শেখ হাসিনার টানা ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের ছত্রছায়ায় একটি ভয়ংকর ও নিষ্ঠুর চর্চা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল—গুম ও নির্যাতন। গুম সংক্রান্ত কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এই কালো অধ্যায়ের নির্মম বাস্তবতা প্রকাশ্যে এনেছে।
গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন ও মায়ের ডাক সংগঠনের আহবায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেছেন, গুম, নিখোঁজ হয়ে যারা ফেরত আসেননি এবং জুলাই আরো যারা শহীদ হয়েছেন তাদের হত্যার বিচার আমরা চাই এবং ইনশাল্লাহ আমরা যতদিন আমাদের শেষ রক্ত আছে ততদিন এই বিচার কায়েম করে ছাড়ব।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার গত সরকারের আমলে গুম করে নির্যাতন,কারাগারে নির্যাতনের ঘটনার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। এই সময় র্যাব, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্যাতন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাও ঘটে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব) মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালনের সময় বেনজীর আহমেদ গুমে জড়িত কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করতেন। সে সময় র্যাবে কর্মরত এমনই এক কর্মকর্তার বিষয়ে প্রতিবেদনে তার ‘কর্মদক্ষতা খুবই সন্তোষজনক’ এবং ‘নেতৃত্ব উচ্চমানের’ বলে প্রশংসা করেছেন বেনজীর।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, বাংলাদেশে এক শ্রেণির ভুঁইফোড় সংগঠন মানবাধিকারের নামে গজিয়ে উঠেছে। তারা মূলত বাণিজ্য করে।
অপহরণ ও গুমের মামলায় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সোহায়েলকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। বুধবার সকালে তাকে হাজির করা হয়।
বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার বর্তমান চিত্র ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবিরোধী নীতির কার্যকারিতা নিয়ে সাম্প্রতিক এক মধ্যবর্তী প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা রাজনৈতিক মতপ্রকাশ দমন এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি নিশ্চিত করার এক সহায়ক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। বিচারপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে আইনগত বিকৃতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে বিরোধীদের অপরাধী বানানো হতো।
শেখ হাসিনার জমানায় বাংলাদেশে বলপূর্বক গুম ও অপহরণের শিকার সবচেয়ে বেশি হয়েছিলেন তরুণ রাজনৈতিক কর্মীরা। ২৫৩ জন গুম হওয়া ব্যক্তির বয়স ও পেশাগত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অধিকাংশই ১৯ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে, বিশেষ করে ২৭-২৮ বছর বয়সীরা ছিলেন গুমের শীর্ষে।
বাংলাদেশে যারা গুম হয়ে ফিরেছেন, তাদের বেঁচে ফেরাটা যেমন এক অলৌকিক ও স্বস্তিদায়ক, তেমনি ফিরেই তারা পড়তেন এক নতুন দুর্বিষহ বন্দিত্বে—‘মিডিয়া ট্রায়াল’। এই ট্রায়াল আদালতের কাঠগড়ায় নয়, বরং সাংবাদিকদের সামনে, ক্যামেরার ফ্ল্যাশের নিচে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গুমের শিকার ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করেছেন।
গুম সংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, একটি বড় ফাইন্ডিং হলো, অনেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এইসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন শুধুমাত্র পদোন্নতি বা পুরস্কারের লোভে—যেমন পিপিএম/বিপিএম পাওয়া, ঢাকায় পোস্টিং পাওয়া ইত্যাদি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দ্বিতীয় ইন্টেরিম রিপোর্ট জমা দিয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়াসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ পালন উপলক্ষে সোমবার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পাখির মতো মানুষ হত্যা করে বিগত ১৫ বছরে এদেশে গুম খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। হেফাজতের সমাবেশে ও ছাত্রজনতার আন্দোলনে নিরীহ মানুষ খুন করে সে উপহাস করেছিলেন, তাই আমি মনে করি শেখ হাসিনা কোনো স্বাভাবিক মানুষ নয়, সে একজন বিকারগ্রস্ত নারী।