কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ রায়ের মাধ্যমে জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, তারা ভোটাধিকার পাবে এবং গণতন্ত্র তার ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
তিনি বলেন, এতে দেশের মানুষ তার ভোটাধিকার নিয়ে আর সন্দেহের মধ্যে থাকবে না। একটি সরকার পাঁচ বছর পর কেয়ারটেকার সরকার গঠন হবে এবং মানুষ ভোট দেয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ পাবে। দীর্ঘ শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সবা মনে সন্তুষ্টি ও স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আরো বলেন, দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি রায় হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর পক্ষপাতদুষ্ট একটি রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিল। ওই রায় দেশের রাজনীতিতে বিতর্ক এবং গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের কারণেই শেখ হাসিনার সরকার স্বৈরাচারী চরিত্র অর্জন করেছিল।
তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে, শুনানি হয়েছে। অনেক পক্ষ সেখানে ছিলেন। সবপক্ষের শুনানি শেষে আদালত কেয়ারটেকার সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আগামী চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন এই কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হবে। সংশোধনসহ অনেকগুলো কাজ আগামী জাতীয় সংসদে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ করে দেশবাসীকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। সুপ্রীমকোর্ট, সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও সব পক্ষকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, অগ্রগতি ও সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার ও নির্বাচনব্যবস্থা বিশেষ করে কেয়ারটেকার সরকার ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, কেয়ারটেকার সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাজনৈতিক দল, সরকার ও নির্বাচনব্যবস্থা-সবকিছুতেই গুণগত পরিবর্তন আসতে হবে। একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িত। হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ফ্যাসিবদ শিক্ষা দিয়েছে যে, ক্ষমতা বা সরকারকে কুক্ষিগত করে একটি নির্দিষ্ট সময় ক্ষমতায় থাকা গেলেও দিনশেষে তাকে পালাতে হয়। সব স্বৈরাচারের জন্য শিক্ষা হলো-দেশ, সরকার, রাষ্ট্র ও জনগণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ব্যক্তির চেয়ে দল, রাষ্ট্র বড়-এই নীতিতে থাকলে আমরা সুন্দর বাংলাদেশ পাব।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা এই সরকারের দায়িত্ব অনেক। বিশেষ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিরপেক্ষ, দেশপ্রেমিক, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া। সরকার এসব কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগের মত কোন পাতানো নির্বাচন হলে দেশবাসীকে নিয়ে তা প্রতিহত করবো।
তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালুর জন্য জাতি অনেক আন্দোলন ও রক্ত ঝরিয়েছে। এর মূল রূপকার জামায়াতের সাবেক আমির মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম। আর ১৯৮৩ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সমাবেশে এই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিটা প্রথম উপস্থাপন করেছিলেন জামায়াতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমির মরহুম আব্বাস আলী খান।
এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ১৯৯১ সালে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। একপর্যায়ে ১৯৯৬ সালে সেই কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানে আসে। পরে ১৯৯৬, ২০০১ সালের নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৮ সালের নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হলেও তাতে পক্ষপাতদুষ্ট ও ম্যাকানিজম করা হয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করে যে তিনটি নির্বাচন দিয়েছে তা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত নির্বাচন। ২০১৪ সালে ১৫৪ আসনে কোন ভোট হয়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনকে রাতের ভোট বলা হয়। ২০২৪ সালে আরেকটি অদ্ভুত নির্বাচন-আমি আর ডামি নির্বাচন হয়। কেয়ারটেকার সরকার না থাকলে বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলে কি হয় তা ওই তিন নির্বাচনে দেখা গেছে। যার ফলশ্রুতিতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী প্রচার সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন উপস্থিত ছিলেন।

