ভারত থেকে আমদানি চালের মান নিয়ে প্রশ্ন

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ২৩

চালের বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধে আমদানি করা চালের প্রথম চালান দেশে এসেছে। ছয় লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ভারত থেকে ৫২ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়, যার প্রথম চালান সাড়ে ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল এসে পৌঁছেছে চট্টগ্রাম বন্দরে।

বিজ্ঞাপন

ভারতের কাকিনাড়া বন্দর থেকে ছেড়ে আসা এই চালবাহী জাহাজটি গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম বন্দরের ১১নং জেটিতে নোঙর করে। বিকাল থেকেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের তত্ত্বাবধানে চাল খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এই চালের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য অফিস জানায়, ভরা আমন মৌসুমেও সিন্ডিকেটের কারণে চালের বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ২০ দিনের ব্যবধানে ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ থেকে ৬০০ টাকা বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। গত সপ্তায় দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রি-২৮ ধানের চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ১৫০ টাকায়। গুটি স্বর্ণার দাম প্রতি বস্তায় ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ টাকায়। স্বর্ণা-৫ চালে প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা করে।

এক সপ্তাহ আগে দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা সিদ্ধ চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৪০০ টাকায়। তিন হাজার ৬০০ টাকার নাজির শাইল চার হাজার টাকা, তিন হাজার ৩০০ টাকার কাটারি আতপ তিন হাজার ৯০০ টাকা, তিন হাজার ৩৫০ টাকার জিরাশাইল তিন হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এভাবে প্রতিটি চালের দামই ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা।

আগে চাল আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকলেও বাজারের এই পাগলা ঘোড়া নিয়ন্ত্রণে সেই শুল্ক মওকুফ করে দেয় সরকার। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বেসরকারি পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য চাল আমদানি হয়নি। ফলে সরকারের এই সিদ্ধান্তে সুফল মেলেনি। বাধ্য হয়ে সরকারিভাবে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে ছয় লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর মধ্যে ৫২ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহের অনুমতি পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান, যার সাড়ে ২৪ হাজার মেট্রিক টন চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে বৃহস্পতিবার সকালে।

বিষয়টি তদারকি করতে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আসেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. লুতফর রহমান। তিনি জানান, দূরত্ব কম ও পরিবহন সুবিধার কারণে ভারত থেকে চাল আমদানি করাটা সহজ।

এ কারণেই আগে ভারতের চাল এসেছে। তবে উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রে মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। খুব শিগগির অন্য দেশগুলো থেকেও চালের চালান আসবে বলে জানান তিনি।

জাহাজটির শিপিং এজেন্ট সেভেন সীজ শিপিং লাইনের প্রধান নির্বাহী আলী আকবর জানান, গত ২২ ডিসেম্বর ভারতের কাকিনাড়া বন্দর থেকে এই চাল বোঝাই করে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে এমভি তানিস ড্রিম নামের এই জাহাজটি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকালেই জাহাজটির বার্থিং দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিকাল থেকেই প্রতিদিন তিন হাজার মেট্রিক টন করে চাল খালাস করার পরিকল্পনা আছে তাদের।

এভাবে চললে আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যেই পুরো চাল আনলোড করা সম্ভব হবে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে চালানের বাকি চালও নিয়ে আসার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।

পাহাড়তলি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, গত মাসেই চালের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। এসময় বেশ কিছু ব্যবসায়ী বেসরকারিভাবে ভারত থেকে চাল আমদানি করেছে। কিন্তু সেই চালের মান অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। সরকারিভাবে আনা চালের মান নিয়েও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, ডলার দিয়ে আমদানি করা চালের মান যদি খারাপ হয়, তাহলে বাজারে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না। উল্টো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যাবে।

তবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ জানান, আমদানি করা চালের মান নিয়ন্ত্রণে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কয়েক পর্যায়ে ল্যাব টেস্টের পর খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গুদামে আনার পর ফের মান পরীক্ষা করা হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত