বদলির আদেশও মানছেন না

শ্রমিক লীগ থেকে রাতারাতি শ্রমিক দল নেতা

ইমদাদ হোসাইন
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১০: ৪৯

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী শ্রমিক লীগের হয়ে নির্বাচন করেছিলেন আলমগীর ও মোখলেস। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাতারাতি শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সরাসরি মদতে তারা হয়ে ওঠেন শ্রমিক দলের নেতা।

সিবিএ নির্বাচনে লড়েন শ্রমিক দলের হয়েই। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে চিঠি দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। উল্টো শ্রমিক দলের নেতারাই বেকায়দায়। সেখানেও জাদুর কাঠির বলে নির্বাচিত হন তারা। তবে এই দুই নেতার দাবি তারা আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের শিকার।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের এই দুই সক্রিয় সদস্য আওয়ামী লীগের আমলে করা অপকর্ম মুছতে রাতারাতি শ্রমিক দলের নেতা হয়ে যান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিসিআইসির জাতীয়তাবাদী কর্মচারী দলের নির্বাচনের আগে তাদের প্রশ্রয় না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর চিঠি দেন বিসিআইসির কর্মচারীরা।

চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, শ্রমিক লীগের এ নেতাদের লক্ষ্য হলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করা। এ ধরনের স্বার্থান্বেষী, দুর্নীতিপরায়ণ এবং সুবিধাবাদী শ্রমিক নেতারা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে আলমগীর-মোখলেস পরিষদ নামে পরিচিত আওয়ামী লীগপন্থি শ্রমিক নেতারা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলে স্থানের বিষয়টি জাতীয়তাবাদী আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আলমগীর আওয়ামী লীগ আমল থেকেই ছিলেন বেপরোয়া। ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিসিআইসিতে হট্টগোল ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পেরিপ্রেক্ষিতে মোখলেস ও আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে শাস্তিস্বরূপ তাকে বদলি করা হয় সিলেটের ছাতক সিমেন্ট কারখানায়। ২০১৮ সালের ২৩ মে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বিসিআইসির ঢাকা কার্যালয় থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে তিনি যোগ দেননি। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বদলি আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্টে অর্ডার দেয়। স্টে অর্ডারের পরিপ্রেক্ষিতে এখনো ঢাকা অফিসে বহাল তিনি। যদিও সেই বদলির আদেশ এখনো বহাল আছে। যে কোনো সময় বদলি আদেশ কার্যকর হতে পারে।

শ্রমিক লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন আমার দেশকে বলেন, আমার চাকরি জীবনের ১৪ বছরে ১২ বার বদলি হয়েছি। আমাকে বরং আওয়ামী লীগই অত্যাচার করেছে। আমার বিসিআইসি কলোনির বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালে। তাকে আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মচারী হিসেবেও হেনস্তা করা হয়েছে বলেও জানান আলমগীর হোসেন।

২০২০ সালেও মোখলেস ও আলমগীর ছিলেন বেপরোয়া। ওই বছরের নির্বাচনের দাবিতে ২ মার্চ মোখলেসুর রহমান ও আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি দল বিভিন্ন ফ্লোরে একত্রিত হয়ে নির্বাহী কার্যালয়ে প্রবেশ করে। সরকারি বিধির বাইরে গিয়ে স্লোগানও দেয় তারা। হট্টগোল ও স্লোগানের কারণে তাদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলাও হয়।

ওই সময়ে শ্রমিক লীগের অধীনে নির্বাচন করার পোস্টারগুলোতে তার ছবি দেখানো হলে আলমগীর হোসেন বলেন, সে সময় ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগের লোকজন আমাকে ফাঁসাতে পোস্টারে ছবি দিয়েছে। আমি শ্রমিক লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না।

জানতে চাইলে সিবিএর এক নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে এমন কোনো অপকর্ম নেই আলমগীর-মোখলেস পরিষদ করেনি। এখন অপকর্ম ঢাকতেই তিনি বিএনপির খোলসে গিয়েছেন। তাদের অতীত জেনেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা তাকেই নেতৃত্বে এনেছেন। আর ২৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয়তাবাদী কর্মচারী দলের (কোড-১৩৬৫) নির্বাচন ছিল সম্পূর্ণ সাজানো।

বিসিআইসির কর্মচারীরা বলছেন, শ্রমিক লীগ নেতা আলমগীরের শ্রমিক দলের নেতা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছেন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন।

২০১৮ সালে আলমগীর হোসেনকে সিলেট ছাতক সিমেন্ট কারখানায় বদলি করা হয়। এখনো হাইকোর্টের স্টে অর্ডারের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় বহাল তিনি। এখন শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের হস্তক্ষেপের কারণে ঢাকাতেই বহাল আছেন আলমগীর। যদিও তার চাকরির অবস্থান হওয়ার কথা সিলেটে।

অভিযুক্ত আলমগীর বলছেন, গত ২১ আগস্ট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে তারা দেখা করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে ফুল দিয়ে তারা বরণ করেছেন। ফলে আনোয়ার হোসেনও বিসিআইসিতে এসে তাকে ভরসা দিয়ে গেছেন।

মোখলেছুর রহমানও বলছেন, ২০০৪ সালেও তিনি জাতীয়তাবাদী কর্মচারী দলের সদস্য ছিলেন।

২০২০ সালে সিবিএ নির্বাচনে বিসিআইসি কর্মচারী লীগের নির্বাচনে মোখলেছুর রহমান ছিলেন কার্যকরি সভাপতি আর আলমগীর হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ সংগঠনটি আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত। শ্রমিক লীগের মোখলেস-আলমগীর পরিষদের সেসব ব্যানার-ফেস্টুন এখনো আছে। কিন্তু খোদ কর্মচারী লীগের নেতা হওয়ার পরও শ্রমিক দল তাদেরই নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, বড় কোনো অপরাধ না থাকলে অপরাধের অভিযোগ না থাকলে আমরা কাউকে ফেরাই না।

এর আগে ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মিরপুর বিসিআইসি কলোনিতে বিশৃঙ্খলার অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিসিআইসি। বিসিআইসি হাউজিং কলোনির সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখার জন্য এবং কলোনির নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য কলোনির বাসিন্দাদের বহিরাগত লোকজন নিয়ে মিছিল মিটিংসহ জোটবদ্ধ হয়ে আড্ডা দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও আছে তাতে।

বিজ্ঞপ্তির ওই আদেশ অমান্য করে আলমগীর হোসেন কর্মচারী ক্লাবের সামনে সভা সমাবেশ ও বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। তাছাড়া কলোনির গেটে দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এটি বিসিআইসি কর্মচারী প্রবিধানমালা, ১৯৮৮ অনুযায়ী আচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত। ওই সময় তাকে অভিযুক্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত