Ad T1

বিসিবিতে ভুল ‘দল’ নিয়ে খেলছেন ‘অধিনায়ক’ ফারুক

এম. এম. কায়সার
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ০৯: ০০
আপডেট : ০৮ মে ২০২৫, ১৫: ০৬

মাঠের ক্রিকেটের নাজুক পারফরম্যান্সের মতো বিসিবির অন্দরমহলের প্রশাসনিক কার্যক্রমও ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। পুরো বিসিবি এখন যেভাবে এবং যে কায়দায় চলছে, তা দেখে মনে হচ্ছে ‘গৃহবিবাদ’ নামের সিনেমা দেখছি!

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে বাকি পরিচালকদের দেখাসাক্ষাৎ হচ্ছে। কথাবার্তাও হচ্ছে। বোর্ড সভাও হচ্ছে; কিন্তু এই কথাবার্তা, দেখাদেখি এবং বিসিবি পরিচালনায় সম্প্রীতির সুর বা ঐক্য নেই। বিচ্ছেদ কিন্তু পরিষ্কার!

জুলাই বিপ্লবের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ আরো অনেক পরিচালক পালিয়ে গেছেন। কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন। রয়ে গেছেন আটজন। এই ৮ এবং নতুন যোগ হওয়া একজনসহ মোট ৯ জনকে নিয়ে এখন বিসিবিতে ‘খেলছেন’ ফারুক আহমেদ ‘অধিনায়ক’ হিসেবে।

তবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিসিবিতে এই পরিচালকদের যে ‘দল’ নিয়ে ‘খেলছেন’ ফারুক আহমেদ, সেই দলটি তার জন্য সার্বিকভাবে একটা ভুল দল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আর এটা জানা কথা যে, ভুল একাদশ নিয়ে দল গড়লে কখনোই ম্যাচ জেতা যায় না।

বিসিবি সভাপতিও তাই বিসিবির ‘অধিনায়ক’ হিসেবে কোনো ম্যাচই জিততে পারছেন না! উইকেটে থাকা দুই ব্যাটসম্যানের মধ্যে যখন যথাযথ বোঝাপড়ার অভাব হয়, তখন রান আউট অবশ্যম্ভাবী। বিসিবিতে এখন হচ্ছেও তা-ই।

যাদের ওপর আস্থা রেখে বিসিবিতে ভাঙাচোরা বোর্ড নিয়ে এই লড়াইয়ে জিততে চেয়েছিলেন ফারুক আহমেদ, সেসব পরিচালক (পড়ুন খেলোয়াড়রা) যে আচরণ করছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে, এই ‘ম্যাচে’ তারা ফারুক আহমেদের জয় নয়, পরাজয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন!

বিসিবি সভাপতির কোনো কাজে তাদের সহায়তা নেই। সিদ্ধান্তের কাগজে তারা সই করছেন; কিন্তু বাইরে বেরিয়ে অভিযোগ করছেন এই বলে যে, সিদ্ধান্তটা আমার নয়, আমি শুধু সই করেছি!

এমন অভিযোগ করেছেন পরিচালক মাহবুব আনামও।

অথচ তিনি ভুলেই গেলেন যে, কোনো কিছুতে সই করা মানেই হলো সম্মতি জানানো। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিসিবি পরিচালকের চেয়ারে বসে থাকা মাহবুব আনাম সেই সিদ্ধান্তে সইয়ের সময়ে যদি না-ই মানতে চাইতেন, তাহলে অন্তত নোট অব ডিসেন্ট তো দিতে পারতেন। কিন্তু সেটা তো তিনি করেননি। এখন সেটেল হওয়া ইস্যুকে নতুন করে উসকে দিতে তিনি যা করলেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে, ‘অধিনায়ক’ হিসেবে ফারুক আহমেদ তার পছন্দের নন!

এমন সঙ্গীদের নিয়েই বিসিবি পরিচালনা করছেন ফারুক আহমেদ। অতএব, রান নিতে গেলে রানআউটের ঝুঁকি তো থাকবেই!

এ প্রসঙ্গে বিসিবির সাবেক পরিচালক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলছিলেন, ‘যে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এই বোর্ডের কাছে প্রত্যাশা ছিল, সেটা হয়নি। দেখে মনে হচ্ছে বোর্ডে আগে যেসব পরিচালক ছিলেন, তাদের সঙ্গে বোর্ড সভাপতির একটা অশুভ প্রতিযোগিতার লড়াই শুরু হয়েছে। প্রতিনিয়ত আমরা কথার লড়াই, একে অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বের খবর দেখছি। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এসব খবর ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সার্বিকভাবে ক্রিকেটই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও বলছেন, ‘একা আমাকে কাজ করতে হয়, খুব যে সহযোগিতা পাচ্ছি তা নয়।’

নাজমুল হাসান পাপন বোর্ডের আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে এখন দুদকের তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে পাপন ও বিসিবিতে তার সঙ্গী ইসমাইল হায়দার মল্লিকের বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলাও হয়েছে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে সই-স্বাক্ষরের ক্ষমতাবান যারা ছিলেন, সেই পরিচালকরা বর্তমানেও বোর্ডে রয়েছেন। তাহলে পুরোনো দুষ্টচক্রের ভাগীদার তো তারাও! অথচ তারা এখন বিসিবিতে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য কোমর কষছেন। পুরোপুরি নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিসিবির সেই ধান্ধাবাজি কায়দায় তৈরি করা পুরোনো গঠনতন্ত্রের নৌকায় চড়ে তারা ফের বৈঠা ধরছেন!

এতদিন যারা ছিলেন নৌকার মাঝি, সেই তারাই এখন ধানের শীষের গান গাইছেন!

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত