আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

আসন সমঝোতা নিয়ে ব্যস্ত জামায়াতসহ আট দল

রকীবুল হক

আসন সমঝোতা নিয়ে ব্যস্ত জামায়াতসহ আট দল

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আসনপ্রতি একক প্রার্থী চূড়ান্ত করছে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। আসন সমঝোতা নিয়ে পারস্পরিক আলোচনাসহ দফায় দফায় বৈঠক করছেন লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। বেশ কিছু মৌলিক নীতির আলোকে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। শিগগিরই একক প্রার্থী চূড়ান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন।

এদিকে তফসিলের পর নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী প্রকাশ্য প্রচারমূলক কাজ থেকে বিরত রয়েছেন আট দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে নিজ দলীয় ও প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও ঘরোয়া কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন ইস্যুতে যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসন্ন নির্বাচনে সমঝোতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)।

গত ৮ ডিসেম্বর আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক-পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেছিলেন, এখন ভোটকেন্দ্রিক আলোচনা চলবে। আসন নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। প্রার্থী বাছাই ও চূড়ান্তের কাজ শুরু হবে ৯ জানুয়ারি। আশা করি, আমরা ঐকমত্যে পৌঁছে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঠিক করতে পারব। তিনি বলেন, প্রত্যেক আসনে আট দলের পক্ষ থেকে একজন প্রার্থী থাকবে। এটা আমাদের আগেই ঘোষণা ছিল। এখানে কোনো জোটের নাম থাকবে না। দেশপ্রেমিক ও ঐক্যের প্রার্থী হবে।

এ সময় আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এটা একটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম। তবে নির্বাচনটা হবে ‘এক বাক্স’ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ এক আসনে একজনের বেশি প্রার্থী থাকবেন না। শুধু প্রার্থী দেওয়ার বিষয় নয়, আট দলের সমঝোতার প্রার্থী হিসেবে তাদের বিজয়ী করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। কম সময়ের মধ্যেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ করার টার্গেট রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সূত্র মতে, লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৯ ডিসেম্বর থেকেই দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। তার আগে আট দল নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করেছে। কয়েক ক্যাটাগরির প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও খণ্ড খণ্ড মিটিংও হচ্ছে। এরই মধ্যে আসন সমঝোতার কাজ অনেকদূর এগোলেও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। কোন দল কতটি আসনে নির্বাচন করবে তারও কোনো সমন্বিত আলোচনা হয়নি। তবে চলমান আলোচনার ধারাবাহিকতায় শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ জানান, আসন সমঝোতা নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা চলছে। তবে এখনো বলার মতো কিছু হয়নি। গত সোমবার তারা ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে আসন সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জামায়াতসহ আট দলের শীর্ষ নেতারা বসে বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, আসন সমঝোতার বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলছে। প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক ও আলোচনা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকটি নীতিগত বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে, যার যেখানে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাদের এবং সিনিয়র নেতাদের ক্ষেত্রে প্রার্থী করার বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সব আসনে জয়ের টার্গেট নিয়েই আটদলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রার্থীদের বিষয়ে জরিপ করে তিন ক্যাটাগরির তালিকা করেছি। সেগুলো নিয়েই সব দলের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা চলছে।

একক প্রার্থী চূড়ান্তের ক্ষেত্রে সবার ছাড়ের মানসিকতা আছে জানিয়ে গাজী আতাউর রহমান আরো বলেন, এক্ষেত্রে বড় কোনো জটিলতার আশঙ্কা করছি না। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় জামায়াতে ইসলামীকেই বেশি ছাড়ের মানসিকতা থাকতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

লিয়াজোঁ কমিটির এক নেতা বলেন, আট দলের আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে সবার প্রত্যাশা শতভাগ পূরণ হবে না। তবে যেনতেন সমঝোতা হলেও হবে না। একক প্রার্থীর পক্ষে মাঠের কর্মীরা যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে পারেন সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। সমঝোতার বিষয়ে দলগুলোর লিখিত সম্মতি থাকতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আট দলের আসন সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং শিগগিরই তা চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

এদিকে আসন সমঝোতার কাজের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে দলীয় ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতিমূলক ঘরোয়া কার্যক্রম চালাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। তিনি বলেন, আসন সমঝোতার বিষয়টি এখন আলোচনা টেবিলে আছে। তবে কবে নাগাদ এটি চূড়ান্ত হবে তা এখনো ঠিক হয়নি।

এদিকে আসন সমঝোতার কাজের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে দলীয় ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতিমূলক ঘরোয়া কার্যক্রম চালাচ্ছে আট দল। এ বিষয়ে ঢাকা-৬ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ড. আব্দুল মান্নান জানান, এখন প্রচারণার কাজ বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে আমাদের নিজস্ব প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে।

সূত্রমতে, নির্বাচনি আচরণবিধি মানতে প্রার্থীদের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে জামায়াতের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে অনেক স্থানে দলীয় ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে ফেলেছেন সংশ্লিষ্টরা। আট দলের অন্য শরিকরাও একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ

এলাকার খবর

খুঁজুন