হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি: কোন দেশ কী প্রতিক্রিয়া জানালো?

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১২
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২০

হামাস ও ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে অগ্রগতির লক্ষণ দেখা দেওয়ায় যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দ্রুতই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প বলেছেন, উভয় পক্ষ গাজার যুদ্ধ শেষ করতে তার পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে—যার মধ্যে বন্দিদের মুক্তি ও ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত।

বিজ্ঞাপন

ট্রাম্প একে ‘বছরের পর বছর যুদ্ধের পর শান্তির সূচনা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, বিশ্ব এখন ইতিহাসের এক বিশেষ মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করছে। এটি বিশ্বের জন্য এক মহান দিন।

যুক্তরাজ্য: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, দুই বছরের অসহনীয় দুর্ভোগের পর এটি সারা বিশ্বের জন্য গভীর স্বস্তির মুহূর্ত, বিশেষ করে জিম্মিদের পরিবার ও গাজার বেসামরিক জনগণের জন্য।

সাধারণ ফিলিস্তিনি: চুক্তি ঘোষণার পর গাজা সিটি, খান ইউনুস ও আশপাশের এলাকায় ফিলিস্তিনিদের আনন্দোৎসবের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মানুষ পতাকা হাতে সড়কে নেমে স্লোগান দেন। অনেকে একে ‘দুই বছরের যুদ্ধের পর বহুল প্রতীক্ষিত স্বস্তির মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেন।

দক্ষিণ গাজার উপকূলীয় এলাকা আল-মাওয়াসিতে রাত নামার পর ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ, কেউ কেউ আনন্দে আকাশে গুলি ছোড়েনও।

কাতার: কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি জানান, চুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের শর্তাবলি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীরা একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, এতে যুদ্ধের অবসান, বন্দি বিনিময় ও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে।

তুরস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতির পথে আনতে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শনের জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

কানাডা: কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, দীর্ঘ দিনের ভোগান্তির পর শান্তি এখন বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে। কাতার, মিসর ও তুরস্কের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি আহ্বান করেন, সব পক্ষ যেন দ্রুত চুক্তির শর্তগুলো কার্যকর করে এবং ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির পথে এগোয়।

পাকিস্তান: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশাপাশি কাতার, মিসর ও তুরস্কের দৃঢ় ও প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বও প্রশংসার দাবিদার। তবে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা প্রাপ্য ফিলিস্তিনি জনগণের, যারা নজিরবিহীন যন্ত্রণা সহ্য করেছে, যা আর কখনও ঘটতে দেওয়া উচিত নয়।

ইসরাইল: ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই চুক্তিকে ‘কূটনৈতিক সাফল্য ও জাতীয় নৈতিক বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান।

অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, দুই বছরেরও বেশি সংঘাত ও বিপুল প্রাণহানির পর এটি শান্তির পথে এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

ভারত: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা এই চুক্তিকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি জিম্মিমুক্তি ও মানবিক সহায়তা গাজার জনগণকে স্বস্তি দেবে এবং টেকসই শান্তির পথ উন্মুক্ত করবে।

নিউজিল্যান্ড: নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, এই চুক্তি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি অপরিহার্য প্রথম পদক্ষেপ।

আর্জেন্টিনা: আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মাইলি এক্সে লেখেন, আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেব, কারণ আন্তর্জাতিক শান্তিতে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি তার প্রাপ্য। অন্য কোনও নেতা এমন অর্জন করলে অনেক আগেই এই পুরস্কার পেতেন।

মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এক বিবৃতিতে বলেন, মাসের পর মাস চলা ধ্বংস ও দুর্ভোগের পর এই অগ্রগতি এক ঝলক আশার আলো জ্বেলেছে। তিনি সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থায়ী শান্তির পথে এগোতে আহ্বান জানান।

জাপান: জাপানের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, চুক্তির প্রথম ধাপে পৌঁছানো একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে বাস্তব পদক্ষেপ। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর ও তুরস্কের ‘অবিরাম প্রচেষ্টার’ প্রশংসা করেন এবং সব পক্ষকে আন্তরিকভাবে চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

ইতালি: ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জি মেলোনি বলেন, গাজায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের এই চুক্তি সত্যিই অসাধারণ খবর। তথ্যসূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত