চট্টগ্রাম বন্দর

বার্থ অপারেটর সিন্ডিকেটও ভাঙতে যাচ্ছে সরকার

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০: ৫৯
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১: ০১

চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে এবার আরো পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর সিন্ডিকেটও ভাঙতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য নতুন লাইসেন্স নীতিমালা তৈরির প্রস্তাবনা চেয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে গেছে, বন্দরের কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। দীর্ঘদিনের ‘স্টিবিটরি’ প্রথার পরিবর্তন করে সে সময় চালু করা হয় শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর সিস্টেম। জেটিতে ১২টি বার্থ অপারেটর আর বহির্নোঙরে ৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। মূলত এ পদ্ধতিতে বন্দরে বহিরাগত রাজনৈতিক শক্তির চাপ অনেকটা কমে আসে। কার্যক্রমেও ফেরে গতি।

বিজ্ঞাপন

তবে এ পদ্ধতিতেও সমস্যা ছিল। পাঁচ বছর পরপর টেন্ডার হলেও তাতে এমন সব শর্ত যুক্ত করা হতো, যার ফলে অন্য কারো কাজ পাওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে ১৮ বছর ধরে জেটিতে ১২টি আর বহির্নোঙরে ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপরই নির্ভরশীল ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। তবে এবার ওই সিন্ডিকেটও ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।

বন্দরের তৈরি করা নতুন খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী টেন্ডার বা লাইসেন্স নবায়ন পাঁচ বছরের স্থলে তিন বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স পাওয়ার শর্তগুলো শিথিল করা হয়েছে। জাহাজ মালিক চার্টারার বা শিপিং কোম্পানি, সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কাস্টমস থেকে লাইসেন্স পাওয়া শিপিং এজেন্ট আবেদনকারীর সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হলেই তিনি লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য।

তবে এতদিন এ শর্ত ছিল আরো কঠিন। সেখানে কেবল শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। আর এটিই নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াত। এছাড়া নতুন লাইসেন্স পেতে খসড়া প্রস্তাবে আরো যে ৯টি সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলোও অনেকটা সহজ। নতুন এ নীতিমালা প্রণয়ন হলে আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের নতুন করে বন্দরে কাজ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একপক্ষ বলছে বন্দরের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মতো নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ছেলেখেলা করার সুযোগ নেই। আর অন্য পক্ষের দাবি, বন্দরকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভাঙার এটাই উপযুক্ত কৌশল।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য দিনদিন ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এতে বন্দরের ব্যবহার প্রতিদিন বাড়ছে। তাই বন্দরের টার্মিনাল, বার্থ ও বহির্নোঙর নিয়ে নতুন করে পরীক্ষা চালানোর সুযোগ নেই। নতুন প্রতিষ্ঠান কাজে এলে গতি ও সেবার মান বাড়বে এটা ঠিক, কিন্তু নতুন নীতিমালার শিথিল শর্তের সুযোগে বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই এমন প্রতিষ্ঠান ঢুকে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় অর্থনীতি।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ জানান, অভিজ্ঞতার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেট বন্দরের বার্থ ও বহির্নোঙরকে জিম্মি করে মনোপোলি ব্যবসা করছে। অপারেটর বলতে বোঝায় অপারেশন কাজের সব যন্ত্রাংশ অপারেটর প্রতিষ্ঠানের থাকতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে সব যন্ত্রাংশই বন্দরের। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এসে কিছু শ্রমিক সাপ্লাই দিয়ে অপারেটর নাম নিয়ে মালিক সেজেছে। এ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

বার্থ অপারেটরস ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী জানান, পতিত সরকারের শেষ সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে শিপ হ্যান্ডলিংয়ের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তারা কাজে যোগ দিতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের লাইসেন্স বাতিল করেছে। কারণ বন্দর অপারেশন আর ১০টি ঠিকাদারি কাজের মতো নয়। এর সঙ্গে দেশের জাতীয় অর্থনীতি যুক্ত। ২০০৭ সালে স্টিবিটর প্রথা বিলুপ্তির পর স্টিবিটরদের মধ্য থেকেই শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। বন্দরের সব অভিজ্ঞ শ্রমিক-কর্মচারী কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন। বন্দর চালানোর মতো দক্ষ জনবল বাইরে নেই। তাই নতুন নীতিমালার নামে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্দরে ঢোকালে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুখ জানান, যে কোনো কাজে প্রতিযোগিতা যত বাড়বে সেবার মানও তত বাড়বে। বন্দরের সেবার মানোন্নয়ন আর অপারেশনের গতি বাড়ানোই প্রধান চ্যালেঞ্জ। নতুন নীতিমালায়ও বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এখানে বন্দরের অপারেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন, কোনো ধারা যুক্ত করা হবে না।

সাব-জেলে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা, সরকারের কাছে যে আহ্বান জানালেন ব্যারিস্টার আরমান

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত