প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারের সময় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ঐতিহাসিক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সোনালী স্মৃতি থেকে ইতিহাস হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় একটি বড় অর্জন। সেমিফাইনালের সুপার রাইভাল ভারতকে গোল্ডেন গোলে হারিয়ে ফাইনাল এবং তারপর জাতীয় স্টেডিয়ামে মালদ্বীপের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
আরো পেছনে তাকালে দেখা যাবে, ১৯৯৩ সালে ষষ্ঠ সাউথ এশিয়ান গেমস আয়োজন করে ছোট্ট অর্থনীতির বাংলাদেশ। এই গেমসের পুরোটাই তত্ত্বাবধানে ছিল খালেদা জিয়ার প্রশাসন। এই গেমসে সাতটি দেশ অংশ নেয়। খেলা হয় ১১ ডিসিপ্লিনে। অবশ্য গেমসের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস। তবে খালেদা জিয়ার ক্যারিশম্যাটিক লিডারশিপের প্রভাব বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপকভাবে পড়ে। দেশের খেলাধুলায় যেন কোনোভাবেই রাজনীতি ঢুকে না পড়ে, তা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলেন তিনি। যে কারণে বিভিন্ন স্পোর্টস ইভেন্টে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে হাজির হতেন খালেদা জিয়া।
সরকারি অর্থ বরাদ্দ দিয়ে নিজের নামে বাহবা নেওয়া আর সেই সুবাদে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে পছন্দের মানুষকে বসিয়ে কলকাঠি নাড়ানোর রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না তিনি। খালেদা জিয়ার এই পলিসি পুরোপুরি কার্যকারিতার প্রমাণ করেন তার ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। খেলাধুলার প্রতি বাড়তি ঝোঁক থাকার কারণেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দেশের ক্রিকেটকে আমূলে বদলে দেওয়ার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক আর প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েও খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ছেলেকে বড় পদে বসানোর চাপ আসেনি কখনো। ফলে রাজনীতির মাঠে বিএনপির প্রতিপক্ষ হলেও সাবের হোসেন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করে গেছেন কোকো।
নিজের রাজনৈতিক বলয় থেকে খেলাধুলাকে দূরে সরিয়ে রাখলেও তার উন্নয়নের জন্য ছিল সুস্পষ্ট পলিসি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিএনপির ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছিলেন। যার বড় একটা অংশ জুড়ে থাকল ক্রীড়াঙ্গন উন্নয়নের রোডম্যাপ। প্রতি জেলায় একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ক্রীড়া একাডেমি প্রতিষ্ঠা মাল্টিগেমস ইভেন্টে বাংলাদেশের অর্জন বাড়াতে অলিম্পিক একাডেমি সরকারি অনুদানের পাশাপাশি সিএসআরের আওতায় বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় তুলে এনে জাতীয় তালিকা তৈরি ও ডিসিপ্লিন ভিত্তিক উন্নত প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফল ক্রীড়াবিদদের জাতীয় পুরস্কার এবং এই সবকিছুর সঙ্গে বরাবরের মতোই যোগ করা ছিল খালেদা জিয়ার মূল দর্শন ক্রীড়াঙ্গন এবং সব পর্যায়ের ক্রিয়া নেতৃত্বকে মূলধারার রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বাইরে রাখতে হবে। ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের এই কমপ্লিট রোড ম্যাপ ধরে কাজ করে যাওয়ার সুযোগ অবশ্য পাননি খালেদা জিয়া। তবে স্বপ্ন দেখে গেছেন দেখিয়ে যাওয়া সেই পথেই হাঁটবে তার উত্তরসূরিরা—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

