চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার সংযোগস্থল ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত মতলব সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া সেতুর দুপাশের রাস্তার নিচের মাটি-বালু সরে গিয়ে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর কোথাও উঠে গেছে কংক্রিট, বেরিয়ে পড়ছে রড। এ অবস্থায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট-বড় হাজার হাজার যানবাহন। আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে সেতু পারাপার হচ্ছেন যাত্রীরা। এমন অবস্থায় ঘটতে পারে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে বড় ফাঁকা। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি কাঁপতে থাকে। সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে হয়েছে বড় গর্ত। মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে গর্ত। এ সেতু দিয়ে চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও কুমিল্লার বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় নিয়মিত চলাচল করেন। তা ছাড়া প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন এ সেতু দিয়ে চলাচল করে। সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে বিকল্প সড়ক না থাকায় চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হতে হবে। অথচ মেরামতে নেওয়া হচ্ছে না কোনো উদ্যোগ।
এলাকার বাসিন্দা বাবুল ফরাজী বলেন, এই সেতু বন্ধ হলে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। জরুরি সেবা, শিক্ষার্থী, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ সাধারণ যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে প্রতিদিন। সেতুর দুপাশের সড়ক এবং মাঝখানের ফাটল সংস্কার করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
পথচারী কামরুল হাসান বলেন, সেতুর উত্তর পাশের রাস্তার বেহাল দশা। এই রাস্তাটি পুরোপুরি ভেঙে গেলে সেতু থেকেও কোনো লাভ নেই। অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন জীবনে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। গাড়িচালক আশরাফ আলী বলেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে ব্রিজটি ফেটে গেছে। ব্রিজে ওঠার রাস্তাও অনেক খারাপ। মেরামত করা জরুরি।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার দায়িত্বরত (সওজ) প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা সেতুর ফাটল নয়। সেতুর এক্সপানশন জয়েন্ট টেম্পারেচারের কারণে ফাঁকা হয়ে গেছে। অতিদ্রুত সংস্কার করা হবে। আর সংযোগ রাস্তায় গর্ত মেরামতের কাজ চলছে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহা. আলি উল হোসেন বলেন, মতলব সেতুর জয়েন্টে ফাটল এবং সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে, এরকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে ঘটনাস্থলে প্রকৌশলী পাঠানো হচ্ছে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য।
উল্লেখ্য, মতলব উত্তর ও দক্ষিণের সরাসরি যোগাযোগ এবং চাঁদপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে প্রকল্প হাতে নেয় চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সেতু নির্মাণে ৮৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল সেতুর ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা ও জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ২৮ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে আরো আট কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর মতলব বাজারের পূর্ব পাশে সেতুটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সেতুতে ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের সাতটি স্প্যান রয়েছে এবং দু-পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কটি ১ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে পরে নির্মাণ ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয় এবং সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

