
রকীবুল হক

মাত্র আট বছর বয়সে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হন মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। দেশের বিভিন্ন কওমি মাদরাসার পাশাপাশি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে লেখাপড়া করেছেন। শায়খুল হাদিস, ধর্মীয় বক্তা, খতিব ও ইসলামি রাজনীতিক হিসেবে বেশ পরিচিত তিনি। অথচ এই আলেমকেই ‘কোরআন পোড়ানো’র মিথ্যা অভিযোগের মামলায় জেলে নেয় পতিত আওয়ামী সরকার। পরে সন্ত্রাসের বিভিন্ন ধারায় ১০টি মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস কারারুদ্ধ করে রাখে। এ সময় ২৬ দিন রিমান্ডের নামে পবিত্র রমজানে চরম নির্যাতনের মুখোমুখি হন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আফেন্দী।
শুধু গ্রেপ্তার-নির্যাতনই নয়, নিজের হাতে গড়া জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিসের পদও কেড়ে নেন পতিত আওয়ামী লীগ নেতারা। একইসঙ্গে বাদ দেওয়া হয় ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতিবের দীর্ঘ ২২ বছরের দায়িত্ব থেকেও।
এভাবেই বিগত আওয়ামী শাসনামলে দেশের আলেম-ওলামাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন সীমাহীন মাত্রায় পৌঁছেছিল বলে মনে করেন অন্যতম ভুক্তভোগী মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। দৈনিক আমার দেশকে তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করিনি, জেলে যাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করিনি, চুরি-ডাকাতি করিনি; তারপরও আমাদের জেলে নেওয়া হয়। রমজানের মতো তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাসে পুরো সময় রিমান্ডে রাখা হয়েছিল। এই নির্যাতনটা মূলত নেমে আসে সরকারের পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত অবস্থানের কারণে।’
মাওলানা আফেন্দী বলেন, ‘২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশে আসছিলেন, তার এই আসাটা আমরা মেনে নিতে পারছিলাম না। কারণ, তার হাত অসংখ্য মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত। তিনি বাংলাদেশে অতিথি হয়ে আসবেন— এটা আমাদের সহ্য হচ্ছিল না। আমাদের সীমান্তটা সুরক্ষিত নয়। সীমান্তে লাশ পড়ছে, আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না; বরং আমাদের চুষে খাচ্ছে। আগ্রাসন-আধিপত্যবাদ—সব তারা চালাচ্ছে। এরকম দমন-পীড়ন, ভারতীয় মুসলমানদের নির্যাতন—এসব কারণে আমরা মোদির বিরুদ্ধে সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। সরকার সেটি হজম করতে পারেনি। ফলে আমাদের জেলে নেয়।’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘আওয়ামী আমলে আলেম নির্যাতন সীমাহীন মাত্রায় পৌঁছেছিল। আলেমদের ধরিয়ে দিতে আমাদের সহযোগিতা চাইত পুলিশ। তা না হলে রাস্তা থেকে কাউকে ধরে এনে জুব্বা-টুপি পরিয়ে দেখানো হতো আমরা হুজুর ধরেছি। কোন থানা কতজনকে ধরেছে, তার প্রতিযোগিতা হত। এটা কী একটি স্বাধীন দেশের চেহারা!’
২০২১ সালে ব্যাপকহারে আলেম-ওলামাদের ধরপাকড়ের ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার হন মাওলানা মঞ্জরুল ইসলাম আফেন্দী। সেদিনকার ভয়াল স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে করোনার সময় মসজিদে জামাত নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণে রমজান মাসের দ্বিতীয় তারাবি পরিবার-সন্তানদের নিয়ে বাসায় আদায় করছিলাম। ১৬ রাকাত নামাজ যখন শেষ হয়, তখন ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডের বাসায় কলিংবেলের আওয়াজ পাই। সালাম ফিরিয়ে দরজা খুলতেই দেখি প্রায় দুই গাড়ি মানুষ। দুটি হায়েস গাড়িতে শার্ট-প্যান্ট পরা একদল লোক এসে আমার বাসায় হুট করে ঢুকে পড়ে।
কোনোরকম আলাপ নেই, ভদ্রতা নেই, কোনোরকম সৌজন্যের লেশ তাদের ব্যবহারে দেখতে পাইনি। বাসায় ঢুকেই আমার বেডরুমে যায় পুলিশ। আমি খুব রেগে গেলাম, আমার বাসায় অনুমতি ছাড়া ঢুকে পড়েছেন কেন? বুঝলাম, সম্ভবত আমাকে ধরতে এসেছে, তাহলে এ ধরনের আচরণ কেন? আমার স্ত্রীকে তো আমার ভাইও কখনো দেখেনি। সেই পর্দানশীন স্ত্রীর বেডরুমে চলে যায় পুলিশ। সব মোবাইল ফোন তারা নিয়ে নেয়। তারপর আমাকে বলে রেডি হন। আমি বললাম যাব; কিন্তু এ আচরণ কেন? অসভ্য এক জাতির মতো আচরণ। সেই অসভ্যতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তারা বলে, বের হন, বের হন। নামাজটা পড়তে চাইলেও সে সুযোগ দেয়নি। বলে বের হন।’
এভাবে মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে আটক করে ডিবিতে নিয়ে রাত এক-দেড়টা পর্যন্ত জেরা করে পুলিশ। সেই রাতের বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন হেরোইনসেবীদের ধরে যেখানে রাখা হয়, সেই লকআপে তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কী গিজগিজ অবস্থা! গরম। রাত ১টা পর্যন্ত জেরা করে সেখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। রমজান মাসে একটু নামাজের সুযোগ দিল না, সেখানে জায়নামাজ বিছানোর মতো জায়গাও ছিল না। একটু সাহরি খেতে পারছিলাম না। পরদিন কোর্টে উঠিয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করল। একটানা ২৬ দিন রিমান্ডে রাখল। মামলার পর মামলা দেওয়া হলো।
একটা মানুষকে নির্যাতন করতে তো একটা মামলাই যথেষ্ট। আমার নামে মামলা দিতে দিতে ১০টা পর্যন্ত দিয়ে দিল। এক মামলায় রিমান্ড শেষে আরেক মামলা দেওয়া হয়। আফেন্দী জানান, রিমান্ডে অনাকাঙ্ক্ষিত, বাস্তবতাবিবর্জিত নানারকম প্রশ্ন করা হয়। যে বিষয়গুলোর সঙ্গে আমাদের কোনোই সম্পৃক্ততা নেই—সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন করে। প্রশ্নের ধরনগুলো দেখলে মনে হয় তারা মেন্টাল টর্চার করছে। অনেককে শারীরিক নির্যাতনও করেছে বলে শুনেছি। আমাকে শারীরিক নির্যাতন না করলেও মেন্টাল টর্চার করেছে। রিমান্ডে থাকা ও খাওয়ার কষ্ট ছিল বেশি।
আফেন্দী বলেন, ‘কারাগারের ভেতরে নেওয়ার পর যা দেখেছি, মানসিক যন্ত্রণায় এতদিন তা কাউকে বলিনি। চুরি, খুন, ছিনতাই, নারী নির্যাতনের দায়ে যারা জেলে গেছে, তারাও সাংবিধানিক বলে জেলে ফোনে কথোপকথনের সুযোগ পেত। সপ্তাহে একবার মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হতো তাদের। কিন্তু আমরা এতটাই দুর্ধর্ষ আসামি ছিলাম যে, কেরানীগঞ্জ থেকে কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারে রাখা হয়। সেখানে তাও আবার ২৪ ঘণ্টা লকআপে বন্দি। মাসের পর মাস চলে গেলেও পরিবারের সঙ্গে একবার ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
আমি জানতে পারিনি যে, থাইরয়েড ও ক্যানসারের রোগী আমার স্ত্রী কেমন আছে। ১২ মাস যার চিকিৎসা লাগে, ঘরে আমি সেরকম টাকাও রেখে যেতে পারিনি। তার চিকিৎসার কী অবস্থা? মানুষ যখন পাথর হয়ে যায়, তখন তার পক্ষে এরকম নির্যাতন চালানো সম্ভব হয়। সুস্থ কোনো মানুষ এমন সীমাহীন নির্যাতন চালাতে পারে বলে আমি মনে করি না।’
মোট ১০টি মামলায় জড়ানো হয় মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে। সবগুলো সন্ত্রাসের ধারায় করা মামলা। আগুন দেওয়া, কোরআন পোড়ানোর মামলা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি কোরআনের হাফেজ। আট বছর বয়সে আমি হাফেজ হয়েছি। অথচ আমরাই নাকি কোরআন পোড়াই, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইগুলো পোড়াই, বাসে অগ্নিসংযোগ করেছি। এ ধরনের মামলা দেওয়া হয় আমার বিরুদ্ধে। আইনগতভাবেই সব মামলায় জামিন পেয়েছি। লম্বা সময় জেলে কাটানোর পর একটি একটি করে মামলায় জামিন দেওয়া শুরু হয়। এভাবে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস কেটে যায় কারাগারে।’ তিনি জানান, কারামুক্তির পরও তার ওপর আওয়ামী প্রশাসনের যথেষ্ট চাপ ছিল। সরকারবিরোধী কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না, তাদের পরামর্শমতো চলতে হবে। তাদের পরামর্শের বাইরে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি দেওয়া যাবে না—এ রকম প্রেশার ছিল তার ওপর।
মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘একটা মানুষকে ধ্বংস করার জন্য ছয় মাস-এক বছর জেলে রাখাই যথেষ্ট। জেলে রাখলে পরিবারটা যাতে ভ্যানিস হয়ে যায়। আমারও যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। আমার স্ত্রীর চিকিৎসায় সমস্যা হয়েছে। এতে শারীরিকভাবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত না হওয়ায় মানসিকভাবেও সে অনেক কষ্ট পেয়েছে। পরিবারের ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।’
নির্যাতিত এই আলেম বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের সময় একটি ট্রাম্পকার্ড ছিল ‘জঙ্গি’। জঙ্গি তকমা লাগিয়ে ইসলামকে কলুষিত করা, ইসলামের বোধ-বিশ্বাসের জায়গায় যেন আঘাতপ্রাপ্ত হয়, ইসলামকে দেশ-জাতির সামনে বীভৎসরূপে উপস্থাপন করা, কয়েকজনকে নাটক সাজিয়ে জঙ্গি ধরা, রেড অ্যালার্ট জারি করে জঙ্গি ধরা—এসব কর্মকাণ্ড চালায় শেখ হাসিনার সরকার। এসব করে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে দেখানো হয় যে, আমি ছাড়া আর কারও পক্ষে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’
আফেন্দী বলেন, ‘ইসলামের মতো শান্তি-সম্প্রীতির ধর্ম আর নেই। এখানে উগ্রতার কোনো স্থান নেই। আমরা শান্তির পথে থাকি। সম্প্রীতির কথা বলি। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে আজীবন সংগ্রাম করি। অথচ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অসাম্প্রদায়িক হিসেবে আখ্যায়িত করে নানাভাবে নির্যাতন চালায় বিগত আওয়ামী সরকার।’
এডি/এইচ আর

মাত্র আট বছর বয়সে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হন মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। দেশের বিভিন্ন কওমি মাদরাসার পাশাপাশি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে লেখাপড়া করেছেন। শায়খুল হাদিস, ধর্মীয় বক্তা, খতিব ও ইসলামি রাজনীতিক হিসেবে বেশ পরিচিত তিনি। অথচ এই আলেমকেই ‘কোরআন পোড়ানো’র মিথ্যা অভিযোগের মামলায় জেলে নেয় পতিত আওয়ামী সরকার। পরে সন্ত্রাসের বিভিন্ন ধারায় ১০টি মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস কারারুদ্ধ করে রাখে। এ সময় ২৬ দিন রিমান্ডের নামে পবিত্র রমজানে চরম নির্যাতনের মুখোমুখি হন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আফেন্দী।
শুধু গ্রেপ্তার-নির্যাতনই নয়, নিজের হাতে গড়া জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিসের পদও কেড়ে নেন পতিত আওয়ামী লীগ নেতারা। একইসঙ্গে বাদ দেওয়া হয় ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতিবের দীর্ঘ ২২ বছরের দায়িত্ব থেকেও।
এভাবেই বিগত আওয়ামী শাসনামলে দেশের আলেম-ওলামাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন সীমাহীন মাত্রায় পৌঁছেছিল বলে মনে করেন অন্যতম ভুক্তভোগী মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। দৈনিক আমার দেশকে তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করিনি, জেলে যাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করিনি, চুরি-ডাকাতি করিনি; তারপরও আমাদের জেলে নেওয়া হয়। রমজানের মতো তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাসে পুরো সময় রিমান্ডে রাখা হয়েছিল। এই নির্যাতনটা মূলত নেমে আসে সরকারের পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত অবস্থানের কারণে।’
মাওলানা আফেন্দী বলেন, ‘২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশে আসছিলেন, তার এই আসাটা আমরা মেনে নিতে পারছিলাম না। কারণ, তার হাত অসংখ্য মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত। তিনি বাংলাদেশে অতিথি হয়ে আসবেন— এটা আমাদের সহ্য হচ্ছিল না। আমাদের সীমান্তটা সুরক্ষিত নয়। সীমান্তে লাশ পড়ছে, আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না; বরং আমাদের চুষে খাচ্ছে। আগ্রাসন-আধিপত্যবাদ—সব তারা চালাচ্ছে। এরকম দমন-পীড়ন, ভারতীয় মুসলমানদের নির্যাতন—এসব কারণে আমরা মোদির বিরুদ্ধে সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। সরকার সেটি হজম করতে পারেনি। ফলে আমাদের জেলে নেয়।’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘আওয়ামী আমলে আলেম নির্যাতন সীমাহীন মাত্রায় পৌঁছেছিল। আলেমদের ধরিয়ে দিতে আমাদের সহযোগিতা চাইত পুলিশ। তা না হলে রাস্তা থেকে কাউকে ধরে এনে জুব্বা-টুপি পরিয়ে দেখানো হতো আমরা হুজুর ধরেছি। কোন থানা কতজনকে ধরেছে, তার প্রতিযোগিতা হত। এটা কী একটি স্বাধীন দেশের চেহারা!’
২০২১ সালে ব্যাপকহারে আলেম-ওলামাদের ধরপাকড়ের ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার হন মাওলানা মঞ্জরুল ইসলাম আফেন্দী। সেদিনকার ভয়াল স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে করোনার সময় মসজিদে জামাত নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণে রমজান মাসের দ্বিতীয় তারাবি পরিবার-সন্তানদের নিয়ে বাসায় আদায় করছিলাম। ১৬ রাকাত নামাজ যখন শেষ হয়, তখন ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডের বাসায় কলিংবেলের আওয়াজ পাই। সালাম ফিরিয়ে দরজা খুলতেই দেখি প্রায় দুই গাড়ি মানুষ। দুটি হায়েস গাড়িতে শার্ট-প্যান্ট পরা একদল লোক এসে আমার বাসায় হুট করে ঢুকে পড়ে।
কোনোরকম আলাপ নেই, ভদ্রতা নেই, কোনোরকম সৌজন্যের লেশ তাদের ব্যবহারে দেখতে পাইনি। বাসায় ঢুকেই আমার বেডরুমে যায় পুলিশ। আমি খুব রেগে গেলাম, আমার বাসায় অনুমতি ছাড়া ঢুকে পড়েছেন কেন? বুঝলাম, সম্ভবত আমাকে ধরতে এসেছে, তাহলে এ ধরনের আচরণ কেন? আমার স্ত্রীকে তো আমার ভাইও কখনো দেখেনি। সেই পর্দানশীন স্ত্রীর বেডরুমে চলে যায় পুলিশ। সব মোবাইল ফোন তারা নিয়ে নেয়। তারপর আমাকে বলে রেডি হন। আমি বললাম যাব; কিন্তু এ আচরণ কেন? অসভ্য এক জাতির মতো আচরণ। সেই অসভ্যতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তারা বলে, বের হন, বের হন। নামাজটা পড়তে চাইলেও সে সুযোগ দেয়নি। বলে বের হন।’
এভাবে মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে আটক করে ডিবিতে নিয়ে রাত এক-দেড়টা পর্যন্ত জেরা করে পুলিশ। সেই রাতের বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন হেরোইনসেবীদের ধরে যেখানে রাখা হয়, সেই লকআপে তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কী গিজগিজ অবস্থা! গরম। রাত ১টা পর্যন্ত জেরা করে সেখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। রমজান মাসে একটু নামাজের সুযোগ দিল না, সেখানে জায়নামাজ বিছানোর মতো জায়গাও ছিল না। একটু সাহরি খেতে পারছিলাম না। পরদিন কোর্টে উঠিয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করল। একটানা ২৬ দিন রিমান্ডে রাখল। মামলার পর মামলা দেওয়া হলো।
একটা মানুষকে নির্যাতন করতে তো একটা মামলাই যথেষ্ট। আমার নামে মামলা দিতে দিতে ১০টা পর্যন্ত দিয়ে দিল। এক মামলায় রিমান্ড শেষে আরেক মামলা দেওয়া হয়। আফেন্দী জানান, রিমান্ডে অনাকাঙ্ক্ষিত, বাস্তবতাবিবর্জিত নানারকম প্রশ্ন করা হয়। যে বিষয়গুলোর সঙ্গে আমাদের কোনোই সম্পৃক্ততা নেই—সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন করে। প্রশ্নের ধরনগুলো দেখলে মনে হয় তারা মেন্টাল টর্চার করছে। অনেককে শারীরিক নির্যাতনও করেছে বলে শুনেছি। আমাকে শারীরিক নির্যাতন না করলেও মেন্টাল টর্চার করেছে। রিমান্ডে থাকা ও খাওয়ার কষ্ট ছিল বেশি।
আফেন্দী বলেন, ‘কারাগারের ভেতরে নেওয়ার পর যা দেখেছি, মানসিক যন্ত্রণায় এতদিন তা কাউকে বলিনি। চুরি, খুন, ছিনতাই, নারী নির্যাতনের দায়ে যারা জেলে গেছে, তারাও সাংবিধানিক বলে জেলে ফোনে কথোপকথনের সুযোগ পেত। সপ্তাহে একবার মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হতো তাদের। কিন্তু আমরা এতটাই দুর্ধর্ষ আসামি ছিলাম যে, কেরানীগঞ্জ থেকে কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারে রাখা হয়। সেখানে তাও আবার ২৪ ঘণ্টা লকআপে বন্দি। মাসের পর মাস চলে গেলেও পরিবারের সঙ্গে একবার ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
আমি জানতে পারিনি যে, থাইরয়েড ও ক্যানসারের রোগী আমার স্ত্রী কেমন আছে। ১২ মাস যার চিকিৎসা লাগে, ঘরে আমি সেরকম টাকাও রেখে যেতে পারিনি। তার চিকিৎসার কী অবস্থা? মানুষ যখন পাথর হয়ে যায়, তখন তার পক্ষে এরকম নির্যাতন চালানো সম্ভব হয়। সুস্থ কোনো মানুষ এমন সীমাহীন নির্যাতন চালাতে পারে বলে আমি মনে করি না।’
মোট ১০টি মামলায় জড়ানো হয় মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে। সবগুলো সন্ত্রাসের ধারায় করা মামলা। আগুন দেওয়া, কোরআন পোড়ানোর মামলা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি কোরআনের হাফেজ। আট বছর বয়সে আমি হাফেজ হয়েছি। অথচ আমরাই নাকি কোরআন পোড়াই, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইগুলো পোড়াই, বাসে অগ্নিসংযোগ করেছি। এ ধরনের মামলা দেওয়া হয় আমার বিরুদ্ধে। আইনগতভাবেই সব মামলায় জামিন পেয়েছি। লম্বা সময় জেলে কাটানোর পর একটি একটি করে মামলায় জামিন দেওয়া শুরু হয়। এভাবে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস কেটে যায় কারাগারে।’ তিনি জানান, কারামুক্তির পরও তার ওপর আওয়ামী প্রশাসনের যথেষ্ট চাপ ছিল। সরকারবিরোধী কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না, তাদের পরামর্শমতো চলতে হবে। তাদের পরামর্শের বাইরে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি দেওয়া যাবে না—এ রকম প্রেশার ছিল তার ওপর।
মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘একটা মানুষকে ধ্বংস করার জন্য ছয় মাস-এক বছর জেলে রাখাই যথেষ্ট। জেলে রাখলে পরিবারটা যাতে ভ্যানিস হয়ে যায়। আমারও যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। আমার স্ত্রীর চিকিৎসায় সমস্যা হয়েছে। এতে শারীরিকভাবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত না হওয়ায় মানসিকভাবেও সে অনেক কষ্ট পেয়েছে। পরিবারের ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।’
নির্যাতিত এই আলেম বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের সময় একটি ট্রাম্পকার্ড ছিল ‘জঙ্গি’। জঙ্গি তকমা লাগিয়ে ইসলামকে কলুষিত করা, ইসলামের বোধ-বিশ্বাসের জায়গায় যেন আঘাতপ্রাপ্ত হয়, ইসলামকে দেশ-জাতির সামনে বীভৎসরূপে উপস্থাপন করা, কয়েকজনকে নাটক সাজিয়ে জঙ্গি ধরা, রেড অ্যালার্ট জারি করে জঙ্গি ধরা—এসব কর্মকাণ্ড চালায় শেখ হাসিনার সরকার। এসব করে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে দেখানো হয় যে, আমি ছাড়া আর কারও পক্ষে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’
আফেন্দী বলেন, ‘ইসলামের মতো শান্তি-সম্প্রীতির ধর্ম আর নেই। এখানে উগ্রতার কোনো স্থান নেই। আমরা শান্তির পথে থাকি। সম্প্রীতির কথা বলি। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে আজীবন সংগ্রাম করি। অথচ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অসাম্প্রদায়িক হিসেবে আখ্যায়িত করে নানাভাবে নির্যাতন চালায় বিগত আওয়ামী সরকার।’
এডি/এইচ আর

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়নের সাবেক তিনবারের সফল চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন তালুকদার (বেনু মিয়া) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
২ দিন আগে
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতির বিউবো শাখার সাবেক সম্পাদক প্রকৌশলী এ. জে. এম. লুৎফে রব্বানী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
৫ দিন আগে
বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের (এফইজেবি) নতুন নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে। শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগঠনের এক বিশেষ সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠিত হয়।
৩০ আগস্ট ২০২৫
মানবিক সেবার অংশ হিসেবে ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৬৬ টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে আল-মারকাজুল ইসলামী (এএমআই)। এতে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পর্যায়ক্রমে সহায়তা পাবে। এর আগে সংস্থাটি গত সপ্তাহে ৫০০ রোহিঙ্গা শিশুর সুন্নতে খতনা সম্পন্ন করেছে।
২৩ আগস্ট ২০২৫