থা। তারা নতুন নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক একাত্মতার সংজ্ঞা আবার রচনা করছে। এজন্যই হয়তো খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। জেন-জি আগুনঝরা প্রতিবাদ করছে ইজরাইলের বর্বর গণহত্যার মদতদাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্লজ্জ কর্মভূমিকার। গ্রেটা থুনবার্গের মতো কিশোরীরা ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ নিয়ে হাজির হচ্ছে গাজা উপত্যকায়।

অ্যান্টানানারিভোর ব্যারিকেড থেকে রাবাতের গ্যাস গ্রাস করা চত্বর পর্যন্ত জেন-জির প্রতিবাদ আর বিচ্ছিন্ন অসন্তোষের উদ্রেক নয়, বরং এটি একটি তীব্র পরিবর্তনের স্রোত হিসেবে ধেয়ে আসছে। এরা একটি ‘নতুন পৃথিবী’ সৃষ্টি করছে যেখানে তরুণদের সম্মিলিত শক্তি প্রতিষ্ঠিত স্বৈরশাসকদের ভিত্তি নাড়িয়ে দিচ্ছে। যখন আমরা এই ঢেউটির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, তখন মাদাগাস্কার থেকে সেনারা প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। এদিকে নেপালে গ্রেপ্তার উপেক্ষা করেও প্রতিবাদ ও গণপ্রতিরোধ চলছে। এর থেকে এটি স্পষ্ট, এই প্রতিবাদ শুধু বিদ্রোহের জন্য নয়, বরং গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও সমাজের একটি পরিকল্পিত নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণের প্রচেষ্টাও।

কী এক চিত্তাকর্ষক শক্তি এই যুদ্ধে তাদের প্রবৃদ্ধিকে দৃশ্যমান করছে! এর মূলে রয়েছে একটি গভীর অনুভূতি। আর শাসকচক্রের পক্ষ থেকে ইতিহাসের ঘ্যানঘ্যান-প্যানপ্যান কিংবা স্বজন হারানোর বেদনা টাইপ কিছু সামনে রেখে করে যাওয়া সীমাহীন বিশ্বাসঘাতকতা। জন্মের পর থেকেই তারা এমন একটি পৃথিবী পেয়েছে, যেখানে সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিকে গিলে খেয়েছে ইতিহাসের কিছু গালগল্প। ক্ষমতাধর শাসকের প্রতিটি কথা এখন নিছক মিথ্যা। কারণ নেপালের মতো (২০.৮ শতাংশ) অনেক দেশে যুবকদের বেকারত্ব পৌঁছেছে কল্পনার বাইরে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াল থাবা। যেমন, ফিলিপাইনে বন্যা কিংবা মাদাগাস্কারের ঘূর্ণিঝড় তাদের অশান্তি যেমন বৃদ্ধি করেছে।

Zen-z

শুরু থেকেই তারা ভাগ্যবিড়ম্বিত। ২০০৮ সালের মহামন্দা তাদের মা-বাবার আর্থিক স্থিতিশীলতা ছিনিয়ে নিয়েছিল। কোভিড-১৯ তাদের শৈশব কেড়ে নিয়েছিল এবং তারপর কর্তৃত্ববাদী সরকার সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের নাভিশ্বাস চরমে তুলেছে। তাই ঝাঁকে-ঝাঁকে পালে-পালে জন্ম নেওয়া বেবি বুমারদের কথিত বিপ্লব কিংবা মিলেনিয়ালদের ‘অকুপাই’ আন্দোলনের থেকে জেন-জি পুরোই আলাদা। তারা তাদের জন্য একটি হাইপার-কানেক্টেড ইকোসিস্টেমের জন্ম দিয়েছে। তারা সামাজিক মাধ্যম সামনে রেখে সম্মিলিত ক্ষোভকে সংগঠিত কর্মে পরিণত করছে মুহূর্তের মধ্যে। তাই তো নেতৃত্বহীন সাবলীল বিক্ষোভগুলো বন্দুক ও কামানের নলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারছে।

মরক্কোর কথাই ধরা যাক। সেখানে বাংলাদেশের পলাতক ফ্যাসিবাদের ক্রিকেট আদিখ্যেতার মতো তাদের আছে সবেধন নীলমণি ‘ফুটবল’। জেন-জি হুঙ্কার দিয়েছে—‘স্বাস্থ্যসেবা আগে, বিশ্বকাপ আমরা চাই না।’ তারা সরকারের ২০৩০ বিশ্বকাপের জন্য বিপুল ব্যয়কে তীব্রভাবে সমালোচনা করছে। কারণ এর ফলে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। ২০২৩ সালের ভূমিকম্পের শিকার মানুষগুলো এখনো জরাজীর্ণ শিবিরে বসবাস করছে। তাদের প্রতি দৃষ্টি না দেওয়াতেই মূলত ক্ষিপ্ত-বিরক্ত জেন-জি সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে।

এদিকে নেপালের প্রতিবাদ কীভাবে ডিজিটাল বিদ্রোহ থেকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথে এগিয়েছে, সেটা আমরা সবাই দেখেছি। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নেপালে একটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। তারা চীনের মতো ২৬টি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের ওপর খড়্‌গ ঝুলিয়ে দেয়। এটা প্রথমে ‘মিথ্যা খবর’ রোধ করার অছিলায় আরোপিত হয়েছিল। কিন্তু একেবারে স্পষ্ট ছিল যে, এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক বিরোধী মতকে স্তব্ধ করা। নেপালের জেন-জি আর চুপ থাকেনি। তারা যখন দেখল, রাজনীতিবিদদের ‘নেপো কিডস’ বিলাসী জীবনযাপন করছে, তখন তাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছিল নেপালের অর্থনীতি। শুরুতে #nepobabies হ্যাশট্যাগ ভাইরাল হওয়ার পথ ধরে ভিপিএন-সার্কামভেন্ট নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। তারপর সেই ক্ষোভটি রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকরা সংসদে গিয়ে আক্রমণ করে, সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে এবং এক দিনের মধ্যে সরকারের পতন ঘটে।

নেপালি জেন-জিদের ভাগ্য ভালো। তাদের সরকারপ্রধান বাংলাদেশের মতো ফ্যাসিস্ট ছিলেন না। ফলে হাজার দুয়েক মানুষকে খুন করেননি। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন। তারপর নিষেধাজ্ঞাটি প্রত্যাহার করা হয়। একইভাবে মাদাগাস্কারে ১২ ঘণ্টার বিদ্যুৎ ও পানির আউটেজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল ‘জেন-জি মাদাগাস্কার’। মার্চ মাসের ঘূর্ণিঝড়ের পর আরো তীব্র হয়ে ওঠা আন্দোলন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার শাসনকে পুরোপুরি টলিয়ে দেয়। সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়। এরপর সিপিএসএট ইউনিটের সৈন্যরা প্রতিরোধে যোগ দেয়। তারা মাদাগাস্কারের রাজধানী আন্তানানরিভোর এমওয়াই থার্টিন স্কোয়ারে প্রবেশ করে। এদিকে ক্ষমতায় বসে থেকে রাজোয়েলিনা এই অভ্যুত্থানকে বহিঃশক্তি-সমর্থিত বলে দাবি করেন। বাস্তবে মরক্কোর শিক্ষার্থী-জনতা যেমন ফুটবল নিয়ে ফাজলামি সহ্য করতে পারেনি, তেমনি মাদাগাস্কারের তরুণরাও তাদের অধিকার ফিরে পেতে চেয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হয় উচ্চপর্যায়ের সুবিধা এবং মন্ত্রীর কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সেপ্টেম্বর মাসের বালি বন্যায় ৯ জনের মৃত্যু ঘটার পর তীব্র আন্দোলন মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগ এবং নীতিগত পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছিল। ফিলিপাইনে জুলাই মাসের সুপার টাইফুন রাগাসার পর ফ্লাড প্রকল্পে অব্যবস্থাপনার কারণে অনলাইন ক্ষোভ রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। পেরুর জেন-জি ট্রান্সপোর্ট কর্মীদের সঙ্গে তাদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে এক দুর্নীতিবিরোধী মহাযাত্রা শুরু করে। এসব ঘটনা শুধুই একটা সমাকীর্ণ কো-ইন্সিডেন্স নয়, এসব আন্দোলন মূলত এক সাহসের মহামারি। এখানে আন্দোলনগুলো ‘সীমান্ত পেরিয়ে একে অপরকে হাত ধরে এগিয়ে চলেছে’।

বিশ্লেষকরা বর্ণনা করেছেন, বাংলাদেশের ২০২৪ সালের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে; তারপর এশিয়া ও আফ্রিকার বাকি অংশে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’ এই বিপ্লবের সফলতা সার্বিয়া ও তিমোর লেস্টের যুবকদেরও অনুপ্রাণিত করেছে। কেনিয়ার প্রতিবাদ একটি নতুন পৃথিবীর দিকে আহ্বান করে সেখানকার যুবকদের। করের অতিরিক্ত বোঝা চাপানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আর্থিক বিল পাস হলে শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ। সারা দেশে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি প্রতিবাদ রেকর্ড করা হয়। অধিকাংশই ছিল জেন-জি, শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্যোগে। জেন-জির ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কের পক্ষে অবস্থান নিঃসন্দেহে নতুন একটি ধারার জন্ম দিয়েছে। তারা জাতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে চেষ্টা করেছে।

ইউটিউব, এক্স, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ‘মিম কে ম্যানিফেস্টোতে পরিণত করেছে’। তারপর সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভিপিএন ও এনক্রিপ্টেড চ্যাটের মাধ্যমে এগিয়ে গেছে আন্দোলনের প্রস্তুতি। সেন্সরশিপকে এড়িয়ে জেন-জির এই সংগঠিত নেটওয়ার্ক গণভবনের ফ্যাসিস্টের হাত থেকে ঢাকাকে মুক্ত করেছে; ম্যানিলা থেকে নাইরোবি, আর আন্তানানরিভোর থেকে রাবাত পর্যন্ত কণ্ঠস্বর জোরালো করছে। তারা একযোগে স্লোগান তোলে সময়ের সীমা অতিক্রম করে। তাই তো বাংলাদেশের ‘কোটা না মেধা, ক্ষমতা না জনতা, দিল্লি না ঢাকা’র বিপরীতে মাদাগাস্কারের ‘Tsy Manaiky Lembenana’ মিলেমিশে একাকার। আর নেপালের ‘We Refuse to Be Trampled’ অবধি বার্তা তো একটাই। নতুন পৃথিবী এখানে জেন-জিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, এ পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই রচিত হবে। এখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপ বিকিরণজনিত ন্যায় এবং ডিজিটাল অধিকার গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে ঔপনিবেশীকরণের বিরুদ্ধে যে বিপ্লবের উত্তরাধিকার তা সমস্বরে গর্জে উঠছে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলে।

লেখক : গবেষক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর; সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদক ও প্রকাশক : মাহমুদুর রহমান কর্তৃক প্রকাশিত এবং আল-ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস, ৪২৩, এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭ থেকে এবং অস্থায়ীভাবে মিডিয়া প্রিন্টার্স লি. ৪৪৬/এইচ, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্য বিভাগ : ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম এভিণিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। পিএবিএক্স : ০২-৫৫০১২২৫০। ই-মেইল : info@dailyamardesh.com

বিক্ষোভ, প্রতিবাদ আর বিপ্লবের মাতাল হাওয়া ২০২৫ সালকে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ যুগসন্ধিক্ষণে এনে দাঁড় করিয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক অসমতা এবং অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে নতুন এক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জেন-জির উত্থান। তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে বহুমাত্রিকভাবে ব্যবহার করে নতুন পৃথিবী গড়ার প্রয়াসে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের ধারাবাহিকতায় নেপাল, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনস উত্তাল হয়েছে। এ যেন নতুন করে আরব বসন্তের লু হাওয়া বইতে শুরু করেছে এশিয়া ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে। তবে এই দেশগুলোর প্রতিবাদ কেবল স্থানীয় অস্থিরতার প্রকাশ নয়, এখানে একটি বৈশ্বিক আন্দোলনের লক্ষণ সুস্পষ্ট। সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটি প্রজন্ম তার নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে সৃষ্ট বিপর্যয়কে শুধরে নেওয়ার জন্য ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্বাভাবিক দৃষ্টিতে প্রতিবাদ মনে হলেও জেন-জির এই প্রতিবাদগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি গভীর চেতনা। বিশ্বব্যাপী সমতা, ন্যায্যতা ও শাসনব্যবস্থার সংস্কারের প্রতি তাদের অঙ্গীকার। এরা যেভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করে তাদের শক্তিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, তা দেশের রাজনৈতিক সীমান্ত পেরিয়ে অন্য অনেককে অনুপ্রাণিত করার সক্ষমতা দেখিয়েছে। তারা সমতার দাবিকে শুধু নিজ দেশে সীমাবদ্ধ রাখছে না, বরং পৃথিবীজুড়ে একটি বৈশ্বিক সংহতির সৃষ্টি করছে। মানবাধিকার, জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের নিবেদিত মনোভাব প্রকাশ থেকে অনুমান করা যাচ্ছে বৈশ্বিক রাজনীতির পট পরিবর্তনের। কারণ জেন-জির প্রতিবাদ শুধু প্রতিবাদ নয়, এটি এক নতুন চিন্তার সঞ্চার, এক নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনকে এই আন্দোলনের সূচনাবিন্দু বলা যেতে পারে। তবে শ্রীলঙ্কায় গণবিদ্রোহের কথাটাও এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তারপর ২০২৫ সাল বিশ্বরাজনীতিতে নিয়ে এসেছে এক প্রতিবাদের ঘূর্ণিঝড়। এরই মধ্যে ইতিহাসে ‘প্রতিবাদ বছরের’ নামে খ্যাত এই বছরে নাইরোবি থেকে কাঠমান্ডু পর্যন্ত জেন-জির নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্মৃতিচারণের গালগল্প আর ইতিহাসের পাঠে অনাগ্রহী প্রজন্মটি হয়ে উঠেছে নতুন আরেক ইতিহাসের রচয়িতা।

অর্থনৈতিক পতন, মহামারি ও জলবায়ু সংকটে ক্ষতবিক্ষত এক পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া এই ডিজিটাল নেটিভদের বয়স এখন প্রায় ১৩ থেকে ২৮ বছর। এখন তারা মিম কিংবা ভাইরাল চ্যালেঞ্জে তৃপ্ত না হয়ে দুর্নিবার আন্দোলনে ভেঙে ফেলছে দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থা। তারা নতুন নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক একাত্মতার সংজ্ঞা আবার রচনা করছে। এজন্যই হয়তো খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। জেন-জি আগুনঝরা প্রতিবাদ করছে ইজরাইলের বর্বর গণহত্যার মদতদাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্লজ্জ কর্মভূমিকার। গ্রেটা থুনবার্গের মতো কিশোরীরা ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ নিয়ে হাজির হচ্ছে গাজা উপত্যকায়।

অ্যান্টানানারিভোর ব্যারিকেড থেকে রাবাতের গ্যাস গ্রাস করা চত্বর পর্যন্ত জেন-জির প্রতিবাদ আর বিচ্ছিন্ন অসন্তোষের উদ্রেক নয়, বরং এটি একটি তীব্র পরিবর্তনের স্রোত হিসেবে ধেয়ে আসছে। এরা একটি ‘নতুন পৃথিবী’ সৃষ্টি করছে যেখানে তরুণদের সম্মিলিত শক্তি প্রতিষ্ঠিত স্বৈরশাসকদের ভিত্তি নাড়িয়ে দিচ্ছে। যখন আমরা এই ঢেউটির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, তখন মাদাগাস্কার থেকে সেনারা প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। এদিকে নেপালে গ্রেপ্তার উপেক্ষা করেও প্রতিবাদ ও গণপ্রতিরোধ চলছে। এর থেকে এটি স্পষ্ট, এই প্রতিবাদ শুধু বিদ্রোহের জন্য নয়, বরং গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও সমাজের একটি পরিকল্পিত নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণের প্রচেষ্টাও।

কী এক চিত্তাকর্ষক শক্তি এই যুদ্ধে তাদের প্রবৃদ্ধিকে দৃশ্যমান করছে! এর মূলে রয়েছে একটি গভীর অনুভূতি। আর শাসকচক্রের পক্ষ থেকে ইতিহাসের ঘ্যানঘ্যান-প্যানপ্যান কিংবা স্বজন হারানোর বেদনা টাইপ কিছু সামনে রেখে করে যাওয়া সীমাহীন বিশ্বাসঘাতকতা। জন্মের পর থেকেই তারা এমন একটি পৃথিবী পেয়েছে, যেখানে সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিকে গিলে খেয়েছে ইতিহাসের কিছু গালগল্প। ক্ষমতাধর শাসকের প্রতিটি কথা এখন নিছক মিথ্যা। কারণ নেপালের মতো (২০.৮ শতাংশ) অনেক দেশে যুবকদের বেকারত্ব পৌঁছেছে কল্পনার বাইরে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াল থাবা। যেমন, ফিলিপাইনে বন্যা কিংবা মাদাগাস্কারের ঘূর্ণিঝড় তাদের অশান্তি যেমন বৃদ্ধি করেছে।

Zen-z

শুরু থেকেই তারা ভাগ্যবিড়ম্বিত। ২০০৮ সালের মহামন্দা তাদের মা-বাবার আর্থিক স্থিতিশীলতা ছিনিয়ে নিয়েছিল। কোভিড-১৯ তাদের শৈশব কেড়ে নিয়েছিল এবং তারপর কর্তৃত্ববাদী সরকার সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের নাভিশ্বাস চরমে তুলেছে। তাই ঝাঁকে-ঝাঁকে পালে-পালে জন্ম নেওয়া বেবি বুমারদের কথিত বিপ্লব কিংবা মিলেনিয়ালদের ‘অকুপাই’ আন্দোলনের থেকে জেন-জি পুরোই আলাদা। তারা তাদের জন্য একটি হাইপার-কানেক্টেড ইকোসিস্টেমের জন্ম দিয়েছে। তারা সামাজিক মাধ্যম সামনে রেখে সম্মিলিত ক্ষোভকে সংগঠিত কর্মে পরিণত করছে মুহূর্তের মধ্যে। তাই তো নেতৃত্বহীন সাবলীল বিক্ষোভগুলো বন্দুক ও কামানের নলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারছে।

মরক্কোর কথাই ধরা যাক। সেখানে বাংলাদেশের পলাতক ফ্যাসিবাদের ক্রিকেট আদিখ্যেতার মতো তাদের আছে সবেধন নীলমণি ‘ফুটবল’। জেন-জি হুঙ্কার দিয়েছে—‘স্বাস্থ্যসেবা আগে, বিশ্বকাপ আমরা চাই না।’ তারা সরকারের ২০৩০ বিশ্বকাপের জন্য বিপুল ব্যয়কে তীব্রভাবে সমালোচনা করছে। কারণ এর ফলে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। ২০২৩ সালের ভূমিকম্পের শিকার মানুষগুলো এখনো জরাজীর্ণ শিবিরে বসবাস করছে। তাদের প্রতি দৃষ্টি না দেওয়াতেই মূলত ক্ষিপ্ত-বিরক্ত জেন-জি সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে।

এদিকে নেপালের প্রতিবাদ কীভাবে ডিজিটাল বিদ্রোহ থেকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথে এগিয়েছে, সেটা আমরা সবাই দেখেছি। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নেপালে একটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। তারা চীনের মতো ২৬টি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের ওপর খড়্‌গ ঝুলিয়ে দেয়। এটা প্রথমে ‘মিথ্যা খবর’ রোধ করার অছিলায় আরোপিত হয়েছিল। কিন্তু একেবারে স্পষ্ট ছিল যে, এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক বিরোধী মতকে স্তব্ধ করা। নেপালের জেন-জি আর চুপ থাকেনি। তারা যখন দেখল, রাজনীতিবিদদের ‘নেপো কিডস’ বিলাসী জীবনযাপন করছে, তখন তাদের চোখের সামনে ভেঙে পড়ছিল নেপালের অর্থনীতি। শুরুতে #nepobabies হ্যাশট্যাগ ভাইরাল হওয়ার পথ ধরে ভিপিএন-সার্কামভেন্ট নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। তারপর সেই ক্ষোভটি রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকরা সংসদে গিয়ে আক্রমণ করে, সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে এবং এক দিনের মধ্যে সরকারের পতন ঘটে।

নেপালি জেন-জিদের ভাগ্য ভালো। তাদের সরকারপ্রধান বাংলাদেশের মতো ফ্যাসিস্ট ছিলেন না। ফলে হাজার দুয়েক মানুষকে খুন করেননি। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন। তারপর নিষেধাজ্ঞাটি প্রত্যাহার করা হয়। একইভাবে মাদাগাস্কারে ১২ ঘণ্টার বিদ্যুৎ ও পানির আউটেজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল ‘জেন-জি মাদাগাস্কার’। মার্চ মাসের ঘূর্ণিঝড়ের পর আরো তীব্র হয়ে ওঠা আন্দোলন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার শাসনকে পুরোপুরি টলিয়ে দেয়। সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়। এরপর সিপিএসএট ইউনিটের সৈন্যরা প্রতিরোধে যোগ দেয়। তারা মাদাগাস্কারের রাজধানী আন্তানানরিভোর এমওয়াই থার্টিন স্কোয়ারে প্রবেশ করে। এদিকে ক্ষমতায় বসে থেকে রাজোয়েলিনা এই অভ্যুত্থানকে বহিঃশক্তি-সমর্থিত বলে দাবি করেন। বাস্তবে মরক্কোর শিক্ষার্থী-জনতা যেমন ফুটবল নিয়ে ফাজলামি সহ্য করতে পারেনি, তেমনি মাদাগাস্কারের তরুণরাও তাদের অধিকার ফিরে পেতে চেয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হয় উচ্চপর্যায়ের সুবিধা এবং মন্ত্রীর কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সেপ্টেম্বর মাসের বালি বন্যায় ৯ জনের মৃত্যু ঘটার পর তীব্র আন্দোলন মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগ এবং নীতিগত পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছিল। ফিলিপাইনে জুলাই মাসের সুপার টাইফুন রাগাসার পর ফ্লাড প্রকল্পে অব্যবস্থাপনার কারণে অনলাইন ক্ষোভ রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। পেরুর জেন-জি ট্রান্সপোর্ট কর্মীদের সঙ্গে তাদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে এক দুর্নীতিবিরোধী মহাযাত্রা শুরু করে। এসব ঘটনা শুধুই একটা সমাকীর্ণ কো-ইন্সিডেন্স নয়, এসব আন্দোলন মূলত এক সাহসের মহামারি। এখানে আন্দোলনগুলো ‘সীমান্ত পেরিয়ে একে অপরকে হাত ধরে এগিয়ে চলেছে’।

বিশ্লেষকরা বর্ণনা করেছেন, বাংলাদেশের ২০২৪ সালের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে; তারপর এশিয়া ও আফ্রিকার বাকি অংশে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’ এই বিপ্লবের সফলতা সার্বিয়া ও তিমোর লেস্টের যুবকদেরও অনুপ্রাণিত করেছে। কেনিয়ার প্রতিবাদ একটি নতুন পৃথিবীর দিকে আহ্বান করে সেখানকার যুবকদের। করের অতিরিক্ত বোঝা চাপানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আর্থিক বিল পাস হলে শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ। সারা দেশে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি প্রতিবাদ রেকর্ড করা হয়। অধিকাংশই ছিল জেন-জি, শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্যোগে। জেন-জির ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কের পক্ষে অবস্থান নিঃসন্দেহে নতুন একটি ধারার জন্ম দিয়েছে। তারা জাতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে চেষ্টা করেছে।

ইউটিউব, এক্স, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ‘মিম কে ম্যানিফেস্টোতে পরিণত করেছে’। তারপর সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভিপিএন ও এনক্রিপ্টেড চ্যাটের মাধ্যমে এগিয়ে গেছে আন্দোলনের প্রস্তুতি। সেন্সরশিপকে এড়িয়ে জেন-জির এই সংগঠিত নেটওয়ার্ক গণভবনের ফ্যাসিস্টের হাত থেকে ঢাকাকে মুক্ত করেছে; ম্যানিলা থেকে নাইরোবি, আর আন্তানানরিভোর থেকে রাবাত পর্যন্ত কণ্ঠস্বর জোরালো করছে। তারা একযোগে স্লোগান তোলে সময়ের সীমা অতিক্রম করে। তাই তো বাংলাদেশের ‘কোটা না মেধা, ক্ষমতা না জনতা, দিল্লি না ঢাকা’র বিপরীতে মাদাগাস্কারের ‘Tsy Manaiky Lembenana’ মিলেমিশে একাকার। আর নেপালের ‘We Refuse to Be Trampled’ অবধি বার্তা তো একটাই। নতুন পৃথিবী এখানে জেন-জিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, এ পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই রচিত হবে। এখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপ বিকিরণজনিত ন্যায় এবং ডিজিটাল অধিকার গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে ঔপনিবেশীকরণের বিরুদ্ধে যে বিপ্লবের উত্তরাধিকার তা সমস্বরে গর্জে উঠছে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলে।

লেখক : গবেষক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর; সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

মতামতআমার দেশ
সর্বশেষ
১

রাবিতে ৪০ বছর পর নবীনদের বরণ করে নিলো ছাত্রশিবির

২

খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনে মুসল্লিদের ঢল

৩

বিশ্বসভ্যতার সংরক্ষণে উদ্বোধন ‘মহান মিসরীয় জাদুঘর’

৪

পুলিশ বক্সের সামনের সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি

৫

তেহরানে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

গ্রাম আদালত : ন্যায়বিচারের নতুন যাত্রা

গ্রাম আদালত শক্তিশালীকরণের তৃতীয় পর্যায় বাংলাদেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার নতুন দর্শন। যদি এটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর চাপ অনেক কমে যাবে। উচ্চ আদালতে মামলা কমে আসবে, ফলে বিচারকরা জটিল মামলা নিষ্পত্তিতে অধিকতর সময় দিতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা, গ্রামীণ জনগণ আর ন্যায়বিচারকে দূরের

৬ ঘণ্টা আগে

অদূরদর্শী নেতাদের বিজয় : দক্ষিণ এশিয়ার অভিজ্ঞতা

এরিস্টটলের শিক্ষা আজও ঢাকা ও দিল্লির মতোই প্রযোজ্য, যেমনটি ছিল এথেন্সে—রাজনীতি নাগরিকের আত্মার প্রতিফলন। যখন সমাজ নৈতিকতার দাবি ত্যাগ করে, তখন অবশ্যম্ভাবীভাবে তারা অদূরদর্শী নেতৃত্বের অধীনে পড়ে।

৬ ঘণ্টা আগে

ইরান ও ইসরাইল কি আবার যুদ্ধে জড়াবে?

১২ দিনের তীব্র লড়াইয়ের পর ২০২৫ সালের ২৪ জুন ইসরাইল আর ইরান অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়। কিন্তু এই অঞ্চলের যে গভীর উত্তেজনা, এই চুক্তি সেটা দূর করতে পারেনি। সপ্তাহ কয়েক পরে দুপক্ষই তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনা আরো চাঙা করেছে এবং নতুন লড়াইয়ের কথা মাথায় রেখেছে।

৬ ঘণ্টা আগে

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতীয় ঐক্যের পথ

আমরা যেন একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত অতিক্রম করছি; দিগন্তে ফুটে উঠেছে একটি আলোর রেখা। অতিকথন নয়, বাস্তবায়নেরই অঙ্গীকার যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সেটাই মনে হলো ড. প্রফেসর ইউনূসের ভাষণ শুনতে শুনতে। মনে হচ্ছিল অতীতের কায়েমি স্বার্থের নিগড়ে বাঁধা পুরোনো রাষ্ট্রব্যবস্থার ধ্বংসস্তূপে

৬ ঘণ্টা আগে
গ্রাম আদালত : ন্যায়বিচারের নতুন যাত্রা

গ্রাম আদালত : ন্যায়বিচারের নতুন যাত্রা

অদূরদর্শী নেতাদের বিজয় : দক্ষিণ এশিয়ার অভিজ্ঞতা

অদূরদর্শী নেতাদের বিজয় : দক্ষিণ এশিয়ার অভিজ্ঞতা

ইরান ও ইসরাইল কি আবার যুদ্ধে জড়াবে?

ইরান ও ইসরাইল কি আবার যুদ্ধে জড়াবে?

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতীয় ঐক্যের পথ

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতীয় ঐক্যের পথ