আব্দুল কাইয়ুম, ময়মনসিংহ
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সরাসরি গুলির নির্দেশ দেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই সারা দেশে গুলিবর্ষণ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধসহ ‘নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা’ বাস্তবায়ন করেন পুলিশের আওয়ামী অনুগত সদস্যরা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন নয়; বরং সাধারণ ছাত্র, কৃষক এমনকি পথচারীরাও সেদিনের হত্যাযজ্ঞের শিকার হন।
অথচ ওই গণহত্যায় সরাসরি জড়িত আওয়ামীপন্থি পুলিশ কর্মকর্তারা আজও বহালতবিয়তে। এমনকি তাদের অনেকেই রয়েছেন পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে, যাকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ভয়ংকর নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছেন অনেকে।
গত বছরের ১৯ জুলাই গণভবনে শেখ হাসিনা ও ১৪ দলের নেতারা মিলে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নেন। ওই রাতেই সেনা মোতায়েন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দেওয়া হয়। বাতিল করা হয় শেখ হাসিনার স্পেন সফর। আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি নিজেই। এরপর সেদিন রাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’-এর সরাসরি অনুমতি দেন হাসিনা।
অনলাইনে ফাঁস হওয়া একটি অডিও টেপে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়Ñ‘যেখানেই পাবে, গুলি করবে।’ বিবিসির অনুসন্ধানে ওই অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। ওই নির্দেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীসহ বেশকিছু জেলা শহরে সেনা মোতায়েন, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন এবং কারফিউ জারির ঘোষণা আসে। ওই দিন রাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামী ক্যাডারদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় ‘অপারেশন ব্ল্যাকডাউন’, যার আওতায় দেশজুড়ে নিশানা ধরে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
সূত্রগুলোর দাবি, শেখ হাসিনার নির্দেশেই পুলিশের আওয়ামী অনুগত সদস্যরা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে এবং আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে আরো বেপরোয়া।
ময়মনসিংহ সদরে সাগর হত্যা, নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ
শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ পাওয়ার পর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মাঈন উদ্দিনের পরামর্শে ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ নগরীর মিন্টু কলেজ এলাকায় শিক্ষার্থী রিদওয়ান হোসেন সাগরকে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মোহিত উর রহমান শান্ত ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। সে সময় ওসি মাঈন উদ্দিন সাগরের লাশ প্রথমে গুমের চেষ্টা করেন এবং পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সাগরের পরিবারের ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ওসি মাঈন উদ্দিন সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে সাবেক এমপি মোহিত উর রহমান শান্তকে বাঁচাতে এবং ‘রাজনৈতিক চাপ’ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সাগরের লাশ রাতেই দাফনের ব্যবস্থা করেন। এমনকি ওসি মাঈন উদ্দিন সরকারি করপোরেট মোবাইল নম্বর থেকে এমপি শান্তকে ১৯ জুলাই বিকাল ৫টা ১৯ মিনিট থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৯ বার ফোন করেন। যদিও ওসি মাঈন উদ্দিন (বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত) জানান, তিনি সেদিন সাবেক এমপি শান্তর সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি।
গৌরীপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ মিলে গণহত্যা চালায়
জেলার গৌরীপুর সরকারি কলেজে গত বছরের ১৭ জুলাই ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ছাত্রলীগ ও পুলিশ যৌথভাবে হামলা চালায়। ২০ জুলাই কারফিউ অমান্য করে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে বিক্ষোভে নামেন সাধারণ ছাত্র-জনতা। বিক্ষোভ চলাকালে গৌরীপুর থানার ওসি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন চন্দ্র রায় ও এসআই শফিকুল আলমের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে চালানো হয় গুলি। ওই সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বিপ্লব হাসান, নূরে আলম রাকিব ও জুবায়ের আহমেদ। গৌরীপুরে হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘটলেও ওসি সুমন চন্দ্র রায় এখনো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত।
ফুলপুরে কৃষককেও হত্যা করে পুলিশ
সেদিনই ফুলপুর উপজেলার আমুয়াকান্দা বাজারে ধান বিক্রি করতে যাওয়া কৃষক মো. সাইফুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ফুলপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান ছিলেন অভিযানের নেতৃত্বে। নিরীহ কৃষক সাইফুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার দাদা আফতাব উদ্দিন নাতির মৃত্যুশোকে তিনদিন পর মারা যান।
সাইফুলের পরিবারের দাবি, সেদিন পুলিশ ছাড়া আর কেউ ছিল না। অথচ ফুলপুরের তৎকালীন ওসি মাহবুবুর রহমান এসআই থেকে ওসি পদে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পদোন্নতি পান। বর্তমানে তিনি গাজীপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত ব্যুরোয় (পিবিআই) কর্মরত।
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে ময়মনসিংহজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করতে যে ‘গণদমন অভিযান’ চালানো হয়, তার পরিকল্পনা ও প্রকাশ্য হুমকির বহু আলামত রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই সব ঘটনায় সরাসরি জড়িত প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা আজও বিচারের আওতার বাইরে। এমনকি অনেকের নামে একটির বেশি মামলাও হয়নি।
বিশেষ করে ময়মনসিংহে যেখানে পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাগরকে এবং আওয়ামী নেতাদের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে গৌরীপুরে বিপ্লব, রাকিব, জুবায়ের ও ফুলপুরে সাইফুল নিহত হন, সেখানে দায়িত্বরত ওসিসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার নামে কোনো মামলা কিংবা অভিযোগে তাদের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এটি বর্তমান সরকারের বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতির’ নগ্ন বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
হত্যার পরও প্রকাশ্যে মিছিল করে খুনিরা, পুলিশ ছিল নীরব
সাগর হত্যার ১৩ দিন পর গত বছরের ৪ আগস্ট ময়মনসিংহ নগরীর রেলওয়ের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিলের নামে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ সমাবেশের আয়োজন করে। ওই কর্মসূচিতে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক হুমকিস্বরূপ বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীরা, যাদের মধ্যে অনেকে বর্তমানে সাগর হত্যা মামলার আসামি। সমাবেশে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, যুবলীগ-ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাদের বক্তব্যে একাধিকবার হুমকি দেন।
বক্তব্যে বলতে শোনা যায়, ‘এই নগরীতে আর কোনো আন্দোলন করতে দেব না। যদি আবার কেউ আন্দোলনের নামে রাস্তায় নামে, তাদের লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিপথগামীদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে, জয় বাংলা করে দিতে হবে।’
কিন্তু ৫ আগস্টের আগে হত্যার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক ও সদস্য মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ৫ আগস্ট হাসিনা পলায়ন না করলে শহীদ পরিবারগুলো আজও কোনো মামলা দায়ের করতে পারত না। এসব পুলিশ কখনো আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা নিত না। ফলে বিচারও পেতেন না তারা। জনবিরোধী এসব পুলিশ কর্মকর্তা এখনো কীভাবে বাহিনীতে কর্মরত, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মোজাম্মেল হক আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান না হওয়া উদ্বেগজনক।
রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা : সরকারবিরোধী তথ্য পাচারে সক্ষম এসব পুলিশ কর্মকর্তা
যেসব পুলিশ কর্মকর্তা শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছিলেন, তারা এখনো বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন। এদের অনেকে এখনো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), ট্যুরিস্ট পুলিশ ও পিবিআইয়ে কর্মরত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হয়ে যেসব পুলিশ সদস্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালীন হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করেছিলেন, তারা এখনো কর্মরত থাকলে সরকারের অভ্যন্তরীণ তথ্য আওয়ামী লীগের কাছে পাচার হতে পারে। তার মতে, এই কর্মকর্তাদের পুলিশ বাহিনীতে বহাল রাখা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ভয়ংকর নিরাপত্তা হুমকি। তারা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মর্যাদাই ক্ষুণ্ণ করেননি, বরং তারা এক সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণহত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও অংশ নিয়েছিলেন।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সরাসরি গুলির নির্দেশ দেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই সারা দেশে গুলিবর্ষণ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধসহ ‘নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা’ বাস্তবায়ন করেন পুলিশের আওয়ামী অনুগত সদস্যরা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন নয়; বরং সাধারণ ছাত্র, কৃষক এমনকি পথচারীরাও সেদিনের হত্যাযজ্ঞের শিকার হন।
অথচ ওই গণহত্যায় সরাসরি জড়িত আওয়ামীপন্থি পুলিশ কর্মকর্তারা আজও বহালতবিয়তে। এমনকি তাদের অনেকেই রয়েছেন পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে, যাকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ভয়ংকর নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছেন অনেকে।
গত বছরের ১৯ জুলাই গণভবনে শেখ হাসিনা ও ১৪ দলের নেতারা মিলে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নেন। ওই রাতেই সেনা মোতায়েন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দেওয়া হয়। বাতিল করা হয় শেখ হাসিনার স্পেন সফর। আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি নিজেই। এরপর সেদিন রাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’-এর সরাসরি অনুমতি দেন হাসিনা।
অনলাইনে ফাঁস হওয়া একটি অডিও টেপে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়Ñ‘যেখানেই পাবে, গুলি করবে।’ বিবিসির অনুসন্ধানে ওই অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। ওই নির্দেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীসহ বেশকিছু জেলা শহরে সেনা মোতায়েন, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন এবং কারফিউ জারির ঘোষণা আসে। ওই দিন রাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামী ক্যাডারদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় ‘অপারেশন ব্ল্যাকডাউন’, যার আওতায় দেশজুড়ে নিশানা ধরে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
সূত্রগুলোর দাবি, শেখ হাসিনার নির্দেশেই পুলিশের আওয়ামী অনুগত সদস্যরা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে এবং আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে আরো বেপরোয়া।
ময়মনসিংহ সদরে সাগর হত্যা, নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ
শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ পাওয়ার পর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মাঈন উদ্দিনের পরামর্শে ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ নগরীর মিন্টু কলেজ এলাকায় শিক্ষার্থী রিদওয়ান হোসেন সাগরকে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মোহিত উর রহমান শান্ত ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। সে সময় ওসি মাঈন উদ্দিন সাগরের লাশ প্রথমে গুমের চেষ্টা করেন এবং পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সাগরের পরিবারের ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ওসি মাঈন উদ্দিন সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে সাবেক এমপি মোহিত উর রহমান শান্তকে বাঁচাতে এবং ‘রাজনৈতিক চাপ’ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সাগরের লাশ রাতেই দাফনের ব্যবস্থা করেন। এমনকি ওসি মাঈন উদ্দিন সরকারি করপোরেট মোবাইল নম্বর থেকে এমপি শান্তকে ১৯ জুলাই বিকাল ৫টা ১৯ মিনিট থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৯ বার ফোন করেন। যদিও ওসি মাঈন উদ্দিন (বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত) জানান, তিনি সেদিন সাবেক এমপি শান্তর সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি।
গৌরীপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ মিলে গণহত্যা চালায়
জেলার গৌরীপুর সরকারি কলেজে গত বছরের ১৭ জুলাই ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ছাত্রলীগ ও পুলিশ যৌথভাবে হামলা চালায়। ২০ জুলাই কারফিউ অমান্য করে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে বিক্ষোভে নামেন সাধারণ ছাত্র-জনতা। বিক্ষোভ চলাকালে গৌরীপুর থানার ওসি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন চন্দ্র রায় ও এসআই শফিকুল আলমের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে চালানো হয় গুলি। ওই সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বিপ্লব হাসান, নূরে আলম রাকিব ও জুবায়ের আহমেদ। গৌরীপুরে হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘটলেও ওসি সুমন চন্দ্র রায় এখনো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত।
ফুলপুরে কৃষককেও হত্যা করে পুলিশ
সেদিনই ফুলপুর উপজেলার আমুয়াকান্দা বাজারে ধান বিক্রি করতে যাওয়া কৃষক মো. সাইফুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ফুলপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান ছিলেন অভিযানের নেতৃত্বে। নিরীহ কৃষক সাইফুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার দাদা আফতাব উদ্দিন নাতির মৃত্যুশোকে তিনদিন পর মারা যান।
সাইফুলের পরিবারের দাবি, সেদিন পুলিশ ছাড়া আর কেউ ছিল না। অথচ ফুলপুরের তৎকালীন ওসি মাহবুবুর রহমান এসআই থেকে ওসি পদে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পদোন্নতি পান। বর্তমানে তিনি গাজীপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত ব্যুরোয় (পিবিআই) কর্মরত।
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে ময়মনসিংহজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করতে যে ‘গণদমন অভিযান’ চালানো হয়, তার পরিকল্পনা ও প্রকাশ্য হুমকির বহু আলামত রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই সব ঘটনায় সরাসরি জড়িত প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা আজও বিচারের আওতার বাইরে। এমনকি অনেকের নামে একটির বেশি মামলাও হয়নি।
বিশেষ করে ময়মনসিংহে যেখানে পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাগরকে এবং আওয়ামী নেতাদের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে গৌরীপুরে বিপ্লব, রাকিব, জুবায়ের ও ফুলপুরে সাইফুল নিহত হন, সেখানে দায়িত্বরত ওসিসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার নামে কোনো মামলা কিংবা অভিযোগে তাদের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এটি বর্তমান সরকারের বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতির’ নগ্ন বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
হত্যার পরও প্রকাশ্যে মিছিল করে খুনিরা, পুলিশ ছিল নীরব
সাগর হত্যার ১৩ দিন পর গত বছরের ৪ আগস্ট ময়মনসিংহ নগরীর রেলওয়ের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিলের নামে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ সমাবেশের আয়োজন করে। ওই কর্মসূচিতে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক হুমকিস্বরূপ বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীরা, যাদের মধ্যে অনেকে বর্তমানে সাগর হত্যা মামলার আসামি। সমাবেশে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, যুবলীগ-ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাদের বক্তব্যে একাধিকবার হুমকি দেন।
বক্তব্যে বলতে শোনা যায়, ‘এই নগরীতে আর কোনো আন্দোলন করতে দেব না। যদি আবার কেউ আন্দোলনের নামে রাস্তায় নামে, তাদের লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিপথগামীদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে, জয় বাংলা করে দিতে হবে।’
কিন্তু ৫ আগস্টের আগে হত্যার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক ও সদস্য মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ৫ আগস্ট হাসিনা পলায়ন না করলে শহীদ পরিবারগুলো আজও কোনো মামলা দায়ের করতে পারত না। এসব পুলিশ কখনো আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা নিত না। ফলে বিচারও পেতেন না তারা। জনবিরোধী এসব পুলিশ কর্মকর্তা এখনো কীভাবে বাহিনীতে কর্মরত, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মোজাম্মেল হক আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান না হওয়া উদ্বেগজনক।
রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা : সরকারবিরোধী তথ্য পাচারে সক্ষম এসব পুলিশ কর্মকর্তা
যেসব পুলিশ কর্মকর্তা শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছিলেন, তারা এখনো বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন। এদের অনেকে এখনো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), ট্যুরিস্ট পুলিশ ও পিবিআইয়ে কর্মরত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হয়ে যেসব পুলিশ সদস্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালীন হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করেছিলেন, তারা এখনো কর্মরত থাকলে সরকারের অভ্যন্তরীণ তথ্য আওয়ামী লীগের কাছে পাচার হতে পারে। তার মতে, এই কর্মকর্তাদের পুলিশ বাহিনীতে বহাল রাখা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ভয়ংকর নিরাপত্তা হুমকি। তারা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মর্যাদাই ক্ষুণ্ণ করেননি, বরং তারা এক সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণহত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও অংশ নিয়েছিলেন।’
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে জহিরুল ইসলাম মিঠু হত্যা মামলায় পলাতক দুই ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
১ ঘণ্টা আগেপরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ১১ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে শামসুদ্দিন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ৬৪১৪৬০। ১৯৩৯ থেকে শুরু করে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত পুরো ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে ছিলেন এ যোদ্ধা।
১ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ভেতরে পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক সাবেক নেতা। ঘটনার পর তাকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আটক মো. রায়হান হাটহাজারি কলেজ শিবিরের সাবেক সভাপতি।
১ ঘণ্টা আগেসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেরা ইলিশ মাছ ধরতে আসে তা জানার পরই সাথে সাথে কোস্টগার্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা চাই দেশের মানুষ ইলিশ খাবে সাগরে যেন কেউ চুরি করে মাছ ধরতে না পারে সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে