আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ইসলামে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৩

ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের নিন্দা করা হয়েছে।

মুমিনের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। আল্লাহ জ্ঞানী মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে, আর মন্দ হিসাবের আশঙ্কা করে। (সুরা রা’দ: ২১) 

বিজ্ঞাপন

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা পাপাচারীদের কাজ

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, আত্মীয়তার হক আদায় না করা কাফের ও পাপাচারীদের বৈশিষ্ট্য। কোরআনে আল্লাহ তাআলা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের সাবধান করে বলেছেন, যারা আল্লাহর সঙ্গে সুদৃঢ় অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার নির্দেশ আল্লাহ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সুরা বাকারা: ২৭)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ এদেরকেই করেন অভিশপ্ত, আর করেন বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন। (সুরা মুহাম্মাদ: ২২, ২৩)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের জন্যই লা‘নত আর তাদের জন্যই রয়েছ আখিরাতের মন্দ আবাস। (সুরা রা’দ: ২৫)

সামর্থ্য অনুযায়ী অভাবগ্রস্ত আত্মীয়দের সাহায্য করুন

আল্লাহ যদি কাউকে ক্ষমতা, সম্পদ ও সমৃদ্ধি দান করেন, তার দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। আত্মীয়দের মধ্যে কেউ অভাবগ্রস্ত থাকলে, ঋণগ্রস্ত হলে তার কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় তাদের পাশে দাঁড়ানো, সাহায্য করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা কি লক্ষ্য করেনা যে, আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন অথবা তা সীমিত করেন? এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম। (সুরা রুম: ৩৭)

আত্মীয়স্বজন যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তাহলে তাদেরকে জাকাত দেওয়া যাবে। আত্মীয়দের মধ্যে অভাবী কেউ থাকলে তাকেই জাকাত দেওয়া উত্তম। তাতে একইসাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও জাকাত আদায় উভয় আমলের সওয়াবই পাওয়া যায়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, সাধারণ অভাবীদের সদকা করলে তা শুধু সদকা হয়, আর আত্মীয়দের দিলে তা সদকা হয়, আত্মীয়তার হক আদায়ও হয়। (মুসনাদে আহমাদ: ১৫৭৯৪, সুনানে নাসাঈ: ২৫৮২)

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার প্রতিদান পাওয়া শুরু হয় দুনিয়াতেই। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে দুনিয়াতে সমৃদ্ধি ও বরকত আসে। আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে দেন। হায়াত বাড়িয়ে দেন।

একইভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তিও দুনিয়া থেকেই শুরু হয়। আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, বিদ্রোহ ও রক্তসম্পৰ্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই, আল্লাহ তাআলা যার শাস্তি পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন। (সুনানে তিরমিজি:  ২৫১১)

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত