নীতিমালার খসড়া পর্যালোচনায় আমলানির্ভর কমিটি

আল-আমিন
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৯: ২৬

টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫-এর খসড়া পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ গঠিত এই কমিটি পর্যালোচনা শেষে মতামত দেবে।

এ বিষয়ে গত ১৯ জুন প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। তবে কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে তাদের নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এতে টেলিখাত সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান বা স্টেক হোল্ডারদের রাখা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন) কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্য ১০ সদস্য হলেন- বিভাগের যুগ্ম সচিব (টেলিকম), টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস), বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও ক্রয়), বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (নেটওয়ার্ক প্লানিং), বিটিআরসির উপ-পরিচালক শামসুজ্জোহা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন উপসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব।

এর আগে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫-এর খসড়া তৈরি করে বিটিআরসি। এ বিষয়ে সাধারণের মতামত নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে নতুন নীতিমালা সম্পর্কে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিভিন্ন স্তরে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় জটিল কারিগরিবিষয়ক নীতিমালা পর্যালোচনার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটি নিয়েই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমেদ তৈয়বের সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় আমার দেশ’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কমিটিতে কেবল বিটিসিএল, টেলিটক, সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির মতো রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির কর্মকর্তাদের সদস্য করা হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত এসব কোম্পানির বিপুল অংকের রাজস্ব ভাগাভাগির টাকা বকেয়া রয়েছে বিটিআরসির কাছেই। বিটিসিএলের টেলিযোগাযোগ খাতের প্রায় সব ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু, প্রতিষ্ঠানটি কোনো ক্ষেত্রেই ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। বিটিআরসির নীতিমালা লংঘন করে একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়ারও নজির রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের।

একই দেশে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রকল্প নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগও বিটিসিএলের বিরুদ্ধেই। টেলিটক বাংলাদেশে একেবারেই রুগ্ণ মোবাইল অপারেটর। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে অন্য তিনটি অপারেটরের তুলনায় অনেক বেশি বেতার তরঙ্গ, ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সক্ষমতা ও জনবল থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি কখনই প্রতিযোগিতায় আসতে পারেনি।

জানা গেছে, একাধিক দুর্নীতির দায়ে বার বার আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের পাইকারি বাজারে একচেটিয়া প্রভাব থাকলেও দীর্ঘ সময় ধরে নানা অনিয়মের কারণে কোম্পানির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী লাভের মুখ দেখেনি কখনই। বরং কাগজে-কলমে দেখানো লাভের হিসাবে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে বার বার। এসব ব্যর্থ ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নীতিমালা তৈরির কমিটিতে থেকে কী অবদান রাখবেন, সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী এ ধরনের নীতিমালা তৈরির দায়িত্ব বিটিআরসির। বিটিআরসি সেটা করেছে। এখানে খাতের অংশীজন এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এ নীতিমালা পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করার কথা। তবে সংশোধিত টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে অনুমোদনের কথা রয়েছে। এ অবস্থায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ যেভাবে কমিটি গঠন করেছে সে কমিটি কোনোভাবেই এ ধরনের কারিগরি নীতিমালার ক্ষেত্রে মতামত দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

সূত্র জানায়, ওই কমিটিতে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে আছেন যেসব প্রতিষ্ঠান বার বার নীতিমালা লংঘনের জন্য খোদ বিটিআরসি কর্তৃক অভিযুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যথাযথ সুপারিশ আসবে না বলে টেলি খাতের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

সূত্র জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ, বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের প্রধান ও সদস্য করা হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের পক্ষ থেকেও সদস্য রাখা হয়েছে। অথচ টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা তৈরিতে একেবারেই সংকীর্ণ আমলাতান্ত্রিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কারণেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এই প্রশাসনিক কমিটি টেলিযোগাযোগ খাতের অংশীজনদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাসোসিয়েশন্স অব আইসিএস অপারেটর বাংলাদেশের এক নেতা বলেন, অংশীজনের মতামত না নিয়ে কমিশন যেসব বিষয়ে সুপারিশ করবে সেগুলো টেলিকম খাতে কল্যাণকর সিদ্ধান্ত হবে না।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত