পোপ লিও চতুর্দশ শুক্রবার তুরস্কের ইজনিক শহরে খ্রিস্টান ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান নিসিয়ায় বিভিন্ন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রার্থনায় অংশ নেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অর্থডক্স প্যাট্রিয়ার্ক ও খ্রিস্টান নেতাদের সঙ্গে এই মিলনমেলা খ্রিস্টান ঐক্যের আহ্বানকে নতুন মাত্রা দেয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে পোপ লিও ধর্মের নামে সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে শতাব্দীপ্রাচীন মতপার্থক্য ও বিভাজন ভুলে খ্রিস্টানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আজ মানবতা সহিংসতা ও সংঘাতে বিপর্যস্ত। তাদের মিলন ও পুনর্মিলনের বার্তা খ্রিস্টানরা দিতে পারে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে।”
এই বছর নিসিয়ার প্রথম কাউন্সিলের ১,৭০০তম বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন ছিল পোপের তিন দিনের তুরস্ক সফরের প্রধান আকর্ষণ। চতুর্থ শতাব্দীর সেন্ট নিওফাইতস ব্যাসিলিকার ডুবে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের কাছে ইংরেজি, গ্রিক ও আরবি ভাষায় প্রার্থনা এবং মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
মে মাসে পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগে তুলনামূলকভাবে অখ্যাত লিও চতুর্দশের এই সফর বিশেষ নজর কেড়েছে—এটাই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর ও ইতালির বাইরে প্রথম জনসমক্ষে বড় বক্তব্য।
খ্রিস্টান বিভক্তির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
প্রথম সহস্রাব্দে খ্রিস্টানরা মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ থাকলেও ১০৫৪ সালের ইস্ট-ওয়েস্ট স্কিজমে ক্যাথলিক ও অর্থডক্সদের মধ্যে বড় বিভাজন ঘটে। পরবর্তী শতাব্দীতে প্রোটেস্ট্যান্ট রিফরমেশনসহ নানা আন্দোলন খ্রিস্টান বিশ্বে আরও বিভক্তি আনে।
পোপ লিও বলেন, “আমরা যদি বিভেদ দূর করতে পারি, তা হবে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের এমন একটি বার্তা, যা জাতি ও সম্প্রদায়ের সীমানা অতিক্রম করবে।”
বিশিষ্ট নেতাদের উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিশ্বের ২৬ কোটি অর্থডক্স খ্রিস্টানের আধ্যাত্মিক নেতা কনস্টান্টিনোপলের গ্রিক অর্থডক্স প্যাট্রিয়ার্ক বার্থোলোমিউ। তিনি অতীত স্মরণ করলেও একসঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলেমান বুলুত বলেন, খ্রিস্টানদের এই ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। “আমরাও তো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আমাদের ঐতিহ্যের স্থানগুলো পরিদর্শন করি,” বলেন তিনি।
তুরস্কের ক্ষুদ্র ক্যাথলিক সম্প্রদায়কে উৎসাহ
ইস্তানবুলে সফরের প্রথম দিনে পোপ তুরস্কের প্রায় ৩৩,০০০ সদস্যের ক্ষুদ্র ক্যাথলিক সম্প্রদায়কে ছোট সংখ্যায় শক্তি খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অভিবাসী ও শরণার্থীদের সেবায় চার্চকে আরও এগিয়ে আসতে হবে।
ক্যাথেড্রাল অব দ্য হোলি স্পিরিটে তাঁকে স্বাগত জানানো হয় “পাপা লিও” ও “ভিভা ইল পাপা” ধ্বনিতে। পরে তিনি লিটল সিস্টার্স অব দ্য পুওর পরিচালিত একটি নার্সিং হোমে নানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরবর্তী কর্মসূচি
শনিবার তিনি বার্থোলোমিউ ও অন্যান্য খ্রিস্টান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, পাশাপাশি ইস্তানবুলের ঐতিহাসিক সুলতান আহমেদ মসজিদ—ব্লু মসজিদ—পরিদর্শন করবেন এবং ভলক্সওয়াগেন অ্যারেনায় বিকেলে মিসা পরিচালনা করবেন।
রবিবার তিনি সফরের দ্বিতীয় ও শেষ গন্তব্য লেবাননে রওনা হবেন।
এসআর

