সৈয়দ আবদাল আহমদ
সিলিকন ভ্যালির মাথাব্যথার কারণ এখন ‘ডিপসিক R1’প্রযুক্তি। চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি করা নতুন এই এআই ভাষা মডেল প্রযুক্তি বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছে। মার্কিন এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-র চ্যাটজিপিটি, গুগলের জেমিনি এবং মাইক্রোসফটের কোপাইলটকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে চীনা ‘ডিপসিক আরওয়ান’।
নতুন এই প্রযুক্তি মার্কিন শেয়ারবাজারে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের ধস নামিয়েছে। ডিপসিক শুধু বিশ্বের প্রথম সারির এআই চিপ তৈরির প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার বাজারমূল্য থেকে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার নাই করে দিয়েছে। এটা ওয়ালস্ট্রিটের ইতিহাসে কোনো কোম্পানির জন্য একদিনে সর্বোচ্চ ক্ষতির রেকর্ড। সিলিকন ভ্যালির টেক-জায়ান্টরা ডিপসিক আরওয়ান নিয়ে রীতিমতো আতংকগ্রস্ত।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বিশ্বের আলোচিত হাই-টেক পার্ক ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারার সিলিকন ভ্যালি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির উন্মাদনা সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলাম। কয়েকজন প্রযুক্তিবিদের সঙ্গে আলাপে জানতে পারি কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গবেষণা নিয়ে বড় বড় হাই-টেক কোম্পানি কীভাবে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তখন চীনা কোম্পানি ডিপসিকের কোনো নামগন্ধও ছিল না। প্রতিযোগিতায় গুগল কীভাবে মাইক্রোসফটকে টেক্কা মারছে কিংবা এনভিডিয়া করপোরেশন কীভাবে অ্যাপলকে টেক্কা মারছে তার কথা শুনেছি।
কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ আগে চীনা কোম্পানি ডিপসিক বাজারে এসে মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতাকে ম্লান করে দিয়েছে।
কী এই ‘ডিপসিক আরওয়ান’। একে নিয়ে কেন এত মাতামাতি? এর প্রতিষ্ঠাতাই বা কে? প্রতিদিনই এ বিষয়ে খবর হচ্ছে বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স এবং ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের সেরা পত্রিকাগুলোতে। ডিপসিক হচ্ছে চীনা এআই কোম্পানি। এটি একটি চীনা স্টার্টআপ যা তার অনন্য এবং নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। ডিপসিকের তৈরি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই চালিত চ্যাটবট যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উন্মুক্ত হয় গত ২০ জানুয়ারি।
এর পরই ডিপসিক অ্যাপল স্টোরের সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা ফ্রি অ্যাপের তালিকায় সবার শীর্ষে উঠে এসেছে। সহজ কথায় বললে, ডিপসিক আরওয়ান হলো এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবস্থা, যা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক এআই মডেলগুলোর সমকক্ষ অথচ তুলনামূলক অনেক কম খরচে তৈরি। অর্থাৎ ডিপসিক ওপেনএআই-র চ্যাটজিপিটি, গুগলের জেমিনি এবং মাইক্রোসফটের কোপাইলটের সমকক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের এআই কোম্পানিগুলো তাদের অ্যাপগুলো তৈরি করতে যেখানে খরচ করেছেন শতকোটি ডলার, সেখানে ডিপসিক আরওয়ান অ্যাপটি তৈরি করতে লেগেছে মাত্র ৬০ লাখ ডলার।
চীনের গুয়াংদং প্রদেশের ঝানজিয়াং শহরের চল্লিশ বছর বয়সি তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট লিয়াং-ওয়েনফেং নামক এক যুবক এই সাড়া জাগানো এআই অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি হেজ ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করে ডিপসিক নামে এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার ৫০ হাজার ‘এ-১০০’চিপ সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। এনভিডিয়ার এই উন্নতমানের চিপের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত কমদামি চিপ সংযুক্ত করে তিনি ডিপসিক তৈরি করেন। এনভিডিয়ার চিপ এখন চীনে রপ্তানি বন্ধ। লিয়াং রপ্তানি বন্ধের আগেই চিপগুলো সংগ্রহ করে রাখেন। কমদামি চিপ যা চীনে এখনো রপ্তানি করা হয়, তার সঙ্গে সংযুক্ত করেন এনভিডিয়ার দামি চিপ।
লিয়াংয়ের জন্ম ১৯৮৫ সালে। দেখতে শুকনো-রোগা গড়ন আর ফ্যাকাশে। চীনে যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে রসিকতা করা হয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে তিনি বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। লিয়াং শৈশব থেকে ছিলেন মেধাবী। বাবা স্কুলশিক্ষক।
নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘হাই-ফ্লাইয়ার’ নামের চীনের হেজ ফান্ড (অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান) থেকে লিয়াং ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ডিপসিক। হাই-ফ্লাইয়ার নামের প্রতিষ্ঠানটিও বড় ডেটা বিশ্লেষণকারী যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডিপসিকের গবেষণা ল্যাব দ্রুতই নতুন নতুন উদ্ভাবনা গবেষণা প্রকাশ করতে থাকে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ডিপসিক ‘ভি৩’ নামের একটি এআই মডেল চালু করে যা ছিল ‘ডিপসিক আরওয়ান’-এর আগের সংস্করণ। ডিপসিক ভি৩ এবং আর১ মডেলগুলোর মাধ্যমে এআই গবেষণায় দ্রুত এগিয়ে গেছে ডিপসিক। এটি ওপেনএআই এবং মেটার শীর্ষ এআই মডেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম। এটি চ্যাটজিপিটির মতোই ভাষা মডেল (এলএলএম)। লেখালেখি, অনুবাদ, কোডিংসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।
ডিপসিক আরওয়ান-কে বলা হচ্ছে ‘চেইন অব থট মডেল’। এটা যখন কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়, তখন ধাপে ধাপে যুক্তি সাজিয়ে ব্যাখ্যা করতে থাকে, ঠিক যেমন একজন মানুষ চিন্তা করে এবং উত্তর তৈরি করে। সাধারণ এআই মডেল শুধু ডেটাবেজ থেকে তথ্য এনে উত্তর দেয়। কিন্তু ডিপসিক আরওয়ান নিজের ভাবনাকে সাজিয়ে ব্যাখ্যা করে।
ফলে উত্তরগুলো বেশি নির্ভরযোগ্য ও বোধগম্য হয়। এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো গণিত ও প্রোগ্রামিংয়ের ক্ষেত্রে পারফর্ম করা। অন্যান্য এআই মডেল ভাষাগত প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেও জটিল গাণিতিক বা কোডিং সম্পর্কিত প্রশ্নে খুব ভালো করতে পারে না। কিন্তু ডিপসিক আরওয়ান সেই দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে পেরেছে। এটি সহজে ব্যবহার করা যায় এবং একদম বিনামূল্যে বা ফ্রি পাওয়া যায়। ওপেনএআই-র মডেল ব্যবহার করতে মাসে ২০ ডলার খরচ করতে হয়, কিন্তু এটা একদম ফ্রি। কেউ চাইলে ডিপসিক আরওয়ান-এর কোড ডাউনলোড করে নিজের ব্যবসা বা গবেষণা প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ও ডিপসিকের ওয়েবসাইটে ‘ডিপসিক আরওয়ান’ অ্যাপটি ফ্রিতে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করেছি, ডিপসিক অ্যাপল স্টোরের ডাউনলোড হওয়া শীর্ষ অ্যাপে পরিণত হয়েছে। শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট টুলের জন্য এটি জনপ্রিয় হয়েছে। চ্যাটজিপিটির মতোই এর কার্যক্রম। এটি তৈরি করা হয়েছে কর্মদক্ষতা বাড়াতে এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে। লেখাকে ভাবগম্ভীর করে তুলতেও অ্যাপটি কার্যকর।
তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে ডিপসিক আরওয়ান অপারগতাও প্রকাশ করে। যেমন- বিবিসি ডিপসিককে প্রশ্ন করেছিল ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে কী হয়েছিল? তখন ডিপসিক আরওয়ান উত্তর দেয়, ‘আমি দুঃখিত, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। আমি একজন এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং আমাকে এমন উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে যা সহায়ক এবং ক্ষতিকর নয়।’ অর্থাৎ চীন যেসব রাজনৈতিক বিষয়ে সংবেদনশীল সেসব বিষয়ে চ্যাটবটটি শতভাগ উত্তর নাও দিতে পারে।
ডিপসিকের দ্রুত উত্থানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের জন্য ‘সতর্কবার্তা’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এআই কোম্পানিগুলোকে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।
ডিপসিকের উত্থানে হুমকির মুখে পড়েছে মার্কিনিদের একচেটিয়া এআই ব্যবসা। ডিপসিকের সাফল্য এই ধারণা জোরদার করেছে যে, উন্নত এআই মডেল তৈরিতে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা জরুরি নয়। মাইক্রোসফট, মেটা, ওপেনএআই-র অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি জিপিইউ-নির্ভর ডেটা সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
কিন্তু এনভিডিয়ার এক বড় গ্রাহক জানিয়েছেন, ডিপসিক দেখিয়ে দিয়েছে কম শক্তিশালী গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) ব্যবহার করেও কার্যকর মডেল তৈরি করা সম্ভব। এনভিডিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী চিপগুলো ৯০ শতাংশের বেশি মুনাফা অর্জন করে যা প্রযুক্তি বাজারে এক নজিরবিহীন ঘটনা। এখন এনভিডিয়া চাপে পড়েছে। অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট নিজেরা চিপ তৈরি করে এনভিডিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। এর মধ্যে ডিপসিক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
চার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট
মাইক্রোসফটের কোপাইলট (Copilot) একটি এআইভিত্তিক ব্যক্তিগত সহকারী। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তথ্য সরবরাহ এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, সৃজনশীল প্রকল্পে সহায়তা এবং প্রতিদিনের কাজ সহজতর করা।
ওপেনএআই-র চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) ভাষা মডেল বা কথোপকথনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। প্রকৃত মানুষের মতো কথা বলতে পারে এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
জেমিনি হলো গুগলের একটি উন্নতমানের এআই মডেল যা উচ্চমানের পারফরম্যান্স প্রদান করে। এটি বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য উপযোগী এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।
ডিপসিক, কোপাইলট, চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি প্রতিটি এআই মডেল ও প্ল্যাটফরমের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা রয়েছে। ওপেন- সোর্স মডেলে খুঁজলে এবং উন্নত এআই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে চাইলে ডিপসিক এখন উপযুক্ত।
ডিপসিক তার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং কম খরচে উন্নয়নের মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিজগতে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। ওপেন সোর্স মডেলগুলোর মাধ্যমে ডিপসিক ডেভেলপারদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং উচ্চমানের এআই মডেলের সম্ভাব্যতা প্রদর্শন করেছে।
এনভিডিয়া থেকে শুরু করে সিমেন্স এনার্জির মতো কোম্পানির বাজারমূল্য ধস নামিয়ে দিয়েছে ডিপসিক। এনভিডিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এআই চিপ প্রস্তুতকারক আর সিমেন্স এনার্জি ডেটা সেন্টারে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী।
ডিপসিক নিয়ে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরা যা ভাবছেন
ডিপসিক নিয়ে স্যাম অল্টম্যান থেকে সত্য নাদেলা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নতুন এআই প্রযুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রযুক্তি জায়ান্টরা। ইন্টেলের সাবেক সিইও বলেছেন, ডিপসিক এআই বাজারকে হ্রাস করার পরিবর্তে প্রসারিত করবে। মেটা একটি নতুন শিল্পের শীর্ষস্থানীয় এআই মডেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ ডিপসিকের উত্থান নিয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে তিনি বলেন, ফেসবুকের ওপেন সোর্স এআই মডেল ফ্যামিলি এল লামার নতুন সংস্করণ প্রকাশের পর শিল্প মডেলটি শীর্ষস্থানে যাবে। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান ডিপসিক আরওয়ান মডেলকে চিত্তাকর্ষক মডেল হিসেবে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, এমন একটি নতুন প্রতিযোগী থাকা জরুরি। আমরা স্পষ্টতই আরো ভালো মডেল প্রকাশ করব। আপনাদের জন্য এজিআই ও নতুন কিছু আনার চেষ্টা করব।
মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা বলেন, জেভনস প্যারাডক্সের দেখা মিলেছে আবার। ডিপসিকের নতুন মডেল কার্যকর ওপেন সোর্স মডেলের উদাহরণ। নানা দিক থেকেই এটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক।
মেটার প্রধান এআই বিজ্ঞানী ইয়ান লেকুন ডিপসিকের সাফল্যকে সুসংবাদ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, যারা ডিপসিকের কার্যক্ষমতা দেখেছেন এবং মনে করছেন, চীন এআইতে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তাহলে তারা ভুল বুঝছেন। সঠিক হচ্ছে, ওপেন সোর্স মডেল মালিকানার বিষয়কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ডিপসিক ওপেন রিসার্চ ও ওপেন সোর্স থেকে লাভবান হয়েছে। যেমনটা মেটা থেকে পাইটর্চ ও লামা হয়েছে। এরা নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে, আর তা অন্যদের কাজের ধারণার ওপর তৈরি করা হয়েছে। এটিই ওপেন রিসার্চ ও ওপেন সোর্সের শক্তি।
সেলসফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক বেনিওফ বলেন, ডিপসিক অ্যাপ স্টোরে ১ নম্বর। চ্যাটজিপিটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। এদের কোনো এনভিডিয়া সুপার কম্পিউটার বা ১০ কোটি ডলারের প্রয়োজন নেই। এআই এখন পণ্যে পরিণত হয়েছে।
এআই প্রতিষ্ঠান অ্যানথ্রোপিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দারিও অ্যামোডেই মার্কিন সরকারকে এআই চিপ রপ্তানির ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, চীনের এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অনেক বেশি জিপিইউ রয়েছে। ডিপসিকের কাছে ৫০ হাজারের মতো জিপিইউ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিপসিক নিয়ে এআই চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া এক বিবৃতি ডিপসিকের আরওয়ান মডেলকে চমৎকার এআই অগ্রগতি বলে অভিহিত করেছে।
সিলিকন ভ্যালির মাথাব্যথার কারণ এখন ‘ডিপসিক R1’প্রযুক্তি। চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি করা নতুন এই এআই ভাষা মডেল প্রযুক্তি বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছে। মার্কিন এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-র চ্যাটজিপিটি, গুগলের জেমিনি এবং মাইক্রোসফটের কোপাইলটকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে চীনা ‘ডিপসিক আরওয়ান’।
নতুন এই প্রযুক্তি মার্কিন শেয়ারবাজারে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের ধস নামিয়েছে। ডিপসিক শুধু বিশ্বের প্রথম সারির এআই চিপ তৈরির প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার বাজারমূল্য থেকে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার নাই করে দিয়েছে। এটা ওয়ালস্ট্রিটের ইতিহাসে কোনো কোম্পানির জন্য একদিনে সর্বোচ্চ ক্ষতির রেকর্ড। সিলিকন ভ্যালির টেক-জায়ান্টরা ডিপসিক আরওয়ান নিয়ে রীতিমতো আতংকগ্রস্ত।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বিশ্বের আলোচিত হাই-টেক পার্ক ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারার সিলিকন ভ্যালি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির উন্মাদনা সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলাম। কয়েকজন প্রযুক্তিবিদের সঙ্গে আলাপে জানতে পারি কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গবেষণা নিয়ে বড় বড় হাই-টেক কোম্পানি কীভাবে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তখন চীনা কোম্পানি ডিপসিকের কোনো নামগন্ধও ছিল না। প্রতিযোগিতায় গুগল কীভাবে মাইক্রোসফটকে টেক্কা মারছে কিংবা এনভিডিয়া করপোরেশন কীভাবে অ্যাপলকে টেক্কা মারছে তার কথা শুনেছি।
কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ আগে চীনা কোম্পানি ডিপসিক বাজারে এসে মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতাকে ম্লান করে দিয়েছে।
কী এই ‘ডিপসিক আরওয়ান’। একে নিয়ে কেন এত মাতামাতি? এর প্রতিষ্ঠাতাই বা কে? প্রতিদিনই এ বিষয়ে খবর হচ্ছে বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স এবং ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের সেরা পত্রিকাগুলোতে। ডিপসিক হচ্ছে চীনা এআই কোম্পানি। এটি একটি চীনা স্টার্টআপ যা তার অনন্য এবং নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। ডিপসিকের তৈরি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই চালিত চ্যাটবট যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উন্মুক্ত হয় গত ২০ জানুয়ারি।
এর পরই ডিপসিক অ্যাপল স্টোরের সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা ফ্রি অ্যাপের তালিকায় সবার শীর্ষে উঠে এসেছে। সহজ কথায় বললে, ডিপসিক আরওয়ান হলো এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবস্থা, যা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক এআই মডেলগুলোর সমকক্ষ অথচ তুলনামূলক অনেক কম খরচে তৈরি। অর্থাৎ ডিপসিক ওপেনএআই-র চ্যাটজিপিটি, গুগলের জেমিনি এবং মাইক্রোসফটের কোপাইলটের সমকক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের এআই কোম্পানিগুলো তাদের অ্যাপগুলো তৈরি করতে যেখানে খরচ করেছেন শতকোটি ডলার, সেখানে ডিপসিক আরওয়ান অ্যাপটি তৈরি করতে লেগেছে মাত্র ৬০ লাখ ডলার।
চীনের গুয়াংদং প্রদেশের ঝানজিয়াং শহরের চল্লিশ বছর বয়সি তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট লিয়াং-ওয়েনফেং নামক এক যুবক এই সাড়া জাগানো এআই অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি হেজ ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করে ডিপসিক নামে এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার ৫০ হাজার ‘এ-১০০’চিপ সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। এনভিডিয়ার এই উন্নতমানের চিপের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত কমদামি চিপ সংযুক্ত করে তিনি ডিপসিক তৈরি করেন। এনভিডিয়ার চিপ এখন চীনে রপ্তানি বন্ধ। লিয়াং রপ্তানি বন্ধের আগেই চিপগুলো সংগ্রহ করে রাখেন। কমদামি চিপ যা চীনে এখনো রপ্তানি করা হয়, তার সঙ্গে সংযুক্ত করেন এনভিডিয়ার দামি চিপ।
লিয়াংয়ের জন্ম ১৯৮৫ সালে। দেখতে শুকনো-রোগা গড়ন আর ফ্যাকাশে। চীনে যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে রসিকতা করা হয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে তিনি বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। লিয়াং শৈশব থেকে ছিলেন মেধাবী। বাবা স্কুলশিক্ষক।
নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘হাই-ফ্লাইয়ার’ নামের চীনের হেজ ফান্ড (অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান) থেকে লিয়াং ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ডিপসিক। হাই-ফ্লাইয়ার নামের প্রতিষ্ঠানটিও বড় ডেটা বিশ্লেষণকারী যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডিপসিকের গবেষণা ল্যাব দ্রুতই নতুন নতুন উদ্ভাবনা গবেষণা প্রকাশ করতে থাকে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ডিপসিক ‘ভি৩’ নামের একটি এআই মডেল চালু করে যা ছিল ‘ডিপসিক আরওয়ান’-এর আগের সংস্করণ। ডিপসিক ভি৩ এবং আর১ মডেলগুলোর মাধ্যমে এআই গবেষণায় দ্রুত এগিয়ে গেছে ডিপসিক। এটি ওপেনএআই এবং মেটার শীর্ষ এআই মডেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম। এটি চ্যাটজিপিটির মতোই ভাষা মডেল (এলএলএম)। লেখালেখি, অনুবাদ, কোডিংসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।
ডিপসিক আরওয়ান-কে বলা হচ্ছে ‘চেইন অব থট মডেল’। এটা যখন কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়, তখন ধাপে ধাপে যুক্তি সাজিয়ে ব্যাখ্যা করতে থাকে, ঠিক যেমন একজন মানুষ চিন্তা করে এবং উত্তর তৈরি করে। সাধারণ এআই মডেল শুধু ডেটাবেজ থেকে তথ্য এনে উত্তর দেয়। কিন্তু ডিপসিক আরওয়ান নিজের ভাবনাকে সাজিয়ে ব্যাখ্যা করে।
ফলে উত্তরগুলো বেশি নির্ভরযোগ্য ও বোধগম্য হয়। এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো গণিত ও প্রোগ্রামিংয়ের ক্ষেত্রে পারফর্ম করা। অন্যান্য এআই মডেল ভাষাগত প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেও জটিল গাণিতিক বা কোডিং সম্পর্কিত প্রশ্নে খুব ভালো করতে পারে না। কিন্তু ডিপসিক আরওয়ান সেই দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে পেরেছে। এটি সহজে ব্যবহার করা যায় এবং একদম বিনামূল্যে বা ফ্রি পাওয়া যায়। ওপেনএআই-র মডেল ব্যবহার করতে মাসে ২০ ডলার খরচ করতে হয়, কিন্তু এটা একদম ফ্রি। কেউ চাইলে ডিপসিক আরওয়ান-এর কোড ডাউনলোড করে নিজের ব্যবসা বা গবেষণা প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ও ডিপসিকের ওয়েবসাইটে ‘ডিপসিক আরওয়ান’ অ্যাপটি ফ্রিতে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করেছি, ডিপসিক অ্যাপল স্টোরের ডাউনলোড হওয়া শীর্ষ অ্যাপে পরিণত হয়েছে। শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট টুলের জন্য এটি জনপ্রিয় হয়েছে। চ্যাটজিপিটির মতোই এর কার্যক্রম। এটি তৈরি করা হয়েছে কর্মদক্ষতা বাড়াতে এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে। লেখাকে ভাবগম্ভীর করে তুলতেও অ্যাপটি কার্যকর।
তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে ডিপসিক আরওয়ান অপারগতাও প্রকাশ করে। যেমন- বিবিসি ডিপসিককে প্রশ্ন করেছিল ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে কী হয়েছিল? তখন ডিপসিক আরওয়ান উত্তর দেয়, ‘আমি দুঃখিত, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। আমি একজন এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং আমাকে এমন উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে যা সহায়ক এবং ক্ষতিকর নয়।’ অর্থাৎ চীন যেসব রাজনৈতিক বিষয়ে সংবেদনশীল সেসব বিষয়ে চ্যাটবটটি শতভাগ উত্তর নাও দিতে পারে।
ডিপসিকের দ্রুত উত্থানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের জন্য ‘সতর্কবার্তা’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এআই কোম্পানিগুলোকে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।
ডিপসিকের উত্থানে হুমকির মুখে পড়েছে মার্কিনিদের একচেটিয়া এআই ব্যবসা। ডিপসিকের সাফল্য এই ধারণা জোরদার করেছে যে, উন্নত এআই মডেল তৈরিতে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা জরুরি নয়। মাইক্রোসফট, মেটা, ওপেনএআই-র অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি জিপিইউ-নির্ভর ডেটা সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
কিন্তু এনভিডিয়ার এক বড় গ্রাহক জানিয়েছেন, ডিপসিক দেখিয়ে দিয়েছে কম শক্তিশালী গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) ব্যবহার করেও কার্যকর মডেল তৈরি করা সম্ভব। এনভিডিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী চিপগুলো ৯০ শতাংশের বেশি মুনাফা অর্জন করে যা প্রযুক্তি বাজারে এক নজিরবিহীন ঘটনা। এখন এনভিডিয়া চাপে পড়েছে। অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট নিজেরা চিপ তৈরি করে এনভিডিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। এর মধ্যে ডিপসিক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
চার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট
মাইক্রোসফটের কোপাইলট (Copilot) একটি এআইভিত্তিক ব্যক্তিগত সহকারী। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তথ্য সরবরাহ এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, সৃজনশীল প্রকল্পে সহায়তা এবং প্রতিদিনের কাজ সহজতর করা।
ওপেনএআই-র চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) ভাষা মডেল বা কথোপকথনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। প্রকৃত মানুষের মতো কথা বলতে পারে এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
জেমিনি হলো গুগলের একটি উন্নতমানের এআই মডেল যা উচ্চমানের পারফরম্যান্স প্রদান করে। এটি বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য উপযোগী এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।
ডিপসিক, কোপাইলট, চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনি প্রতিটি এআই মডেল ও প্ল্যাটফরমের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা রয়েছে। ওপেন- সোর্স মডেলে খুঁজলে এবং উন্নত এআই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে চাইলে ডিপসিক এখন উপযুক্ত।
ডিপসিক তার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং কম খরচে উন্নয়নের মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিজগতে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। ওপেন সোর্স মডেলগুলোর মাধ্যমে ডিপসিক ডেভেলপারদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং উচ্চমানের এআই মডেলের সম্ভাব্যতা প্রদর্শন করেছে।
এনভিডিয়া থেকে শুরু করে সিমেন্স এনার্জির মতো কোম্পানির বাজারমূল্য ধস নামিয়ে দিয়েছে ডিপসিক। এনভিডিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এআই চিপ প্রস্তুতকারক আর সিমেন্স এনার্জি ডেটা সেন্টারে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী।
ডিপসিক নিয়ে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরা যা ভাবছেন
ডিপসিক নিয়ে স্যাম অল্টম্যান থেকে সত্য নাদেলা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নতুন এআই প্রযুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রযুক্তি জায়ান্টরা। ইন্টেলের সাবেক সিইও বলেছেন, ডিপসিক এআই বাজারকে হ্রাস করার পরিবর্তে প্রসারিত করবে। মেটা একটি নতুন শিল্পের শীর্ষস্থানীয় এআই মডেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ ডিপসিকের উত্থান নিয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে তিনি বলেন, ফেসবুকের ওপেন সোর্স এআই মডেল ফ্যামিলি এল লামার নতুন সংস্করণ প্রকাশের পর শিল্প মডেলটি শীর্ষস্থানে যাবে। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান ডিপসিক আরওয়ান মডেলকে চিত্তাকর্ষক মডেল হিসেবে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, এমন একটি নতুন প্রতিযোগী থাকা জরুরি। আমরা স্পষ্টতই আরো ভালো মডেল প্রকাশ করব। আপনাদের জন্য এজিআই ও নতুন কিছু আনার চেষ্টা করব।
মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা বলেন, জেভনস প্যারাডক্সের দেখা মিলেছে আবার। ডিপসিকের নতুন মডেল কার্যকর ওপেন সোর্স মডেলের উদাহরণ। নানা দিক থেকেই এটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক।
মেটার প্রধান এআই বিজ্ঞানী ইয়ান লেকুন ডিপসিকের সাফল্যকে সুসংবাদ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, যারা ডিপসিকের কার্যক্ষমতা দেখেছেন এবং মনে করছেন, চীন এআইতে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তাহলে তারা ভুল বুঝছেন। সঠিক হচ্ছে, ওপেন সোর্স মডেল মালিকানার বিষয়কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ডিপসিক ওপেন রিসার্চ ও ওপেন সোর্স থেকে লাভবান হয়েছে। যেমনটা মেটা থেকে পাইটর্চ ও লামা হয়েছে। এরা নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে, আর তা অন্যদের কাজের ধারণার ওপর তৈরি করা হয়েছে। এটিই ওপেন রিসার্চ ও ওপেন সোর্সের শক্তি।
সেলসফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক বেনিওফ বলেন, ডিপসিক অ্যাপ স্টোরে ১ নম্বর। চ্যাটজিপিটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। এদের কোনো এনভিডিয়া সুপার কম্পিউটার বা ১০ কোটি ডলারের প্রয়োজন নেই। এআই এখন পণ্যে পরিণত হয়েছে।
এআই প্রতিষ্ঠান অ্যানথ্রোপিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দারিও অ্যামোডেই মার্কিন সরকারকে এআই চিপ রপ্তানির ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, চীনের এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অনেক বেশি জিপিইউ রয়েছে। ডিপসিকের কাছে ৫০ হাজারের মতো জিপিইউ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিপসিক নিয়ে এআই চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া এক বিবৃতি ডিপসিকের আরওয়ান মডেলকে চমৎকার এআই অগ্রগতি বলে অভিহিত করেছে।
এলজিইডির বাস্তবায়নাধীন সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন-২ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০২২ সালের মার্চে। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট এক হাজার ৮২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটির মেয়াদ শুরু হয় ওই বছরের জুলাই থেকে।
৪১ মিনিট আগেত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১ দিন আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগে