ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব কখনো ধরা দেয়নি আর্সেনালের হাতে। তবে সুযোগ যে আসেনি, ব্যাপারটা ঠিক তেমন কিছু নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ প্রথমবারের মতো এসেছিল গুনে গুনে ঠিক ১৯ বছর আগে। কিন্তু ২০০৫-০৬ মৌসুমের মহাদেশীয় শিরোপা হাতছানি দিয়ে ডাকলেও লাভ হয়নি। সেন্ট-ডেনিসে সুযোগটা আসলে কাজে লাগাতে পারেনি গানাররা। স্তেদে ডি ফ্রান্সে তাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল সেবার বার্সেলোনা। তারচেয়ে বড় কথা- আর্সেনাল ইউরোপের এলিট টুর্নামেন্টের শিরোপা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ফ্রান্সের রাজধানীতে।

আজ ফের চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নাম লেখানোর সুযোগ। সামনে সুযোগ রয়েছে শিরোপা জয়েরও। কিন্তু ইংলিশ জায়ান্ট ক্লাবটিতে খেলতে হবে নিজেদের সেই ‘অপয়া’ প্যারিসের মাটিতে। সেমিফাইনালের ফিরতি লেগের ম্যাচে আজ বুধবার রাতে তাদের প্রতিপক্ষ যে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। ফাইনালে উঠতে হলে ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের হারাতে হবে পার্ক দেস প্রিন্সেসের গ্যালারিভর্তি ফরাসি সমর্থকদের সামনে। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, সেই দুঃসহ পুরোনো স্মৃতি ক্রমাগত কড়া নেড়ে চলেছে আর্সেনালের দুয়ারে।

একে তো ভেন্যু শহর প্যারিস আর্সেনালকে মানসিকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে, তার ওপর নিজেদের মাঠ এমিরেটস স্টেডিয়ামে পিএসজির কাছে ১-০ গোলে হেরে মাঠের লড়াইয়ে পিছিয়ে রয়েছে কোচ মিকেল আর্তেতার শিষ্যরা। দুর্দশা এখানেই শেষ নয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাও খুইয়ে ফেলেছে তারা লিভারপুলের কাছে। ব্যালন ডি’অর জয়ের লড়াইয়ে থাকা ওসমান দেম্বেলের একমাত্র গোলে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে কোচ লুইস এনরিকের ক্লাবটি। শিরোপার আশা জিইয়ে রাখতে হলে দারুণ কিছুই আজ রাতে করতে হবে আর্সেনালকে। উপহার দিতে হবে দুর্বার পারফরম্যান্স। জিততে হবে কমপক্ষে ২-০ গোলের ব্যবধানে। যেমনটা তারা করে দেখিয়েছে শেষ চারে ওঠার পথে। কোয়ার্টার ফাইনালে বার্নাব্যুতে ‘ইউরোপের রাজা’ খ্যাত রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে জয়ের সুখস্মৃতি থেকে নিশ্চিত প্রেরণা জুগিয়ে নেবে গানাররা।

পিএসজির মাঠে রাত ১টায় মাঠে গড়াবে দুদলের হাইভোল্টেজ ম্যাচটি। প্যারিসে জয়ের সন্ধান পেলে নিজেদের ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট কাটবে আর্সেনাল। তাই সুযোগটা কাজে লাগাতে মহারণের ম্যাচটিতে জীবন দিয়ে লড়াই করতে চান কোচ আর্তেতা। ইএসপিএনে এক সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে এই ফুটবল গুরু বলেন, ‘লড়াইটি উত্তাপ ছড়াচ্ছে, গায়ের রোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে, দিনটির অপেক্ষা করছি, খুব প্রস্তুত, আত্মবিশ্বাসী (বলেই অনুভূতি হচ্ছে) এবং জানি যে, এটাই সুযোগ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলার। এ পর্যায়ে আসার পর লক্ষ্য পূরণের জন্য জীবন দিয়ে লড়াই করা উচিত।’

এবারের মৌসুমে ইনজুরি বেশ ভুগিয়েছে আর্সেনালকে। এখনও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার রয়েছেন মাঠের বাইরে। নিষেধাজ্ঞার খড়গ নিয়ে শেষ চারের প্রথম লেগে দর্শক হয়ে ছিলেন মাঝমাঠের টমাস পার্টি। তবে শঙ্কা কাটিয়ে ডু অর ডাই ম্যাচে ঘানার এ তারকা প্লে-মেকারকে পাচ্ছে গানাররা। মাঠে তার ফেরাটা আর্সেনালের জন্য খুশির খবরই বটে।

পিএসজির জন্য রয়েছে অস্বস্তিকর কিছু বিষয়। ফরাসি লিগ ওয়ানে স্ত্রাসবুর্গের মাঠে ২-১ গোলে হারের তেতো স্বাদ হজম করেই মাঠে নামতে যাচ্ছে পিএসজি। নিজেদের সব শেষ ম্যাচ জয়ের প্রেরণা সঙ্গী করতে পারেনি ফ্রান্সের জায়ান্ট ক্লাবটি। একই ভাগ্য বরণ করেছে আর্সেনালও। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের মাঠ এমিরেটস স্টেডিয়ামে গানাররা সমান ব্যবধানে ধরাশায়ী হয়েছে বোর্নমাউথের কাছে। তাইতো হারের হতাশা সঙ্গী করে মাঠে নামতে হচ্ছে মিকেল আর্তেতার শিষ্যদেরও। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ওঠার উচ্ছ্বাসে মাতবে কারা- সেটা দেখার অপেক্ষায় ফুটবল দুনিয়ার তামাম অনুরাগী।