১৭ দিন পর এবার রাউজানে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবদলকর্মী নিহত

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৫৮
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ১৫

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আব্দুল হাকিমকে (৫২) হত্যার ১৭ দিন পর এবার রাউজানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এক যুবদল কর্মীকে। এর আগে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় আবদুল হাকিমকে হত্যা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল এলাকার রশিদরপাড়ায় গুলিতে হত্যা করা হয় যুবদল কর্মী মো. আলমগীরকে (৫৫)।

নিহত আলমগীর ওই এলাকার আব্দুর সাত্তারের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে তিনি কোন গ্রুপ বা প্রভাবশালী নেতার অনুসারী, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, চারাবটতল এলাকায় বিকেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। নিহতের নাম আলমগীর বলে জানা গেছে। আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি এবং হত্যার কারণ তদন্ত করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বিকেলে এলাকার রশিদরপাড়া মোড়ে আলমগীরের ওপর হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী। তারা পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রাউজানে সম্প্রতি দলীয় রাজনীতির প্রভাব বিস্তার নিয়ে নানা গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর আগেও গত কয়েক মাসে বিএনপির স্থানীয় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত আলমগীরের মৃত্যু সেই রক্তাক্ত ধারাবাহিকতার নতুন সংযোজন বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

চারাবটতল ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ‘গান কালচার’ ও চাঁদাবাজি ঘিরে প্রভাব বিস্তারের লড়াই চলছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পেছনে দেখা যাচ্ছে অর্থনৈতিক স্বার্থ, জমি দখল, এবং টেন্ডারবাণিজ্যের জটিল অঙ্ক। এক সময় বিএনপি, পরে আওয়ামী লীগ উভয় দলের স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই কালো অর্থনীতির স্রোতে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ।

এক স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে রাজনীতি এখন মানে বন্দুক আর টাকার খেলা। কে কাকে মারে, কেন মারে সবাই জানে, কিন্তু কেউ মুখ খোলে না।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, ঘটনার পেছনে যেই জড়িত থাকুক না কেন, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গত ১১ মাসে উপজেলাটিতে ১৩ জন নিহত হয়েছেন, বেশিরভাগই রাজনৈতিক বা আধিপত্য বিস্তারসংক্রান্ত ঘটনায়। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল আর প্রভাবের রাজনীতি এখন প্রতিদিনের বাস্তবতা। আলমগীর হত্যাকাণ্ড সেই অন্ধকার বাস্তবতার আরেকটি নির্মম স্মারক হয়ে থাকল।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত