হামজা বনাম ছেত্রীর লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০: ০০

এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ ও ভারত ম্যাচ যতই ঘনিয়ে আসছে, দেওয়ান হামজা চৌধুরী আর সুনিল ছেত্রীকে ঘিরে আলোচনার উত্তাপটা ততই বাড়ছে। ভারতের জার্সি গায়ে খেলে কিংবদন্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ছেত্রী। অবসরও নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এই ম্যাচকে ঘিরে ৪০ বছর বয়সে অবসর ভেঙ্গে ফিরেছেন। অন্যদিকে, এখনো বাংলাদেশ দলে অভিষেকই হয়নি হামজা চৌধুরীর। একজন অভিজ্ঞ, আরেকজন সম্ভাবনাময় ফুটবলার। এই দুজন মাঠের লড়াইয়ে একে অপরের মুখোমুখি না হলেও মাতামাতি শুরু গেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের ফুটবলে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে হামজা ও ছেত্রী। দুজনের মধ্যে কে সেরা? এমন তুলনাও হচ্ছে। দুজন দুই ঘরানার ফুটবলার। অবশ্য এ তুলনায় যেতে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তিনি আগেই বলে দিয়েছেন, সুনিল ভারতের হয়ে অনেক কিছু অর্জন করেছেন। আর হামজা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা ফুটবলার। জামাল বুঝিয়ে দিলেন, যা বোঝানোর। তবে ২৫ মার্চ শিলংয়ের মাঠে বাংলাদেশ আর ভারত ম্যাচ মূল লড়াইটা যে হামজা বনাম ছেত্রীর মধ্যেই হবে, সেটি বলা যেতেই পারে।

গত জুনে কলকাতার মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কুয়েতের বিপক্ষে ভারতের ম্যাচ ছিল। সেই ম্যাচ খেলেই অবসরে যান ছেত্রী। কিন্তু ৪০ বছর বয়সি এই ফরোয়ার্ড অবসর ভেঙে ফিরেছেন। দক্ষ নেতৃত্ব, ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং আর কঠোর পরিশ্রমে দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারত ফুটবল মাতিয়ে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ছেত্রী। জাতীয় দলের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসিদের পরই চতুর্থ নম্বরে নাম লেখান এই ভারতীয়। মোহনবাগানের হয়ে ২০০২ সালে ফুটবলে তার যাত্রা শুরু। এরপর ভারতজুড়ে খেলেছেন। পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্টিং সিপিতেও নাম লেখান। অবসর থেকে ফিরে প্রীতি ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে গোল করে এই ফরোয়ার্ড জানিয়ে দেন, বয়স পড়তির দিকে হলেও দেশকে তার কিছু দেওয়ার বাকি আছে। অন্যদিকে, এশিয়ান ফুটবলে নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন হামজা। ২৭ বছর বয়সি এই মিডফিল্ডার প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটির হয়ে খেলে অনেক সাফল্য পেয়েছেন। বর্তমানে ধারে ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়নশিপে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে খেলছেন। ২০১৬ সালে লেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ী দলে ছিলেন হামজা। এফএ কাপ জয়ের অভিজ্ঞতাও হয়েছে তার। এ ছাড়া ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলেছেন। ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠা হামজা শিকড়ের টানেই মূলত বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। তাকে সুস্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। হামজাকে বাংলাদেশের মেসি বলা হচ্ছে। ইংলিশ ফুটবলে নিজেকে খ্যাতিমান মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন হামজা। তার শারীরিক সক্ষমতা, পাসিং রেঞ্জ আর শীর্ষ স্তরের ফুটবলে খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

হামজা ও ছেত্রী- দুজনই ভিন্ন পজিশনে খেলেন। ক্যারিয়ারে ভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তারা। তাই তাদের মধ্যে তুলনা করাটা কঠিন। ছেত্রী সেন্টার ফরোয়ার্ড। ভারতের আক্রমণে ভাগের মূল অস্ত্র। পজিশনিং, দক্ষতা আর ফিনিশিংয়ের কারণে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ছেত্রী। চাপের মধ্যে কঠিন পরিস্থিতিতে গোল করাটা দক্ষতাটা অভ্যাসেই যেন পরিণত করলেন এই ফুটবলার।

অন্যদিকে, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ট্যাকলিং, স্ট্যামিনা আর আক্রমণ প্রতিহত করার দক্ষতা তাকে আলাদা করেছে। যদিও সফল স্কোর নন। তার কাজই হলো ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রণ করা আর ফরোয়ার্ডদের বল জোগান দেওয়া। ইংল্যান্ডে বিশ্বমানের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এমন দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন হামজা। যদি ছেত্রী হন ফিনিশার তাহলে হামজা বলা যায় ইঞ্জিন। ছেত্রী একাধিকবার নেহরু কাপ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতেছেন। এ ছাড়া এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, বেঙ্গালুরু এফসির হয়ে ঘরোয়া ফুটবলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। অর্জুনা অ্যাওয়ার্ড, পদ্মশ্রী ও খেল রত্ন জেতা ছেত্রী ভারতীয় তরুণ ফুটবলারদের জন্য পথপ্রদর্শক। আর হামজার অর্জনগুলো ক্লাবকেন্দ্রিক। সেরা অর্জন হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছেন এই ফুটবলার। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রভাবও এখনো পরীক্ষিত নয়। অবশ্য দলে তার অন্তর্ভুক্তিতে মনোবল বেড়েছে বাংলাদেশের। হামজার কারণে বাংলাদেশের মিডফিল্ড এখন শক্তিশালী দলগুলোর মতোই। এই দুই ফুটবলারের প্রভাবটা সামনে ম্যাচে প্রমাণ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ও ভারত ম্যাচে অভিজ্ঞতা বনাম সম্ভাবনার ক্ল্যাসিক ফুটবল মঞ্চায়নই হবে। হামজা ও ছেত্রীর মধ্যে কে রাঙিয়ে দেবেন শিলংয়ের মঞ্চ, ২৫ মার্চের রাত সেই উত্তরের অপেক্ষায়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত