সানাউল্লাহ সাগর
মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের জন্মঘটনা। ফলে যে রাজনৈতিক শক্তি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে বা পাকিস্তানের সঙ্গে মতাদর্শিক সম্পর্ক রেখেছে, তাদের মাথার ওপর পাকিস্তানি ট্যাগ লেগে আছে। স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগ এই ইস্যুকে ব্যবহার করেছে তাদের রাজনৈতিক বৈধতা জোরদার করার জন্য। তারা বলে আসছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। সে কারণে পাকিস্তানবিরোধী অবস্থানের নৈতিক কর্তৃত্বও তাদের। এই কর্তৃত্বকে দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করাই হয়ে দাঁড়ায় তাদের কৌশল।
এই ট্যাগিংয়ের শিকার শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, বরং বিএনপিও মাঝেমধ্যে একই ট্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে। বিএনপির জন্ম হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতায়, যেখানে প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক হলেও তার রাজনৈতিক আদর্শকে আওয়ামী লীগ প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে।
আওয়ামী লীগের বর্ণনায় বিএনপি হলো এমন একটি শক্তি, যারা পাকিস্তানঘেঁষা চিন্তাধারার উত্তরাধিকার বহন করে। বিশেষ করে জামায়াতের সঙ্গে জোট গড়ে তোলার পর এই অভিযোগ আরো জোরালোভাবে সামনে আসে এবং আওয়ামী লীগ তাদের এই বয়ান প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়, যদিও তারা জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলনের রাজনীতি করেছে। অনেক সময় আওয়ামী লীগের প্রচারে বিএনপিকে সরাসরি পাকিস্তানের বন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির উত্তরসূরিও বলা হয়। এমনকি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও আওয়ামী লীগ এই তকমাটিকে ব্যবহার করেছে প্রমাণ করার জন্য যে, বিএনপি আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শক্তি। ফলে জামায়াত যেমন পাকিস্তানি ট্যাগ বহন করছে, বিএনপিও রাজনৈতিক প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে একই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়।
বাম রাজনীতি নিজেরা জনভিত্তি হারালেও পাকিস্তানপন্থা ও জামায়াতবিরোধিতাকে রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ রক্ষার প্রশ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। তাদের যুক্তি হলো, পাকিস্তানপন্থা মানেই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা আর জামায়াত, বিএনপির বিরোধিতা মানেই স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতির রক্ষা। ফলে এসব বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য একটি আদর্শিক সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি হয়ে যায়।
কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায়, বাম দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনি রাজনীতিতে কার্যকর কোনো ভোটব্যাংক গড়ে তুলতে পারেনি। গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই তাদের সাংগঠনিক উপস্থিতি ক্রমেই দুর্বল হয়েছে। এ অবস্থায় পাকিস্তান ও জামায়াত ইস্যুকে জীবিত রাখা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একধরনের কৌশল। কারণ এই ইস্যু ছাড়া তারা কার্যত আর কোনো বড় প্রশ্নে জনমানুষকে সংগঠিত করতে পারছে না। অর্থাৎ, আওয়ামী লীগের জন্য যেখানে এ অবস্থান কৌশলগত সহায়ক, সেখানে বামদের জন্য এটি অস্তিত্ব রক্ষার যুক্তি।
‘পাকিস্তানি’ বা ‘রাজাকার’ তকমা শুধু একটি রাজনৈতিক লেবেল নয়; এটি একধরনের মনস্তাত্ত্বিক অস্ত্র। একবার কোনো ব্যক্তি বা দলকে এই ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হলে তারা নৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। কারণ এই ট্যাগ মানে সরাসরি স্বাধীনতাবিরোধিতা, যা সমাজ-সংস্কৃতিতে গভীর নেতিবাচক প্রতীক বহন করে। ফলে ভোটারদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের পক্ষে নিজেদের বৈধতা প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এই পরিস্থিতিকে কৌশলে কাজে লাগায়। তারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার স্মৃতি ও ঐতিহাসিক অবদান বারবার সামনে আনে। মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে তারা জাতীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে স্থাপন করেছে। ফলে যখনই কোনো বিরোধী শক্তিকে ‘পাকিস্তানি’ বা ‘রাজাকারপন্থি’ আখ্যা দেওয়া হয়, তখন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধনির্ভর বৈধতা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এতে ভোটারদের আবেগ, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট প্রজন্মের আবেগ, তাদের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়।
মনস্তাত্ত্বিকভাবে এর প্রভাব হলো, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ দলগুলো নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি, গণতন্ত্র বা জনস্বার্থের ওপর দাঁড় করাক না কেন, সেই কথাগুলো জনগণের কানে পৌঁছানোর আগেই ‘রাজাকার’ ট্যাগের ভারে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় তারা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিতে বাধ্য হয়, যেখানে নৈতিক বা আবেগের লড়াইতে আওয়ামী লীগ সুবিধা নিয়ে মাঠে নামে।
অর্থাৎ, এটি শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্ন নয়; এটি একধরনের মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ কৌশল। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থানকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যেখানে জাতীয় আবেগ ও ঐতিহাসিক স্মৃতি তাদের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মূলধন। আর পাকিস্তানি বা রাজাকার ট্যাগ সেই মূলধনকে টিকিয়ে রাখার কার্যকর হাতিয়ার।
এই ট্যাগিংয়ের ফলে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি একধরনের অচলায়তনে আটকে গেছে। প্রতিবার নির্বাচন বা বড় রাজনৈতিক সংকট এলে একই ইস্যু সামনে আসে। কে পাকিস্তানি, কে মুক্তিযুদ্ধপন্থি। ফলে উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি বা গণতন্ত্র—এসব মৌলিক প্রশ্ন পেছনে চলে যায়। তরুণ প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা বারবার একই ইস্যুর পুনরাবৃত্তি দেখে রাজনীতির প্রতি বিমুখ হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলো নতুন কোনো এজেন্ডা তৈরি করতে পারে না।
‘পাকিস্তানি’ ও ‘রাজাকার’ ট্যাগ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে না, বরং আওয়ামী লীগের আবেগভিত্তিক রাজনীতিকে দীর্ঘস্থায়ী বৈধতা জুগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এ প্রশ্নের উত্তরের ওপর এই ট্যাগিংয়ের রাজনীতি আর কতদিন চলবে? মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে রাখলে দেশ কখনো নতুন ইস্যুর দিকে অগ্রসর হতে পারবে না। তরুণ প্রজন্ম ইতোমধ্যেই নতুন এজেন্ডা দাবি করছে, কর্মসংস্থান, আধুনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকার। যদি রাজনৈতিক দলগুলো অতীতের ট্যাগে আটকে থেকে এই চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে রাজনীতি ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব আরো বাড়বে।
বাংলাদেশে পাকিস্তানি ট্যাগ এখন ইতিহাসের দায় নয়, বরং রাজনৈতিক কৌশল। আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলো এই ইস্যু ব্যবহার করে নিজেদের বৈধতা বজায় রাখছে। জামায়াত এই ট্যাগের শিকার আর বিএনপিকেও রাজনৈতিক প্রয়োজনে প্রায়ই একই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই রাজনীতি কি অনন্তকাল চলতে পারে? মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি যেমন অম্লান থাকবে, তেমনি সময়ের দাবিও বদলাবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নির্ধারণ করবে, আমরা কি সবসময় পাকিস্তান ট্যাগিংয়ের ভেতরেই আবদ্ধ থাকব, নাকি নতুন রাজনৈতিক আলোচনার দ্বার খুলব?
মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের জন্মঘটনা। ফলে যে রাজনৈতিক শক্তি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে বা পাকিস্তানের সঙ্গে মতাদর্শিক সম্পর্ক রেখেছে, তাদের মাথার ওপর পাকিস্তানি ট্যাগ লেগে আছে। স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগ এই ইস্যুকে ব্যবহার করেছে তাদের রাজনৈতিক বৈধতা জোরদার করার জন্য। তারা বলে আসছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। সে কারণে পাকিস্তানবিরোধী অবস্থানের নৈতিক কর্তৃত্বও তাদের। এই কর্তৃত্বকে দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করাই হয়ে দাঁড়ায় তাদের কৌশল।
এই ট্যাগিংয়ের শিকার শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, বরং বিএনপিও মাঝেমধ্যে একই ট্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে। বিএনপির জন্ম হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতায়, যেখানে প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক হলেও তার রাজনৈতিক আদর্শকে আওয়ামী লীগ প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে।
আওয়ামী লীগের বর্ণনায় বিএনপি হলো এমন একটি শক্তি, যারা পাকিস্তানঘেঁষা চিন্তাধারার উত্তরাধিকার বহন করে। বিশেষ করে জামায়াতের সঙ্গে জোট গড়ে তোলার পর এই অভিযোগ আরো জোরালোভাবে সামনে আসে এবং আওয়ামী লীগ তাদের এই বয়ান প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়, যদিও তারা জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলনের রাজনীতি করেছে। অনেক সময় আওয়ামী লীগের প্রচারে বিএনপিকে সরাসরি পাকিস্তানের বন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির উত্তরসূরিও বলা হয়। এমনকি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও আওয়ামী লীগ এই তকমাটিকে ব্যবহার করেছে প্রমাণ করার জন্য যে, বিএনপি আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শক্তি। ফলে জামায়াত যেমন পাকিস্তানি ট্যাগ বহন করছে, বিএনপিও রাজনৈতিক প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে একই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়।
বাম রাজনীতি নিজেরা জনভিত্তি হারালেও পাকিস্তানপন্থা ও জামায়াতবিরোধিতাকে রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ রক্ষার প্রশ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। তাদের যুক্তি হলো, পাকিস্তানপন্থা মানেই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা আর জামায়াত, বিএনপির বিরোধিতা মানেই স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতির রক্ষা। ফলে এসব বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য একটি আদর্শিক সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি হয়ে যায়।
কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায়, বাম দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনি রাজনীতিতে কার্যকর কোনো ভোটব্যাংক গড়ে তুলতে পারেনি। গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই তাদের সাংগঠনিক উপস্থিতি ক্রমেই দুর্বল হয়েছে। এ অবস্থায় পাকিস্তান ও জামায়াত ইস্যুকে জীবিত রাখা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একধরনের কৌশল। কারণ এই ইস্যু ছাড়া তারা কার্যত আর কোনো বড় প্রশ্নে জনমানুষকে সংগঠিত করতে পারছে না। অর্থাৎ, আওয়ামী লীগের জন্য যেখানে এ অবস্থান কৌশলগত সহায়ক, সেখানে বামদের জন্য এটি অস্তিত্ব রক্ষার যুক্তি।
‘পাকিস্তানি’ বা ‘রাজাকার’ তকমা শুধু একটি রাজনৈতিক লেবেল নয়; এটি একধরনের মনস্তাত্ত্বিক অস্ত্র। একবার কোনো ব্যক্তি বা দলকে এই ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হলে তারা নৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। কারণ এই ট্যাগ মানে সরাসরি স্বাধীনতাবিরোধিতা, যা সমাজ-সংস্কৃতিতে গভীর নেতিবাচক প্রতীক বহন করে। ফলে ভোটারদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের পক্ষে নিজেদের বৈধতা প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এই পরিস্থিতিকে কৌশলে কাজে লাগায়। তারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার স্মৃতি ও ঐতিহাসিক অবদান বারবার সামনে আনে। মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে তারা জাতীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে স্থাপন করেছে। ফলে যখনই কোনো বিরোধী শক্তিকে ‘পাকিস্তানি’ বা ‘রাজাকারপন্থি’ আখ্যা দেওয়া হয়, তখন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধনির্ভর বৈধতা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এতে ভোটারদের আবেগ, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট প্রজন্মের আবেগ, তাদের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়।
মনস্তাত্ত্বিকভাবে এর প্রভাব হলো, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ দলগুলো নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি, গণতন্ত্র বা জনস্বার্থের ওপর দাঁড় করাক না কেন, সেই কথাগুলো জনগণের কানে পৌঁছানোর আগেই ‘রাজাকার’ ট্যাগের ভারে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় তারা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিতে বাধ্য হয়, যেখানে নৈতিক বা আবেগের লড়াইতে আওয়ামী লীগ সুবিধা নিয়ে মাঠে নামে।
অর্থাৎ, এটি শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রশ্ন নয়; এটি একধরনের মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ কৌশল। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থানকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যেখানে জাতীয় আবেগ ও ঐতিহাসিক স্মৃতি তাদের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মূলধন। আর পাকিস্তানি বা রাজাকার ট্যাগ সেই মূলধনকে টিকিয়ে রাখার কার্যকর হাতিয়ার।
এই ট্যাগিংয়ের ফলে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি একধরনের অচলায়তনে আটকে গেছে। প্রতিবার নির্বাচন বা বড় রাজনৈতিক সংকট এলে একই ইস্যু সামনে আসে। কে পাকিস্তানি, কে মুক্তিযুদ্ধপন্থি। ফলে উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি বা গণতন্ত্র—এসব মৌলিক প্রশ্ন পেছনে চলে যায়। তরুণ প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা বারবার একই ইস্যুর পুনরাবৃত্তি দেখে রাজনীতির প্রতি বিমুখ হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলো নতুন কোনো এজেন্ডা তৈরি করতে পারে না।
‘পাকিস্তানি’ ও ‘রাজাকার’ ট্যাগ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে না, বরং আওয়ামী লীগের আবেগভিত্তিক রাজনীতিকে দীর্ঘস্থায়ী বৈধতা জুগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এ প্রশ্নের উত্তরের ওপর এই ট্যাগিংয়ের রাজনীতি আর কতদিন চলবে? মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে রাখলে দেশ কখনো নতুন ইস্যুর দিকে অগ্রসর হতে পারবে না। তরুণ প্রজন্ম ইতোমধ্যেই নতুন এজেন্ডা দাবি করছে, কর্মসংস্থান, আধুনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকার। যদি রাজনৈতিক দলগুলো অতীতের ট্যাগে আটকে থেকে এই চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে রাজনীতি ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব আরো বাড়বে।
বাংলাদেশে পাকিস্তানি ট্যাগ এখন ইতিহাসের দায় নয়, বরং রাজনৈতিক কৌশল। আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলো এই ইস্যু ব্যবহার করে নিজেদের বৈধতা বজায় রাখছে। জামায়াত এই ট্যাগের শিকার আর বিএনপিকেও রাজনৈতিক প্রয়োজনে প্রায়ই একই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই রাজনীতি কি অনন্তকাল চলতে পারে? মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি যেমন অম্লান থাকবে, তেমনি সময়ের দাবিও বদলাবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নির্ধারণ করবে, আমরা কি সবসময় পাকিস্তান ট্যাগিংয়ের ভেতরেই আবদ্ধ থাকব, নাকি নতুন রাজনৈতিক আলোচনার দ্বার খুলব?
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৭ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৭ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৭ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে