আয়োজক পাকিস্তান পুরস্কারমঞ্চে অনুপস্থিত!

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৫, ০৯: ০০

টুর্নামেন্টের আয়োজক পাকিস্তান। অথচ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল শেষে পুরস্কারমঞ্চে পাকিস্তানের একজন প্রতিনিধিও ছিলেন না। পুরো মঞ্চজুড়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের হর্তাকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আইসিসির চেয়ারপার্সন জয় শাহ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি রজার বিনি, বিসিসিআই সেক্রেটারি দেবজিৎ সাইকিয়া ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক রজার টোয়েসে ফাইনালের পুরস্কারমঞ্চে হাজির ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, মর্যাদাপূর্ণ এই টুর্নামেন্টের আয়োজক পাকিস্তান হলেও তাদের একজনও ফাইনালের পোডিয়ামে ছিলেন না। পুরো বিষয়টা বড্ড বেশি চোখে লেগেছে।

এ বিষয়ে পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার বলেন, ‘কী আশ্চর্য, পুরস্কারমঞ্চে পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধিকেই দেখা গেল না! ভারত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে। এ টুর্নামেন্টের হোস্ট বা আয়োজক ছিল পাকিস্তান। কিন্তু অবাক হলাম ফাইনালের পুরস্কারমঞ্চে পাকিস্তানের কাউকে না দেখে। সত্যি বলতে এটা আমার চিন্তারও বাইরে ছিল। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কেন মঞ্চে পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কেউ ছিল না। এই বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের কারো থাকা অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। তবে দুঃখজনক বিষয় হল, আমি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কাউকে সেখানে দেখলাম না।’

বিজ্ঞাপন

কেন এমন হলো?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, দুবাই স্টেডিয়ামে ফাইনাল দেখতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচিত কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। যদিও এ টুর্নামেন্টের আয়োজক ছিল পাকিস্তান। টুর্নামেন্টের ফাইনাল দেখতে এবং সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নকভি দুবাই সফরে যাননি। পিসিবি তাদের প্রতিনিধি হিসেবে টুর্নামেন্টের ডিরেক্টর সুমাইয়ার আহমেদকে দুবাইয়ে পাঠায়।

তবে প্রটোকল অনুযায়ী বিজয়ী মঞ্চে বোর্ডের কোনো চাকরিজীবী বা কর্মচারীর থাকার অনুমতি নেই। এই মঞ্চে কেবল বোর্ডের নির্বাচিত সদস্য বা বোর্ড পরিচালকরাই উঠবেন। আইসিসির চেয়ারপারসন জয় শাহ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি রজার বিনি, বিসিসিআই সেক্রেটারি দেবজিৎ সাইকিয়া ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক রজার টোয়েসে প্রটোকল অনুযায়ী ওই মঞ্চে ছিলেন।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দুবাই পর্বের টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর আন্দ্রে রাসেলও মঞ্চে ওঠার অনুমতি পাননি। কারণ সেই একই, এই মঞ্চে ওঠার অধিকার কেবল বোর্ড পরিচালক ও সদস্যদের জন্য সীমিত।

পুরস্কারমঞ্চে পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধি না থাকার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের বর্ষীয়ান ক্রিকেট সাংবাদিক কামার আহমেদও। তিনি বলেন, ‘এই মঞ্চে পাকিস্তানের কারো না থাকাটা ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যেও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকে ভ্রু কুঁচকেছেন। পুরো বিষয়টা এখন আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছে।’

৮ দলের ২০ দিন এবং ১৫ ম্যাচের এ টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছে দুটি দেশে। পাকিস্তানের লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। টুর্নামেন্টের পূর্বশর্ত অনুযায়ী ভারত তাদের কোনো ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান যায়নি। তাদের সবগুলো ম্যাচ আয়োজিত হয় দুবাইয়ে। যেহেতু ভারত ফাইনালে উঠে আসে, তাই ফাইনালের ভেন্যুও ছিল দুবাই। হাইব্রিড মডেলের এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষ পর্যন্ত ভারত জিতলেও এ টুর্নামেন্ট ঘিরে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। টুর্নামেন্টে ভারতই একমাত্র দল, যারা তাদের সব ম্যাচ একই ভেন্যুতে খেলতে পেরেছে। টুর্নামেন্টের মাঝপথে তাদের কোনো বিমান ভ্রমণ করতে হয়নি। হোটেল থেকে মাঠ, আবার মাঠ থেকে হোটেল ভারতীয় ক্রিকেট দলের ভ্রমণ বলতে গেলে শুধু এতটুকুই ছিল। অন্যদিকে ফাইনালের আরেক দল নিউজিল্যান্ডকে দুদফায় দুবাই সফরে আসতে হয়েছে। হিসাব জানাচ্ছে, এ টুর্নামেন্টে খেলার মাঝে তাদের সব মিলিয়ে সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার পথ বিমানে ভ্রমণ করতে হয়েছে! এক ভেন্যুতে খেলার এই সুবন্দোবস্ত ভারতকে অবশ্যই বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। দুবাইয়ের কন্ডিশন এবং মাঠের পরিবেশ ও আচরণের সঙ্গে বাকি দলগুলোর চেয়ে ভারত বেশি অভ্যস্ত হতে পেরেছে। তবে এই অভিযোগ উঠলেও এটা ঠিক যে, পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে ভারত মাঠের ক্রিকেটে ছিল ভীষণ দাপুটে। পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতে তারা ভীষণ হিসাবি ক্রিকেট খেলেছে। ব্যাটে-বলে-অধিনায়কত্বে বাকিদের টেক্কা দিয়েছে পরিষ্কার ব্যবধানে।

পাঁচ ম্যাচের সবকটিতে জিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। ৯ বারের এ টুর্নামেন্ট সবচেয়ে বেশি তিনবার জিতেছে ভারত। এবারের আসরে আট দলের মধ্যে কেবল আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কোনো ম্যাচ খেলতে হয়নি ভারতকে। বাকি প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে ভারত। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডকে হারায় দুবার। একবার গ্রুপ পর্বে, দ্বিতীয়বার ফাইনালে হারিয়ে ট্রফি জিতল।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত