দিনরাতের গুরুত্বপূর্ণ ছয় আমল

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ১৮: ০৭

সময়ের সমষ্টির অপর নাম জীবন। দিনরাতের প্রতিটি মুহূর্ত তাই গুরুত্বপূর্ণ। ইমানদার ব্যক্তি মুহূর্তকাল সময়ও অযথা নষ্ট করেন না। তার পুরো জীবনের প্রতিটা সেকেন্ড আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের জন্য দায়বদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানুষ পাঠিয়েছেন কেবল তাঁর ইবাদতের জন্য।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষ এবং জিন সম্প্রদায়কে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৬) জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটা মুহূর্ত আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে ব্যয় করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মৃত্যু পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত করো।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৯৯) দৈনন্দিন জীবনের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ আমল নিম্নরূপ;

বিজ্ঞাপন

চল্লিশ রাকাত নামাজ:

দৈনন্দিন জীবনে রাসুলুল্লাহ (সা.) চল্লিশ রাকাত নামাজের পাবন্দি করতেন। তন্মধ্যে সতেরো রাকাত ফরজ, বারো রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, বিতরসহ এগারো রাকাত তাহাজ্জুদ। অন্যান্য নফল এবং চাশতের নামাজ ব্যতীতই এই চল্লিশ রাকাত নামাজ ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিনের রুটিনের অন্তর্ভুক্ত।

নামাজ ইসলাম ধর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ইমানদার ব্যক্তির উপর আল্লাহ তায়ালা এটাকে ফরজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে নামাজ কায়েম করা প্রত্যেক ইমানদারের উপর ফরজ।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৩৯৯১) ফরজের পাশাপাশি সুন্নাত ও নফলের পাবন্দি করা উচিত। কারণ কিয়ামত দিবসে ফরজ নামাজের ঘাটতি নফল নামাজের মাধ্যমে পূরণ করা হবে বলে হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়।

কোরআন তিলাওয়াত:

কোরআনুল কারিম মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কালাম। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। এই কিতাবকে হৃদয়ে ধারণকারী, এই কোরআনের বিধিবিধানের উপর আমলকারী এবং এটির তেলাওয়াতকারী ব্যক্তিও শ্রেষ্ঠ। হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২৭) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল হলো কোরআন তেলাওয়াত করা।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস: ২০২২) পরিমাণে অল্প হলেও প্রতিদিন নিয়মতান্ত্রিক কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। উলামায়ে কেরাম বলেন, প্রতিদিনের কোরআন তেলাওয়াত যেন এক পারার চেয়ে কম না হয়।

দরুদ পাঠ:

রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করা সৌভাগ্যের প্রতীক। প্রতিবার দরুদের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা দরুদ পাঠকারীর উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০৮) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নাম শোনার পর যে দরুদ পড়ে না, মহানবী (সা.) তাকে কৃপণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৬) প্রতিদিনের আমলের রুটিনে দরুদ শরিফ পাঠ বাঞ্ছনীয়। এতে জান-মালে বরকত হয়। বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

জিকির-আজকার:

জিকির মানে আল্লাহকে স্মরণ করা। এর সবচেয়ে বড় উপকার হলো হৃদয়ের প্রশান্তি। জিকিরের দ্বারা হৃদয়-মন প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা ইমান এনেছে, তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই হৃদয় সমূহ প্রশান্তি পায়।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ২৮) জিকিরকারীদের জন্য আল্লাহ তায়ালা মাগফেরাত ও পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ এবং জিকিরকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন মাগফেরাত ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ৩৫) হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে স্বীয় রবের জিকির করে আর যে জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত এবং মৃত মানুষের মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪০৭) অর্থাৎ জিকিরকারী ব্যক্তি জীবিত আর যে জিকির করে না, সে মৃত।

তওবা-ইস্তিগফার:

দিনরাতের আমলে তওবা ও ইস্তিগফারের পাবন্দি করা গুরুত্বপূর্ণ। তওবা ও ইস্তিগফার সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩১) রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণে তওবা ও ইস্তিগফার করতেন এবং সবাইকে তা করারও আদেশ করেছেন। তিনি এক হাদিসে বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তিগফার করো। আমি প্রতিদিন একশত বার তওবা ও ইস্তিগফার পাঠ করি।’ (সুনানে কুবরা, হাদিস: ১০২৭৮) ইস্তিগফারের দ্বারা জীবিকা প্রশস্ত হয়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সর্বপ্রকার বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন, এবং সব ধরনের দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা করবেন এবং তার জন্য এমন স্থান হতে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১৮)

দোয়া:

দোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হাদিস শরিফে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে কায়মনোবাক্যে দোয়া করলে সে দোয়া কবুল হবে বলে আশা যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক (আমার নিকট দোয়া করো), আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো (তোমাদের দোয়া কবুল করব)।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৬০) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দোয়া সর্বোত্তম ইবাদত।’ (জামে সগির, হাদিস: ১২৭৫) আল্লাহ তায়ালা সবাইকে নিয়মিত এই আমলগুলো করার তওফিক দান করুন।

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ

মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত