পাখি নিধনে সুফল নেই, বার্ডহিটে বাড়ছে ঝুঁকি

কবিতা
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫, ১০: ৩২
ফাইল ছবি

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়নের সময় পাখির আঘাতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। বিমানবন্দরে বার্ড কন্ট্রোল ও মনিটরিং সিস্টেম থাকলেও তা তেমন একটা কাজে আসছে না। ফলে এই বিমানবন্দরে উড়োজাহাজকে পড়তে হচ্ছে বার্ড হিটের কবলে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বিশ্বব্যাপী গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। যেখানে বিশ্বের গড়প্রতি এক হাজার ফ্লাইটে ঝুঁকি শূন্য দশমিক ৫, সেখানে ঢাকায় এ হার ১ দশমিক ৭৩। বিমানবন্দরের চারপাশে কয়েকটি জলাশয় থাকায় সেখানে মাছ ও কীটপতঙ্গ খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি হাজির হয়। এ ছাড়া আশপাশের উচ্ছিষ্ট খাবার, রানওয়ের সবুজ ঘাসও পাখিদের পছন্দ। তাই সেখানেও তাদের বিচরণ থাকে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত ১ বছরে ২০টিরও বেশি বার্ড হিটের ঘটনা ঘটেছে শাহজালাল বিমানবন্দরে। গত ২০ মে টার্কিস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বার্ড হিটের ঘটনা ঘটে। এতে ইঞ্জিনে আগুন লেগে উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণ করে। এরপর গত ২৮ মে বিমানের একটি হজ ফ্লাইটে বার্ড হিট হয়। এতে উড়োজাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বশেষ গত ২৭ জুন বাংলাদেশ বিমানের সিঙ্গাপুরগামী একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের পর পর পাখির আঘাতের কারণে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়।

টার্কিস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে বার্ড হিটের ঘটনার পর বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গত ২০ মে শাহজালাল বিমানবন্দরে বার্ড কন্ট্রোল মনিটরিং সিস্টেমের বর্তমান অবস্থা এবং বার্ড শুটিং কার্যক্রম নিয়ে বিশেষ বৈঠক করে। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বার্ড কন্ট্রোল ও মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়। সিস্টেমটি ২টি মডিউলে বিভক্ত। তার মধ্যে একটি বার্ড মনিটরিং। যা ৫টি ক্যামেরার সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো রানওয়ের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। তার মধ্যে চারটি কার্যকর ও একটি অকার্যকর। ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে পাখির উপস্থিতি মনিটর করা যায়। ক্যামেরায় কোনো বার্ডের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হলে কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে নিয়োজিত বার্ড শুটারদের অবহিত করলে তারা তা তাড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। এর অন্য মডিউলটি হচ্ছে— বার্ড ডেটেরেন্ট সিস্টেম। যাতে ৫টি গ্যাস ক্যানন, একটি বার্ড স্কেরিং সিস্টেম, দুটি লেজার ও দুটি অ্যামপ্লিফায়ার মাইক রয়েছে। পাখি তাড়ানোর জন্য ১০ মিনিট পরপর গ্যাস ক্যানন মেশিন থেকে শব্দ বের হয়। বার্ড স্কেরিং সিস্টেমটি গাড়িতে সংযোজিত, ফলে রানওয়ের ওপরে অথবা বিমানের টেকঅফ বা অ্যাপ্রোচ পথে কোনো পাখির উপস্থিত থাকলে এর মাধ্যমে পাখি তাড়ানো সম্ভব। লেজার লাইট দিনের বেলায় কার্যকর নয় এবং বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে না। বার্ড কন্ট্রোল ও মনিটরিং সিস্টেমটি গত ১৮ মে থেকে সার্ভার নষ্ট হওয়ার কারণে অকার্যকর রয়েছে।

সভার কার্যবিবরণী থেকে আরো জানা যায়, বর্তমানে শাহজালালে মাত্র তিনজন বার্ড শুটার কর্মরত এবং বার্ড শুটিং পরিচালনার জন্য কার্যকর কোনো বন্দুক নেই। ফলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী থেকে সকাল ও বিকালের পালায় দুজন করে বার্ড শুটার দুটি গানসহ নিয়োজিত থাকেন। তারা শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটিতে থাকেন এবং ভিভিআইপি মুভমেন্টের সময় বন্দুক জমা রাখতে হয়। ফলে শুক্রবার ছাড়া অন্য দিনগুলোতে প্রতি পালায় একজন বেবিচকের কর্মী ও একজন বিএএফ কর্মী একটি গানসহ নিয়োজিত থাকেন।

কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে অকার্যকর সিস্টেমটি চালু করা এবং সকাল ও বিকালে দুজন করে বেবিচকের চারজন কর্মীকে ওয়াকিটকিসহ রানওয়ের পাশে পাখি তাড়ানোর কাজে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।

রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকলে বেশি ক্ষতি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে বলে জানান বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, এতে ইঞ্জিনের ফ্যান, ব্লেড ও স্পিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া পাখির আঘাতের ঝুঁকি থাকলে পাইলটদেরও মানসিক চাপে থাকতে হয়।

বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর অভিযোগ, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর ক্ষেত্রে মনিটরিং খুব একটা কার্যকর নয়। ফলে মাঝে মাঝে বার্ড হিটের ঘটনা ঘটছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একজন পাইলট জানান, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর কাজে নিয়োজিত কর্মীদের দক্ষতায় ঘাটতি আছে। এতে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে। তাদের কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণ করা হয় না। এ কারণে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের সময় তারা পাখির আতঙ্কে থাকেন।

সার্বিক বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল মঞ্জুরুল কবীর ভুইঞা আমার দেশকে বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে পাখি নিধনের জন্য আমাদের আধুনিক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। নষ্ট ক্যামেরাটিও মেরামত করা হয়েছে। বর্তমানে সবকিছুই সচল রয়েছে। রানওয়ের উত্তরে অনেক জলাশয় রয়েছে ফলে পাখি সেখান থেকে উড়ে আসে। অ্যাক্টিভ বার্ড কন্ট্রোলের জন্য ছুটির দিনসহ সব সময় পাখি তাড়াতে আমাদের সিভিল এভিয়েশনের বার্ডশ্যুটার এবং বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া প্যাসিভ বার্ড কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে পরোক্ষ ডিভাইস যেমন— ক্যামেরার মাধ্যমে ডিটেকশন, সাউন্ড ডিটেকশন, সাউন্ড রিপেলিং, লেজার গান, ইরিটেটেড ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবস্থা আছে বিমানবন্দরে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত