চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায় পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশের অজ্ঞাতনামা চার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। গত শনিবার ফরিদগঞ্জ থানায় এই মামলা দায়ের করেন ডাকাতি মামলার আসামী মো. খোকন (৩৯) ।
মঙ্গলবার সকালে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ফখরুদ্দিন আহমেদ স্বপন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, গত ২৮ নভেম্বর ফরিদগঞ্জ থানায় ডাকাতি মামলায় জবানবন্দি গ্রহণকালে আসামিকে পুলিশ হেফাজতে চরমভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দেন।
মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১৬ ডিসেম্ব ফরিদগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ডাকাতির মামলা করা হয়। ওই মামলায় তিনজন অজ্ঞাতনামা আসামিকে হাজির করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামি খোকনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এসময় পুলিশ হেফাজতে খোকনকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খোকনকে গ্রেপ্তারের সময় স্মারকপত্রে আসামি সুস্থ ও পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে কোনো জখমের উল্লেখ না থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পরীক্ষা করে নির্যাতনের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে লিপিবদ্ধ করেন। এছাড়া, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী সাত কার্যদিবসের মধ্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে, আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর হাসপাতালে থেকে খোকনের পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেন চিকিৎসক রানা সাহা ও আসিবুল হাসান চৌধুরী। প্রতিবেদনে দেখা যায়, আসামির উভয় পায়ের উরুতে একাধিক নীলাফুলা জখম রয়েছে।
এদিকে আদালতের মামলা দায়েরের নির্দেশের পর গত ২৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা ঘটনার গুরুত্ব ও স্পর্শকাতরতার কথা উল্লেখ করে তদন্তের জন্য ১৫ দিন সময়ের আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তাৎক্ষণিকভাবে মামলা দায়ের করার পূর্বের আদেশ বহাল রাখে।
সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ফরিদগঞ্জ থানার ওসি হেলাল উদ্দিন নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা দায়ের করেন। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফ ইফতেখারকে এই মামলা তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয় ।
পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের মামলার বাদী খোকন ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি সরদার বাড়ির শাহজাহানের ছেলে। বিভিন্ন অপরাধে ফরিদগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ, গত ২৮ নভেম্বর উপজেলার সাইসাঙ্গা গ্রামের পেয়ারা বেগম ডাকাতির ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন । ওই মামলায় আসামি খোকন গ্রেপ্তার হন।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার রবিউল হাসান বলেন, আদালতের আদেশের পর ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

