নেকির নিয়তে রক্তদান ইবাদত

আবদুল্লাহ আল মামুন অন্তর
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৪২

মানবদেহে রক্তের আয়ু গড়ে ১২০ দিন। এ সময় পুরোনো লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যায় এবং অস্থিমজ্জা থেকে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়। প্রতিদিনই শরীরে কোটি কোটি নতুন রক্তকণিকা জন্ম নেয় এবং পুরোনো কণিকা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়। তাই সুস্থ ব্যক্তির রক্তদান নিরাপদ, কারণ শরীর খুব দ্রুতই সেই ঘাটতি পূরণ করে নেয়। বর্তমানে শিক্ষিত তরুণসমাজ ও বিভিন্ন বয়সি মানুষ স্বেচ্ছায় রক্তদান করে থাকেন। তাদের এই উদ্যোগে অসংখ্য রোগী রক্তশূন্যতা ও রক্তের অভাবজনিত বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছে এবং উপকৃত হচ্ছে। রক্তদানের মাধ্যমে তারা সমাজে মানবতার বীজ বপন করছেন। স্বেচ্ছায় রক্তদান শুধু মানবসেবা নয়, এটি এক মহৎ ইবাদত। কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যও রক্ত দান করেন, এই রক্তদান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য উত্তম কাজ।

একসময় রক্তের অভাবে রোগীরা জীবন বাঁচাতে মোটা অঙ্কের টাকায় রক্ত কিনতে বাধ্য হতেন। কিন্তু আজ সমাজের শিক্ষিত তরুণ ও সচেতন মানুষ স্বেচ্ছায়, বিনামূল্যে রক্ত দান করে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। এই পরিবর্তন সমাজে দয়ার, সহানুভূতির ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়েছে। এতে রোগী উপকৃত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে মানুষকে উপকার করে।’ (বুখারি)

বিজ্ঞাপন

রক্তদান সেই উত্তম কাজেরই বাস্তব উদাহরণ, যা অন্যের জীবন বাঁচায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ খুলে দেয়। রক্তের প্রয়োজন হয় যখন কোনো দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার বা প্রসবজনিত জটিলতা দেখা দেয়। তখন একজন রক্তদাতা হয়ে উঠতে পারেন জীবনরক্ষায় সাহায্যকারী। এভাবে রক্তদান করা মানে আল্লাহর বান্দার প্রাণ বাঁচানো, যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় কাজ। শরীরের দিক থেকেও রক্তদান উপকার। নিয়মিত রক্ত দিলে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়। ইসলাম আমাদের শরীরের যত্ন নিতে বলেছে। তাই রক্তদান মানবিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকেই কল্যাণকর। একজন মুসলমান অন্যের জীবন বাঁচানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি একজন মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল।’ (সুরা আল-মায়িদা : ৩২)

স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীদের বিনামূল্যে রক্তদান করার কারণে রোগীকে গুনতে হয় না মূল্য, যা রোগীর বিশাল উপকারে আসে। যিনি রক্ত দান করে অন্যকে বাঁচতে সহায়তা করেন তিনি প্রকৃত অর্থেই উত্তম মানুষ এবং নিঃসন্দেহে রক্তদান একটি উত্তম কাজ। আল্লাহর কাছে এর উত্তম বিনিময় পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদের উত্তম প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহাল : ৯৭)

আসুন, আমরা সবাই রক্তদানে অভ্যস্ত হই। এই অল্প কাজের মাধ্যমে আমরা শুধু মানুষের জীবনই রক্ষা করব না; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের পুরস্কারও অর্জন করতে পারব। দীর্ঘদিন রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগী শারীরিক জ্বালা-যন্ত্রণার মধ্যে থাকে।

রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের কষ্ট লাঘব করা হয়, যা ইসলামে সওয়াবের কাজ। আরেক হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করবেন।’ (মুসলিম)

উল্লেখ্য, মানবহেদের মালিক আল্লাহ। তাই শরীরের কোনো অঙ্গ বা অংশ বিক্রি করা জায়েজ নেই। সেহেতু অর্থের বিনিময়ে রক্ত বিক্রি করা বৈধ নয়। রক্ত দিতে হবে মানুষের উপকার করে আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে। তাহলেই কেবল সেটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত