আমার দেশ অনলাইন
১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল। সাজ্জাদ হায়দারের নেতৃত্বে পেশোয়ার বিমান ঘাঁটি থেকে ছয়টি বিমান উড়তে শুরু করে। বিমানগুলো যখন সীমান্তের কাছে আত্তারি গ্রামের দিকে ঘুরে যাওয়ার নির্দেশ পায়, ততক্ষণে তারা শিয়ালকোটের কাছে লক্ষ্যবস্তু থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট দূরে ছিল।
আগের রাতে ওই এলাকা দিয়েই ভারতের কয়েকটি ট্যাংক পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল এবং লাহোরের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল প্রায়।
স্কোয়াড্রন ১৯ কমান্ডার সাজ্জাদ হায়দার তার 'ফ্লাইট অফ দ্য ফ্যালকন: ডেমোলিশিং মিথস অফ দ্য ইন্দো-পাক ওয়ার্স ১৯৬৫-১৯৭১' বইয়ে লিখেছেন, "পাকিস্তানের কেন্দ্রবিন্দুতে (লাহোর -যেটা ছিল তখনকার রাজধানী) আক্রমণের খবর পেয়ে আমাদের হৃদয়ে যে যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়েছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব।"
"লাহোর শব্দটি শুনেই মনে হলো যেন একটা বিশাল বৈদ্যুতিক শক লেগেছে। শিরায় রক্ত সঞ্চালন ইতোমধ্যেই তীব্র ছিল। সেই রেডিও বার্তাটি যেন একটা স্ফুলিঙ্গের মতো নেমে এসে আমাদের অস্তিত্বে আগুন ধরিয়ে দিল।"
বইটিতে তিনি লিখেছেন, "হঠাৎ আমি বেশ কয়েকটি ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যানকে রাস্তা বেয়ে ওঠার চেষ্টা করতে দেখলাম। আমি চিৎকার করে বললাম, 'এগুলো ভারতীয় ট্যাংক! এগুলো শেষ করে দাও। জোড়ায় জোড়ায় রকেট ছোঁড়ো।"
"আমি 'টার্গেট সকাল নয়টা' (নয়টা বাজার সময় ঘড়ির কাঁটা যে অবস্থানে থাকে সেই একই অবস্থানে) বলে চিৎকার করেই প্রথম রকেটটি ছুঁড়লাম। সাথে সাথেই, নাম্বার থ্রি রিপোর্ট করলো, 'লিডার! ট্যাংকটি আকাশে উঠে গেছে'।"
"প্রতিটি আঘাতের পর আগুনের শিখা এবং গলিত ধাতু আকাশে উঠে যাচ্ছিল। আমরা এত কম উচ্চতায় ছিলাম যে বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছিল, মনে হচ্ছিলো যেন বিমান-বিধ্বংসী গোলাগুলির মধ্য দিয়ে উড়ছি।"
তিনি লেখেন, "দ্বিতীয় অভিযানের সময় যখন স্কোয়াড্রন লিডার মারভিন মিডলকট এফ-১০৪ -এ আসেন, তখন আমি পাঁচ এবং ছয় নম্বরকে আবার ফর্মেশনে ডেকে বলি যে আমাদের এখন বিমান কভার আছে।"
"আমি একটি আর্টিলারি গাড়িকে টার্গেট করেছিলাম। তারপর পেছন থেকে আরেকটি ট্যাংকে মেশিনগান দিয়ে গুলি ছুঁড়েছিলাম। আমার মনে আছে নওশেরা স্কুলে উমর খান আফ্রিদি ও আমি শিখেছিলাম যে ইঞ্জিনের ওপরের ঢাকনা ট্যাংকের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে এসেছিল। দুই নম্বর নিশ্চিত করেছিল যে ট্যাংকে আগুন লেগেছে।"
বইটিতে তিনি লিখেছেন, "এটি ছিল আমার ষষ্ঠ ও শেষ আক্রমণ এবং আমি যখন এলাকা ছেড়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমি একটি পতাকাবাহি জিপ দেখতে পেলাম যেটা লক্ষ্য করে আমি গুলি করি।
আগুন ধরে যাওয়ার আগে, আমি একজন লোককে লাফিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখলাম।
"বিমানযুদ্ধের ইতিহাসবিদ পুষ্পিন্দর সিং আমাকে বলেছিলেন যে ওয়াঘায় আমি পতাকাবাহি যে জিপটিকে টার্গেট করেছিলাম, সেটা ছিল মেজর জেনারেল নিরঞ্জন প্রসাদের। যিনি তার ডিভিশন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।"
তিনি আরও লেখেন, "১৬ থেকে ১৭ মিনিট পর, যখন গোলাবারুদ শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং জ্বালানি বিপজ্জনকভাবে কম ছিল, তখন আমি ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম।"
জেনারেল লচমন সিং, জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং এবং ইতিহাসবিদ জগন মোহন ও সামীর চোপড়ার উদ্ধৃতি দিয়ে হায়দার তার বইতে দাবি করেছেন যে "কর্নেল ডেসমন্ড হাইডের নেতৃত্বে অগ্রসরমাণ তিনটি জাট ব্যাটালিয়নকে লক্ষবস্তু বানিয়েছিলো পাকিস্তানি বিমান বাহিনী এবং মেশিনগান ও রকেট দিয়ে কচুকাটা করেছিল।"
"ইউনিটটি তাদের সব কামান ও শেরম্যান ট্যাংক হারিয়ে ফেলেছিল। জেনারেল লচমন সিং-এর মতে, শত্রুরা প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আমাদের প্রতিটি যানবাহনকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল এবং আমাদের গুলি থেকে সম্পূর্ণরূপে চিন্তামুক্ত ছিল।"
সাজ্জাদ হায়দার তার বইতে দাবি করেছেন যে "এগিয়ে আসতে থাকা ভারতীয় সেনাদের দলটির সামনের সারিতে পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
জেনারেল সুখবন্ত সিং-এর মতে, ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার ব্যাটালিয়ন ত্যাগ করে কেবল একটি মোজা এবং একটি জুতা পরে পালিয়ে যান। তার ডেপুটিও সাইকেলে করে পালিয়ে যান এবং অমৃতসরে আশ্রয় নেন।"
যুদ্ধ ইতিহাসবিদ কর্নেল আজম কাদরির মতে, এটি ছিল একটি ফল নির্ণায়ক যুদ্ধ।
কর্নেল কাদরি বিবিসিকে বলেন, "লাহোরকে রক্ষাকারী স্থলবাহিনী অবস্থান নেওয়ার আগেই পাকিস্তানি বিমান বাহিনী অগ্রসরমান শত্রু ডিভিশনগুলোকে ধ্বংস করে লাহোরকে রক্ষা করেছিল।"
তিনি বলেন যে "সাজ্জাদ হায়দার, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মুহাম্মদ আকবর, আরশাদ সামি, খালিদ লতিফ, দিলাওয়ার এবং গনি আকবর সেদিন লাহোর এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলেন"।
তিনি বলেন, "প্রতিটি পাইলট ছয়টি করে আক্রমণ করেছিলেন এবং শত্রুর আক্রমণকে পুরোপুরি পরাজিত করতে প্রায় ১৭ মিনিট ধরে হামলা চলতে থাকে। যখন তারা ফিরে আসে, তখন মাঠে গলে যাওয়া লোহা ও আগুনের শিখা শত্রুর পরাজয়ের সাক্ষ্য দিচ্ছিলো।"
সাজ্জাদ হায়দার তার বইতে দাবি করেছেন যে "সেই সন্ধ্যায়, আমাদের তৃতীয় অভিযানে, আমরা পাঠানকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম এবং ১৩টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।
যদি পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণরূপে সফল হত, যেটা ভালোভাবে মহড়া করা হয়েছিল এবং পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর সেরা বিমান ও পাইলটরা যুক্ত ছিল, তাহলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৫০টিরও বেশি বিমান এমনভাবে ধ্বংস হতো যেটা অস্বীকার করার উপায় থাকতো না।"
"এমএম আলমের নেতৃত্বে আদমপুর আক্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। অন্যদিকে সরফরাজ রফিকির নেতৃত্বে হালওয়ারা আক্রমণ ভারতীয় বিমান নজরদারির কারণে সম্ভব হয়নি।
বিমান সংঘর্ষে দুটি ভারতীয় হান্টার ধ্বংস হয়ে যায়, তাদের পাইলটরা বেঁচে যান। কিন্তু দুই পাকিস্তানি পাইলট (রফিকিসহ) নিহত হন। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিসিল চৌধুরী নিরাপদে ফিরে আসেন।"
ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ সংক্রান্ত ইতিহাসের বই এবং বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, যুদ্ধের আকাশ পর্ব শুরু হয় ১৯৬৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর, যখন ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর 'অপারেশন গ্র্যান্ড স্ল্যাম' থামাতে আক্রমণ শুরু করে।
জবাবে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী দুটি এফ-৮৬ স্যাবর বিমান পাঠায়, যেগুলো ৫ নম্বর স্কোয়াড্রন লিডার সরফরাজ রফিকি এবং ১৫ নম্বর স্কোয়াড্রনের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইমতিয়াজ ভাট্টি উড়াচ্ছিলেন।
ছাম্ব এলাকার ওপর এই আকাশ যুদ্ধে রফিকি ভারতীয় ফর্মেশন লিডার এবং তার উইংম্যানকে টার্গেট করেন, যখন অন্য দুটি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেন ভাট্টি।
ভারতীয় বিমান বাহিনী প্রায় ১৩০টি ভ্যাম্পায়ার এবং ৫০টিরও বেশি অর্গন বিমান যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
দোসরা সেপ্টেম্বর, উভয় পক্ষের স্থলবাহিনী বিমান সহায়তা পায়, কিন্তু কোনো বড় যুদ্ধ হয়নি।
এয়ার কমোডর কায়সার তুফায়েলের মতে, ভারত পাঠানকোটে পাকিস্তানের স্যাবর জেটগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য জিন্যাট যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছিল।
তিনি তার 'রান, ইটস এ-১০৪' প্রবন্ধে লিখেছেন যে তেসরা সেপ্টেম্বর স্কোয়াড্রন লিডার ট্রেভর ক্যালভার একটি স্যাবর বিমান গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেন এবং তাকে বীর চক্রে ভূষিত করা হয়।
কিন্তু বিমানটি আসলে রক্ষা পেয়েছিলো এবং পাইলট ইউসুফ আলী খানকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিলো। এই সময়ে, একটি ভারতীয় বিমান দুর্ঘটনাক্রমে পাকিস্তানে অবতরণ করে এবং তাকে আটক করা হয়।
পিএএফ ফ্যালকনস ওয়েবসাইট অনুসারে, চৌঠা সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের একটি স্যাবর বিমান বিধ্বস্ত হয়, পাকিস্তান যেটাকে নিজেদের গুলিতে এবং ভারত তাদের আক্রমণের ফলে ঘটেছে বলে দাবি করে।
কায়সার তুফায়েলের মতে, পাইলট এমএম আলম দাবি করেছিলেন যে, তিনি ৭ সেপ্টেম্বর সারগোদার আকাশে এক মিনিটের মধ্যে পাঁচটি ভারতীয় হকার হান্টার বিমান ভূপাতিত করেন এবং ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে চারটি বিমানকে পরাজিত করেন।
তবে ভারতীয় বিমান বাহিনী এই দাবি নাকচ করে দেয়।
সাজ্জাদ হায়দার এবং ভারতীয় ইতিহাসবিদ পুষ্পিন্দর সিং চোপড়ার মতে, এমএম আলম সেদিন আকাশে দুটি লড়াইয়ে নিশ্চিত বিজয় অর্জন করেছিলেন।
পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের মতে, যুদ্ধের শেষ নাগাদ, তিনি নয়টি বিমান ভূপাতিত এবং দুটি ক্ষতিগ্রস্ত করার কৃতিত্ব পেয়েছিলেন।
এয়ার কমব্যাট ইনফরমেশন গ্রুপের মতে, সারগোদায় ৩৩টি ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছিল, বেশ কয়েকটি হান্টার বিমান ও ফরাসি মিস্টেয়ার বিমান ধ্বংস করা হয়েছিল এবং একজন ভারতীয় পাইলটকে বন্দি করা হয়েছিল।
সাতই সেপ্টেম্বর, একজন ভারতীয় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কুক একটি স্যাবরকে গুলি করে ভূপাতিত করেছিলেন।
১০ই সেপ্টেম্বর, বিয়াস নদীর উপর একটি বিমান যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যেখানে একটি ভারতীয় মিস্টেয়ার বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল।
পাকিস্তানি গবেষক, লেখক এবং প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক তাহির নিয়াজের একটি প্রবন্ধ অনুসারে, ১৩ সেপ্টেম্বর একটি পাকিস্তানি স্যাবর জেট একটি ভারতীয় জিন্যাট বিমানকে ধ্বংস করে।
সেই রাতে ভারতীয় 'ক্যানবেরা' বিমানগুম পেশোয়ারে বোমা ফেলার পরিবর্তে ভুল করে মল রোডে বোমা ফেলে।
১৬ থেকে ১৯শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি বিমান ধ্বংস হয়ে যায়; ভারতের জিন্যাট আখ্যা পায় স্যাবর কিলার হিসেবে।
আদিত্য গুপ্ত তার 'রেড অন বাদিন' প্রবন্ধে লিখেছেন যে, ২১শে সেপ্টেম্বর ভারতীয় ক্যানবেরার বিমান বাদিনের রাডারে আক্রমণ করে। একই দিনে সারগোদা থেকে ফেরার সময়, এয়ার কমব্যাট ইনফরমেশন গ্রুপের মতে, একটি ক্যানবেরা বিমানকে পাকিস্তানি স্টারফাইটার গুলি করে ভূপাতিত করে।
বিজয় কুমার সিং তার 'লিডারশিপ ইন দ্য ইন্ডিয়ান আর্মি' বইতে লিখেছেন যে ওই সময়ে, ভারতের প্রথম সেনাপ্রধান কেএম কারিয়াপ্পার ছেলেকে বন্দি করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান তাকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু কারিয়াপ্পা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, "হয় সব বন্দিকে মুক্তি দাও, নয়তো কাউকেই না"।
২০শে সেপ্টেম্বর বিকেলে, স্কোয়াড্রন লিডার শরবত আলী চাঙ্গেজীর নেতৃত্বে চারটি স্যাবর জেট লাহোর-কাসুর ফ্রন্টের দিকে উড়ে যায়।
এর কিছুক্ষণ পরেই রাডারে শত্রুপক্ষের চারটি বিমানের খবর পাওয়া যায়। ভারতীয় বিমান বাহিনী হান্টার এবং জিন্যাট বিমানের একটি স্কোয়াড্রন লাহোরের দিকে পাঠায়।
ইতিহাসবিদ এয়ার কমোডর কায়সার তুফায়েল লিখেছেন যে লাহোরের আকাশে যে 'ডগফাইট' শুরু হয়েছিল তা ঘুড়ি ওড়ানোর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। লোকেরা ছাদে উঠে স্লোগান দিচ্ছিল।
চেঙ্গেজি একটা হান্টারকে গুলি করে ভূপাতিত করে। অন্যদিকে, শত্রুর গুলি বিমানে আঘাতে করায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আনোয়ারুল হক মালিক ইজেক্ট করতে বাধ্য হন।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাজির জিলানি আরেকটি হান্টারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন তবে ইন্ডিয়ান পাইলট শর্মাকে আরেকটি ভারতীয় বিমান উদ্ধার করে।
তিনি লেখেন, "এই সংঘর্ষটি ছিল পাকিস্তান বিমান বাহিনীর আকাশ শ্রেষ্ঠত্বের এক দুর্দান্ত প্রদর্শনী। ফলাফল ছিল ২-১ ব্যবধানে পাকিস্তানের পক্ষে, কিন্তু আনোয়ার মালিকের মৃত্যুর কারণে কোনো পাইলট ব্যক্তিগত পদক পাননি।
বিপরীতে, হান্টার্সের বহু ক্ষয়ক্ষতি ভারতীয় বিমান বাহিনীকে কাঁপিয়ে দেয় এবং লাহোরবাসীর 'বো কাটা' স্লোগান সত্যিই বিজয়ের প্রতিধ্বনিতে পরিণত হয়।"
দুই দিন পর, ২২ সেপ্টেম্বর রাতে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার অমরচিমা তার 'দ্য ক্রিমসন চিনার' বইতে লিখেছেন, "এই যুদ্ধ ছিল প্রথম 'পূর্ণ' যুদ্ধ যেখানে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই তীব্র সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল।
পাকিস্তানি বিমান বাহিনী দুই হাজার ৩৬৪টি সামরিক অভিযান চালিয়েছিল এবং ভারতীয় বিমান বাহিনী তিন হাজার ৯৩৭টি অভিযান চালিয়েছিল।"
অমরচিমা লিখেছেন, "ভারতীয় বিমান কমোডর জসজিৎ সিংয়ের মতে, পাকিস্তানি বিমান বাহিনী প্রযুক্তিগতভাবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর চেয়ে উন্নত ছিল, বিশেষ করে এর রাডার সিস্টেম এবং আধুনিক সরঞ্জামের উন্নত ব্যবহারের কারণে।
বিপরীতে ভারতীয় বিমান বাহিনী সম্প্রসারণের পর্যায়ে ছিল এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল।"
"এই যুদ্ধ নিয়ে ভারতের সরকারি তথ্য অনুসারে, কোনো পক্ষই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারেনি। যদিও সাধারণ ধারণা হলো যে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী যুদ্ধে জয়লাভ করেছে।"
অমরচিমা লিখেছেন, "জসজিৎ সিং এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তোলেন এবং একে ভারতীয় বিমান বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সতর্ক কৌশলের ফলাফল বলে অভিহিত করেন।"
অমরচিমা লিখেছেন যে "পাকিস্তানি বিমান বাহিনী সারগোদা ও পেশোয়ারকে তাদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছিল যেখানে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের অধিকাংশই কেন্দ্রীভূত ছিল।
পরিকল্পনা ছিল প্রতিরক্ষামূলক হামলার মাধ্যমে ভারতীয় বিমান ঘাঁটির আরও ক্ষতি করা। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বরের ক্ষয়ক্ষতির পর এই কৌশল বাদ দেওয়া হয়।"
বিমান যুদ্ধে উভয় পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী দাবি উঠে আসে।
মার্টিন ভ্যান ক্রেভেল্ড তার 'দ্য এজ অফ এয়ারপাওয়ার' বইতে লিখেছেন যে পাকিস্তান দাবি করেছে যে তারা ১০৪টি ভারতীয় বিমান ধ্বংস করেছে এবং তাদের নিজস্ব ১৯টি বিমান হারিয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত বলেছে যে তারা ৭৩টি পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করেছে এবং নিজস্ব ৩৫টি হারিয়েছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর মার্শাল অর্জুন সিং বলেন, অর্জন কম হওয়া সত্ত্বেও, তারা তিন দিনের মধ্যে আকাশপথে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন।
কিন্তু ইতিহাসবিদ কেনেথ ভেরেলের মতে, পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ভালো পারফর্ম করেছিল এবং সম্ভবত তাদেরই প্রাধান্য ছিল।
ভেরেল তার 'সাইবার্স ওভার মিক্সেল' বইতে লিখেছেন, "ভারতের কাছে আরও আধুনিক বিমান ছিল, কিন্তু পাকিস্তানের কাছে ছিল স্যাবর জেট এবং বিশেষজ্ঞ পাইলট ব্যবহারের এক দশকের অভিজ্ঞতা।"
জন ফ্রিকার তার 'ব্যাটল ফর পাকিস্তান: দ্য এয়ার ওয়ার অফ ১৯৬৫' বইতে লিখেছেন, পাকিস্তানি বিমান বাহিনী সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং এর প্রধান নূর খান ভারতীয় যেকোনো আক্রমণ রোধ করার জন্য কার্যকরভাবে তার পূর্ণ বিচক্ষণতা ব্যবহার করেছিলেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল। সাজ্জাদ হায়দারের নেতৃত্বে পেশোয়ার বিমান ঘাঁটি থেকে ছয়টি বিমান উড়তে শুরু করে। বিমানগুলো যখন সীমান্তের কাছে আত্তারি গ্রামের দিকে ঘুরে যাওয়ার নির্দেশ পায়, ততক্ষণে তারা শিয়ালকোটের কাছে লক্ষ্যবস্তু থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট দূরে ছিল।
আগের রাতে ওই এলাকা দিয়েই ভারতের কয়েকটি ট্যাংক পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল এবং লাহোরের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল প্রায়।
স্কোয়াড্রন ১৯ কমান্ডার সাজ্জাদ হায়দার তার 'ফ্লাইট অফ দ্য ফ্যালকন: ডেমোলিশিং মিথস অফ দ্য ইন্দো-পাক ওয়ার্স ১৯৬৫-১৯৭১' বইয়ে লিখেছেন, "পাকিস্তানের কেন্দ্রবিন্দুতে (লাহোর -যেটা ছিল তখনকার রাজধানী) আক্রমণের খবর পেয়ে আমাদের হৃদয়ে যে যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়েছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব।"
"লাহোর শব্দটি শুনেই মনে হলো যেন একটা বিশাল বৈদ্যুতিক শক লেগেছে। শিরায় রক্ত সঞ্চালন ইতোমধ্যেই তীব্র ছিল। সেই রেডিও বার্তাটি যেন একটা স্ফুলিঙ্গের মতো নেমে এসে আমাদের অস্তিত্বে আগুন ধরিয়ে দিল।"
বইটিতে তিনি লিখেছেন, "হঠাৎ আমি বেশ কয়েকটি ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যানকে রাস্তা বেয়ে ওঠার চেষ্টা করতে দেখলাম। আমি চিৎকার করে বললাম, 'এগুলো ভারতীয় ট্যাংক! এগুলো শেষ করে দাও। জোড়ায় জোড়ায় রকেট ছোঁড়ো।"
"আমি 'টার্গেট সকাল নয়টা' (নয়টা বাজার সময় ঘড়ির কাঁটা যে অবস্থানে থাকে সেই একই অবস্থানে) বলে চিৎকার করেই প্রথম রকেটটি ছুঁড়লাম। সাথে সাথেই, নাম্বার থ্রি রিপোর্ট করলো, 'লিডার! ট্যাংকটি আকাশে উঠে গেছে'।"
"প্রতিটি আঘাতের পর আগুনের শিখা এবং গলিত ধাতু আকাশে উঠে যাচ্ছিল। আমরা এত কম উচ্চতায় ছিলাম যে বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছিল, মনে হচ্ছিলো যেন বিমান-বিধ্বংসী গোলাগুলির মধ্য দিয়ে উড়ছি।"
তিনি লেখেন, "দ্বিতীয় অভিযানের সময় যখন স্কোয়াড্রন লিডার মারভিন মিডলকট এফ-১০৪ -এ আসেন, তখন আমি পাঁচ এবং ছয় নম্বরকে আবার ফর্মেশনে ডেকে বলি যে আমাদের এখন বিমান কভার আছে।"
"আমি একটি আর্টিলারি গাড়িকে টার্গেট করেছিলাম। তারপর পেছন থেকে আরেকটি ট্যাংকে মেশিনগান দিয়ে গুলি ছুঁড়েছিলাম। আমার মনে আছে নওশেরা স্কুলে উমর খান আফ্রিদি ও আমি শিখেছিলাম যে ইঞ্জিনের ওপরের ঢাকনা ট্যাংকের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে এসেছিল। দুই নম্বর নিশ্চিত করেছিল যে ট্যাংকে আগুন লেগেছে।"
বইটিতে তিনি লিখেছেন, "এটি ছিল আমার ষষ্ঠ ও শেষ আক্রমণ এবং আমি যখন এলাকা ছেড়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমি একটি পতাকাবাহি জিপ দেখতে পেলাম যেটা লক্ষ্য করে আমি গুলি করি।
আগুন ধরে যাওয়ার আগে, আমি একজন লোককে লাফিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখলাম।
"বিমানযুদ্ধের ইতিহাসবিদ পুষ্পিন্দর সিং আমাকে বলেছিলেন যে ওয়াঘায় আমি পতাকাবাহি যে জিপটিকে টার্গেট করেছিলাম, সেটা ছিল মেজর জেনারেল নিরঞ্জন প্রসাদের। যিনি তার ডিভিশন ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।"
তিনি আরও লেখেন, "১৬ থেকে ১৭ মিনিট পর, যখন গোলাবারুদ শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং জ্বালানি বিপজ্জনকভাবে কম ছিল, তখন আমি ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম।"
জেনারেল লচমন সিং, জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং এবং ইতিহাসবিদ জগন মোহন ও সামীর চোপড়ার উদ্ধৃতি দিয়ে হায়দার তার বইতে দাবি করেছেন যে "কর্নেল ডেসমন্ড হাইডের নেতৃত্বে অগ্রসরমাণ তিনটি জাট ব্যাটালিয়নকে লক্ষবস্তু বানিয়েছিলো পাকিস্তানি বিমান বাহিনী এবং মেশিনগান ও রকেট দিয়ে কচুকাটা করেছিল।"
"ইউনিটটি তাদের সব কামান ও শেরম্যান ট্যাংক হারিয়ে ফেলেছিল। জেনারেল লচমন সিং-এর মতে, শত্রুরা প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আমাদের প্রতিটি যানবাহনকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল এবং আমাদের গুলি থেকে সম্পূর্ণরূপে চিন্তামুক্ত ছিল।"
সাজ্জাদ হায়দার তার বইতে দাবি করেছেন যে "এগিয়ে আসতে থাকা ভারতীয় সেনাদের দলটির সামনের সারিতে পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
জেনারেল সুখবন্ত সিং-এর মতে, ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার ব্যাটালিয়ন ত্যাগ করে কেবল একটি মোজা এবং একটি জুতা পরে পালিয়ে যান। তার ডেপুটিও সাইকেলে করে পালিয়ে যান এবং অমৃতসরে আশ্রয় নেন।"
যুদ্ধ ইতিহাসবিদ কর্নেল আজম কাদরির মতে, এটি ছিল একটি ফল নির্ণায়ক যুদ্ধ।
কর্নেল কাদরি বিবিসিকে বলেন, "লাহোরকে রক্ষাকারী স্থলবাহিনী অবস্থান নেওয়ার আগেই পাকিস্তানি বিমান বাহিনী অগ্রসরমান শত্রু ডিভিশনগুলোকে ধ্বংস করে লাহোরকে রক্ষা করেছিল।"
তিনি বলেন যে "সাজ্জাদ হায়দার, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মুহাম্মদ আকবর, আরশাদ সামি, খালিদ লতিফ, দিলাওয়ার এবং গনি আকবর সেদিন লাহোর এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলেন"।
তিনি বলেন, "প্রতিটি পাইলট ছয়টি করে আক্রমণ করেছিলেন এবং শত্রুর আক্রমণকে পুরোপুরি পরাজিত করতে প্রায় ১৭ মিনিট ধরে হামলা চলতে থাকে। যখন তারা ফিরে আসে, তখন মাঠে গলে যাওয়া লোহা ও আগুনের শিখা শত্রুর পরাজয়ের সাক্ষ্য দিচ্ছিলো।"
সাজ্জাদ হায়দার তার বইতে দাবি করেছেন যে "সেই সন্ধ্যায়, আমাদের তৃতীয় অভিযানে, আমরা পাঠানকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম এবং ১৩টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।
যদি পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণরূপে সফল হত, যেটা ভালোভাবে মহড়া করা হয়েছিল এবং পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর সেরা বিমান ও পাইলটরা যুক্ত ছিল, তাহলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৫০টিরও বেশি বিমান এমনভাবে ধ্বংস হতো যেটা অস্বীকার করার উপায় থাকতো না।"
"এমএম আলমের নেতৃত্বে আদমপুর আক্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। অন্যদিকে সরফরাজ রফিকির নেতৃত্বে হালওয়ারা আক্রমণ ভারতীয় বিমান নজরদারির কারণে সম্ভব হয়নি।
বিমান সংঘর্ষে দুটি ভারতীয় হান্টার ধ্বংস হয়ে যায়, তাদের পাইলটরা বেঁচে যান। কিন্তু দুই পাকিস্তানি পাইলট (রফিকিসহ) নিহত হন। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিসিল চৌধুরী নিরাপদে ফিরে আসেন।"
ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ সংক্রান্ত ইতিহাসের বই এবং বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, যুদ্ধের আকাশ পর্ব শুরু হয় ১৯৬৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর, যখন ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর 'অপারেশন গ্র্যান্ড স্ল্যাম' থামাতে আক্রমণ শুরু করে।
জবাবে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী দুটি এফ-৮৬ স্যাবর বিমান পাঠায়, যেগুলো ৫ নম্বর স্কোয়াড্রন লিডার সরফরাজ রফিকি এবং ১৫ নম্বর স্কোয়াড্রনের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইমতিয়াজ ভাট্টি উড়াচ্ছিলেন।
ছাম্ব এলাকার ওপর এই আকাশ যুদ্ধে রফিকি ভারতীয় ফর্মেশন লিডার এবং তার উইংম্যানকে টার্গেট করেন, যখন অন্য দুটি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেন ভাট্টি।
ভারতীয় বিমান বাহিনী প্রায় ১৩০টি ভ্যাম্পায়ার এবং ৫০টিরও বেশি অর্গন বিমান যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
দোসরা সেপ্টেম্বর, উভয় পক্ষের স্থলবাহিনী বিমান সহায়তা পায়, কিন্তু কোনো বড় যুদ্ধ হয়নি।
এয়ার কমোডর কায়সার তুফায়েলের মতে, ভারত পাঠানকোটে পাকিস্তানের স্যাবর জেটগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য জিন্যাট যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছিল।
তিনি তার 'রান, ইটস এ-১০৪' প্রবন্ধে লিখেছেন যে তেসরা সেপ্টেম্বর স্কোয়াড্রন লিডার ট্রেভর ক্যালভার একটি স্যাবর বিমান গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেন এবং তাকে বীর চক্রে ভূষিত করা হয়।
কিন্তু বিমানটি আসলে রক্ষা পেয়েছিলো এবং পাইলট ইউসুফ আলী খানকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিলো। এই সময়ে, একটি ভারতীয় বিমান দুর্ঘটনাক্রমে পাকিস্তানে অবতরণ করে এবং তাকে আটক করা হয়।
পিএএফ ফ্যালকনস ওয়েবসাইট অনুসারে, চৌঠা সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের একটি স্যাবর বিমান বিধ্বস্ত হয়, পাকিস্তান যেটাকে নিজেদের গুলিতে এবং ভারত তাদের আক্রমণের ফলে ঘটেছে বলে দাবি করে।
কায়সার তুফায়েলের মতে, পাইলট এমএম আলম দাবি করেছিলেন যে, তিনি ৭ সেপ্টেম্বর সারগোদার আকাশে এক মিনিটের মধ্যে পাঁচটি ভারতীয় হকার হান্টার বিমান ভূপাতিত করেন এবং ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে চারটি বিমানকে পরাজিত করেন।
তবে ভারতীয় বিমান বাহিনী এই দাবি নাকচ করে দেয়।
সাজ্জাদ হায়দার এবং ভারতীয় ইতিহাসবিদ পুষ্পিন্দর সিং চোপড়ার মতে, এমএম আলম সেদিন আকাশে দুটি লড়াইয়ে নিশ্চিত বিজয় অর্জন করেছিলেন।
পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের মতে, যুদ্ধের শেষ নাগাদ, তিনি নয়টি বিমান ভূপাতিত এবং দুটি ক্ষতিগ্রস্ত করার কৃতিত্ব পেয়েছিলেন।
এয়ার কমব্যাট ইনফরমেশন গ্রুপের মতে, সারগোদায় ৩৩টি ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছিল, বেশ কয়েকটি হান্টার বিমান ও ফরাসি মিস্টেয়ার বিমান ধ্বংস করা হয়েছিল এবং একজন ভারতীয় পাইলটকে বন্দি করা হয়েছিল।
সাতই সেপ্টেম্বর, একজন ভারতীয় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কুক একটি স্যাবরকে গুলি করে ভূপাতিত করেছিলেন।
১০ই সেপ্টেম্বর, বিয়াস নদীর উপর একটি বিমান যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যেখানে একটি ভারতীয় মিস্টেয়ার বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল।
পাকিস্তানি গবেষক, লেখক এবং প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক তাহির নিয়াজের একটি প্রবন্ধ অনুসারে, ১৩ সেপ্টেম্বর একটি পাকিস্তানি স্যাবর জেট একটি ভারতীয় জিন্যাট বিমানকে ধ্বংস করে।
সেই রাতে ভারতীয় 'ক্যানবেরা' বিমানগুম পেশোয়ারে বোমা ফেলার পরিবর্তে ভুল করে মল রোডে বোমা ফেলে।
১৬ থেকে ১৯শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি বিমান ধ্বংস হয়ে যায়; ভারতের জিন্যাট আখ্যা পায় স্যাবর কিলার হিসেবে।
আদিত্য গুপ্ত তার 'রেড অন বাদিন' প্রবন্ধে লিখেছেন যে, ২১শে সেপ্টেম্বর ভারতীয় ক্যানবেরার বিমান বাদিনের রাডারে আক্রমণ করে। একই দিনে সারগোদা থেকে ফেরার সময়, এয়ার কমব্যাট ইনফরমেশন গ্রুপের মতে, একটি ক্যানবেরা বিমানকে পাকিস্তানি স্টারফাইটার গুলি করে ভূপাতিত করে।
বিজয় কুমার সিং তার 'লিডারশিপ ইন দ্য ইন্ডিয়ান আর্মি' বইতে লিখেছেন যে ওই সময়ে, ভারতের প্রথম সেনাপ্রধান কেএম কারিয়াপ্পার ছেলেকে বন্দি করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান তাকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু কারিয়াপ্পা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, "হয় সব বন্দিকে মুক্তি দাও, নয়তো কাউকেই না"।
২০শে সেপ্টেম্বর বিকেলে, স্কোয়াড্রন লিডার শরবত আলী চাঙ্গেজীর নেতৃত্বে চারটি স্যাবর জেট লাহোর-কাসুর ফ্রন্টের দিকে উড়ে যায়।
এর কিছুক্ষণ পরেই রাডারে শত্রুপক্ষের চারটি বিমানের খবর পাওয়া যায়। ভারতীয় বিমান বাহিনী হান্টার এবং জিন্যাট বিমানের একটি স্কোয়াড্রন লাহোরের দিকে পাঠায়।
ইতিহাসবিদ এয়ার কমোডর কায়সার তুফায়েল লিখেছেন যে লাহোরের আকাশে যে 'ডগফাইট' শুরু হয়েছিল তা ঘুড়ি ওড়ানোর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। লোকেরা ছাদে উঠে স্লোগান দিচ্ছিল।
চেঙ্গেজি একটা হান্টারকে গুলি করে ভূপাতিত করে। অন্যদিকে, শত্রুর গুলি বিমানে আঘাতে করায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আনোয়ারুল হক মালিক ইজেক্ট করতে বাধ্য হন।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাজির জিলানি আরেকটি হান্টারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন তবে ইন্ডিয়ান পাইলট শর্মাকে আরেকটি ভারতীয় বিমান উদ্ধার করে।
তিনি লেখেন, "এই সংঘর্ষটি ছিল পাকিস্তান বিমান বাহিনীর আকাশ শ্রেষ্ঠত্বের এক দুর্দান্ত প্রদর্শনী। ফলাফল ছিল ২-১ ব্যবধানে পাকিস্তানের পক্ষে, কিন্তু আনোয়ার মালিকের মৃত্যুর কারণে কোনো পাইলট ব্যক্তিগত পদক পাননি।
বিপরীতে, হান্টার্সের বহু ক্ষয়ক্ষতি ভারতীয় বিমান বাহিনীকে কাঁপিয়ে দেয় এবং লাহোরবাসীর 'বো কাটা' স্লোগান সত্যিই বিজয়ের প্রতিধ্বনিতে পরিণত হয়।"
দুই দিন পর, ২২ সেপ্টেম্বর রাতে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার অমরচিমা তার 'দ্য ক্রিমসন চিনার' বইতে লিখেছেন, "এই যুদ্ধ ছিল প্রথম 'পূর্ণ' যুদ্ধ যেখানে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই তীব্র সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল।
পাকিস্তানি বিমান বাহিনী দুই হাজার ৩৬৪টি সামরিক অভিযান চালিয়েছিল এবং ভারতীয় বিমান বাহিনী তিন হাজার ৯৩৭টি অভিযান চালিয়েছিল।"
অমরচিমা লিখেছেন, "ভারতীয় বিমান কমোডর জসজিৎ সিংয়ের মতে, পাকিস্তানি বিমান বাহিনী প্রযুক্তিগতভাবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর চেয়ে উন্নত ছিল, বিশেষ করে এর রাডার সিস্টেম এবং আধুনিক সরঞ্জামের উন্নত ব্যবহারের কারণে।
বিপরীতে ভারতীয় বিমান বাহিনী সম্প্রসারণের পর্যায়ে ছিল এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল।"
"এই যুদ্ধ নিয়ে ভারতের সরকারি তথ্য অনুসারে, কোনো পক্ষই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারেনি। যদিও সাধারণ ধারণা হলো যে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী যুদ্ধে জয়লাভ করেছে।"
অমরচিমা লিখেছেন, "জসজিৎ সিং এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তোলেন এবং একে ভারতীয় বিমান বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সতর্ক কৌশলের ফলাফল বলে অভিহিত করেন।"
অমরচিমা লিখেছেন যে "পাকিস্তানি বিমান বাহিনী সারগোদা ও পেশোয়ারকে তাদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছিল যেখানে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের অধিকাংশই কেন্দ্রীভূত ছিল।
পরিকল্পনা ছিল প্রতিরক্ষামূলক হামলার মাধ্যমে ভারতীয় বিমান ঘাঁটির আরও ক্ষতি করা। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বরের ক্ষয়ক্ষতির পর এই কৌশল বাদ দেওয়া হয়।"
বিমান যুদ্ধে উভয় পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী দাবি উঠে আসে।
মার্টিন ভ্যান ক্রেভেল্ড তার 'দ্য এজ অফ এয়ারপাওয়ার' বইতে লিখেছেন যে পাকিস্তান দাবি করেছে যে তারা ১০৪টি ভারতীয় বিমান ধ্বংস করেছে এবং তাদের নিজস্ব ১৯টি বিমান হারিয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত বলেছে যে তারা ৭৩টি পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করেছে এবং নিজস্ব ৩৫টি হারিয়েছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর মার্শাল অর্জুন সিং বলেন, অর্জন কম হওয়া সত্ত্বেও, তারা তিন দিনের মধ্যে আকাশপথে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন।
কিন্তু ইতিহাসবিদ কেনেথ ভেরেলের মতে, পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ভালো পারফর্ম করেছিল এবং সম্ভবত তাদেরই প্রাধান্য ছিল।
ভেরেল তার 'সাইবার্স ওভার মিক্সেল' বইতে লিখেছেন, "ভারতের কাছে আরও আধুনিক বিমান ছিল, কিন্তু পাকিস্তানের কাছে ছিল স্যাবর জেট এবং বিশেষজ্ঞ পাইলট ব্যবহারের এক দশকের অভিজ্ঞতা।"
জন ফ্রিকার তার 'ব্যাটল ফর পাকিস্তান: দ্য এয়ার ওয়ার অফ ১৯৬৫' বইতে লিখেছেন, পাকিস্তানি বিমান বাহিনী সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং এর প্রধান নূর খান ভারতীয় যেকোনো আক্রমণ রোধ করার জন্য কার্যকরভাবে তার পূর্ণ বিচক্ষণতা ব্যবহার করেছিলেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
আফগানিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটে ২০২১ সালে। দুই দশক ধরে চলা, এই যুদ্ধের কারণে বৈরী সম্পর্ক রয়েছে দেশ দুটির মধ্যে, তবে এমন সম্পর্ক থেকে উত্তরণ চায় ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নই এখন তাদের লক্ষ্য।
১ ঘণ্টা আগেভারতের উত্তর প্রদেশের একটি শিল্পনগরী এলাকা কানপুর। গত ৪ সেপ্টেম্বর কানপুরের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা সৈয়দ নগরে ঈদে মিলাদুন্নবি উদ্যাপন উপলক্ষে সন্ধ্যায় একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।
২ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি বায়ু দূষণ কমানোর জন্য রাজধানীতে পেট্রোলচালিত মোটরবাইকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভিয়েতনাম প্রশাসন। যা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে, পরিকল্পিত এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ৪.৬ বিলিয়ন ডলারের বাজার হারাবে বলে আশঙ্কা করছে জাপান সরকার এবং দেশের কিছু শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা।
২ ঘণ্টা আগেগাজায় সাফল্য অর্জনের জন্য যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিল ট্রাম্পের প্রধান কূটনৈতিক মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফ ও তার দল, সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে তৈরি করা কঠিন হতে পারে, কারণ এই যুদ্ধ প্রায় চার বছর ধরে চলছে।
৩ ঘণ্টা আগে