পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে ভিন্নমত দমনে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করেছিলেন। তার গুম-খুনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের মহানায়ক ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান।
বুধবার গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামি জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে একটি ফরমাল চার্জ দাখিল করেছি। তার বিরুদ্ধে তিনটি প্রধান অভিযোগ আনা হয়েছে। এই তিনটি ঘটনায় ১০০-এর বেশি মানুষকে গুম করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশের পেট ফেড়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে সিমেন্টের বস্তা বেঁধে কখনো বরগুনার বলেশ্বর নদীতে, কখনো সুন্দরবনে, কখনো শীতলক্ষ্যায়, আবার কখনো বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে দেওয়া হতো।”
তাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম অভিযোগ হলো—রাতের বেলায় গাজীপুরের র্যাব অফিস থেকে পাঁচজনকে টঙ্গীর নির্জন রাস্তায় নিয়ে চোখ ও হাত-পা বেঁধে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ ড্রেনে বা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। আমরা এসব হত্যাকাণ্ডের অকাট্য প্রমাণ পেয়েছি।
দ্বিতীয় অভিযোগে তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম করে মাইক্রোবাস, জিপ বা বিভিন্ন গাড়িতে চোখ ও হাত-পা বেঁধে বরগুনার চরদুয়ানি ঘাটে নিয়ে যাওয়া হতো। এরপর ‘অপারেশন’-এর কথা বলে রাতের বেলা চরদুয়ানি বাজারসহ আশেপাশের দোকানদারদের রাত ৯টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতো। আলো নিভিয়ে ওই এলাকায় ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হতো। এরপর ভিকটিমদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে করে বলেশ্বর নদী হয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে মাথায় বালিশ ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশের পেট ফেড়ে সিমেন্টের বস্তা বা ইট বেঁধে ফেলে দেওয়া হতো। এভাবে ৫০ জনকে হত্যার অভিযোগে আমরা চার্জ দাখিল করেছি।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, একই পদ্ধতিতে একই জায়গায় আরও প্রায় ৩০০ মানুষকে হত্যার তথ্য আমাদের কাছে এসেছে।
তৃতীয় অভিযোগে তাজুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে বনদস্যু দমনের নামে নিশানখালী, কটকা ও মরাভোলা—এই তিনটি পয়েন্টে অপারেশন চালানো হয়। এই অপারেশনগুলোতে তারা অনুগত সাংবাদিক ও হেলিকপ্টার নিয়ে যেত। প্রচার করা হতো যে, অপারেশন চালিয়ে বনদস্যু হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু অপারেশনের আড়ালে তারা আসলে গুম করে রাখা মানুষদের সেখানে নিয়ে যেত। দুই-একজন বনদস্যুর সঙ্গে গুম হওয়া ব্যক্তিদের একই কায়দায় বুকে বালিশ ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। এরপর পেট ফেড়ে সিমেন্টের বস্তা ও ইট বেঁধে লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রচার করা হতো যে, বনদস্যু মারা হয়েছে।
তাজুল ইসলাম জানান, আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ২১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। এদিন জিয়াউল আহসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

