মুফতি উবায়দুল হক খান
মুফতি উবায়দুল হক খান
কোরআনুল কারিম আল্লাহতায়ালার কালাম। এটি মানবজাতির পথপ্রদর্শক, বিশ্বজগতের জন্য রহমত আর ঈমানদারদের হৃদয়ের প্রশান্তি। মহান আল্লাহ স্বয়ং এই কিতাবের রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন-‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং নিশ্চয়ই আমিই এর রক্ষাকারী।’ (সুরা হিজর : ৯)
যে কেউ এই মহান কিতাবকে অবমাননা করে, সে শুধু কাগজ-কালি নয়; বরং আল্লাহর বাণী, তার হুকুম ও তার মর্যাদাকেই তুচ্ছ করে। তাই কোরআন অবমাননা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়Ñএটি কুফরি ও ইসলামের প্রতি বিদ্বেষের ঘৃণ্য প্রকাশ।
কোরআনের মর্যাদা ও সম্মান
কোরআন হলো আল্লাহর কালাম, যা নবী (সা.)-এর মাধ্যমে মানবজাতির কাছে পৌঁছায়। আল্লাহতায়ালা বলেনÑ‘এটি এমন এক কিতাব, যার আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে হিকমতপূর্ণ ও সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।’ (সুরা হুদ : ১)
আল্লাহর বাণী হিসেবে কোরআনকে ভালোবাসা, পাঠ করা, মুখস্থ রাখা এবং এর আদেশ-নিষেধ মানা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। নবী করিম (সা.) বলেছেনÑ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে কোরআন শিখে এবং তা শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি : ৫০২৭) অতএব, কোরআনকে অবমাননা করা মানে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে অবমাননা করা।
কোরআন অবমাননা হয় কীভাবে?
কোরআন অবমাননার বিভিন্ন রূপ রয়েছে। যথাÑএক. কোরআনের আয়াত নিয়ে উপহাস করা বা ঠাট্টা করা। দুই. কোরআনের অক্ষর বা আয়াত বিকৃত করা। তিন. কোরআনের পৃষ্ঠায় ময়লা লাগানো, ছিঁড়ে ফেলা বা পুড়িয়ে দেওয়া। চার. কোরআনের আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করা। পাঁচ. কোরআনের সত্যতাকে অস্বীকার করা বা সন্দেহ প্রকাশ করা। এসব আচরণ যেকোনো মুসলমানের জন্য ভয়াবহ গুনাহ এবং ঈমান ধ্বংসকারী কাজ।
কোরআন অবমাননাকারীর ধরন
কোরআন অবমাননাকারী দুই শ্রেণির হয়। এক. মুসলমান নামধারী অবমাননাকারী : যে নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে, কিন্তু কোরআনের প্রতি বিদ্রুপ করে বা অসম্মানজনক আচরণ করেÑসে ইসলামের পরিধি থেকে বেরিয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে ঠাট্টা করছো? অজুহাত দিও না; তোমরা ঈমানের পর অবিশ্বাসে লিপ্ত হয়েছো।’ (সুরা তাওবা : ৬৫-৬৬) এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোরআনের আয়াত নিয়ে ঠাট্টা করা কুফরি। দুই. কাফের অবমাননাকারী : যে ইসলাম গ্রহণ করে না এবং কোরআনকে অবমাননা করে, সে দ্বিগুণ শাস্তির অধিকারী, কারণ সে আল্লাহর বাণীকে অস্বীকার ও অবজ্ঞা করে।
কোরআনের ভাষ্যে কোরআন অবমাননাকারীর শাস্তি
কোরআনে সরাসরি এই অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে একাধিক ইঙ্গিত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছেÑ‘যারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান : ৪) আরো ইরশাদ হয়েছেÑ‘যারা আমার স্মরণ [কোরআন] থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের জন্য সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমরা তাদের অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।’ (সুরা ত্বাহা : ১২৪) এখানে দেখা যায়, কোরআনের অবমাননা ও অবহেলা আল্লাহর কঠিন শাস্তির কারণ।
হাদিসের আলোকে শাস্তির ব্যাখ্যা
রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআনের সম্মান রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তাতে আমল করে না, সে কিয়ামতের দিন কঠিনভাবে শাস্তি পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ) অন্যত্র তিনি বলেনÑ‘যে ব্যক্তি কোরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করবেন।’ (আল-বায়হাকি, শুআবুল ঈমান)
আরো কঠোর ভাষায় বলা হয়েছেÑ‘যে ব্যক্তি কোরআনের আয়াতকে অস্বীকার করে, সে কাফের।’ (মুসলিম, ব্যাখ্যা আয়াত ৯/৬৫-৬৬) অতএব, ইসলামি শরিয়তে কোরআন অবমাননা করা মুরতাদ হওয়ার মতো অপরাধ।
ইসলামি শরিয়তে শাস্তির বিধান
ইসলামি ফিকহের আলেমরা একমত, কোরআন অবমাননাকারী যদি মুসলমান হয়, তবে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃতÑঅর্থাৎ মুরতাদ। মুরতাদের জন্য শরিয়তে মৃত্যুদণ্ড নির্ধারিত। ইমাম মালিক (রহ.), ইমাম আহমদ (রহ.) ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.) প্রমুখ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন অবমাননা করে, সে ইসলাম ত্যাগ করেছে; তাকে তওবার সুযোগ দেওয়া হবে, তওবা না করলে রাষ্ট্রীয়ভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।’
ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.) বলেনÑ‘আল্লাহর বাণীর প্রতি অবমাননা করা আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহ; এমন অপরাধীকে ক্ষমা করা জায়েজ নয়, যদি না সে আন্তরিকভাবে তওবা করে।’ [আস-সারিমুল মাসলুল, খণ্ড ২] অতএব, কোরআন অবমাননার শাস্তি শুধু পার্থিব আইনেই নয়; বরং পরকালেও ভয়াবহ।
তওবা ও আল্লাহর দয়া
যদিও এই অপরাধ ভয়াবহ, তবু ইসলাম তওবার দরজা উন্মুক্ত রেখেছে। আল্লাহ বলেনÑ‘বলুন, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।’ (সুরা জুমার : ৫৩) যদি কোনো ব্যক্তি অজ্ঞতা, মূর্খতা বা অন্যের প্ররোচনায় কোরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে, তবে আন্তরিক তওবা, ইস্তিগফার ও আমল দ্বারা সে ক্ষমা পেতে পারে।
আধুনিক যুগে কোরআন অবমাননার প্রতিকার
বর্তমান যুগে কিছু ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী কোরআনের অবমাননা করে মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হানে। এর প্রতিকারে আমাদের বেশ কিছু করণীয় রয়েছেÑ
১. আইনিব্যবস্থা : ইসলামি রাষ্ট্রে এমন অপরাধীর জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
২. দাওয়াত ও শিক্ষা : মানুষকে কোরআনের মর্যাদা, ইতিহাস ও বার্তা সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি।
৩. মিডিয়ার জবাবদিহি : অবমাননাকারী প্রচারে অংশ নিলে সেই মিডিয়াগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদেরও আইনের আওতায় আনা।
৪. ঐক্যবদ্ধ অবস্থান : মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুঃসাহসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।
মানবতার মুক্তির দিশারি
কোরআন আল্লাহর সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ বাণী। এটি মানবতার মুক্তির দিশারি, ন্যায় ও সত্যের চূড়ান্ত উৎস। যে ব্যক্তি কোরআনকে সম্মান করে, সে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করে; আর যে এটি অবমাননা করে, সে আল্লাহর ক্রোধ ও লাঞ্ছনা অর্জন করে। অতএব, আমাদের উচিতÑকোরআনকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া, এর হুকুম মানা এবং যারা এর অবমাননা করে তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞান, যুক্তি ও আইন দ্বারা দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা। ইরশাদ হয়েছেÑ‘এ কিতাবকে আমরা অবতীর্ণ করেছি বরকতময় করে, যাতে তারা এর আয়াত নিয়ে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা সাদ : ২৯)
সম্প্রতি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন অবমাননার যে ঘটনা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি রোধে রাষ্ট্রকে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ওই কুলাঙ্গারের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : মুহতামিম, জহিরুল উলুম মহিলা মাদরাসা, গাজীপুর
মুফতি উবায়দুল হক খান
কোরআনুল কারিম আল্লাহতায়ালার কালাম। এটি মানবজাতির পথপ্রদর্শক, বিশ্বজগতের জন্য রহমত আর ঈমানদারদের হৃদয়ের প্রশান্তি। মহান আল্লাহ স্বয়ং এই কিতাবের রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন-‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং নিশ্চয়ই আমিই এর রক্ষাকারী।’ (সুরা হিজর : ৯)
যে কেউ এই মহান কিতাবকে অবমাননা করে, সে শুধু কাগজ-কালি নয়; বরং আল্লাহর বাণী, তার হুকুম ও তার মর্যাদাকেই তুচ্ছ করে। তাই কোরআন অবমাননা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়Ñএটি কুফরি ও ইসলামের প্রতি বিদ্বেষের ঘৃণ্য প্রকাশ।
কোরআনের মর্যাদা ও সম্মান
কোরআন হলো আল্লাহর কালাম, যা নবী (সা.)-এর মাধ্যমে মানবজাতির কাছে পৌঁছায়। আল্লাহতায়ালা বলেনÑ‘এটি এমন এক কিতাব, যার আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে হিকমতপূর্ণ ও সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।’ (সুরা হুদ : ১)
আল্লাহর বাণী হিসেবে কোরআনকে ভালোবাসা, পাঠ করা, মুখস্থ রাখা এবং এর আদেশ-নিষেধ মানা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। নবী করিম (সা.) বলেছেনÑ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে কোরআন শিখে এবং তা শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি : ৫০২৭) অতএব, কোরআনকে অবমাননা করা মানে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে অবমাননা করা।
কোরআন অবমাননা হয় কীভাবে?
কোরআন অবমাননার বিভিন্ন রূপ রয়েছে। যথাÑএক. কোরআনের আয়াত নিয়ে উপহাস করা বা ঠাট্টা করা। দুই. কোরআনের অক্ষর বা আয়াত বিকৃত করা। তিন. কোরআনের পৃষ্ঠায় ময়লা লাগানো, ছিঁড়ে ফেলা বা পুড়িয়ে দেওয়া। চার. কোরআনের আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করা। পাঁচ. কোরআনের সত্যতাকে অস্বীকার করা বা সন্দেহ প্রকাশ করা। এসব আচরণ যেকোনো মুসলমানের জন্য ভয়াবহ গুনাহ এবং ঈমান ধ্বংসকারী কাজ।
কোরআন অবমাননাকারীর ধরন
কোরআন অবমাননাকারী দুই শ্রেণির হয়। এক. মুসলমান নামধারী অবমাননাকারী : যে নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে, কিন্তু কোরআনের প্রতি বিদ্রুপ করে বা অসম্মানজনক আচরণ করেÑসে ইসলামের পরিধি থেকে বেরিয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে ঠাট্টা করছো? অজুহাত দিও না; তোমরা ঈমানের পর অবিশ্বাসে লিপ্ত হয়েছো।’ (সুরা তাওবা : ৬৫-৬৬) এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোরআনের আয়াত নিয়ে ঠাট্টা করা কুফরি। দুই. কাফের অবমাননাকারী : যে ইসলাম গ্রহণ করে না এবং কোরআনকে অবমাননা করে, সে দ্বিগুণ শাস্তির অধিকারী, কারণ সে আল্লাহর বাণীকে অস্বীকার ও অবজ্ঞা করে।
কোরআনের ভাষ্যে কোরআন অবমাননাকারীর শাস্তি
কোরআনে সরাসরি এই অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে একাধিক ইঙ্গিত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছেÑ‘যারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান : ৪) আরো ইরশাদ হয়েছেÑ‘যারা আমার স্মরণ [কোরআন] থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের জন্য সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমরা তাদের অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।’ (সুরা ত্বাহা : ১২৪) এখানে দেখা যায়, কোরআনের অবমাননা ও অবহেলা আল্লাহর কঠিন শাস্তির কারণ।
হাদিসের আলোকে শাস্তির ব্যাখ্যা
রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআনের সম্মান রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তাতে আমল করে না, সে কিয়ামতের দিন কঠিনভাবে শাস্তি পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ) অন্যত্র তিনি বলেনÑ‘যে ব্যক্তি কোরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে, আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করবেন।’ (আল-বায়হাকি, শুআবুল ঈমান)
আরো কঠোর ভাষায় বলা হয়েছেÑ‘যে ব্যক্তি কোরআনের আয়াতকে অস্বীকার করে, সে কাফের।’ (মুসলিম, ব্যাখ্যা আয়াত ৯/৬৫-৬৬) অতএব, ইসলামি শরিয়তে কোরআন অবমাননা করা মুরতাদ হওয়ার মতো অপরাধ।
ইসলামি শরিয়তে শাস্তির বিধান
ইসলামি ফিকহের আলেমরা একমত, কোরআন অবমাননাকারী যদি মুসলমান হয়, তবে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃতÑঅর্থাৎ মুরতাদ। মুরতাদের জন্য শরিয়তে মৃত্যুদণ্ড নির্ধারিত। ইমাম মালিক (রহ.), ইমাম আহমদ (রহ.) ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.) প্রমুখ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন অবমাননা করে, সে ইসলাম ত্যাগ করেছে; তাকে তওবার সুযোগ দেওয়া হবে, তওবা না করলে রাষ্ট্রীয়ভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।’
ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ.) বলেনÑ‘আল্লাহর বাণীর প্রতি অবমাননা করা আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহ; এমন অপরাধীকে ক্ষমা করা জায়েজ নয়, যদি না সে আন্তরিকভাবে তওবা করে।’ [আস-সারিমুল মাসলুল, খণ্ড ২] অতএব, কোরআন অবমাননার শাস্তি শুধু পার্থিব আইনেই নয়; বরং পরকালেও ভয়াবহ।
তওবা ও আল্লাহর দয়া
যদিও এই অপরাধ ভয়াবহ, তবু ইসলাম তওবার দরজা উন্মুক্ত রেখেছে। আল্লাহ বলেনÑ‘বলুন, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।’ (সুরা জুমার : ৫৩) যদি কোনো ব্যক্তি অজ্ঞতা, মূর্খতা বা অন্যের প্ররোচনায় কোরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে, তবে আন্তরিক তওবা, ইস্তিগফার ও আমল দ্বারা সে ক্ষমা পেতে পারে।
আধুনিক যুগে কোরআন অবমাননার প্রতিকার
বর্তমান যুগে কিছু ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী কোরআনের অবমাননা করে মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হানে। এর প্রতিকারে আমাদের বেশ কিছু করণীয় রয়েছেÑ
১. আইনিব্যবস্থা : ইসলামি রাষ্ট্রে এমন অপরাধীর জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
২. দাওয়াত ও শিক্ষা : মানুষকে কোরআনের মর্যাদা, ইতিহাস ও বার্তা সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি।
৩. মিডিয়ার জবাবদিহি : অবমাননাকারী প্রচারে অংশ নিলে সেই মিডিয়াগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদেরও আইনের আওতায় আনা।
৪. ঐক্যবদ্ধ অবস্থান : মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুঃসাহসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।
মানবতার মুক্তির দিশারি
কোরআন আল্লাহর সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ বাণী। এটি মানবতার মুক্তির দিশারি, ন্যায় ও সত্যের চূড়ান্ত উৎস। যে ব্যক্তি কোরআনকে সম্মান করে, সে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করে; আর যে এটি অবমাননা করে, সে আল্লাহর ক্রোধ ও লাঞ্ছনা অর্জন করে। অতএব, আমাদের উচিতÑকোরআনকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া, এর হুকুম মানা এবং যারা এর অবমাননা করে তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞান, যুক্তি ও আইন দ্বারা দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা। ইরশাদ হয়েছেÑ‘এ কিতাবকে আমরা অবতীর্ণ করেছি বরকতময় করে, যাতে তারা এর আয়াত নিয়ে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা সাদ : ২৯)
সম্প্রতি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন অবমাননার যে ঘটনা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি রোধে রাষ্ট্রকে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ওই কুলাঙ্গারের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : মুহতামিম, জহিরুল উলুম মহিলা মাদরাসা, গাজীপুর
মক্কার মসজিদুল হারামের অন্যতম পবিত্র স্থান হাতিম। কাবার মূল কাঠামোর অংশ হিসেবে বিবেচিত এ স্থানটি মুসল্লিদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত ও নামাজ আদায়ের আকাঙ্ক্ষিত জায়গা। এখানে শৃঙ্খলাপূর্ণ উপায়ে ইবাদত নিশ্চিত করতে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
১৮ ঘণ্টা আগেখাদ্যগ্রহণ যেমন ক্ষুধা মেটানোর জন্য অপরিহার্য, প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হিসেবে খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যা খায়, যেভাবে খায়—তা তার চরিত্র, নীতি ও রুচির পরিচয় বহন করে। তাই ইসলাম আমাদের খাওয়ার উত্তম সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার শিখিয়েছে।
২ দিন আগেসম্প্রতি ইসলামি আলোচক আমীর হামজা আল্লাহর রাসুল (সা.)–কে ‘সাংবাদিক’ বলেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, যেহেতু নবী (সা.) ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক, তাই রূপক অর্থে তাঁকে সাংবাদিক বলা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই তুলনা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিভ্রান্তিকর এবং রাসুলের মর্যাদার পরিপন্থী।
৫ দিন আগেআমাদের সমাজে বেশ পরিচিত দুটি শব্দ হলো অলি-আওলিয়া। বাঙালি মুসলমান সমাজে সাধারণত মুসলমানদের একটি বিশেষ শ্রেণিকে অলি-আওলিয়া মনে করা হয়। অলি-আওলিয়াদের বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা আছে এমন বিশ্বাসও সাধারণ মুসলমানদের রয়েছে।
৫ দিন আগে