সমঝোতা ভেস্তে গেল বিসিবির নির্বাচনে

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ০০
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৩৭

সামনে যত সময় গড়াচ্ছে- বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন ঘিরে ততই নাটকীয়তা সৃষ্টি হচ্ছে। এবার বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের হাইকোর্টে করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার আশঙ্কায় পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে থাকা ১৫টি ক্লাব। আদালত এই ১৫টি ক্লাবের বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে এই ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলারদের বিসিবির নির্বাচনে ভোট দেওয়া এবং পরিচালক পদে প্রার্থী হওয়ার বৈধতা বড় ধরনের জটিলতায় পড়ল।

বিজ্ঞাপন


গতকাল রাতে এই রিপোর্ট লেখার সময় এই বিষয়ে ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলর ও এসব ক্লাব থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, এই নির্বাচন থেকে শুধু তারাই নন, আরো অনেকেই সরে দাঁড়ানোর চিন্তা করছেন। সেই সিদ্ধান্ত তারা আজ বুধবার জানাবেন। বিসিবির ৬ অক্টোবরের নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিন আজ। সেই সঙ্গে আজই নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা জানাবে।


নির্বাচন কমিশন অবশ্য এর আগে বিতর্কিত এই ১৫ ক্লাব ছাড়াই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে অবশ্য আপিল করে ভোটাধিকার ফিরে পায় ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলররা। কিন্তু বিসিবির নির্বাচনে ক্লাব ক্যাটাগরিতে পরিচালক পদে ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়। রিট হয়। আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা এলো নতুন করে বহুল বিতর্কিত এ ১৫ ক্লাবের বিরুদ্ধে।


গতকাল এ ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরদের ভোটাধিকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন বিসিবি সাবেক সভাপতি ও নির্বাচনে পরিচালক প্রার্থী ফারুক আহমেদ। হাইকোর্টে করা এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় পড়ল বিতর্কিত এ ১৫ ক্লাব। এই ক্লাবগুলো হলো- এক্সিউম ক্রিকেটার্স, ঢাকা ক্রিকেট একাডেমি, মোহাম্মদপুর ক্রিকেট ক্লাব, নবাবগঞ্জ ক্রিকেট কোচিং একাডেমি, পূর্বাচল স্পোর্টিং ক্লাব, গুলশান ক্রিকেট ক্লাব, ওল্ড ঢাকা ক্রিকেটার্স, ভাইকিংস ক্রিকেট একাডেমি, বনানী ক্রিকেট ক্লাব, নাখালপাড়া ক্রিকেটার্স, মহাখালী ক্রিকেট একাডেমি, ধানমন্ডি ক্রিকেট ক্লাব, প্যাসিফিক ক্রিকেট ক্লাব, স্যাফায়ার স্পোর্টিং ক্লাব ও আলফা স্পোর্টিং ক্লাব।


এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ক্লাবগুলো আদালতে চ্যালেঞ্জে যাবে কি না, সেটা স্পষ্ট করে গতকাল রাতে কেউ জানাতে পারেননি। উল্লেখ্য, দুর্গাপূজার ছুটিতে আগামী রোববার পর্যন্ত আদালত বন্ধ থাকছে।


আদালতের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলররা বিসিবি নির্বাচন ভোট দিতে পারবেন না এবং তাদের প্রার্থিতাও বাতিল হবে। এই ক্লাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম ভাইকিংস ক্রিকেট একাডেমি। এই ক্লাব থেকে কাউন্সিলরশিপ নিয়েছিলেন বিসিবি বর্তমান পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু। তিনি নির্বাচনে প্রার্থীও হন। এবার নির্বাচন থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কায় মিঠু! অন্যদিকে, এক্সিউম ক্রিকেটার্সের কাউন্সিল ইসরাফিল খসরুও পরিচালক পদে প্রার্থী হন। তারও নির্বাচনের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে নাখালপাড়া ক্রিকেটার্সের হয়ে কাউন্সিলর হন মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। তিনিও ভোটাধিকার হারাতে পারেন।


নতুন করে ১৫টি ক্লাব বাদ পড়ায় বিসিবি নির্বাচন ঘিরে নতুন মেরূকরণ হচ্ছে। ১৫টি ক্লাবের ভোট হারানোর শঙ্কায় তামিম ইকবালের প্যানেল! যে ১৫টি ক্লাব নির্বাচনে থাকছে না, প্রত্যাশা করা হয় তাদের ভোট তামিম ইকবালের প্যানেলে পড়ত। অন্যদিকে, বেশ কদিন ধরে ক্রিকেটাঙ্গনে আলোচনার বিষয় ছিল- সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থি প্যানেলের মধ্যে সমঝোতা হচ্ছে। দুপক্ষের মধ্যে ঢাকার ক্লাব ক্যাটাগরির ১২টি পরিচালক পদ ৯/৩ বা ১০/২ এই হিসাবে ভাগ করে নেওয়ার সমঝোতা! কিন্তু গত সোমবার রাতে এক সভায় সেই আলোচনা নতুন মোড় নিয়েছে।

দৃশ্যপট বদলে যাওয়ার মূল আলোচনায় উঠে এসেছে পরিচালক প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদের নাম। ফারুক আহমেদকে নিয়ে মতানৈক্যের কারণেই ঢাকার ক্লাব কোটায় ১২ জন পরিচালক ভাগাভাগির বিষয়ে আমিনুলদের সঙ্গে তামিমদের সমঝোতা হচ্ছে না। তামিমপন্থিদের সঙ্গে বৈঠকে ফারুককে রাখার বিষয়েই বেশি আপত্তি উঠেছে। ফারুককে নির্বাচনে না চাওয়ায় সমঝোতা থেকে সরে দাঁড়ায় তারা।


এদিন আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গতকাল রাতে বিসিবির নির্বাচন কমিশনার সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন জানান, ‘আমি আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। আমরা আদালতের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারি না।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত