কালো পাথরের কথা

মীর লুৎফুল কবীর সা’দী
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫, ১২: ৪০

পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফের স্থানে প্রবেশ করেই আম্মা তার আজন্মলালিত স্বপ্নের কথাটি উচ্চারণ করলেন। আমি তার আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা ও আপাত বাস্তবতার মাঝে জাজ্বল্যমান বিশাল ব্যবধান লক্ষ করে স্তব্ধ হয়ে রইলাম। কীভাবে সম্ভব? এ কথাই কেবল উঁকি দিল মনের মাঝে। কিন্তু তা প্রকাশ না করে আম্মাকে বললাম, ‘আল্লাহকে ডাকুন, একমাত্র তাঁর কাছেই বলুন।’

বিজ্ঞাপন

আম্মাকে নিয়ে পবিত্র কাবাঘর প্রথম তাওয়াফের শুরুতেই মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) আমার মানসপটে জেগে উঠলেন। পবিত্র কাবাঘর, জমজম, মাকামে ইবরাহিম, সাঈ করার স্থান সব মিলিয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারের একচ্ছত্র উপস্থিতিই আমার সামনে প্রবল হয়ে উঠল। আমি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে রইলাম। তাওয়াফের মাঝে এ চিন্তাই কেবল ঘুরপাক খেতে থাকল—এখানে শুধু হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবার রয়েছে কেন? কী বিশেষ বিশেষত্ব ও মহত্ত্ব তাদের এই উপস্থিতির? প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে হজে এসে কিংবা সারা বছর ওমরা পালনের মধ্য দিয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পবিত্র স্মৃতি প্রত্যক্ষ ও স্পর্শ করার মাঝে অন্তর্নিহিত কোনো শিক্ষা কি এখানে রয়েছে মুসলিমদের জন্য? কী সেই শিক্ষা?

তাওয়াফের শুরুতেই হঠাৎ এমন একটি গভীর দ্ব্যর্থবোধক প্রশ্ন মনের মাঝে উদিত হওয়ায় এবং অন্যদিকে আম্মা তার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ করায় চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে পড়লাম। এ প্রশ্ন ও আম্মার আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব কি না, তার কোনো সঠিক উত্তর আমার জানা নেই। নিজের অজান্তে চৈতন্যের স্তরগুলো পেরিয়ে ক্রমেই যেন গভীর থেকে গভীরে যেতে থাকলাম। বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পুণ্যবান প্রেমিকদের জনসমুদ্রের সঙ্গে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পতঙ্গের মতো মিশে গিয়ে রুকনে ইয়ামানিতে পৌঁছে হৃদয়ের সব আর্তি উজাড় করলাম—‘হে প্রভু! আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।’

হাজরে আসওয়াদে পৌঁছে দূর থেকে হাত তুলে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে প্রথম চক্কর শেষ করে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করলাম। মাকামে ইবরাহিমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পবিত্র পদচিহ্ন প্রত্যক্ষ করে হলাম আবেগে আপ্লুত, অভিভূত। এই অলৌকিক পাথরের ওপর দাঁড়িয়েই হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর সন্তানকে নিয়ে পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছিলেন—‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই কাজ গ্রহণ করো, নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’

তাওয়াফরত অবস্থায় আমার সামনে আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পিত হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনের অধ্যায়গুলো যেন একের পর এক ভেসে উঠতে লাগল। হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর পিতা আজরকে বলেছিলেন—‘আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেন? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখছি।’ (আনআম: ৭৪)।

যৌবনের প্রারম্ভেই ইবরাহিম (আ.) তাঁর প্রকৃত প্রতিপালকের সন্ধানলাভে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। এই বিশ্ব চরাচরে প্রকৃতির মাঝেই কি প্রতিপালক রয়েছেন? তাই রাতের আঁধারে আকাশে তারকা দেখে তিনি বলে উঠলেন—‘এটাই আমার প্রতিপালক।’ কিন্তু যখন তা অস্তমিত হলো তখন তিনি বললেন, ‘যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না।’ চাঁদকে সমুজ্জ্বলরূপে উদিত হতে দেখে তিনি সেটাকে প্রতিপালক মনে করলেন। এরপর সূর্যকে আরো দীপ্তিমান রূপে উদিত হতে দেখে তিনি বলে উঠলেন, ‘এটা আমার প্রতিপালক, এটা সর্ববৃহৎ।’ কিন্তু যখন তাও অস্তমিত হলো, তিনি বললেন, ‘তোমরা যাকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক কর, তার সঙ্গে আমার সংশ্রব নেই।’ তিনি ঘোষণা দিলেন—‘আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (আনআম: ৭৯)

সত্যানুসন্ধানী হজরত ইবরাহিম (আ.) এভাবে তাঁর কাঙ্ক্ষিত প্রতিপালককে খুঁজে পেলেন এবং সম্মানিত বার্তাবাহক নবী হিসেবেও হলেন মনোনীত। সেই সঙ্গে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্রমান্বয়ে একের পর এক পরীক্ষা আসতে লাগল তাঁর ওপর। আল্লাহর মেহেরবানিতে তিনি সাফল্যের সঙ্গে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে থাকলেন। অসীম সাহসিকতার সঙ্গে আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করার ফলে তাকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হলো। আল্লাহ তায়ালার এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আল্লাহ ঘোষণা দিলেন, ‘হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্য আরামদায়ক শীতল হয়ে যাও।’

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন তিনি একটি সুসন্তান উপহার পেলেন, তখন আবার আল্লাহর কাছ থেকে হুকুম এলো প্রাণাধিক প্রিয় এই সন্তানকে জবেহ করার। উহ! কী ভীষণ পরীক্ষা! আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুগ্রহে হজরত ইবরাহিম (আ.) এই ভয়ানক পরীক্ষাতেও সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেন। সেইসঙ্গে সূচিত হলো ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।

আম্মার হাত ধরে পবিত্র কাবাঘরের চারদিকে তাওয়াফ করছি আর একের পর এক হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোয় বিস্ময়ে বিমোহিত হচ্ছি। হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে বিরান মরুপ্রান্তরে কাবাঘরের পাশে রেখে চলে গেলেন। বিবি হাজেরা (আ.) পানির সন্ধানে ছোটাছুটি করছেন সাফা ও মারওয়া দুই পাহাড়ের মাঝে। বিবি হাজেরা শিশুপুত্র ইসমাইলের দিকে চেয়ে ছুটছেন একবার সাফা থেকে মারওয়া পাহাড়ে, আবার মারওয়া থেকে সাফা পাহাড়ে। শিশুপুত্রের পানে চেয়ে তিনি দুই পাহাড় অতিক্রম করছেন। কিন্তু দুই পাহাড়ের সংযোগস্থলটি অতিক্রম করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। সেসময় তাঁর শিশুপুত্রের দিকে তাকানোর আর উপায় নেই। তাই দ্রুত দৌড়ে এ স্থানটুকু অতিক্রম করছেন তিনি। আজও আল্লাহর নির্দেশে হাজিরা সাফা মারওয়ার মাঝে দৌড়ে এই মধ্যবর্তী পথটুকু অতিক্রম করেন। বিবি হাজেরা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার অতিক্রম করেও যখন পানির চিহ্নটুকু দেখতে না পেয়ে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে এলেন শিশুপুত্র ইসমাইলের কাছে, তখন এক অলৌকিক দৃশ্য দেখে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন। তাঁর শিশুপুত্রের পায়ের আঘাতে মাটির বুক চিরে উথলে আসছে বহু কাঙ্ক্ষিত, বহু প্রার্থিত পানির ঝরনাধারা। তিনি এ পানি আটকাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, বললেন—‘জমজম।’ সুপেয় পানির ঝরনাধারা সেই জমজম থেকে আজও পানির ফল্গুধারা অব্যাহত আছে।

পবিত্র কাবাকে ছয়বার চক্কর দেওয়া আমাদের শেষ হলো। আর মাত্র একবার। এর পরই আমাদের তাওয়াফ শেষ হবে এবং মাকামে ইবরাহিমের পেছনে গিয়ে দু’রাকাত সালাত আদায় করব। আম্মা আবারও তার আকাঙ্ক্ষার কথা বললেন, ‘বাবা, আমি হাজরে আসওয়াদ চুমো দিতে চাই।’ এটা যে কতখানি অসম্ভব এবং অবাস্তব কথা, তা আমি খুব ভালো করেই বুঝি। হজ বা ওমরা করতে আসা নারী-পুরুষ মাত্রই তা উপলব্ধি করতে পারেন। তবে আল্লাহর অসীম মেহেরবানিতে আমি এরই মধ্যে হাজরে আসওয়াদ চুমো দেওয়ার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছি। সেই সৌভাগ্যের হাত ধরেই কি আম্মার এই আকুতি? আমি আম্মাকে ‘না’ বলতে পারলাম না। পারলাম না এই আপাত অসম্ভবের কথা বলে আম্মাকে হতাশায় নিমজ্জিত করতে। আর মাত্র একবার প্রদক্ষিণ করলেই আমাদের তাওয়াফ শেষ হবে। প্রতি মুহূর্তেই মনের মাঝে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আম্মার আকুতির কথা, অসম্ভব আকাঙ্ক্ষার কথা। আমি আমার অসহায়ত্বের কথা আল্লাহকে বললাম; বললাম, দূর-দূরান্ত থেকে আসা তাঁর এক বান্দির অসম্ভব তীব্র এক আকাঙ্ক্ষার কথা। আমি সম্পূর্ণ অসহায়, নিরুপায়! গভীর সমুদ্রের মাঝে একটি কেন্দ্রে এসে পানি যেমন ঘুরপাক খেতে খেতে ঘূর্ণি তৈরি করে, তেমনি এই বিশাল জনসমুদ্র যেন কেন্দ্রীভূত হয়েছে হাজরে আসওয়াদকে ঘিরে। কার সাধ্য এই প্রচণ্ড ঘূর্ণির মাঝে মুহূর্তকাল টিকে থাকে? তাওয়াফের শেষ প্রান্তে এসে গেছি। একটু পরেই রুকনে ইয়ামানিতে এসে পৌঁছব। এর পরই তো সেই বেহেশতি পাথর হাজরে আসওয়াদ। আদি পিতা হজরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে এই পবিত্র পাথরটি নিয়ে এসেছিলেন, যে বেহেশতি পাথরে পবিত্র স্পর্শের চিহ্ন রয়েছে হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে প্রিয় নবী শেষ রাসুল মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রিয় সাহাবিবৃন্দ, তাবেই, তাবে তাবেই, ইমাম, ফকিহ, আউলিয়া কেরাম, বুজুর্গানেদিনসহ বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে ছুটে আসা সৌভাগ্যবান ও পুণ্যবানদের ওষ্ঠের স্পর্শ অঙ্কিত রয়েছে এই কৃষ্ণপাথরে।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত লাভের আগে এই পাথরকে ঘিরেই চরম বিভেদ দেখা গেল গোত্রে গোত্রে। পবিত্র কাবাঘর মেরামতের পর কে এই পাথর নির্দিষ্ট স্থলে বসাবে, তা নিয়ে চরম গোলযোগ দেখা দিল। অবশেষে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি প্রস্তাব রাখলেন, কাল প্রত্যুষে প্রথম যিনি কাবাঘরে প্রবেশ করবেন, তিনিই এর সমাধান দেবেন। সবাই এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন। সেইসঙ্গে আপাতত গোলমাল মিটে গেল। এখন প্রতীক্ষার পালা! কে হবেন সেই ব্যক্তি যিনি এমন একটি জটিল সমস্যার সমাধান দেবেন, যা আবার হবে সবার মনঃপূত! প্রত্যুষে প্রথম একজন কাবাঘরে এলেন। সবাই একবাক্যে বলে উঠলেন, এই কঠিন সমস্যার সমাধান কেবল তিনিই দিতে পারেন। তিনি সবার প্রিয় আস্থাভাজন বিশ্বাসী ‘আল-আমিন’ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সা.)। তিনি এসে একটি চাদর মাটিতে বিছিয়ে দিলেন। হাজরে আসওয়াদকে চাদরের ওপর রাখলেন। সব গোত্রপতিকে বললেন, চাদরের প্রান্ত ধরে নির্দিষ্ট স্থানে পাথরটি নিয়ে যেতে। নির্দিষ্ট স্থানে এনে তিনি নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদকে যথাস্থানে রাখলেন। এর মাঝেই নবুওতের পূর্ণতার ইঙ্গিতটি যেন নবুওয়াত লাভের আগেই তিনি পেয়ে গেলেন। আর সব গোত্রই খুশি হলো এই মহান কাজে শরিক হতে পেরে।

তাওয়াফের শেষ প্রান্তে এসে রুকনে ইয়ামানিতে পৌঁছতেই অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য দেখে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলাম। হাজরে আসওয়াদকে ঘিরে এখন তীব্র জনস্রোত তো দূরের কথা, এটি যেন জনমানবশূন্য কোনো এক বিরান প্রান্তরে একাকী পড়ে আছে। এ রকম দৃশ্য অবিশ্বাস্যই বটে! কী এর কারণ?

পবিত্র কাবাঘরের কোনো না কোনো প্রান্তে কিছুক্ষণ পরপরই ধোয়ামোছার কাজ চলতে থাকে। ফিতা দিয়ে একটি এলাকা ঘিরে নিয়ে দ্রুত তা ধুয়েমুছে আবার ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আমাদের শেষ তাওয়াফের সময় এই ধোয়ামোছার কাজ চলছে হাজরে আসওয়াদকে ঘিরে। যতক্ষণ এই কাজ চলতে থাকে, ততক্ষণ এর ভেতর কারো প্রবেশ নিষেধ। ফলে হাজরে আসওয়াদকে ঘিরে যেখানে মৌমাছির চাকের চেয়েও ঘন হয়ে মাথাগুলো গুঞ্জরিত হতে থাকে, তা এখন সাময়িকভাবে পুরোপুরি মুক্ত।

আমি আম্মাকে ফিতার মধ্যে ঠেলে দিয়ে বললাম, হাজরে আসওয়াদে গিয়ে চুমো দিন। আম্মা কিছুটা দ্বিধান্বিত ও কম্পিতভাবে ফিতা দিয়ে ঘেরা এলাকায় প্রবেশ করে হাজরে আসওয়াদের কাছে পৌঁছলেন। যারা ধোয়ামোছার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন, তারা কোনো আপত্তি করলেন না। আম্মা হাজরে আসওয়াদের কাছে গিয়েই যেন থমকে দাঁড়ালেন। যেন এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, এই সেই হাজরে আসওয়াদ, যা এত কাঙ্ক্ষিত, এত প্রার্থিত! তীব্র জনস্রোতের প্রচণ্ড চাপে যেখানে সবলদেহী পুরুষও অনেক চেষ্টা ও সাধনা করে নিষ্ফল হয়ে ঘুরে আসে, সেই ঘূর্ণাবর্তের কাছে কোনো নারীর যাওয়াও দুঃস্বপ্ন বৈকি। সেই হাজরে আসওয়াদের সামনে শুধু আম্মা একাকী দাঁড়িয়ে। আমি বললাম, ‘আম্মা আপনি হাজরে আসওয়াদে চুমো দিন।’ আম্মা হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করে হাতে চুমো দিলেন। আমি বললাম, ‘আপনি মাথা ঢুকিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুমো দিন।’ আম্মা তাই করলেন, হাজরে আসওয়াদের ভেতর মুখ রেখে বহু কাঙ্ক্ষিত ও প্রার্থিত চুম্বন এঁকে দিলেন এক, দুই, তিন...।

আমি আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করলাম। আমার কৈশোরে দেখা একটি স্বপ্ন বাস্তবে এখানে প্রত্যক্ষ করে অভিভূত হলাম। ক্লাস নাইন-টেনে পড়াকালে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে অন্তর্লীন অন্বেষা আমাকে প্রায়ই আলোড়িত করে তুলত। আমি অতি গভীরে একান্তে তলিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম। আর অন্তরের গভীর থেকে একান্তভাবে কায়মনোবাক্যে শুধু আল্লাহকে ডাকতাম। এ সময়েই স্বপ্নে যে দৃশ্যটি দেখেছিলাম, আজ তা বাস্তবে প্রত্যক্ষ করে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানালাম।

স্বপ্নে দেখছি কোনো এক সুন্দর সকালে পবিত্র কাবাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আম্মা হাজরে আসওয়াদে চুমো দিতে ইতস্তত করছেন, আর আমি বলছি, ‘আপনি মাথা ভেতরে নিয়ে চুমো দিন।’ আল্লাহ তায়ালার কী অপার মহিমা! কী অসাধারণ মেহেরবানি! হুবহু ঠিক সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে নিজ চোখে দেখলাম। আমি বিস্মিত, আমি মুগ্ধ, অভিভূত—কীভাবে আল্লাহর শোকর গুজারি করব? হে আল্লাহ! পরম দয়াময়! রব্বুল আলামিন! তুমি আমাকে শোকর গুজার বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করো। আমিন।

পবিত্র হাজরে আসওয়াদ চুমো দেওয়ার মাধ্যমে তাওয়াফ শেষ করে সরাসরি মাকামে ইবরাহিমের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আম্মা আর আমি দুই রাকাত সালাত আদায় করলাম। আম্মার প্রার্থিত চুম্বনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আর তওয়াফের শুরুতেই আমার মনের মাঝে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারকে ঘিরে যে দ্ব্যর্থবোধক প্রশ্নের উদয় হয়েছিল, সে প্রশ্নের জওয়াব যেন পেয়ে গেছি মাকামে ইবরাহিমের পেছনে সলাতে দাঁড়িয়ে। ‘মিল্লাতা আবিকুম ইবরাহিম, হুয়া ছাম্মাকুমুল মুসলিমিন।’ ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিমের মিল্লাত। তিনি তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম।’

বিষয়:

কালো পাথর

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত