গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ব্যাপক মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। তখন থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই বছরে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীর মিলিয়ে এক হাজার ৬৩০ ফিলিস্তিনি শিশুকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরাইলি সেনারা।
বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি বন্দিদের অধিকার গ্রুপগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনারস অ্যান্ড রিলিজড প্রিজনারস অথরিটি, দ্য প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনারস ক্লাব ও আদামির প্রিজনার সাপোর্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন যুক্তভাবে এ বিবৃতি প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এটি ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের চলে আসা দমনমূলক অভিযানের অংশ। ওই শিশুদের গ্রেপ্তারির সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাড়িতে ইসরাইলিরা হামলা চালিয়ে আসছে। একই সঙ্গে তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনি শিশুরা এমন এক ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণের বাস্তবতার মূল্য পরিশোধ করছে, যেখানে নবীন-প্রবীণের কোনো বিবেচনা করা হয় না।’
এছাড়া গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে হাজার হাজার শিশু নিহতের ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি এক বিপজ্জনক ও অবিশ্বাস্য বাঁক পরিবর্তনকারী ঘটনা।’
ইসরাইলি কারাগারে বর্তমানে ৩৫০ ফিলিস্তিনি শিশু বন্দি রয়েছে। বন্দি শিশুদের যথাযথ খাবার ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা এবং নির্জন কারাবাসে রাখার অভিযোগ রয়েছে ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি স্থাপিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এর ফলে যুদ্ধবিরতির এক মাসের বেশি সময়ে প্রতিদিন দুই শিশু নিহত হয়।
শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র রিকার্ডো পিরেস এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘হামলায় আরো অনেক শিশু আহত হয়।’
এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। শুক্রবার আলজাজিরা জানায়, চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত ‘হলুদ সীমারেখা’ (ইয়েলো লাইন) অতিক্রম করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজা শহরের পূর্বে হলুদ সীমারেখা পার হয়ে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে আইডিএফ সেনারা। এছাড়া মধ্য গাজার বুরেইজি ও মাগাজি শরণার্থী শিবির এবং দক্ষিণের রাফা ও খান ইউনুসে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করছে তারা।
ইসরাইলি হামলায় খান ইউনুসে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া উত্তর গাজায় বাইত লাহিয়ায় চার শিশু আহত হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার উপত্যকার সরকারি মিডিয়া দপ্তর জানায়, ইসরাইলি সেনারা হলুদ সীমারেখা গাজা শহরে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের ৩০০ মিটার অভ্যন্তরে সরিয়ে নিয়েছে। মিডিয়া দপ্তর জানায়, এর মাধ্যমে জঘন্যভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুসারে, গাজায় আগ্রাসনরত ইসরাইল নিজেদের বাহিনীকে এ সীমারেখায় সরিয়ে নিয়েছে। গাজা থেকে জীবিত সব জিম্মির মুক্তি ও মৃত জিম্মিদের লাশ ফেরত পাওয়ার পরপরই ইসরাইলি বাহিনী গাজার কথিত বাফার জোনে নিজ সেনাদের সরিয়ে নেবে।
যুদ্ধবিরতির পরপরই জীবিত ২০ জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে ফেরত পাঠান ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা। কিন্তু মৃত ২৮ জিম্মির লাশ ফেরত নিয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওই জিম্মিদের থাকার স্থান ইসরাইলের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তাদের লাশ উদ্ধারের জন্য সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু ইসরাইলিদের পক্ষ থেকে জিম্মিদের লাশ দ্রুত ফেরত দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে। এখনো ইসরাইলি তিন জিম্মির লাশ গাজায় রয়ে গেছে।
গাজার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম তীরেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি সেনারা। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, শুক্রবার জেরুসালেমের কাফর আকাব মহল্লায় ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে দুই কিশোর নিহত হয়। খবরে জানানো হয়, আইডিএফ সেনাদের গুলিতে আহত কিশোরদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যায়। অন্যদিকে হেবরনের দক্ষিণে মাসাফের ইয়াত্তা গ্রামে বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়।


পাহাড়ে নতুন ষড়যন্ত্র
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব?