আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

হাদিকে নিয়ে সিইসির বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইলেন জামায়াত আমির

স্টাফ রিপোর্টার
হাদিকে নিয়ে সিইসির বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাইলেন জামায়াত আমির

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, আন্দোলন ও বিপ্লবের প্রতীক, বিপ্লবীদের মুখপাত্র ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যার উদ্দেশ্যে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। আমরা তার জীবন নিয়ে দারুনভাবে শঙ্কিত। আল্লাহর কাছে দোয়া করি-তাকে আবার বিপ্লবী হিসেবে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এই কাপুরুষিত আক্রমণে গোটা দেশবাসী দারুনভাবে ব্যথিত। তারা সবাই সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য আমাদেরকে আহত করেছে। জাতি তার এই বক্তব্য মোটেই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। অথচ তিনি একটি নিরপেক্ষ জায়গায় বসে আছেন। আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করবো আপনার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে। যাদের মনে এই বক্তব্য দিয়ে দু:খ সৃষ্টি করেছেন-এই দু:খ দুর করার দায়িত্ব আপনার। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে, স্পর্শকাতর যে জায়গায় আপনি দায়িত্ব পালন করছেন, তার জন্য আপনি উপযুক্ত।

জামায়াত আমির আরো বলেন, দেরি না করে তিনি যেন তার বক্তব্যটি জাতির সামনে স্পষ্ট করেন। তাহলে জাতির দু:খ পেয়ে থাকলে তা দুর হবে, না হয় জাতি তার সিদ্ধান্ত নেবে। দুইটার যেকোন একটা হবে। আমরা চাই , তিনি সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা আছেন, তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো আচরণ করবেন না। সব জায়গা থেকে আমরা দায়িত্বপূর্ণ আচরণ দেখতে চাই।

সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা‘ছুম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। এছাড়া কেন্দ্রীয় ও মহানগর জামায়াতের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

জামায়াত আমির মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করেন। বিশেষ করে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ, আহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, আমরা বিগত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই করেছি, কিন্তু ফ্যাসিবাদকে তাড়াতে সক্ষম হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া চব্বিশের জুলাইয়ের আন্দোলন ক্রমান্বয়ে সারাদেশে ঢেউ সৃষ্টি করেছিল। এই আন্দোলনে শহীদের সঠিক সংখ্যা আমাদের কাছে নেই। আমাদের যে তথ্য পেয়েছি, প্রকৃত সংখ্যা তারচেয়ে অনেক বেশি।

জামায়াত আমির বলেন, হাদির ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমরা এটাও চাই না যে, তরুণরা মৃত্যুর দুয়ারে চলে যাওয়ার পর সরকার নড়েচড়ে বসবে। বরং এই দু:সাহস যাতে কেউ না দেখাতে পারে, সেজন্য সরকারকে তার দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, আজ অনেকের পদত্যাগ দাবি উঠেছে, আমরা বলবো, পদত্যাগ নয়, দায়িত্ব পালনের যোগ্য-এটাও আপনারা প্রমাণ করুন। প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে মনে রাখবেন-৫ আগস্ট বারবার ফিরে আসবে। কিন্তু এটা আমাদের কামনা নয়। কেন জাতি বারবার রক্ত দেবে। আমাদের কাম্য হলো-একটি ঐক্যবদ্ধ মানবিক দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের বাংলাদেশ। যে তরুণরা বিজয় এনে দিয়েছে, আমরা সেই তরুণদের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দিতে চাই। এজন্যই আজ তরুণ ও বিপ্লবীরা টার্গেট। আমরা সেই দুষ্কৃতিকারীদের বলতে চাই, এভাবে কাপুরুষোচিত হামলা করে দুইএকজন মানুষকে উঠিয়ে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র তোমরা করছো, তোমাদের প্রত্যেকটি বুলেটের আঘাত এ জাতিকে নতুন করে প্রাণ দিবে ইনশাআল্লাহ। অতএব সাবধান, ভাল হয়ে গেলে ভালো, না হলে জাতি তার প্রয়োজনীয় পাওনা সবার কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ।

জামায়াত আমির বলেন, আমরা অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। আমরা জাতিকে বিভক্তও দেখতে চাই না। আমাদের জাতির ওপর বাইরে থেকে এসে কেউ খবরদারি, দাদাগিরি করুক-সেটাও চাই না। এটা আমরা বরদাশত করবো না। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি দেখতে চাই।

তিনি বলেন, ৫৪ বছর আমাদের ভাগ্য চোরাবালিতে হারিয়ে গিয়েছিল। জনগণের ভাগ্যকে তুলে নিয়ে আমরা সামনের দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা এরইমধ্যে ঘোষণা করেছি, বিভক্ত নয়, ঐক্য। হিংসা নয়, ভালবাসা। দুর্নীতি নয়, স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা। অবিচার নয়, সবার জন্য সুবিচার। বেকারত্ব নয়, হাতে হাতে কাজ-এই নিয়েই আমরা প্রিয় জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা আমাদের জাতির প্রতি গভীর আস্থা রাখি। এ পোড় খাওয়া জাতি বিভিন্ন শাসন দেখেছে, এখন জাতি মুখিয়ে আছে নতুন একটি শাসন দেখার জন্য। অতীতের শাসনের ময়লা আবর্জনার পুরানো কাসুন্দি এ জাতি আর দেখতে চায় না। এগুলোকে দুপায়ে মাড়িয়ে সামনের দিকে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। অতীতে জনগণের প্রত্যাশাকে কোনো কিছু দিয়ে চাপা দেওয়া সম্ভব হয়নি, আগামীতেও সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জাতি তার মনজিলে মকসুদে পৌঁছে যাবে ইনশাআল্লাহ। এখানে আমরা কোন আপস করবো ন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে অনেকেই আপস করেছে। জামায়াত আপস করতে অনেক চাপ দেওয়া হয়েছে, ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমামাদের নেতারা হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন, কিন্তু আপসের প্রস্তাবনাকে তারা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবো না। তবে যেখানেই আমরা কল্যাণের সন্ধান পাবো, জড়িয়ে ধরবো।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন