আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় হবে এশিয়ান নারী ফুটবলের ২১তম আসর। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ মহাদেশীয় নারী ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে খেলবে বাংলাদেশ। গত জুলাইয়ে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত বাছাই পর্বে অপরাজিত থেকে মূল পর্বে নাম লেখায় ঋতুপর্ণা, আফঈদারা। এরপর থেকে এশিয়ান কাপ ঘিরে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে ফুটবল ফেডারেশন। এরই ধারাবাহিকতায় এশিয়া ও এশিয়ার বাইরে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে নারী দলের ম্যাচ আয়োজন করছে বাফুফে। গত অক্টোবরে ফিফা উইন্ডোতে র্যাংকিংয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা শক্তিশালী থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সর্বশেষ ঘরের মাঠে ইউরোপের দল আজারবাইজান ও মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলেছে তারা। সামনে এশিয়ান কাপের আগ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ। সেখানে কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলার কথা রয়েছে।
এ পর্যন্ত এশিয়ান কাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে যে চারটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ নারী দল, প্রতিটিতেই হেরেছে। তবে ম্যাচ হারলেও সম্ভাবনাময় ফুটবল খেলেছেন ঋতুপর্ণারা। সমালোচনা উঠেছে, বাংলাদেশের এই টানা ব্যর্থতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ইংলিশ কোচ জেমস পিটার বাটলারের ‘হাই লাইন ডিফেন্স’। এ কৌশলে প্রতিপক্ষের পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল খাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে ঘটনাটিই একের পর এক ম্যাচে ঘটছে। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে (৩-০ ও ৫-১) মোট আট গোল হজম করে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে মালয়েশিয়ার কাছে ১-০ গোলে হারের কারণ জন্য বাটলারের ‘হাইলাইন ডিফেন্সই’ দায়ী। আজারবাইজানের বিপক্ষেও ওই কৌশলে সুবিধা করতে পারেনি দল। বাংলাদেশ দলের বাস্তবতায় এ কৌশল পুরোপুরি প্রয়োগ করা খুবই কঠিন। ‘হাইলাইন ডিফেন্স’ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হলেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় কোচ বাটলার। আজারবাইজান ম্যাচের পর যেভাবে খেলেছে তার দল, সেখানে ঋতুপর্ণাদের দশে দশ মার্কই দিলেন এই কোচ। বাটলার বলেন, ‘আমরা যে দলটার বিপক্ষে খেললাম, পেশাদার পর্যায়ে তারা প্রতি দিন, প্রতি সপ্তাহে খেলে। তাদের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচ থেকে অনেক ইতিবাচক দিক নেওয়ার আছে। যদি আপনারা প্রচেষ্টার কথা বলেন, আমি মেয়েদের দশে দশ দেব।’
বাটলার ‘হাইলাইন ডিফেন্স’ কৌশল থেকে বেরিয়ে না এলে এশিয়ান কাপে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সাবেক নারী ফুটবলার অংম্রা চিং মারমা আমার দেশকে বলেন, ‘এখন আধুনিক ফুটবল খেলা হচ্ছে। হাইলাইন ডিফেন্স চেষ্টা করা যায়। কিন্তু আমরা এখনো সেই লেভেলে যাইনি। এই কৌশলে খেললে আমরা গোল খাব। কারণ বড় দলগুলোর বিপক্ষে আমরা রানিংয়েও পারব না, নানা দিক থেকে তারা এগিয়ে থাকবে। হাইলাইন ডিফেন্সে সাফের দলগুলোর বিপক্ষে খেলা যায়। কিন্তু বাইরে দলের বিপক্ষে খেলা ঠিক হবে না।’ সম্প্রতি নারী দল যে চারটি ম্যাচে হেরেছে, সেই ম্যাচগুলো দেখেছেন অংম্রা চিং মারমা। তিনি বলেন, ‘কাউন্টার অ্যাটাকেই গোল হজম করেছি আমরা। যখন আপনি টপ লেভেলের টিমের সঙ্গে খেলতে যাবেন, তখন বিপদে পড়বেন। উচিত হবে, যতটুকু সম্ভব ডিফেন্স ধরে রেখে খেলার।’ অংম্রা চিং মারমার মতে, আরো বেশি শক্তিশালী রক্ষণভাগ নিয়ে এশিয়ান কাপে খেলতে যাওয়া উচিত বাংলাদেশের। ইউরোপিয়ান টিমে হিসেবে আজারবাইজানের বিপক্ষে ভালো করেছে মেয়েরা। তবে রক্ষণ দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে দলের। অংম্রা চিং মারমা বলেন, ‘রুপনা, মারিয়া ও মনিকারা দারুণ খেলেছে। তবে ডিফেন্স লাইন আরো ভালো করা দরকার। ওদের হাইট দেখেন, আঁখি, মাসুরা ছিল ওই লেভেলের হাইটে। তাদের নিয়ে ডিফেন্সে লাইনটা ভালো করা যায়।’
সাবেক নারী ফুটবলার ও কোচ রেহেনা পারভীন আমার দেশকে বলেন, ‘দলে সাবিনাদের অন্তর্ভুক্তি হলে ভালো হতো। তাদের তো পারফর্ম কমেনি। তাদের নিতে পারত কোচ।’
অংম্রা চিং মারমাও আজারবাইজন ম্যাচে সাবিনদের মিস করার কথা বললেন, ‘সাবিনা ও কৃষ্ণাকে মিস করলাম। অহরহ অ্যাটাকিং ছিল। জুনিয়র যারা ছিল, ওরাও ভালো খেলে। তবে সিনিয়ররা থাকলে আরো ভালো হতো। ড্র হলে ভালো হতো।’

