টি-টোয়েন্টিতে এখন ‘ফেল’ করা দল বাংলাদেশ

আরিফুল হক বিজয়
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫, ০৯: ০০
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল । ছবি: সংগৃহিত

বছর খানেক আগে আমেরিকার কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। এবার হারল আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে। এই সিরিজ হারের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি খেলার সামর্থ্য নিয়েও আরেকবার প্রশ্ন উঠছে।

বিজ্ঞাপন

তিন ম্যাচের এই সিরিজের হিসাব-নিকাশের পাল্লায় বাংলাদেশের ব্যর্থতার দিকটিই ভারী হয়ে দাঁড়ায়। সঠিক সিদ্ধান্তের চেয়ে ভুলের দিকটিই প্রখর হয়ে ওঠে, শক্তিমত্তার চেয়ে দুর্বল সত্তাই স্পষ্ট ফুটে ওঠে। হিসাব-নিকাশের ডেবিট-ক্রেডিট মেলাতে গিয়ে আরেকবার চূড়ান্ত হিসাবের সমাধানে ‘ফেল’ টিম বাংলাদেশ।

আরব আমিরাতের সিরিজটি বাংলাদেশ স্রেফ খেলার জন্যই খেলতে গিয়েছিল। সিরিজটা ছিল শুধুই কথা রাখার সিরিজ। গত বছরের নারী বিশ্বকাপ বাংলাদেশে হওয়ার কথা থাকলেও দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেটি হয় আমিরাতে, তবে স্বাগতিক বোর্ড ছিল বিসিবিই। তখনই আমিরাতের বিপক্ষে সে দেশে গিয়ে একটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিসিবি

পাকিস্তানে যেহেতু আমিরাত হয়েই যেতে হতো, তাই বাড়তি সফর না করে পাকিস্তানে যাওয়ার পথেই সিরিজটা খেলে ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারতে চেয়েছিল শিকারি বিসিবি। এখন ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে শিকারি যে নিজেই শিকার!

সিরিজ হারের পেছনে একাদশ সাজানোর দায় প্রবল। একাদশ গঠনে ভুল ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষত, সহ-অধিনায়ক শেখ মেহেদী হাসানের সেরা এগারোতে থাকাটা দলকে ভুগিয়েছে সবচেয়ে বেশি। মেহেদীকে কোচ খেলিয়েছেন ট্রাম্প কার্ড হিসেবে। অনেকটা সাকিব আল হাসানের ভূমিকায়। তিন ম্যাচের দুটিতে সুযোগ পেয়ে ব্যর্থতার চরম প্রদর্শনী দেখিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে ৪ রানের সঙ্গে বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট। ৮ ওভারে ১১.৩৮ ইকোনমিতে রান খরচ করেছেন ৯১।

অধিনায়ক লিটনের ক্ষেত্রে ছুটে যায় আরো বড় প্রশ্নের তীর, অধিনায়ক না হলে লিটন একাদশে থাকতেন? বহুদিন ধরেই অফফর্মে এই ওপেনার। আমিরাতের বিপক্ষে হতশ্রী ব্যাটিংয়ের আরেকটি প্রদর্শনী করলেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। তিন ম্যাচে ২১.৩৪ গড়ে করেছেন ৬৪ রান। সবশেষ ২৭ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তার ফিফটি স্রেফ একটি! এমন একজন দলের অধিনায়ক, যিনি ব্যাট করেন টপঅর্ডারে!

নাজমুল হোসেন শান্ত এক ম্যাচে সুযোগ পেয়ে নামের যথার্থতা প্রমাণ করে ‘শান্ত’ই হয়ে রইলেন। ফিনিশার হিসেবে খেলতে নেমে শামীম হোসেন পাটোয়ারী দেখালেন ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিকের কত তফাৎ। ৩ ম্যাচে করলেন ২১! দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেননি একবারও। এক ম্যাচ বাদ দিলে তাওহিদ হৃদয়ও নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে যে হাস্যকর ফিল্ডিংয়ের জন্ম দিয়েছেন হৃদয় তাতে অনেক দিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের হৃৎপিণ্ড জ্বলবে।

ব্যাটিংয়ে অবশ্য সিরিজে প্রাপ্তিও আছে। যুব বিশ্বকাপজয়ী দুই তরুণ পারভেজ হোসেন ইমন এবং তানজীদ হাসান চিনিয়েছেন নিজেদের। ২ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরিতে ইমন করেছেন ১০০ রান। মূলত তার সেঞ্চুরিতেই প্রথম ম্যাচে জয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। তানজীদ হাসান ৩ ম্যাচে ১ ফিফটিতে করেছেন ১০৯। দুই তরুণের এই ব্যাটিংই সিরিজের একমাত্র পজিটিভ দিক।

ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বোলারদের দায় দেওয়া যায় না। তবু কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হয় তানজিম হাসান সাকিবকে। দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে সিরিজ নিশ্চিত অসম্ভব ছিল না যদি শেষ ওভারটা এলোমেলো না করতেন তিনি। শেষ ওভারে ফুলটস, ওয়াইড, নো বল মিলিয়ে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে দেন তানজিম। প্রথম বলেই ওয়াইড। এরপর ফুলটস, বিশাল ছক্কায় তাকে গ্যালারির ছাদে আছড়ে ফেলেন ধ্রুব পারাশার। ছক্কা হজমের পর ওয়াইড ইয়র্কার করতে গিয়ে কোমর উচ্চতায় নো বল করে বসেন এই তরুণ। ম্যাচটা তখনই শেষ হয়ে যায় কার্যত।

সিরিজের সবচেয়ে দুঃসহ মুহূর্তগুলো অবশ্য উপহার দিয়েছেন ফিল্ডাররা। এই সিরিজের বাজে ফিল্ডিং প্রদর্শনী অনেকদিন জলজ্যান্ত হয়ে থাকবে। এক ক্যাচ নিতে গিয়ে তিনজনের ঠোকাঠুকি, শরিফুলের ওভার থ্রোতে অতিরিক্ত ৫ রান, হৃদয়ের ফেক ফিল্ডিং এবং সময়ক্ষেপণ; সিরিজে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার গল্পটা এখানেই রচিত হয়েছে।

এরপরও এই সিরিজ থেকে শিক্ষণীয় দিক দেখছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমূল আবেদীন, ‘আমাদের জেতা উচিত ছিল, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা একটা প্রক্রিয়া। অনেক সময় দুই পা সামনে আগানোর সময় এক পা পেছাতে হয়। আমার মনে হয় এটা সেটা। আমার মনে হয় এটা কিছুটা হলেও আমাদের মনোযোগ ঠিক জায়গায় নিয়ে আসবে।’

এদিকে অধিনায়ক লিটন সিরিজ হারকে দেখছেন ‘জীবনের অংশ’ হিসেবে। তার ভাষ্য, ‘এটা (সিরিজ হেরে যাওয়া) জীবনের অংশ। যখন আপনি ক্রিকেট খেলবেন, প্রতিপক্ষ ভালো খেলবে, তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে।’

সিরিজ আসে, সিরিজ যায়, মাঝখানে পড়ে রয় পরাজয়ের ধ্বংসাবশেষ। দিনশেষে মাঠের ভুল, ব্যর্থতাকে আড়াল করে ‘শেখার কোনো শেষ নেই’ কিংবা ‘জীবনের অংশ’ বাক্যগুলোই হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আরব আমিরাত সিরিজ থেকেও এর বেশি কিছুই পেল না বাংলাদেশ।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত