ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। প্রাচীন সভ্যতার একটি জীবন্ত সাক্ষী গাজা উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই ভূমধ্যসাগর, এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগস্থল হিসেবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই গাজা উপত্যকা। ঐতিহাসিক সেই গাজা এখন ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে সংগৃহীত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ফ্রান্স। রাজধানী প্যারিসের ইনস্টিটিউট ডু মন্ডে আরবের ‘গাজা থেকে উদ্ধারকৃত ধনসম্পদ : ৫০০০ বছরের ইতিহাস’ শীর্ষক প্রর্দশনীতে স্থান পেয়েছে ফিলিস্তিনের প্রাচীন ও গৌরবময় অতীত, মোজাইক, ভাস্কর্য, প্রাচীন মুদ্রা ও মৃতসামগ্রীতে গাঁথা এক সমৃদ্ধ ইতিহাস- যা আজ যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে যাচ্ছে।
ইনস্টিটিউট ডু মন্ডে আরবের প্রধান এবং সাবেক ফরাসি সংস্কৃতিমন্ত্রী জ্যাক ল্যাং প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এই প্রদর্শনী ‘গাজার ভবিষ্যতে কিছু আশা ফিরিয়ে আনতে পারে। পরিত্যাগ ও ভুলে যাওয়ার চেয়ে খারাপ আর কিছুই নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
গুরুত্বপূর্ণ এই নিদর্শনগুলো বহু বছর ধরেই অন্যত্র সংরক্ষিত রয়েছে। গাজার সাংস্কৃতিক এই ঐতিহ্যের কথা এখন বিশ্বকে জানাতেই প্যারিসের এই আয়োজন। কিন্তু এই সৌন্দর্যের পাশে রয়ে গেছে গভীর বেদনা। কারণ, টানা দুবছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে আসছে ইসরাইল। এতে ধ্বংস হয়েছে শতাধিক ঐতিহ্যবাহী স্থান। এই প্রদর্শনী কেবল একটি সাংস্কৃতিক আয়োজনই নয়; এটি এক নীরব প্রতিবাদ, একটি বার্তা- যা ধ্বংসের মাঝেও ইতিহাস ও পরিচয়কে টিকিয়ে রাখে।
গাজা যখন দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধের মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে, তখন এই প্রদর্শনীতে একখণ্ড গাজাকে দেখতে ভিড় জমিয়েছেন হাজারো দর্শনার্থী।
দুর্দান্ত ভৌগোলিক সংযোগস্থলের কারণে ফিলিস্তিনি, অ্যাসিরীয়, রোমান, বাইজেন্টাইন, পারস্য, মামলুকসহ অনেক সংস্কৃতি ও সাম্রাজ্য তাদের ছাপ রেখে গেছে এই গাজায়। এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে মূর্তি, তেলের বাতি এবং সিরামিক থেকে শুরু করে শিলালিপি, আমদানি করা মার্বেল ও একটি বিশাল বাইজেন্টাইন মেঝে মোজাইকসহ ১০০টিরও বেশি জটিল জিনিসপত্র।
প্রদর্শনীর কিউরেটর এলোডি বুফার্ড জানিয়েছেন, গাজাকে তার ইতিহাস ফিরিয়ে দিতেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন। এটি গাজার মানবতা পুনরুদ্ধার এবং এর দীর্ঘ ইতিহাসকে বিশ্বব্যাপী আবারও তুলে ধরবে। সমসাময়িক ইতিহাসের ওপর ফোকাস গাজাকে ট্র্যাজেডির একটি অঞ্চল, একটি বুদ্বুদ্, যেখানে কেবল ধ্বংসই সম্ভব- এ বিষয়গুলো থেকে বের করে আনবে। কারণ, গাজার রয়েছে হাজার বছরের দীর্ঘ মানব ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
প্যারিস প্রদর্শনীতে গাজায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ এবং ২০২৩ সাল থেকে সামরিক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর স্থিরচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মসজিদ, গির্জা, আর্কাইভ ও গাজার প্রথম পরিচিত সমুদ্রবন্দর অ্যান্থেডন বন্দরের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।
তবে বুফার্ড বলেছেন, এসব বস্তু ও ঐতিহাসিক স্থানের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রাণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পুরাতন পাথর এবং মানুষের মধ্যে সর্বদা মানুষই অগ্রাধিকার পাবে।

