নতুনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া বাংলাদেশ সেই পুরোনো পথেই

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ০০

গত শনিবার দুপুরে নাজমুল বলেছিলেন, টেস্টে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নত করতে এই সিরিজে ‘নতুন শুরু’ করতে চাই। গতকাল রোববার দুপুরেই নাজমুলের দল ১৯১ রানে গুটিয়ে আরেকবার জানিয়ে দিল, তারা এখনো পুরোনো দিনেই আছে!

প্রথম ইনিংসে এই রান আরো কম হতে পারত। ভাগ্য ভালো যে শূন্য রানে জীবন পেয়ে মুমিনুল হক করলেন ৫৬। আর শেষের দিকে ১৪ রানে ক্যাচ মিসের সুযোগ কাজে লাগিয়ে উইকেটকিপার জাকের আলী বাড়তি আরো ১৪ রান যোগ আউট হলেন ২৮ রান তুলে। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে টি-টোয়েন্টি মেজাজে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিস টাইমিং শটে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন জাকের ২৮ রানে। এই দুইয়ের মাঝে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ৬৯ বলে ৪০ রান করে যে কায়দায় আউট হলে দেখে মনে হলো জিম্বাবুয়ের ফিল্ডারদের তিনি ক্যাচ প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন! মেহেদি হাসান মিরাজের আউটের ভঙ্গিটা সবচেয়ে করুণ ও অসহায়। মুশফিকও পুল শটে ত্রিশ গজের বাউন্ডারি ক্লিয়ার করতে পারলেন না। ছন্নছাড়া এই ব্যাটিংয়ে মাথা নুইয়ে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হলো ১৯১ রানে। জবাবে দিনে মাত্র ১৪.১ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া জিম্বাবুয়ের জোগাড় কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৭। জিম্বাবুয়ের এই সহজ ব্যাটিং আরেকবার জানিয়ে দিল সমস্যা আসলে সিলেটের উইকেটে নয়; বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে!

বিজ্ঞাপন

প্রথম ইনিংসে এখনো ১২৪ রানে পিছিয়ে জিম্বাবুয়ে। তবে যে কায়দায় তারা ব্যাট করছে এবং বাংলাদেশের বোলিংকে মামুলি বানাচ্ছে তাতে পরিষ্কার যে আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে বড় লিডই পাচ্ছে তারা।

সিলেট টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তিতে ছিল কেবল প্রথম সেশনে। দুই ওপেনারকে হারালেও দুই সিনিয়র নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের জুটিতে বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে। তবে উইকেটে সেট হয়ে নাজমুল যে কায়দায় আউট হলেন তাকে বলে সফট ডিসমিসাল! মুশফিক অনেক জোরে পুল শট খেললেন কিন্তু শর্ট মিডঅনেই আটকে গেলেন। শূন্য রানেই আউট হতে পারলেন মুমিনুল। কিন্তু উইকেটকিপার মায়াভো তার ক্যাচটা গ্লাভসে রাখতে পারলেন না। মুমিনুল ফিফটি করলেন এবং সেখানেই থামলেন। ১০৫ বল খেলার একজন ব্যাটার কেন অমন শট খেলবেন? মুমিনুলকে এই প্রশ্নটা কোচ ফিল সিমন্স করতেই পারেন। তবে এই ইনিংসে সবচেয়ে হাস্যকর এবং অসহায়ত্ব নিয়ে ফিরলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মুজারাবানির শর্ট বলে যে ভঙ্গিতে তিনি শরীর বাঁচাতে ব্যাট উঁচিয়ে গ্লাভসে বল লাগালেন তা দেখে মনে হচ্ছিল তিনি বোধ করি দলের ১১ নম্বর ব্যাটার! তাইজুল ইসলামও ফিরলেন সিঙ্গেল ডিজিটে। ৩ উইকেটে ১২৩ থেকে বাংলাদেশ গড়িয়ে পড়ল ৭ উইকেটে ১৪৬ রানে। মাত্র ২৩ রান যোগ হলো। পড়ল ৪ উইকেট। তাও আবার মাত্র ১০ ওভারের মধ্যে। লেজের সারিতে হাসান মাহমুদ ৪ বাউন্ডারিতে ১৯ রান করায় স্কোর কোনো মতে দুইশর কাছাকাছি গেল।

পুরো সময় বাংলাদেশ দল যে ব্যাটিং করল তাতে স্বস্তির কিছু মিলল না, বরং যা বেরিয়ে এলো তার নামÑকঙ্কাল! এই ছিন্নভিন্ন চেহারা যে শুধু ব্যাটিংয়ে তা কিন্তু নয়। বোলিংয়েও সিলেট টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশের কাটল একরাশ হতাশা নিয়ে।

১৪.১ ওভারের কোনো সময়ে জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনারকে বাংলাদেশের বোলাররা সমস্যায় ফেলতে পেরেছেন বলে মনে হলো না। আজ দ্বিতীয় দিনও জিম্বাবুয়ে ব্যাটিংয়ে এমন দাপুটে চেহারা যদি দেখাতে পারে তাহলে এই টেস্টে বাংলাদেশের খুঁড়িয়ে চলা আরো বাড়বে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশের ইনিংস: ১৯১/১০ (৬১ ওভার); মমিনুল ৫৬, শান্ত ৪০, জাকের ২৮, হাসান ১৯, জয় ১৪; মাদাকাদজা ৩/২১, মাজারাবানি ৩/৫০

জিম্বাবুয়ের ইনিংস: ৬৭/০ (১৪.১ ওভার); বেনেট ৪০*, কারান ১৭*; মিরাজ ০/১০

প্রথম দিন শেষে জিম্বাবুয়ে ১২৪ রানে পিছিয়ে

টস: বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত