২২ বছর পর ভারতকে হারিয়ে আনন্দের দারুণ এক উপলক্ষ এনে দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। বহুদিন পর পাওয়া এই জয় উদযাপনের আড়ালে পড়েছে গোলরক্ষক মিতুল মারমার ব্যর্থতা। সিঙ্গাপুর, হংকং ও নেপাল, এমনকি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও এ গোলরক্ষক বড় ভুল করে বসেন। কিন্তু তার প্রতিই আস্থা রাখেন কোচ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধে পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেন মিতুল। খেলার ৩১ মিনিটে সবচেয়ে বড় ভুলটি করে বসেন এ তরুণ। গোলপোস্ট ছেড়ে এগিয়ে যাওয়ায় ফাঁকা পোস্টে শট নেন ভারতের মিডফিল্ডার চাংতে। নিশ্চিত গোল হওয়া থেকে বাঁচালেন হামজা। হেডে বল ক্লিয়ার করেন এ মিডফিল্ডার। বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশ জয় পেলেও মিতুলের ওই ভুল ভুলে যাওয়ার মতো নয়। বেঞ্চে আরো দুজন গোলরক্ষক ছিলেন। তাদের প্রতি কেন আস্থা রাখতে পারেননি কোচ? বারবার ভুল করার পরও কেন টানা ম্যাচে মিতুলকেই খেলানো হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এ প্রসঙ্গে বাফুফে সদস্য ও জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক ছাইদ হাছান কানন আমার দেশকে বলেন, ‘মিতুলকে গত কয়েকটি ম্যাচে নার্ভাস দেখছি। যদি গোলকিপার নার্ভাস থাকে, তাহলে সেটি দলেও প্রভাব ফেলে। কারণ শতকরা ৬০ ভাগ খেলা খেলেন গোলকিপার। সিঙ্গাপুর ম্যাচের দুদিন আগে ওর ভাই মারা যায়। আমার মনে হয়, তার ভাই মারা যাওয়ার পর সে মানসিকভাবে ডিসঅর্ডারে আছে।’
কানন আরো বলেন, ‘সে কিন্তু ভারতের বিপক্ষে শিলংয়ের ম্যাচে ভালো করেছিল। এরপর থেকেই তাকে নাভার্স দেখছি। তাকে খেলানো উচিত হয়নি। এজন্য আমি গোলকিপার কোচকে দোষ দেব।’ মিতুল প্রসঙ্গে কাননের মতো জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে (এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে) সে ভুলগুলো করেছে। তবে এর আগে সে ভালো গোলকিপিং করেছে। আমার মনে হয়, তার ভাই মারা যাওয়ার পর সে চাপে আছে। একটা খেলোয়াড়ের পিক টাইম যায়। এখন সেটি নেই মিতুলের। হামজা সেভ করার কারণে গত ম্যাচে আমরা বেঁচে গেছি। আমি মনে করি, মিতুলকে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন খেলা নেই। তার কাজ করার সুযোগ। সে এমনিতে ভালো গোলকিপার। তার জন্য শুভ কামনা রইল।’
জাতীয় দলে এখন গোলরক্ষকদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। যে কারণে একজনের প্রতি নির্ভর করতে হচ্ছে বারবার। ভালো গোলরক্ষক উঠে আসছে না। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক হয়েছিলেন আনিসুর রহমান জিকো। কিন্তু শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে শাস্তি পাওয়ার পর আর জাতীয় দলে ডাক পাননি তিনি। বিপ্লব বলেন, ‘জিকোকে আবার জাতীয় দলে ফেরানো উচিত। ভালো মানের গোলকিপার যদি না থাকে, তাহলে এ রকমই হবে।’
কোচকেও আরো সাহসী হতে হবে। বেঞ্চে বসে থাকা গোলরক্ষকরা কিন্তু যোগ্যতা দিয়েই জাতীয় দলে আসেন। কানন বলেন, ‘তারাও ভালো গোলকিপার। নেপাল ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলে তারা ভালো করেছে। তাদের খেলাতে পারত কোচ। এজন্য গোলকিপার কোচ ও প্রধান কোচ দায়ী।’ জিকোকে ফেরানো প্রসঙ্গে কানন বলেন, ‘সে একটি অপরাধ করেছিল। শাস্তিও পেয়েছে। তবে তাকে আমাদের দলে ফেরানো উচিত ছিল। কিন্তু তাকে আমরা ধরে রাখতে পারিনি। জাতীয় দলে এখন গোলকিপারের শূন্যতা তৈরি হয়েছে।’

