যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ : টেক্সটাইলশিল্পে অপার সম্ভাবনা

ফারহানা আফরোজ শ্রাবণী
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০: ১২
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ১৭

২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নেওয়ার আগেই তিনি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সেগুলো বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। এ জন্য তিনি প্রচলিত হিসাবনিকাশ বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না।

এসব ঝড় তোলা নীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে মনোযোগ পাচ্ছে। এরই মধ্যে তিনি কানাডা, মেক্সিকো ও কলম্বিয়ার ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। চীনের ক্ষেত্রে আরো ১০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন। এগুলো ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেও কার্যকর হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনই সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দেবে, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।

বিজ্ঞাপন

চীনা পণ্যের ওপর শুল্কবৃদ্ধির কারণে মার্কিন ও ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন চাহিদার জন্য বিকল্প উৎসের সন্ধান করতে বাধ্য হয়েছে, বিশেষ করে টেক্সটাইলশিল্পে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে। আর সেটি হলোÑবিশ্ববাজারে নিজেদের অংশীদারত্ব বাড়ানোর এবং পোশাকশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। চীনা টেক্সটাইল পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পশ্চিমা বাজারগুলো তাদের সরবরাহ নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছে। এই শূন্যস্থান পূরণ করতে বাংলাদেশের মতো শক্তিশালী টেক্সটাইল উৎপাদনভিত্তিক দেশগুলোর জন্য দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পোশাক ও টেক্সটাইল পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা এই পণ্যগুলো ব্যয়বহুল করে তোলে। এর ফলে মার্কিন ক্রেতারা ভিয়েতনাম, ভারত এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর দিকে ঝুঁকেছে। পোশাক খাত থেকে ইতোমধ্যেই ৮০ শতাংশ রপ্তানি আয় অর্জনকারী বাংলাদেশ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর এবং পশ্চিমা ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার সুযোগ পাচ্ছে।

বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার ক্ষেত্র হলো পণ্যের রপ্তানি চাহিদা বৃদ্ধি। মার্কিন বাজারে চীনা পণ্য সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশ ডেনিম, স্পোর্টসওয়্যার এবং সাধারণ পোশাকের ক্ষেত্রে বড় অংশের ভাগীদার হতে পারে। এ ছাড়া পশ্চিমা ক্রেতাদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশের টেক্সটাইলশিল্প পানিবিহীন ডাইং ও অর্গানিক কটন ব্যবহার করে টেকসই উৎপাদনে নেতৃত্ব দিতে পারে।

সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বমানের ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

তবে এই সুযোগ নিতে হলে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিশ্বব্যাপীই কাঁচামালের উচ্চমূল্য এ ক্ষেত্রে প্রথম চ্যালেঞ্জ। কটনসহ কাঁচামালের মূল্য অস্থির হয়ে উঠছে। পুনর্ব্যবহৃত কাপড় ও বিকল্প উৎস ব্যবহারে নজর দিতে হবে।

এ ছাড়া অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো শ্রমিক অসন্তোষ। শ্রমিক কল্যাণে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ বাংলাদেশের টেক্সটাইলশিল্পের জন্য যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে, তা কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন সঠিক কৌশল ও বিনিয়োগ। যথোপযুক্ত উদ্যোগ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে টেক্সটাইল খাত ঘিরে। সঠিক পদক্ষেপ নিলে দেশটি বৈশ্বিক টেক্সটাইলশিল্পে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

লেখক : অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার

ফাস্ট ট্র্যাক সোর্সিং

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত