
মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান

সম্প্রতি একজন বক্তা প্রিয় নবীজিকে ‘সাংবাদিক’ অভিধায় অভিহিত করে চরম বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। দেশের ধর্মীয় অঙ্গনে পক্ষে-বিপক্ষে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এ ধরনের বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। কিন্তু আমরা কী দেখছি? একদল তার চরম বিরোধিতা করছে, তাকে গালাগাল করছে। অন্যদল তার পক্ষ নিয়ে যৌক্তিক সমালোচনাকেও প্রত্যাখ্যান করছে। মূলত এখানে গঠনমূলক সমালোচনাই কর্তব্য।
অভিযুক্ত বক্তা বলেছেন, ‘নবী’ শব্দের মূল ‘নাবা’, যার অর্থ সংবাদ; আর নবী অর্থ বার্তাবাহক। নবী যেহেতু আল্লাহর কাছ থেকে বার্তা বহন করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন, তাই এক অর্থে নবীকে সাংবাদিক বলা যায়।
সত্যিই কি যেকোনো বার্তাবাহককে সাংবাদিক বলা যায়? ডাকপিয়ন তো বার্তা বহন করেন—তাকে কি সাংবাদিক বলা হয়? দূতাবাসের কর্মকর্তাও তার দেশের বার্তা বহন করেন; অ্যাম্বাসাডরকে কি কেউ সাংবাদিক বলেন? কবি কবিতা লেখেন, কবিতায় অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বার্তা থাকে। গল্পকারের গল্প, ঔপন্যাসিকের উপন্যাস, প্রবন্ধকারের প্রবন্ধ, এমনকি রম্য লেখকদের রচনাতেও পাঠকের জন্য বার্তা থাকেÑসে হিসেবে কি এরা সবাই সাংবাদিক? সাধারণ মানুষও জীবনে বহু সংবাদ বা বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দেন। একজন থেকে কোনো সংবাদ পেয়ে অন্যের কাছে পৌঁছে দিলেই যদি সাংবাদিক হয়ে যান, তাহলে জগতের প্রতিটি প্রাণীই সাংবাদিক!
মূলত ভাষাতত্ত্বের একটি সাধারণ নিয়ম না বোঝার কারণেই বক্তারা এ ধরনের ভ্রান্ত দাবি করেন। শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারাই এখানে মূল সমস্যা। অনেক শব্দের আভিধানিক অর্থে ব্যাপকতা থাকে, কিন্তু পরিভাষায় তা একটি নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়। এমন ক্ষেত্রে শব্দটিকে তার ব্যাপক অর্থে নয়, বরং বিশেষ অর্থেই গ্রহণ করতে হয়।
পরিভাষাকে বাদ দিয়ে অভিধান থেকে অর্থ নিতে গেলে ভাষার নিয়ম ভেঙে যাবে। বিশেষত, ধর্মীয় পরিভাষার ক্ষেত্রে এই নিয়ম ভাঙলে পুরো ধর্মের ভিতই নড়বড়ে হয়ে যায়। উদাহরণত: ঈমান, ইসলাম, জান্নাত, জাহান্নাম, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, ঈদ—প্রত্যেকটির একটি আভিধানিক অর্থ আছে, কিন্তু এখন এগুলোর আভিধানিক অর্থগ্রহণের অবকাশ নেই; পারিভাষিক অর্থেই এই শব্দগুলো গ্রহণ করতে হবে।
ঈমান অর্থ বিশ্বাস, কিন্তু সব বিশ্বাসকে কি ঈমান বলা যাবে? ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ, কিন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আত্মসমর্পণ করলে সেটাকে কি ইসলাম বলা যাবে? নামাজের মূল ‘নমো’, হিন্দুদের পূজায় ‘নমো নমো’ বলা হয়—তা কি নামাজ? রোজা মানে উপোস থাকা—যেকোনো উপোস কি রোজা হবে? হজ অর্থ ইচ্ছাÑযেকোনো ইচ্ছাকে কি হজ বলা যাবে? জান্নাত অর্থ বাগান, জাহান্নাম অর্থ আগুনÑযেকোনো বাগান বা আগুনকে কি জান্নাত-জাহান্নাম বলা যায়?
ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও প্রতিদিনের ব্যবহারে আমরা এ ধরনের উদাহরণ পাই। জন্তু বা জানোয়ার শব্দের মূল অর্থ প্রাণী, কিন্তু এটি মানুষের ক্ষেত্রে বাংলায় গালির অর্থে ব্যবহৃত হয়। মানুষও তো প্রাণী—তবু কোনো ভদ্রলোককে ‘জানোয়ার’ বলা যায় না। ঢাকা একটি শহরের নাম, কিন্তু ঢেকে থাকা কোনো বস্তুকে ‘ঢাকা শহর’ বলা কতটা হাস্যকর! কাফের শব্দের শাব্দিক অর্থ অস্বীকারকারী, কিন্তু যেকোনো অস্বীকারকারীকে কি কাফের বলা যায়?
আমাদের চারপাশের এবং প্রতিদিনের ব্যবহারের এমন অসংখ্য শব্দ নিয়ে ভাবলেই বিষয়টি আমরা সহজেই বুঝতে পারি। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার গুরুত্ব বা মাহাত্ম্য বোঝাতে গিয়ে মহানবী (সা.)কে সাংবাদিক বানানোর প্রয়োজন নেই। অনেক আয়াত ও হাদিস দ্বারাই তা প্রমাণ করা সম্ভব। তবে শুধু এ কারণেই ওই বক্তাকে কাফের সাব্যস্ত করাও অতিরঞ্জন। এমন অতিরঞ্জন আমাদের দেশের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে বেড়েই চলেছে—এই অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক।
বক্তার উদ্দেশ্য ভালো হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তারা ইসলামিক আলোচনা করেন; বহু মানুষ তাদের ওয়াজ শোনেন। যারা অনেক বেশি বলেন, তাদের কিছু কথা ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তবে ভুল হয়ে গেলে তা খোলা মনে স্বীকার করা উচিত। ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া জরুরি। আর অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য কাউকে গালমন্দ করাও ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী।
ইসলাম আমাদের উদারতা ও ক্ষমার শিক্ষা দেয়। কাউকে অপমান করা নয়—সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে, আন্তরিকভাবে। এটাই একজন মুসলিমের সৌন্দর্য। আল্লাহ আমাদের আলেম সমাজকে ব্যক্তিগত আক্রোশ, জিদ ও বিদ্বেষপরায়ণতা থেকে বেরিয়ে সত্যিকারের দায়ী ইলাল্লাহ হওয়ার তাওফিক দিন।
লেখক : দক্ষিণ কোরিয়াপ্রবাসী ইমাম ও ইসলামি স্কলার

সম্প্রতি একজন বক্তা প্রিয় নবীজিকে ‘সাংবাদিক’ অভিধায় অভিহিত করে চরম বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। দেশের ধর্মীয় অঙ্গনে পক্ষে-বিপক্ষে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এ ধরনের বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। কিন্তু আমরা কী দেখছি? একদল তার চরম বিরোধিতা করছে, তাকে গালাগাল করছে। অন্যদল তার পক্ষ নিয়ে যৌক্তিক সমালোচনাকেও প্রত্যাখ্যান করছে। মূলত এখানে গঠনমূলক সমালোচনাই কর্তব্য।
অভিযুক্ত বক্তা বলেছেন, ‘নবী’ শব্দের মূল ‘নাবা’, যার অর্থ সংবাদ; আর নবী অর্থ বার্তাবাহক। নবী যেহেতু আল্লাহর কাছ থেকে বার্তা বহন করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন, তাই এক অর্থে নবীকে সাংবাদিক বলা যায়।
সত্যিই কি যেকোনো বার্তাবাহককে সাংবাদিক বলা যায়? ডাকপিয়ন তো বার্তা বহন করেন—তাকে কি সাংবাদিক বলা হয়? দূতাবাসের কর্মকর্তাও তার দেশের বার্তা বহন করেন; অ্যাম্বাসাডরকে কি কেউ সাংবাদিক বলেন? কবি কবিতা লেখেন, কবিতায় অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ বার্তা থাকে। গল্পকারের গল্প, ঔপন্যাসিকের উপন্যাস, প্রবন্ধকারের প্রবন্ধ, এমনকি রম্য লেখকদের রচনাতেও পাঠকের জন্য বার্তা থাকেÑসে হিসেবে কি এরা সবাই সাংবাদিক? সাধারণ মানুষও জীবনে বহু সংবাদ বা বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দেন। একজন থেকে কোনো সংবাদ পেয়ে অন্যের কাছে পৌঁছে দিলেই যদি সাংবাদিক হয়ে যান, তাহলে জগতের প্রতিটি প্রাণীই সাংবাদিক!
মূলত ভাষাতত্ত্বের একটি সাধারণ নিয়ম না বোঝার কারণেই বক্তারা এ ধরনের ভ্রান্ত দাবি করেন। শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারাই এখানে মূল সমস্যা। অনেক শব্দের আভিধানিক অর্থে ব্যাপকতা থাকে, কিন্তু পরিভাষায় তা একটি নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়। এমন ক্ষেত্রে শব্দটিকে তার ব্যাপক অর্থে নয়, বরং বিশেষ অর্থেই গ্রহণ করতে হয়।
পরিভাষাকে বাদ দিয়ে অভিধান থেকে অর্থ নিতে গেলে ভাষার নিয়ম ভেঙে যাবে। বিশেষত, ধর্মীয় পরিভাষার ক্ষেত্রে এই নিয়ম ভাঙলে পুরো ধর্মের ভিতই নড়বড়ে হয়ে যায়। উদাহরণত: ঈমান, ইসলাম, জান্নাত, জাহান্নাম, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, ঈদ—প্রত্যেকটির একটি আভিধানিক অর্থ আছে, কিন্তু এখন এগুলোর আভিধানিক অর্থগ্রহণের অবকাশ নেই; পারিভাষিক অর্থেই এই শব্দগুলো গ্রহণ করতে হবে।
ঈমান অর্থ বিশ্বাস, কিন্তু সব বিশ্বাসকে কি ঈমান বলা যাবে? ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ, কিন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আত্মসমর্পণ করলে সেটাকে কি ইসলাম বলা যাবে? নামাজের মূল ‘নমো’, হিন্দুদের পূজায় ‘নমো নমো’ বলা হয়—তা কি নামাজ? রোজা মানে উপোস থাকা—যেকোনো উপোস কি রোজা হবে? হজ অর্থ ইচ্ছাÑযেকোনো ইচ্ছাকে কি হজ বলা যাবে? জান্নাত অর্থ বাগান, জাহান্নাম অর্থ আগুনÑযেকোনো বাগান বা আগুনকে কি জান্নাত-জাহান্নাম বলা যায়?
ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও প্রতিদিনের ব্যবহারে আমরা এ ধরনের উদাহরণ পাই। জন্তু বা জানোয়ার শব্দের মূল অর্থ প্রাণী, কিন্তু এটি মানুষের ক্ষেত্রে বাংলায় গালির অর্থে ব্যবহৃত হয়। মানুষও তো প্রাণী—তবু কোনো ভদ্রলোককে ‘জানোয়ার’ বলা যায় না। ঢাকা একটি শহরের নাম, কিন্তু ঢেকে থাকা কোনো বস্তুকে ‘ঢাকা শহর’ বলা কতটা হাস্যকর! কাফের শব্দের শাব্দিক অর্থ অস্বীকারকারী, কিন্তু যেকোনো অস্বীকারকারীকে কি কাফের বলা যায়?
আমাদের চারপাশের এবং প্রতিদিনের ব্যবহারের এমন অসংখ্য শব্দ নিয়ে ভাবলেই বিষয়টি আমরা সহজেই বুঝতে পারি। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার গুরুত্ব বা মাহাত্ম্য বোঝাতে গিয়ে মহানবী (সা.)কে সাংবাদিক বানানোর প্রয়োজন নেই। অনেক আয়াত ও হাদিস দ্বারাই তা প্রমাণ করা সম্ভব। তবে শুধু এ কারণেই ওই বক্তাকে কাফের সাব্যস্ত করাও অতিরঞ্জন। এমন অতিরঞ্জন আমাদের দেশের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে বেড়েই চলেছে—এই অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক।
বক্তার উদ্দেশ্য ভালো হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তারা ইসলামিক আলোচনা করেন; বহু মানুষ তাদের ওয়াজ শোনেন। যারা অনেক বেশি বলেন, তাদের কিছু কথা ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তবে ভুল হয়ে গেলে তা খোলা মনে স্বীকার করা উচিত। ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া জরুরি। আর অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য কাউকে গালমন্দ করাও ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী।
ইসলাম আমাদের উদারতা ও ক্ষমার শিক্ষা দেয়। কাউকে অপমান করা নয়—সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে, আন্তরিকভাবে। এটাই একজন মুসলিমের সৌন্দর্য। আল্লাহ আমাদের আলেম সমাজকে ব্যক্তিগত আক্রোশ, জিদ ও বিদ্বেষপরায়ণতা থেকে বেরিয়ে সত্যিকারের দায়ী ইলাল্লাহ হওয়ার তাওফিক দিন।
লেখক : দক্ষিণ কোরিয়াপ্রবাসী ইমাম ও ইসলামি স্কলার


চলতি বছরের জুনে শুরু হওয়া ওমরাহ মৌসুমে এরই মধ্যে রেকর্ড ৪০ লাখের বেশি বিদেশি হাজি সৌদি আরবে পৌঁছেছেন, যা আগের বছরের পুরো মৌসুমের তুলনায়ও বেশি।
৪ ঘণ্টা আগে
মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়। এটি মুসলিম সমাজের হৃদয়কেন্দ্র। যেখানে আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা ও সামাজিক চেতনাসমবেত হয়। ইসলামের সূচনালগ্নে মসজিদ ছিল জ্ঞান, নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার এবং সমাজকল্যাণের কেন্দ্র। নবী করিম (সা.) মসজিদের মিম্বর থেকে যেমন ঈমান ও আমলের দাওয়াত দিতেন, তেমনি সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
৭ ঘণ্টা আগে
মানবদেহে রক্তের আয়ু গড়ে ১২০ দিন। এ সময় পুরোনো লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যায় এবং অস্থিমজ্জা থেকে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়। প্রতিদিনই শরীরে কোটি কোটি নতুন রক্তকণিকা জন্ম নেয় এবং পুরোনো কণিকা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়। তাই সুস্থ ব্যক্তির রক্তদান নিরাপদ, কারণ শরীর খুব দ্রুতই সেই ঘাটতি পূরণ করে নেয়। বর্তমানে শিক্ষি
৮ ঘণ্টা আগে
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় দারুল হিকমাহ জামেয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার বালিকা শাখায় স্থাপিত হয়েছে জেলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ মহিলা মসজিদ। ‘হজরত ফাতিমা (রা.) মহিলা হিফজ ভবন ও মসজিদ’ নামে এই মসজিদটি নারীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা ও ইবাদতের এক ব্যতিক্রমধর্মী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
১ দিন আগে