মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেজর জায়েদী
মাহমুদুর রহমান
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিন মেজর (অব.) জায়েদী আহসান হাবিব প্রথম আহত হন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরদের দ্বারা সংঘটিত এ ঘটনার নির্মম প্রত্যক্ষদর্শী। তবে তিনি সেসব সৌভাগ্যবানের একজন যিনি ম্যাসাকার থেকে জীবিত বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন।
এ ঘটনা সম্পর্কে জানতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। কিন্তু তারা সেনা অফিসারদের রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেননি। একান্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা সে দিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা জানিয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। পাশাপাশি জানিয়েছেন এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নানা তথ্য।
আমার দেশ-এর পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো—
প্রশ্ন : সেদিন আসলে কী ঘটেছিল? দরবার কখন হওয়ার কথা ছিল? কখন হয়েছিল?
মেজর জায়েদী : দরবার সকাল ৮টায় হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয় সকাল ৯টায়।
প্রশ্ন : এই একঘণ্টা যে দেরি হলো দরবার, কী কারণে দেরি হলো? এটি নরমাল না তো? এই একঘণ্টা দেরি হওয়া কী নরমাল?
মেজর জায়েদী : প্রশ্নটা এখানেই।
প্রশ্ন : তাহলে আপনার কাছে জানতে চাই সেদিন দরবারের পরিস্থিতিটা কেমন ছিল?
মেজর জায়েদী : দরবার শুরু হয়েছিল সকাল নয়টায়। শুরুর পর বিডিআর ডিজি জেনারেল শাকিল স্যার, বিভিন্ন রকম হিসাব দিচ্ছিলেন। ডাল-ভাতের বিষয়ে যে প্রচারণা চলছিল সে বিষয়টি তিনি খণ্ডন করছিলেন। এ সময় নয়টা ১৮ মিনিটে, সিপাহি মইন একটা রাইফেল নিয়ে প্রবেশ করল। ঢুকেই স্যারের দিকে বন্দুক তাক করল। কিন্তু গুলি করতে পারল না। মইন গুলি করতে যখন পারল না, তখন পেছন থেকে এক সৈনিক বাইরে গিয়ে একটা ফায়ার করল। এর পরপর সবাই ‘জাগো’ বলে যে যেদিকে পারে চলে গেল। এটা হয়তো কোডওয়ার্ড ছিল। আমরা সৈনিকদের ডাকলাম। কিন্তু কেউ এলো না। ওই সময় দূর থেকে ফায়ার শোনা যায়। একটু পর দেখি সৈনিকরা আমাদের ঘেরাও করছে।
প্রশ্ন : আপনি কখন কথা বলেছিলেন তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে? তাকে আপনিই কি কল দিয়েছিলেন?
মেজর জায়েদী : ৯টা ৩৭ মিনিটে। জি। আমিই কল দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : তারিক সিদ্দিক কী বললেন?
মেজর জায়েদী : আমার কোনো কথার উত্তর দেননি।
প্রশ্ন : জেনারেল শাকিলের সঙ্গে তো শেখ হাসিনার কথা হয়েছিল। আপনি কীভাবে এটার মধ্যে জড়িত হলেন?
মেজর জায়েদী : যখন তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলা হলো না তখন সিপাহিরা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। এ সময় একটা কল এলো মেজর মইনের। উনি আমার সিনিয়র ছিলেন। উনি রিটায়ার্ড অবস্থায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাউস গার্ডের একটা দায়িত্বে ছিলেন।
প্রশ্ন : মইন কী বলল আপনাকে?
মেজর জায়েদী : তিনি বললেন, মোবাইলটা নিয়ে জেনারেল শাকিলকে দে, আপা (শেখ হাসিনা) কথা বলবেন। তখন গিয়ে দেখি স্যার অলরেডি তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রশ্ন : শেখ হাসিনা, তারিক সিদ্দিক জানতেন বিডিআরের ভেতরে পরিস্থিতি কী? তখন সকাল সাড়ে নয়টা, তাই তো বললেন আপনি?
মেজর জায়েদী : জি, জানতেন। তখন নয়টা ৩৭ মিনিট।
প্রশ্ন : তখনও হত্যাকাণ্ড শুরু হয়নি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নেওয়া হয়নি জেনারেল শাকিলসহ অন্যদের রক্ষার পদক্ষেপ। আপনি বলেছিলেন, দুটো গ্রুপ ছিল সিপাহিদের মধ্যে। একটা গোলাগুলিতে অংশ নিলেও অন্যটি নেয়নি। এ বিষয়টা একটু বলুন।
মেজর জায়েদী : শাকিল স্যার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত ৪৪ রাইফেলের কিছু সন্ত্রাসী সৈনিক আপনার সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এখানে অরাজকতার সৃষ্টি করছে। অতিসত্বর আমাদের সাহায্য পাঠান। এক পর্যায়ে সৈনিকরা ভেতরে ঢুকে পড়ল ফায়ার করতে করতে। আমি তাদের থামানোর চেষ্টা করলাম। আমার পেছনে একটা পিলার ছিল। ওখানে গুলি লেগে আমার পেছনটা ঝাঝরা হয়ে যায়।
প্রশ্ন : আপনার পিঠে স্প্লিন্টার লেগে ঝাঝরা হয়ে গেল? তাহলে আপনিই প্রথম আহত হলেন।
মেজর জায়েদী : জি। আমিই প্রথম আহত হলাম। আমাকে ধরে নিয়ে মারধর করল। আমার ড্রেসের শাপলাটা খুলে ফেলা হলো। আমার পরবর্তী পোস্টিং হয়েছিল আরএসইউতে সেকেন্ড ম্যান হিসেবে। তখন মনে হয় মেজর জাহিদের স্টেটমেন্টে আমি পেয়েছি যে, প্রথম গুলিতে যিনি মারা যান তিনি হলেন কর্নেল কায়সার। তখন একজন সৈনিক বলল, কে মারল এটা? এটা তো মারার কথা ছিল না।
প্রশ্ন : তাহলে এ গুলি কে করল?
মেজর জায়েদী : আমার মনে হয়েছে, এখানে দুটো গ্রুপ ছিল। প্রথমে যারা আসছে তাদের মারার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। দ্বিতীয় গ্রুপ যারা এসেছে তাদের পরিকল্পনা প্রথম গ্রুপ জানত না। আর জানলে ওই কথাটা বলত না।
প্রশ্ন : আপনাকে তারা ধরে কোথায় নিয়ে গেল?
মেজর জায়েদী : আমাকে নিয়ে গেল জেসিও কোয়ার্টারে। নিয়ে গিয়ে দোতলায় নিয়ে প্রথম রুমেই ঢুকিয়ে তালা বন্ধ করে দিল। এ সময় আমি ওই বাসার একজনের কাছ থেকে একটা মোবাইল সংগ্রহ করে মেজর মইনকে কল করি। আমি তাকে বললাম, স্যার আমাকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করেন। তাকে বললাম, আমি ২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিকের বাসায় আছি।
প্রশ্ন : ওই বাড়িতে কি পাহারা ছিল?
মেজর জায়েদী : জি। কিছুক্ষণ পর গোফরান সাহেব হন্তদন্ত হয়ে এলেন। সেখানে থাকা সিপাহি বরুণ বলল, উনি চাইলে আপনাকে বাঁচাতে পারেন।
প্রশ্ন : তাইলে বিদ্রোহে গোফরান সাহেব জড়িত ছিল?
মেজর জায়েদী : জি। জড়িত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর একজন জেসিও এলো, তার নাম নায়েব সুবেদার কাদের। সে বলল যে, এই ঘটনা এতদূর যেত না যদি এখানে কোয়ার্টার গার্ডের মতো করে পাহারা দেওয়া হতো।
প্রশ্ন : কোয়ার্টার গার্ডের পাহারাটা কী জিনিস? কোয়ার্টার গার্ড পাহারা না দেওয়ার কারণে কী ঘটেছিল সেদিন?
মেজর জায়েদী : সাধারণত কোয়ার্টার গার্ডে অফিসাররা গার্ড দেয় না। কোয়ার্টার গার্ডে হাবিলদার পর্যন্ত দেওয়া হয়। অফিসারদের কাছে চাবি থাকে। ওই সময় একজন মেজর র্যাংকের অফিসারকে ওখানে রাখা হয়েছিল। মেজর রিয়াজ। ওই জেসিও বলছিল যে, এরকম একজন মেজর যদি গেটে থাকত, তাহলে হয়তো পিকআপে করে কিছু লোক যারা এসেছে অস্ত্রসহ ড্রেস পরা বা ড্রেস ছাড়া তারা হয়তো ঢুকতে পারত না।
প্রশ্ন : এই গ্রুপটা কারা, জেসিও কাদের কী চিনেছিল?
মেজর জায়েদী : কাদের বলতে পারেনি তারা কারা।
প্রশ্ন : জেসিও বলছে, তাদের সে চেনে না। তারা কী তাহলে বিডিআরের সৈনিক ছিল না?
মেজর জায়েদী : কাদেরের কথা মতে, জোর করে ঢুকেছে এরা।
প্রশ্ন : তারপর কী হলো?
মেজর জায়েদী : এ সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সিকিউরিটি গার্ড মেজর মইনের কল এলো। তিনি বললেন, অলরেডি ৮-১০ জন অফিসার কিলড। বিডিআরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তুই একজন নেতা টাইপের কারও সঙ্গে কথা বল, তার সঙ্গে আপা (শেখ হাসিনা) কথা বলবেন। দুজন পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিই বরুণ গোফরানকে কল দেবে। কল দেওয়ার পর গোফরান এলো। আমি তাকে বললাম, প্রধানমন্ত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর আমি ওনার ফোন থেকে মইন স্যারকে কল করি। কল করার সঙ্গে সঙ্গে মইন স্যার ফোন তারিক সিদ্দিককে দিলেন। আমি দিলাম গোফরান সাহেবকে। তারা কথা বললেন। এ বিষয়ে আমি জানতে চাইলে তিনি বললেন, রাইফেল স্কয়ারে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে লোকজন আসবে, আমি লোকজন নিয়ে সেখানে যাচ্ছি।
প্রশ্ন : এই গোফরান এখন কোথায়? সে তো খুব গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী? জীবিত আছে?
মেজর জায়েদী : জি। জীবিত আছে, এখন জেলে।
প্রশ্ন : আপনাদের মনে হয়নি এতক্ষণে একটা মিলিটারি অপারেশন শুরু হয়ে যাওয়া উচিত ছিল?
মেজর জায়েদী : আমি বারবার এ কথা বলেছি। কিন্তু হয়নি। অপারেশনের বদলে হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট ফেলা হলো। আমি হতাশ হয়ে পড়ি। এ সময় হঠাৎ এক তরুণী আমার রুমে চলে এলো।
চলবে...
অনুলিখন: হাসান আদিল
এমবি
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিন মেজর (অব.) জায়েদী আহসান হাবিব প্রথম আহত হন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরদের দ্বারা সংঘটিত এ ঘটনার নির্মম প্রত্যক্ষদর্শী। তবে তিনি সেসব সৌভাগ্যবানের একজন যিনি ম্যাসাকার থেকে জীবিত বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন।
এ ঘটনা সম্পর্কে জানতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। কিন্তু তারা সেনা অফিসারদের রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেননি। একান্ত সাক্ষাৎকারে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা সে দিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা জানিয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। পাশাপাশি জানিয়েছেন এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নানা তথ্য।
আমার দেশ-এর পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো—
প্রশ্ন : সেদিন আসলে কী ঘটেছিল? দরবার কখন হওয়ার কথা ছিল? কখন হয়েছিল?
মেজর জায়েদী : দরবার সকাল ৮টায় হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয় সকাল ৯টায়।
প্রশ্ন : এই একঘণ্টা যে দেরি হলো দরবার, কী কারণে দেরি হলো? এটি নরমাল না তো? এই একঘণ্টা দেরি হওয়া কী নরমাল?
মেজর জায়েদী : প্রশ্নটা এখানেই।
প্রশ্ন : তাহলে আপনার কাছে জানতে চাই সেদিন দরবারের পরিস্থিতিটা কেমন ছিল?
মেজর জায়েদী : দরবার শুরু হয়েছিল সকাল নয়টায়। শুরুর পর বিডিআর ডিজি জেনারেল শাকিল স্যার, বিভিন্ন রকম হিসাব দিচ্ছিলেন। ডাল-ভাতের বিষয়ে যে প্রচারণা চলছিল সে বিষয়টি তিনি খণ্ডন করছিলেন। এ সময় নয়টা ১৮ মিনিটে, সিপাহি মইন একটা রাইফেল নিয়ে প্রবেশ করল। ঢুকেই স্যারের দিকে বন্দুক তাক করল। কিন্তু গুলি করতে পারল না। মইন গুলি করতে যখন পারল না, তখন পেছন থেকে এক সৈনিক বাইরে গিয়ে একটা ফায়ার করল। এর পরপর সবাই ‘জাগো’ বলে যে যেদিকে পারে চলে গেল। এটা হয়তো কোডওয়ার্ড ছিল। আমরা সৈনিকদের ডাকলাম। কিন্তু কেউ এলো না। ওই সময় দূর থেকে ফায়ার শোনা যায়। একটু পর দেখি সৈনিকরা আমাদের ঘেরাও করছে।
প্রশ্ন : আপনি কখন কথা বলেছিলেন তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে? তাকে আপনিই কি কল দিয়েছিলেন?
মেজর জায়েদী : ৯টা ৩৭ মিনিটে। জি। আমিই কল দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : তারিক সিদ্দিক কী বললেন?
মেজর জায়েদী : আমার কোনো কথার উত্তর দেননি।
প্রশ্ন : জেনারেল শাকিলের সঙ্গে তো শেখ হাসিনার কথা হয়েছিল। আপনি কীভাবে এটার মধ্যে জড়িত হলেন?
মেজর জায়েদী : যখন তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলা হলো না তখন সিপাহিরা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। এ সময় একটা কল এলো মেজর মইনের। উনি আমার সিনিয়র ছিলেন। উনি রিটায়ার্ড অবস্থায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাউস গার্ডের একটা দায়িত্বে ছিলেন।
প্রশ্ন : মইন কী বলল আপনাকে?
মেজর জায়েদী : তিনি বললেন, মোবাইলটা নিয়ে জেনারেল শাকিলকে দে, আপা (শেখ হাসিনা) কথা বলবেন। তখন গিয়ে দেখি স্যার অলরেডি তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রশ্ন : শেখ হাসিনা, তারিক সিদ্দিক জানতেন বিডিআরের ভেতরে পরিস্থিতি কী? তখন সকাল সাড়ে নয়টা, তাই তো বললেন আপনি?
মেজর জায়েদী : জি, জানতেন। তখন নয়টা ৩৭ মিনিট।
প্রশ্ন : তখনও হত্যাকাণ্ড শুরু হয়নি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নেওয়া হয়নি জেনারেল শাকিলসহ অন্যদের রক্ষার পদক্ষেপ। আপনি বলেছিলেন, দুটো গ্রুপ ছিল সিপাহিদের মধ্যে। একটা গোলাগুলিতে অংশ নিলেও অন্যটি নেয়নি। এ বিষয়টা একটু বলুন।
মেজর জায়েদী : শাকিল স্যার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত ৪৪ রাইফেলের কিছু সন্ত্রাসী সৈনিক আপনার সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এখানে অরাজকতার সৃষ্টি করছে। অতিসত্বর আমাদের সাহায্য পাঠান। এক পর্যায়ে সৈনিকরা ভেতরে ঢুকে পড়ল ফায়ার করতে করতে। আমি তাদের থামানোর চেষ্টা করলাম। আমার পেছনে একটা পিলার ছিল। ওখানে গুলি লেগে আমার পেছনটা ঝাঝরা হয়ে যায়।
প্রশ্ন : আপনার পিঠে স্প্লিন্টার লেগে ঝাঝরা হয়ে গেল? তাহলে আপনিই প্রথম আহত হলেন।
মেজর জায়েদী : জি। আমিই প্রথম আহত হলাম। আমাকে ধরে নিয়ে মারধর করল। আমার ড্রেসের শাপলাটা খুলে ফেলা হলো। আমার পরবর্তী পোস্টিং হয়েছিল আরএসইউতে সেকেন্ড ম্যান হিসেবে। তখন মনে হয় মেজর জাহিদের স্টেটমেন্টে আমি পেয়েছি যে, প্রথম গুলিতে যিনি মারা যান তিনি হলেন কর্নেল কায়সার। তখন একজন সৈনিক বলল, কে মারল এটা? এটা তো মারার কথা ছিল না।
প্রশ্ন : তাহলে এ গুলি কে করল?
মেজর জায়েদী : আমার মনে হয়েছে, এখানে দুটো গ্রুপ ছিল। প্রথমে যারা আসছে তাদের মারার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। দ্বিতীয় গ্রুপ যারা এসেছে তাদের পরিকল্পনা প্রথম গ্রুপ জানত না। আর জানলে ওই কথাটা বলত না।
প্রশ্ন : আপনাকে তারা ধরে কোথায় নিয়ে গেল?
মেজর জায়েদী : আমাকে নিয়ে গেল জেসিও কোয়ার্টারে। নিয়ে গিয়ে দোতলায় নিয়ে প্রথম রুমেই ঢুকিয়ে তালা বন্ধ করে দিল। এ সময় আমি ওই বাসার একজনের কাছ থেকে একটা মোবাইল সংগ্রহ করে মেজর মইনকে কল করি। আমি তাকে বললাম, স্যার আমাকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করেন। তাকে বললাম, আমি ২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিকের বাসায় আছি।
প্রশ্ন : ওই বাড়িতে কি পাহারা ছিল?
মেজর জায়েদী : জি। কিছুক্ষণ পর গোফরান সাহেব হন্তদন্ত হয়ে এলেন। সেখানে থাকা সিপাহি বরুণ বলল, উনি চাইলে আপনাকে বাঁচাতে পারেন।
প্রশ্ন : তাইলে বিদ্রোহে গোফরান সাহেব জড়িত ছিল?
মেজর জায়েদী : জি। জড়িত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর একজন জেসিও এলো, তার নাম নায়েব সুবেদার কাদের। সে বলল যে, এই ঘটনা এতদূর যেত না যদি এখানে কোয়ার্টার গার্ডের মতো করে পাহারা দেওয়া হতো।
প্রশ্ন : কোয়ার্টার গার্ডের পাহারাটা কী জিনিস? কোয়ার্টার গার্ড পাহারা না দেওয়ার কারণে কী ঘটেছিল সেদিন?
মেজর জায়েদী : সাধারণত কোয়ার্টার গার্ডে অফিসাররা গার্ড দেয় না। কোয়ার্টার গার্ডে হাবিলদার পর্যন্ত দেওয়া হয়। অফিসারদের কাছে চাবি থাকে। ওই সময় একজন মেজর র্যাংকের অফিসারকে ওখানে রাখা হয়েছিল। মেজর রিয়াজ। ওই জেসিও বলছিল যে, এরকম একজন মেজর যদি গেটে থাকত, তাহলে হয়তো পিকআপে করে কিছু লোক যারা এসেছে অস্ত্রসহ ড্রেস পরা বা ড্রেস ছাড়া তারা হয়তো ঢুকতে পারত না।
প্রশ্ন : এই গ্রুপটা কারা, জেসিও কাদের কী চিনেছিল?
মেজর জায়েদী : কাদের বলতে পারেনি তারা কারা।
প্রশ্ন : জেসিও বলছে, তাদের সে চেনে না। তারা কী তাহলে বিডিআরের সৈনিক ছিল না?
মেজর জায়েদী : কাদেরের কথা মতে, জোর করে ঢুকেছে এরা।
প্রশ্ন : তারপর কী হলো?
মেজর জায়েদী : এ সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সিকিউরিটি গার্ড মেজর মইনের কল এলো। তিনি বললেন, অলরেডি ৮-১০ জন অফিসার কিলড। বিডিআরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তুই একজন নেতা টাইপের কারও সঙ্গে কথা বল, তার সঙ্গে আপা (শেখ হাসিনা) কথা বলবেন। দুজন পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিই বরুণ গোফরানকে কল দেবে। কল দেওয়ার পর গোফরান এলো। আমি তাকে বললাম, প্রধানমন্ত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর আমি ওনার ফোন থেকে মইন স্যারকে কল করি। কল করার সঙ্গে সঙ্গে মইন স্যার ফোন তারিক সিদ্দিককে দিলেন। আমি দিলাম গোফরান সাহেবকে। তারা কথা বললেন। এ বিষয়ে আমি জানতে চাইলে তিনি বললেন, রাইফেল স্কয়ারে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে লোকজন আসবে, আমি লোকজন নিয়ে সেখানে যাচ্ছি।
প্রশ্ন : এই গোফরান এখন কোথায়? সে তো খুব গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী? জীবিত আছে?
মেজর জায়েদী : জি। জীবিত আছে, এখন জেলে।
প্রশ্ন : আপনাদের মনে হয়নি এতক্ষণে একটা মিলিটারি অপারেশন শুরু হয়ে যাওয়া উচিত ছিল?
মেজর জায়েদী : আমি বারবার এ কথা বলেছি। কিন্তু হয়নি। অপারেশনের বদলে হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট ফেলা হলো। আমি হতাশ হয়ে পড়ি। এ সময় হঠাৎ এক তরুণী আমার রুমে চলে এলো।
চলবে...
অনুলিখন: হাসান আদিল
এমবি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
২০ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
২ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২ দিন আগে