চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা হবে বলে জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কর্মকর্তারা। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমোডিটি মার্কেট চালুর বিষয়টি অনুমোদনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমোডিটি মার্কেটের অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে বিবেচিত পণ্য ও ব্রোকার নিবন্ধনের অনুমোদনই মিলেনি। সাড়ে চার মাস সময় পার হয়ে গেলেও পণ্যের অনুমোদন দেয়নি বিএসইসি। অন্যদিকে ব্রোকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য দুই মাস আগে আবেদন জানালেও সেটিও ঝুলে রয়েছে। ফলে সিএসই কমোডিটি মার্কেট কবে নাগাদ চালু হবে- এটি নিয়ে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
কমোডিটি মার্কেট চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম আমার দেশকে বলেন, কমোডিটি মার্কেট চালুর বিষয়ে কমিশন খুবই ইতিবাচক। আইনগত যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলো কমিশন ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। এখন সিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমোডিটি মার্কেট চালুর বিষয়টি অনুমোদন দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে সিএসই কর্মকর্তারা বলছেন, কমোডিটি মার্কেট চালুর বিষয়ে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। পণ্যের অনুমোদন ও ব্রোকার রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে কমোডিটি মার্কেট চালু করা সম্ভব।
সিএসই কমোডিটি প্রজেক্টের সদস্য সচিব ও এজিএম ফয়সল হুদা আমার দেশকে বলেন, কমোডিটি মার্কেট চালুর জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। অটোমেটেড ট্রেডিং সম্পন্ন করতে সব ধরনের সিস্টেমের টেস্টিং সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। টেস্টিং পর্যায়ে কোনো ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেনি। তারপরও চূড়ান্ত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পাঁচদিনের মক ট্রেডিং করা হবে। এটিও সফলভাবে সম্পন্ন হবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, পণ্যের অনুমোদন ও ব্রোকার নিবন্ধন পেলে এক মাসের মধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে পারব।
জানা গেছে, পণ্য ও ব্রোকারের অনুমোদন না পাওয়ায় পাঁচ থেকে ছয়টি ব্রোকারকে রাজি করিয়ে মক ট্রেডিং করছে সিএসই। আগামী ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচদিন এ মক ট্রেডিং হবে। মূলত রিয়েল ট্রেডিং শুরুর আগে সিস্টেমজনিত ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এটি আয়োজন করা হচ্ছে। মক ট্রেডিংয়ের যদি কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে, সেটি সমাধান করার মাধ্যমেই শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
জানা গেছে, কমোডিটি মার্কেট চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কমোডিটি এক্সচেঞ্জ) বিধিমালা ২০২৩ এর আলোকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ সিএসই (কমোডিটি ডেরিভেটিস) প্রবিধানমালা ২০২৫ প্রণয়ন করে। চলতি বছরের ২৭ মে বিএসইসির কমিশন সভায় প্রবিধানমালাটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৭ জুলাই এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। গেজেট হওয়ার দুই মাসের মধ্যে ফিজিবিলিটিসহ পণ্যের অনুমোদনে বিএসইসির কাছে আবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রবিধানমালায়। সিএসই ৩১ জুলাই স্বর্ণ, রুপা ও অপরিশোধিত পাম অয়েল- এ তিনটি পণ্যের অনুমোদনে আবেদন জমা দেয়। আবেদন জমা দেওয়ার সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও বিএসইসির কাছ থেকে অনুমোদন মেলেনি। অন্যদিকে, পাঁচটি ব্রোকারের নিবন্ধনের জন্য গত ৯ অক্টোবর আবেদন করা হয়। দুই মাস পার হলেও সে আবেদনও ঝুলে রয়েছে। এদিকে নতুন করে আরো তিন থেকে চারটি ব্রোকারের নিবন্ধনের জন্য সহসাই বিএসইসিতে আবেদন করা হবে বলে সূত্র জানায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএসইর একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, কমোডিটি মার্কেট চালুর বিষয়ে আমাদের প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে জানিয়ে বলেন, বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের মন্দা বিরাজ করছে। সিএসই আর্থিকভাবে অতটা সচ্ছল না হওয়া সত্ত্বেও দেশের স্বার্থে নতুন একটি মার্কেট চালুর জন্য সাহসী ভূমিকা পালন করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেও ত্বরিত অনুমোদন দেওয়া হবেÑএমন বার্তাও দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমরাও প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। কিন্তু এখন এক ধরনের ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে কিছু হতাশাও তৈরি হয়েছে।
সিএসই সূত্রে জানা গেছে, কমোডিটি মার্কেট পরিচালনায় পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজনকে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) নিয়োগের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করেছে সিএসই। পণ্য ও ব্রোকারের অনুমোদন পেলেই প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করে সিওও নিয়োগ দেওয়া হবে।
কমিশনের একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, পণ্য বা ব্রোকারের অনুমোদন দেওয়া না হলে সিএসইর পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া খুবই কঠিন। বিএসইসির উচিত হবে, এগুলোর দ্রুত অনুমোদন দেওয়া। যদি অনুমোদন দেওয়া না হয়, তাহলে শুধু সময়ক্ষেপণ ঘটবে।
এদিকে, পণ্য ও ব্রোকার অনুমোদনের বিষয়ে কমিশনের মধ্যে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। কমোডিটি মার্কেট সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যেও নানা প্রশ্ন রয়েছে। সিএসইর পক্ষ থেকে তিনটি পণ্যের (স্বর্ণ, রুপা ও অপরিশোধিত পাম অয়েল) আবেদন করা হলেও প্রথমে শুধু স্বর্ণ অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। তবে অনুমোদনের আগে আরো কিছু বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখছে বিএসইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমোডিটি মার্কেট বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনে সম্প্রতি বিএসইসির একটি প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফরে করে। ২০২৩ সালে ভারতের কমোডিটি মার্কেট সম্পর্কে ধারণা নিতে সে দেশটিতেও সফর করেছিল বিএসইসির প্রতিনিধি দল। দুই দেশের বাজার কাঠামোর সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশে কমোডিটি মার্কেট চালুর বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত, সিএসই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে মাল্টি-কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ইন্ডিয়া (এমসিএক্স)।

