চট্টগ্রাম ফার্টিলাইজারে দুর্নীতি

উৎপাদন বন্ধ থাকায় লোকসান ২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা

ওসমান জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ১৬
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ১৮

চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এ বছর সার উৎপাদনে যেতে না পারায় সরকারের লোকসান হয়েছে ২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এর এমডি মিজানুর রহমানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন লোকসানি খাতে পরিণত হয়েছে।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কারণ দেখিয়ে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ ছিল। মাঝে চারবার চালু করার চেষ্টা করেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞাপন

গ্যাস সংকটের অজুহাতে কারখানাটি বন্ধ হলেও টানা ৯ মাস পর বর্তমান সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান গ্যাস নিশ্চিত করার পর গত ১৫ অক্টোবর চালু হলে ওই দিনই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আরও তিনবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। সবশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর কারখানাটি চালু করা হয়। তবে স্কেলসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ এখনো সচল হয়নি। ফলে যেকোনো সময় ফের বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

টানা ৯ মাস কারখানা বন্ধ থাকলেও অ্যামোনিয়ার প্ল্যান্টটি চালু রাখতে হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অপচয় হয়েছে। কারখানা চালু থাকলে দৈনিক ৪৬ এমএমসিএফটি গ্যাসের প্রয়োজন পড়ে। আর বন্ধ অবস্থায় প্লান্ট চালু রাখলে ৬ থেকে ৭ এমএমসিএফটি গ্যাস খরচ হয়। উৎপাদিত অ্যামোনিয়া বাতাসে ছেড়ে দেওয়া হয়। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রাম ফাটিলাইজার লিমিটেড সিইউএফএ নিয়োগ, বদলি টেন্ডার বাণিজ্যসহ নন-টেকনিক্যাল পদে অযোগ্যদের পদোন্নতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ফাটিলাইজার লিমিটেড এমডি পদে যোগ দেন মিজানুর রহমান। যোগ দেওয়ার পর তিনি সিইউএফএল স্কুল ও কলেজে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক থাকার পরও ৩/৪ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ১৪ জনকে অতিরিক্ত খণ্ডকালীন (দৈনিক ভিত্তিতে) শিক্ষক নিয়োগ দেন। এছাড়াও সার কারখানায় অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে সাবেক এমডিসহ চারজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন তিনি। তারা হলেন সিইউএফএল-এর সাবেক এমডি আবু জামাল সরকার। তিনি বর্তমানে বিশেষজ্ঞ পদে চাকরি করেছেন। সাবেক রসায়নবিদ তাজুল ইসলাম, সাবেক রসায়নবিদ চন্দ্র নাথ সরকার, মাহফুজুর রহমান বিশেষজ্ঞ কর্মরত আছেন।

ইউরিয়া প্ল্যান্টে চারজনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় তারা হলেন- গোলাম রব্বানী, আবু সাঈদ, মনিরুজ্জামান ও ফিরোজ আলম। এ ছাড়াও অন্তত ৩০ জনের মতো সাবেক কর্মকর্তা, টেকনিশিয়ান অপারেটর বিশেষ পদে কর্মরত আছেন।

সিইউএফএল সূত্র জানায়, সিইউএফএলের এমডি ও বিএসইসির চেয়ারম্যান দুজনই ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। এরা দুজনই নন-টেকনিক্যাল। এমডি মিজানুর রহমান সিলেট শাহজালাল ফাটিলাইজারে এমডি থাকাকালীন বরখাস্ত হন। দীর্ঘসময় বরখাস্ত থাকার পর তদন্ত কমিটির সুপারিশে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে চট্টগ্রাম আনোয়ারা রাঙ্গাদিয়া ডায় অ্যামোনিয়া ফসফেট প্ল্যান্ট (ডিএফসিএল) এমডি হিসেবে যোগদান ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি মিজানুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম ফার্টিলাইজার লিমিটেড ২০০৭ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে

প্রতিষ্ঠানটি চলছে, মেশিন পুরোনো হওয়ার কারণে ঘন ঘন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদনের সময় ভয়ে থাকি কোন সময় আবার বন্ধ হয়ে যায়। কিছু যন্ত্রপাতি রিপেয়ার পার্টস সংযোজনে অক্টোবর থেকে সার উৎপাদন নিয়মিত করার চেষ্টা করছি। এরই মধ্য চারবার কারখানা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। আবার চালু করি অক্টোবর থেকে চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৩১ হাজার ম্যাট্রিক টন সার উৎপাদন হয়েছে। এক্সপার্ট হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানান প্রয়োজনের তাগিদে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সম্পাদনা : আলী হোসেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত