শায়েখ মহিউদ্দীন ফারুকী
মহানবী (সা.)-এর সার্বিক বিচক্ষণতা ও সামরিক দক্ষতায় রক্তপাতহীন এক বিজয় ঐতিহাসিক মক্কাবিজয়। এ বিজয় ইসলামের ইতিহাসে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম ও মানবতার চূড়ান্ত বিজয়। অষ্টম হিজরির ১৯ রমজান এ বিজয় অর্জিত হয়। ১০ হাজার সাহাবির বিশাল বাহিনী নিয়ে মহানবী (সা.) ১০ রমজান মদিনা থেকে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। মক্কার উপকণ্ঠে ‘মাররুজ জাহরান’ নামক গিরি উপত্যকায় তাঁবু স্থাপন করেন।
সেখানে অবস্থানকালে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান সাহাবিদের হাতে আটক হন। পরে রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসায় ঈমান আনেন। অন্যদিকে নবীজির চাচা আব্বাস (রা.), যিনি কৌশলে মক্কাবাসীর কাছে তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ গোপন রেখেছিলেন, পরে তিনি বিষয়টি প্রকাশ করেন। সকালে এই দুই কুরাইশ নেতার মাধ্যমে শান্তির বার্তা প্রচারের জন্য রাসুল (সা.) তাদের মক্কায় পাঠান।
রাসুল (সা.) সবাইকে জানাতে বলেন, ‘যারা কাবা গৃহে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ। যারা আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে অথবা তার নাম বলবে, তারা নিরাপদ। যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবে, তারাও নিরাপদ।’ অন্যদিকে সাহাবায়ে কেরামের বিভিন্ন দলকে মক্কার বিভিন্ন দিক থেকে প্রবেশের নির্দেশ দিয়ে মহানবী (সা.) বললেন, ‘তোমরা কাউকে আক্রমণ করবে না।’ এভাবে তিনি কোনো বাধা, যুদ্ধ ও রক্তপাত ছাড়াই মক্কাবিজয় করেন।
বিজয়ী প্রধান হয়েও তিনি উসামা বিন জায়েদ (রা.)-এর সঙ্গে উটে চড়ে অত্যন্ত বিনম্রভাবে মক্কায় প্রবেশ করেন। প্রবেশকালে তিনি বিনয়াবত হয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতহ থেকে প্রথম আয়াতগুলো পাঠ করছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়; যেন আল্লাহ আপনার আগের পরের সব গুনাহ ক্ষমা করেন, আপনার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন এবং আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সূরা ফাতহ : ১-২)।
এ সময় মহানবী (সা.)-এর হৃদয়ে কোনো প্রতিশোধ-স্পৃহা ছিল না। সবার প্রতি হৃদ্যতা আর ভালোবাসা প্রকাশ করতে করতে তিনি সরাসরি কাবা চত্বরে চলে যান। পবিত্র কাবা ঘরকে শিরকের সব উপকরণ বিশেষত মূর্তি থেকে পবিত্র করেন। সে সময় তিনি সুউচ্চ আওয়াজে পাঠ করতে থাকেন, ‘সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (সুরা বনী ইসরাইল : ৮১)। পরে তিনি কাবায় শুকরিয়ার নামাজ আদায় করেন।
এরপর রাসুল (সা.) মক্কাবাসীর উদ্দেশে ভাষণে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও একতার কথা বললেন। সবাইকে দ্বীন ও ঈমানের দাওয়াত দেন। তিনি বলেন, হে কুরাইশরা, অতীতের সব ভ্রান্ত-ধারণা মন থেকে মুছে ফেলো, কৌলীন্য গর্ব ভুলে যাও। সবাই এক হও। সব মানুষ সমান, এ কথা বিশ্বাস করো। মানুষ দুই ধরনেরÑ মুমিন আল্লাহভীরু অথবা পাপাচারী হতভাগা। তোমরা আদম সন্তান। আর আদম ছিলেন মাটির তৈরি। এরপর তিনি আয়াত তিলাওয়াত করেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবাইকে এক নারী ও পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের গোত্রে ও সম্প্রদায়ে পৃথক করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাজে সেই বেশি সম্মানিত যে বেশি পরহেজগার।’ (সুরা হুজরাত : ১৩)
ভাষণ শেষে তিনি সমবেত কুরাইশদের উদ্দেশে বলেন, হে কুরাইশরা, আমি তোমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করব, বলে আশা করো? সবাই বলে ওঠে, উত্তম আচরণ, আপনি দয়ালু ভাই, দয়ালু ভাইয়ের পুত্র। তখন রাসুল (সা.) মক্কার অধিবাসীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের তা-ই বলব, যা ইউসুফ (আ.) তার ভাইদের বলেছিলেনÑ আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। যাও তোমরা আজ মুক্ত।’
এভাবে তিনি সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, যা ছিল এক ঐতিহাসিক ঘোষণা। এর মাধ্যমে তিনি মানবসভ্যতায় এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন। উদারতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ঐতিহাসিক মক্কাবিজয় হয়ে ওঠে তার ক্ষমা, উদারতা ও মহানুভবতার অন্যতম সাক্ষী। আজকের প্রতিশোধপরায়ণ সহিংস পৃথিবীর জন্য মহানবীর (সা.) এই আদর্শই হতে পারে শান্তির সূতিকাগার।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ
সম্পাদনা: ইসমাঈল
মহানবী (সা.)-এর সার্বিক বিচক্ষণতা ও সামরিক দক্ষতায় রক্তপাতহীন এক বিজয় ঐতিহাসিক মক্কাবিজয়। এ বিজয় ইসলামের ইতিহাসে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলাম ও মানবতার চূড়ান্ত বিজয়। অষ্টম হিজরির ১৯ রমজান এ বিজয় অর্জিত হয়। ১০ হাজার সাহাবির বিশাল বাহিনী নিয়ে মহানবী (সা.) ১০ রমজান মদিনা থেকে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। মক্কার উপকণ্ঠে ‘মাররুজ জাহরান’ নামক গিরি উপত্যকায় তাঁবু স্থাপন করেন।
সেখানে অবস্থানকালে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান সাহাবিদের হাতে আটক হন। পরে রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসায় ঈমান আনেন। অন্যদিকে নবীজির চাচা আব্বাস (রা.), যিনি কৌশলে মক্কাবাসীর কাছে তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ গোপন রেখেছিলেন, পরে তিনি বিষয়টি প্রকাশ করেন। সকালে এই দুই কুরাইশ নেতার মাধ্যমে শান্তির বার্তা প্রচারের জন্য রাসুল (সা.) তাদের মক্কায় পাঠান।
রাসুল (সা.) সবাইকে জানাতে বলেন, ‘যারা কাবা গৃহে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ। যারা আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে অথবা তার নাম বলবে, তারা নিরাপদ। যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবে, তারাও নিরাপদ।’ অন্যদিকে সাহাবায়ে কেরামের বিভিন্ন দলকে মক্কার বিভিন্ন দিক থেকে প্রবেশের নির্দেশ দিয়ে মহানবী (সা.) বললেন, ‘তোমরা কাউকে আক্রমণ করবে না।’ এভাবে তিনি কোনো বাধা, যুদ্ধ ও রক্তপাত ছাড়াই মক্কাবিজয় করেন।
বিজয়ী প্রধান হয়েও তিনি উসামা বিন জায়েদ (রা.)-এর সঙ্গে উটে চড়ে অত্যন্ত বিনম্রভাবে মক্কায় প্রবেশ করেন। প্রবেশকালে তিনি বিনয়াবত হয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতহ থেকে প্রথম আয়াতগুলো পাঠ করছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়; যেন আল্লাহ আপনার আগের পরের সব গুনাহ ক্ষমা করেন, আপনার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন এবং আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সূরা ফাতহ : ১-২)।
এ সময় মহানবী (সা.)-এর হৃদয়ে কোনো প্রতিশোধ-স্পৃহা ছিল না। সবার প্রতি হৃদ্যতা আর ভালোবাসা প্রকাশ করতে করতে তিনি সরাসরি কাবা চত্বরে চলে যান। পবিত্র কাবা ঘরকে শিরকের সব উপকরণ বিশেষত মূর্তি থেকে পবিত্র করেন। সে সময় তিনি সুউচ্চ আওয়াজে পাঠ করতে থাকেন, ‘সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (সুরা বনী ইসরাইল : ৮১)। পরে তিনি কাবায় শুকরিয়ার নামাজ আদায় করেন।
এরপর রাসুল (সা.) মক্কাবাসীর উদ্দেশে ভাষণে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও একতার কথা বললেন। সবাইকে দ্বীন ও ঈমানের দাওয়াত দেন। তিনি বলেন, হে কুরাইশরা, অতীতের সব ভ্রান্ত-ধারণা মন থেকে মুছে ফেলো, কৌলীন্য গর্ব ভুলে যাও। সবাই এক হও। সব মানুষ সমান, এ কথা বিশ্বাস করো। মানুষ দুই ধরনেরÑ মুমিন আল্লাহভীরু অথবা পাপাচারী হতভাগা। তোমরা আদম সন্তান। আর আদম ছিলেন মাটির তৈরি। এরপর তিনি আয়াত তিলাওয়াত করেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবাইকে এক নারী ও পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের গোত্রে ও সম্প্রদায়ে পৃথক করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাজে সেই বেশি সম্মানিত যে বেশি পরহেজগার।’ (সুরা হুজরাত : ১৩)
ভাষণ শেষে তিনি সমবেত কুরাইশদের উদ্দেশে বলেন, হে কুরাইশরা, আমি তোমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করব, বলে আশা করো? সবাই বলে ওঠে, উত্তম আচরণ, আপনি দয়ালু ভাই, দয়ালু ভাইয়ের পুত্র। তখন রাসুল (সা.) মক্কার অধিবাসীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের তা-ই বলব, যা ইউসুফ (আ.) তার ভাইদের বলেছিলেনÑ আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। যাও তোমরা আজ মুক্ত।’
এভাবে তিনি সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, যা ছিল এক ঐতিহাসিক ঘোষণা। এর মাধ্যমে তিনি মানবসভ্যতায় এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন। উদারতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ঐতিহাসিক মক্কাবিজয় হয়ে ওঠে তার ক্ষমা, উদারতা ও মহানুভবতার অন্যতম সাক্ষী। আজকের প্রতিশোধপরায়ণ সহিংস পৃথিবীর জন্য মহানবীর (সা.) এই আদর্শই হতে পারে শান্তির সূতিকাগার।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ
সম্পাদনা: ইসমাঈল
মক্কার মসজিদুল হারামের অন্যতম পবিত্র স্থান হাতিম। কাবার মূল কাঠামোর অংশ হিসেবে বিবেচিত এ স্থানটি মুসল্লিদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত ও নামাজ আদায়ের আকাঙ্ক্ষিত জায়গা। এখানে শৃঙ্খলাপূর্ণ উপায়ে ইবাদত নিশ্চিত করতে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
১ দিন আগেখাদ্যগ্রহণ যেমন ক্ষুধা মেটানোর জন্য অপরিহার্য, প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হিসেবে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যা খায়, যেভাবে খায়—তা তার চরিত্র, নীতি ও রুচির পরিচয় বহন করে। তাই ইসলাম আমাদের খাওয়ার উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার শিখিয়েছে।
২ দিন আগেসম্প্রতি ইসলামি আলোচক আমীর হামজা আল্লাহর রাসুল (সা.)–কে ‘সাংবাদিক’ বলেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, যেহেতু নবী (সা.) ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক, তাই রূপক অর্থে তাঁকে সাংবাদিক বলা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই তুলনা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিভ্রান্তিকর এবং রাসুলের মর্যাদার পরিপন্থী।
৫ দিন আগেআমাদের সমাজে বেশ পরিচিত দুটি শব্দ হলো অলি-আওলিয়া। বাঙালি মুসলমান সমাজে সাধারণত মুসলমানদের একটি বিশেষ শ্রেণিকে অলি-আওলিয়া মনে করা হয়। অলি-আওলিয়াদের বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা আছে এমন বিশ্বাসও সাধারণ মুসলমানদের রয়েছে।
৫ দিন আগে