আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

রোইং ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি পুনর্গঠন

খোরশেদের রহস্যজনক অন্তর্ভুক্তি এনএসসির

স্পোর্টস রিপোর্টার

খোরশেদের রহস্যজনক অন্তর্ভুক্তি এনএসসির

তার নাম মো. খোরশেদ আলম। বয়স ৯৫ ছুঁই ছুঁই। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই খোরশেদ আলমই ৪৬ বছর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একচেটিয়া রাজত্ব করেন বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনে। তার আমলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সম্ভাবনাময় খেলা রোইং ও নৌকাবাইচ আলোর মুখ দেখেনি। খেলাটির ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। ফেডারেশনের অর্থ আত্মসাৎ, নানা অনিয়ম-অসংগতিসহ পাহাড়সম অভিযোগ উঠেছে খোরশেদ ও তার নেতৃত্বাধীন কমিটির বিরুদ্ধে।

গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর রোইং ফেডারেশন থেকে বিতাড়িত হন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর খোরশেদ আলম। ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ২৮ মে আগের কমিটি বিলুপ্ত করে রোইং ফেডারেশনের ১৭ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, যারা দুই কিংবা তার বেশি মেয়াদে ক্রীড়া ফেডারেশনের কমিটিতে ছিলেন, তাদের কেউই অ্যাডহক কমিটিতে থাকতে পারবেন না। ফলে কমিটিতে আর থাকতে পারেননি খোরশেদ।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বিস্ময়করভাবে সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিতর্কিত খোরশেদকেই আবার রোইং ফেডারেশনে ফিরিয়ে এনেছে ক্রীড়া পরিষদ। ফেডারেশনের কারো সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করে গত ৭ ডিসেম্বর ক্রীড়া পরিষদের দেওয়া এক চিঠিতে অ্যাডহক কমিটির সদস্য হিসেবে খোরশেদকে ফেরানো হয়। নতুন করে তার অন্তর্ভুক্তিতে তুমুল সমালোচনা ও রহস্যজনক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে। কার স্বার্থে, কেন কিংবা কী উদ্দেশ্যে দুর্নীতিবাজ ও অতিবয়স্ক খোরশেদকে ফেডারেশনে ফেরানো হলোÑতা নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা।

খোরশেদকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করায় গত ১১ ডিসেম্বর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে তাকে অপসারণের জন্য ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিয়েছে রোইং ফেডারেশন। চিঠিতে তারা লিখেছে, সভাপতিসহ তিনজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সভাপতি খ.ম. কবিরুল ইসলাম ও সহসভাপতি মো. রবিউল ইসলাম স্বাগত জানালেও সদস্য খোরশেদের ব্যাপারে তাদের আপত্তি রয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর ও ফেডারেশনের অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত খোরশেদ। পতিত স্বৈরাচার সরকারের শাসনামলে দলীয় হস্তক্ষেপে চার দশকের বেশি ফেডারেশনে রাজত্ব করেছেন তিনি। কমিটির কোষাধ্যক্ষ করা হয় সাধারণ সম্পাদক খোরশেদের চাচাত ভাই জসিম উদ্দিন মন্টুকে।

ফেডারেশনের কোনো উন্নয়ন না করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও নানা অজুহাতে এখনো কোনো জবাব দেননি অভিযুক্তরা। এ প্রসঙ্গে রোইংয়ের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম আমার দেশকে বলেন, ‘কমিটিতে যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে খোরশেদ আলমকে নিয়ে আমাদের সমস্যা। তাকে কেন আবার নেওয়া হলো, সেটি আমরা জানি না। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সেটি আমরা ক্রীড়া পরিষদে জমা দিয়েছি। তাকে বাদ দেওয়ার জন্য আমরা আবেদন করেছি।’

রোইং ফেডারেশনের কমিটি পুনর্গঠন ও আলোচিত সংগঠক খোরশেদকে ফেরানো প্রসঙ্গে ক্রীড়া পরিষদের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, ‘এসব কমিটির ব্যাপারে ওপর থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে, আমি সেটাই বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। আমার এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। আমাকে যা বলা হয় ওপর থেকে, আমি সেভাবেই স্বাক্ষর করে দিই।’

ক্রীড়া ফেডারেশনের দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য সংগঠকদের স্থায়ীকরণের পেছনে দায়ী ক্রীড়া পরিষদ। সাবেক ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পদত্যাগ করার তিন দিন আগে সরকারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে খোরশেদকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর পেছনে মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে ফেডারেশন-সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এজন্য আসিফ মাহমুদের ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুলের দিকে অভিযোগের তীর ছুটছে।

এ প্রসঙ্গে সাইফুল আমার দেশকে বলেন, ‘আমি তাকে কোনোদিন দেখিনি, চিনিও না। আমার নামে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। সার্চ কমিটি যাদের দিয়েছিল, তাদের অনেকেই দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। সেখানে আমরা নতুন করে কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। খোরশেদ আলম আবেদন করেছিলেন যেন তাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। এর প্রেক্ষিতে তাকে নেওয়া হয়েছে।’ রোইং ফেডারেশনের পুনর্গঠিত কমিটিতে জায়গা পাওয়ার পর আমার দেশকে খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি ৬০ বছর রোইংয়ে কাটিয়েছি। এখন আমার যাওয়ার পালা। বর্তমান যে অ্যাডহক কমিটি দেখেন, এদের সবাইকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি। আমাকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। আসলে এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’

এরপর তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে পুরস্কার পেয়েছি। সে হিসেবে আমার নাম দিতে পারে।’ আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে কি বলবেন? খোরশেদ বলেন, ‘কোনো দুর্নীতি-অনিয়ম হয়নি। আমি ক্রীড়া পরিষদে হিসাব দিয়েছি। আর যারা এখন আছে, তাদের আমি নিয়ে এসেছি।’ সামনে আপনার নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে কী? খোরশেদ বলেন, ‘এটা পরবর্তীতে বোঝা যাবে। সময়ই কথা বলবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু খোরশেদই নন, এ পর্যন্ত রোইং ফেডারেশনে ক্রীড়া পরিষদ যাদের কমিটিতে জায়গা দিয়েছে, তাদের বেশিরভাগই দায়িত্বজ্ঞানহীন, অযোগ্য ও ক্রীড়াবিমুখ। তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও দিন শেষে খেলাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। এগিয়ে আসেন না স্পন্সররা। যে কারণে নদীমাতৃক দেশে এখনো রোইং ও নৌকাবাইচ সেভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে পারেনি। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও বলার মতো অর্জন নেই খেলাটির।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর

খুঁজুন